জানিনা কে দেবে জবাব
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:২৪:৩০ রাত
বেশ সুদৃশ্য একটি ছোট গিফট বক্স তিনি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম – কি এটা? ঠোঁটের কোণে নিজের চিরায়িত মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললেন- আগে খুলে তো দেখুন। পছন্দ হয় কিনা। আপনার জন্য সামান্য গিফট। আমি বক্স খুলে উনার সামান্য গিফটের চেহারা দেখে রীতিমত অবাক হলাম। একটি ফুটন্ত ফুল চারপাশে স্টোন বসানো।মাঝখানে সাদা একটি মুক্তো। বেশ সুদৃশ্য একটি আংটি। উনি উদগ্রীবতা নিয়ে প্রশ্ন করলেন- পছন্দ হয়েছে? আমি বেশ ইতস্তত বোধ করলাম। বললাম- শুধু শুধু কষ্ট করে কেন.....? উনি আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে বললেন- আপনাকে আমার এত ভালো লাগে... এত ভালো লাগে..আপনার কথার ভঙ্গি... আপনি.. সব কিছুই আমার ভালো লাগে। কাউকে ভালো লাগলে আমার কিছু দিতে ইচ্ছে করে। তাই আপনার জন্য নিয়ে এলাম। আমি অস্বস্তির সাথে বললাম- আরে না না ,বাইর থেকে ও রকম হয়ত মনে হয়। কিন্তু আপনার অত বেশি ভালোবাসা পাবার মত কোন যোগ্যতা আমার নেই। উনি হেসে মাথা দোলালেন। বললেন- আপনি জানেন না আপনি আমার কত প্রিয়। আমি রাসূল (সাঃ) এর হাদীস হতে জেনেছি কাউকে ভালো লাগলে তাকে সেটা জানিয়ে দিতে হয়। তাই বলছি- আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আমি তখন মনে মনে ফিসফিসিয়ে বললাম-হে প্রভু, উনার প্রত্যাশিত সুন্দর গুণগুলো অর্জনের ক্ষমতা সত্যিই তুমি আমাকে দিয়ে দাও। এমনি করে এই মানুষটির ভালোবাসার অত্যাচার আমাকে প্রায়ই সহ্য করতে হয়। কখনো এটা, কখনো সেটা উনি প্রায়ই আমাকে দিতে থাকেন। আসলে উনাকে আমি ও খুব ভালোবাসি। উনি আমার বই পড়ার বন্ধু। প্রায়ই আমার কাছ হতে বই ধার নেন। সুবোধ মানুষটির মত সময়মত ফেরত দেন। কোন কিছু শেখালে বেশ আগ্রহ করে শিখেন।
ওহ পাঠক! উনার নামই তো বলা হল না। ছবি ভাবীর কথাই আপনাদের বলছিলাম। সদাহাস্যময়ী মানুষটির মুখে হাসি লেপ্টেই থাকে। গত ২/৪ দিন আগে ফোন দিলাম। শুরু করলাম রীতিমত অভিযোগ দিয়েই - কি ব্যাপার ভাবী ভুলে গেছেন আমাকে? কত দিন কথা হয়না। খুব মিস করছি আপনাকে। মনে হল ওপাশ হতে ভাবীর গলাটা কেমন যেন প্রাণহীন। সেই সদাপ্রাণোচ্ছল হাসির ছটায় যেন ভাটার টান। বললেন- ভাবী, মনটা আজকাল খুব খারাপ থাকে তো তাই আপনাকে ফোন করা হয়না। আমি উদগ্রীবতা নিয়ে জানতে চাইলাম – কেন ভাবী? কি হয়েছে? উনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললেন – ভাবী, এখনো তো আমার দেবরের কোন খোঁজ পাওয়া গেলনা। দেশে আমার শ্বাশুড়ি ছেলের শোকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এই দিকে আমার স্বামী ছোট ভাইর জন্য পেরেশান। আমরা কত চেষ্টা করলাম। কিন্তু একটা খোঁজ পর্যন্ত পেলাম না। শুনে তো আমি ভয়ে জমে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম- ইস ভাবী আমি তো ভেবেছিলাম ওর খোঁজ পেয়ে গেছেন। আহারে এতদিন হয় গেল। দোয়া করি আল্লাহ যেন ওকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত দিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।
এক সময় কান্নারত ভাবীকে স্বান্তনা দিয়ে ফোন নামিয়ে রাখলাম।
