যাপিত জীবনের যাতনা

লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ০৭ মার্চ, ২০১৮, ১০:৫৮:০২ রাত

গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে এত অসুস্থ হয়ে পড়লাম যে আই,এম,সি’র ইমারজেন্সীতে ডাক্তারদের অতিথি হিসেবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মিলে গেল অপ্রত্যাশিত ভাবেই। আমাদের সে লোকের প্রয়োজন যার জামার কোণা কাঁটায় বিঁধে আটকে গেলে ও যাবে ছুটে দ্বীনের কাজে ভাববে জামা নিষ্প্রয়োজন- এই নীতিতে চলতে গিয়ে নিজের প্রতি অযতন-আর অবহেলা হতে এর আগে ও কয়েকবার এইরকম অতিথি হওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। অতিরিক্ত ঔষধের প্রভাব আর প্রচন্ড মানসিক টেনশন হতে ব্লাড প্রেশার খুব কমে গেল। আর তখন আমার মাথার ভেতর যে কি খিঁচুড়ি পাকাচ্ছিল তা আল্লাহ মালুম। শুধু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে এটাই খুব উপলব্দি করলাম আমার ঘাড় আর মাথা বেচারা এতদিনের বিশ্বাস যোগ্যতা ভেঙ্গে আমার শরীরের বিরুদ্ধে নিরবে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিলো। বিকেল হতেই খুব খারাপ অবস্থা। সকালে উঠে ডাইনিংএ চেয়ারে বসতেই চোখের সামনে যেন হাজার আলোর ফুলঝুরি দেখতে পেলাম। গড়িয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলাম।

গাড়ি হতে হসপিটালের ভেতর পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছালাম কচ্ছপ গতিতে। আমার অবস্থা দেখে বাংলাদেশী একজন ওয়ার্ডবয় এসে বললো- হুইল চেয়ার এনে দিই? আমি হাত নেড়ে নিষেধ করলাম। আসলে গত কাল সকাল পর্যন্ত দু’পায়ের উপর ছুটে চলা মানুষটা আমি কি করে সামান্য সময়ের ব্যবধানে এই রকম একটি সঙ্গীন অবস্থায়পৌঁছালাম সেই হিসেবটাই মেলাতে পারছিলাম না তখনো। না মাথা সোজা করতে পারছি আর না কাত করে রাখতে পারছি।পরে যাই হোক ডাক্তারা ভর্তি করে নিলেন। তাদের নিয়মানুগ পদ্ধতিতে সুঁচের খোঁচা আর এক্সরে মিলিয়ে প্রায় ৬টি টেস্ট করে প্রাথমিক অভ্যার্থনা কাজ সারলেন।(মাঝে মাঝে মনে হয় আমার হায়াতের এই পর্যায় পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্ত ডাক্তারদের সুঁচের খোঁচায় বেরিয়েছে সে পরিমাণ রক্ত নিরীহ মশা বেচারা ও খায়নি। এই নির্জলা সত্য কথনের জন্য আমার ডাক্তার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।) হাতে সেলাইন চালু করে দেয়া হল।এদিকে গত রাতে জ্বর ও এসেছিল কেন যেন। তাই হঠাৎ করে প্রচন্ড শীত লাগতে শুরু করলো। কিন্তু সারাক্ষণ কাবুলিওয়ালা গল্পের মিনির মত বকর বকর করা আমি মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও বের করতে ও কষ্ট লাগছিলো। হসপিটালের আলো গুলোকে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে শিষ বাজানো বেহায়া ছেলোগুলোর চাহনির মতই অসনীয় মনে হচ্ছিল।

আসলে দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকা সম্পর্কের বুনন গুলো বোধহয় অব্যক্ত সময়ে ও অনেক বেশী কেয়ারিং হয়। আমার হ্যাজব্যন্ড এগিয়ে এসে পায়ের কাছে ভাঁজ করে রাখা চাদরটা আমার গলা পর্যন্ত টেনে দিল। সেই সাদা চাদরে ঢাকা আমাকে দেখে মনটা চট করে ফিরে গেল নিকট এক অতীতে। যেদিন আমি আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়ে ছিলাম ঠিক সেদিন ও এমনি করেই আই .সি ইউ’র কর্তব্যরত ওয়ার্ড বয় আমার সামনে ধীরে ধীরে সাদা কাপড়ের আড়ালে বাবাকে ঢেকে দিয়েছিলেন । সেই তো হারিয়ে ফেললাম সারা জীবনের জন্য বাবার মায়াভরা মুখখানি। অশ্রুসজল চোখে সেদিন তাকিয়ে দেখেছিলাম কি করে বাবার বেডটির মাথার কাছ হতে সরিয়ে ফেরা হচ্ছিলো- এসএস সিদ্দিকুর রহমান। বয়স ৭৪। বেদনায় মনটা গুমরে কেঁদে উঠেছিলো-মনে হয়েছিলো আহারে জীবনে আর কখনো আমার জীবিত বাবা এই পরিচিতি কখনো বহন করবেন না। আব্বার জানাজার পর পরিচিত এক ভাইয়া এসে আমাদের সান্তনা দিয়ে বলছিলেন-মনে রাখবেন, আজ হতে আপনারা ই শুধু পিতৃহারা হননি। আপনাদের মত আরো অনেকেই আজ পিতৃহারা হয়েছেন। আপনার বাবার নিরব পরোপকারী জীবন আমাদের অনেকের হৃদয়ে উনাকে বাবার আসনেই ঠাঁই দিয়েছিলো। সেদিন অনেক বেশী করে অনুভব করেছিলাম মানুষ তার নেক কাজ দিয়ে মৃত্যুর পর ও হাজারো হৃদয়ে বেঁচে থাকে অনন্ত কাল। সেদিন নিজের জন্য ও কামনা করেছি- মাওলা, ঈমান, ইলম ও আমলের পরিপূর্ণতায় অসাধারণ কর্মময় এক জীবন চাই যে জীবন আমার মিতা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) যাপন করে গেছেন।

আফসোস হয় তাদের জন্য যারা বয়সের এই বেলাতে এসে ও ভুলে যান ফিরে যাবার ডাক। নিজের হীন স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাকে পুঁজি করে অন্যায় পথে ক্ষমতা দখলের নগ্ন উল্লাসে মেতে থাকেন।। জীবিত অবস্থাতেই ঠাঁই করে নেয় মানুষের ঘৃণা আর বদদোয়ায়।

নূর আয়েশা সিদ্দিকা( বিউটি)

বিষয়: বিবিধ

৭৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384897
১২ মার্চ ২০১৮ রাত ১০:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সুস্থটাই মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুন অঅপনাকে ধন্যবাদ
১২ মার্চ ২০১৮ রাত ১১:২১
317436
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : আপনার নেক দোয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
384899
১৩ মার্চ ২০১৮ দুপুর ০১:৪৬
আরিফা জাহান লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুন !
আপনার প্রিয় বাবাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করে করুন, আমীন!
১৩ মার্চ ২০১৮ রাত ১০:১৬
317441
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : অনেক শুকরিয়া। আপনার জন্য ও শুভ কামনা রইলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File