ঘটনার বর্ণনায় আসি এবার।নিয়ন, ছবি ভাবীর একমাত্র দেবর। বাংলাদেশের একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বি.বি এ তে পড়ছিলো। শান্ত, সুবোধ, মেধাবী এক তরুণ। হঠাৎ কয়েকজন বন্ধুর আহবানে হেফাজতের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলো। সেই রাতে চারপাশে অবস্থানরত মানুষদের উপর নারকীয় তান্ডব দেখে ভয়ে ও এবং ওর বন্ধুরা রাতের অন্ধকারে ছুটতে ছুটতে প্রাণের ভয়ে কোন এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই পরিবারটি বাকী রাত ওদেরকে নিজেদের ঘরে লুকিয়ে রাখে। পরদিন বেশ বেলা করে সতর্কতার সাথে সিএনজি ডেকে দিয়ে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করে। সেই ঘটনার পর হতে নিয়নের চিন্তার জগতে বেশ পরিবর্তন আসে। ধীরে ধীরে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে শুরু করে। কোরআন ,হাদীস অধ্যয়ন শুরু করে। এক সময় দাড়ি ও রেখে দেয়।ছবি ভাবী আমাকে প্রায়ই ফোনে ওর কথা গল্প করতেন। যতটুকু বুঝেছি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে নিয়ন জড়িত ছিলনা। গত মাস খানেক আগের কথা। হঠাৎ নিয়নদের বাড়ির সামনে একটি মাইক্রো এসে থামে । সাদা পোষাকের একাধিক ব্যক্তি গাড়ি হতে নেমে আসে। ওরা নিয়নদের বাসায় ঢুকে শুরু করে তল্লাশী। এক পর্যায়ে ওর ব্যক্তিগত ব্যবহারের ল্যপটপ, কোরআন,হাদীসের বই গুলো সব নিয়ে নেয়। সেই সাথে নিয়নকেও ওদের সাথে নিয়ে যায়। প্রায় জন্মলগ্নেই বাবাহারা এই শান্তি ছেলেটি এলাকার সবার অনেক ভালোবাসা আর আদরের ছিলো । আশেপাশের লোকদের বর্ণনা মতে, নিয়নকে যে গাড়িতে তোলা হয় ওখানে আরো প্রায় ২৫/৩০ জন যুবক আগে হতেই আটকা পড়া ছিলো। ওদের সবাইকে থানায় নেয়া হচ্ছে বলে জানালেও নিয়নের পরিবার ঢাকার প্রতিটি থানায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে ও আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি ও কোথায়? কোন থানা’ই সেদিন এই নামে কাউকে এরেস্ট করা হয়েছে বলে স্বীকার করেনি। কেউ জানেনা কোথায় নিয়ে গেল সেই সাদা পোষাকের লোকেরা নিয়ন ও তার সাথীদের। সেই সাদা পোষাকধারীরা আসলে কারা?
ছবি ভাবী নিয়নকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন- নিয়নের জন্মের মাত্র ৯ মাসের মাথায় ওর বাবা মারা যান। তাই ওর বড় ভাই ওকে সন্তানের মত মুখে তুলে খাওয়াতো। সেই আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে উনার হ্যাজব্যণ্ড ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
৭১’ এ বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের কথা আমরা ইতিহাস হতে জেনেছি। আজ এ আবার কোন নব্য ৭১’ শুরু হল? কারা দেশের এই সব মেধাবী, সৎ চরিত্রবান তরুনদের গুম করছে? কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের সম্পদ এই সব নিয়নরা? কি ছিলো ওর অপরাধ? শুধুমাত্র কোরআন, হাদীসকে সঠিকভাবে জেনে নিজের মুসলিম জাতিস্বত্তাকে অনুভব করা? ড্রাগ,অপসংস্কৃতি আর নষ্টামির জীবন ছেড়ে সত্য সুন্দর এক নৈতিক জীবনের পথে চলতে শেখা? কেন কোরআন, হাদীসের বই নিয়নের ঘর হতে উঠিয়ে নেয়া হল? বাংলাদেশ কি এখন আর মুসলিম রাষ্ট্র নয়? কখন ফুরাবে নিয়নের দুঃখীনি মায়ের অপেক্ষার রজনী? স্বামী হারিয়ে যে সন্তানকে বুকে আকড়ে ধরে এক দুঃখীনি মা বেঁচে ছিলেন কি অপরাধে তার কোল খালি করা হল? জানিনা নিয়নের পরিবারকে কে দেবে এই না পাওয়া প্রশ্নের জবাব।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭২ বার পঠিত, ৪৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই দেশের এখন এই অবস্থা।
এখনি সময় ইসলমি শক্তি ঐক্যবদ্দ্ব হয়ার।
৭১-এ বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের সুচনা যারা শুরু করেছিল,তাদের প্রেতাত্মারাই আজকের সম্ভাবনাময় মেধাবী মুখগুলো কে জেল-জুলুম-হত্যা-গুম ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ কে মেধাহীন করার সুদুর প্রসারী চক্রান্তে লিপ্ত!
দিল্লিতে বৃষ্টি হলে এ দেশে যারা ছাতা মেলে ধরে তারাই ঐদেশের প্ল্যান বাস্তবায়নে এই সব করছে!
সামগ্রিক জেগে উঠার বিকল্প নেই!!
অপেক্ষা ছাড়া পথ নেই৷
এই এটুস ইয়ে মানে একটুস চোখের দোষের কারনে এদিক সেদিক ডানে বামে উপড়ে নিচে তাকানো এটা বয়শের দোষ হবে নিশ্চিত আপপু
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্নর ঢাকার প্রায় সবটাই ভারতীয় বাহিনীর দখলে ছিল। পাক সেনারা তখন ব্যারাকে ঢুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। এসব বুদ্ধীজীবীদের কেউ ইসলামী পন্থি না হলেও কেউ ভারতপন্থীও ছিলানা। পথের বাধা সরানো টা বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের বেশী গরজ ছিল।
একই শুকুন বাংলাদেশের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাই এসব কর্মের হোতা, শুধু ব্যবহুত হচ্ছে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ।
প্রতিনিয়ত এভাবে গুম, খুন হয়ে যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষগুলি। প্রবীণরা বলেন, ৭১ এ ও এমন পরিস্থিতি ছিল না।
তাই নিয়নের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার উপায় দেখছিনা। আল্লাহ নিয়নের মা, বড়ভাইকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন ।
এই হারিয়ে যাওয়াদের মধ্যে আমার আপনার প্রিয়জন প্রিয়জনেরা। আপনার লেখাটা ঐসব হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য কিছুটা হলেও ইতিহাস হবে। আপনাকে মোবারকবাদ।
কাহাফ ভাই,নজরুল ইসলাম টিপু ভাই দের সাথে ১০০% একমত ।
দেশের ও জনগনের এই ঘোর দুর্দিনে, আপনার আমার আর্থিক ও মানবিক সহযোগীতা ছাড়া চলমান আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই আসুন দেশে বিদেশে আমরা যারা আল্লাহর রহমতে দু ’পয়সা হালাল কামাই করছি, তারা আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করি। কেউ যদি শুধু দশ ডলার দিয়েও শরীক হতে চান তাহলে নিঃসংকোচে শরীক হোন। মনে নেই আমাদের আদর্শ খলিফা আবু বকর (রাঃ) এর ত্যাগের ইতিহাস? সম্ভবতঃ তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ(সাঃ)এর আহবানে যখন সব সাহাবীরা একে একে তাদের ধন সম্পদ আল্লাহর রাহে এনে তাঁর নিকট জমা দিচ্ছিলেন, তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ঘরে তেমন কিছুই ছিলনা দেবার। কারণ তিনি তো আগেই সব কিছু আল্লাহর রাহে খরচ করে ফেলেছেন। তবু, ঘরের শেষ সম্বলটুকু তিনি অতি সংকোচ এনে রাসূলের পদপাদে এনে হাজির করেন। রাসূল (সাঃ) প্রশ্ন করেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ, জবাবে তিনি বলেছিলেন ”তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই যথেষ্ট”। আহা, কি মহান ত্যাগ। আর আমরা এটাও জানি যে, সেই সামান্য অনুদানই আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছিল।
অতএব আর দেরী নয়। সবাই ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ-র নিয়্যত করে এখুনি নিজ নিজ দায়িত্বশীলের মারফতে আন্দোলনের জন্য অর্থ জোগানে এগিয়ে আসুন। কারণ, এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, জালিম হাসিনা সহজে গদি ছাড়ছেনা….
মন্তব্য করতে লগইন করুন