মত বিরোধ কি সত্যিই ক্ষমাহীন
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ০৮ মে, ২০১৪, ০৮:০৯:৫৬ রাত
মাঝে মাঝে কিছু পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কের বুননটি খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ হয়। যেখানে পারস্পরিক সন্দেহ, ভুল বুঝাবুঝি, অনসম্ভব ক্ষমাহীন মনোভাবের তিক্ত নোনা স্বাদ ছড়িয়ে রাখে সব সময়। বিষাদের এক করুণ সুর বইতে থাকে নিরবে।
শুরু করি একটি পজিটিভ ঘটনা দিয়েই।
ঘটনা ১- আমার খুব পরিচিত এক ভাবী। আমার সাথে সম্পর্ক ও বেশ ক্লোজ। প্রায়ই ফোনে কথা হত। একদিন কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বললেন- জানেন ভাবী,আমার হ্যাজব্যণ্ড এর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল বিয়ের আগে। আমি আবাক হয়ে বললাম- আপনি ব্যাপারটি বিয়ের আগে জানতেন? জেনে ,শুনেই বিয়ে করেছিলেন? ভদ্র মহিলা আমার প্রশ্নে ফোনের ওপাশ হতে মৌনতার চাদরে ভরাট করে রাখলেন সময়টা কিছুক্ষণ। এরপর বুকের ভেতর হতে বড় রকমের একটি দীর্ঘশ্বাস মুক্ত করে বললেন- না ভাবী । ওরা ব্যাপারটি লুকিয়েছিল। আমি বাসর রাতে জেনেছি। সুপ্রিয় পাঠক, কথাটি আমার মাঝে ক্ষণিকেই এক পূর্ব সতর্কতাহীন ঝড়ো হাওয়ার রুদ্রমূর্তি নিয়ে আর্বিভূত হল। মানুষের প্রতি বিশ্বাসের শুভ্র দেয়ালে শত শত ফাটলের অস্তিত্ব বিমূর্ত করে তুলল। আমি প্রশ্ন করলাম- আপনি জানতে চাননি কেন এত বড় সত্য গোপন করলেন তিনি? ভদ্রমহিলা ব্যাথাতুর গলায় বললেন –জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও তখন একটি সুন্দর কথা বলেছিল। ও বলেছিল এই অপারেশনটি আমার বিয়ের আগে না হয়ে পরে হলে তুমি কি আমাকে ছেড়ে যেতে? আমি বললাম- আপনার কি মনে হয়? ভদ্রমহিলা বললেন- আমি প্রথমে মনে খুব কষ্ট পেলে ও পরে ভাবলাম এটা নিশ্চয় আমার তকদিরে ছিলো। আসলে ও তো তাই । আমার বিয়ের পর এ ঘটনা হলে আমি তো তাকে কখনো ছেড়ে যেতাম না। আর ভাবী দিনের পর দিন সংসার করতে যেয়ে বুঝলাম মানুষটা সত্যি ভীষণ ভালো। তাই এখন এই দীর্ঘ সংসার জীবনে এ বিষয়টি কখনো আমাকে আর ততটা ভাবনাহত করেনা। মহিলার উপলব্দি আর ক্ষমার সুন্দর মন দেখে আমি বললাম- ভাবী দোয়া করি অবারিত সুখের প্লাবনে আপনারা ডুবে থাকুন অহর্নিশ। উপর ওয়ালার ইচ্ছে বোধহয় অন্যরকম ছিলো। বেশ অনেক বছর পর ভদ্রলোক মারা গেলেন। কিন্তু ভাবীর শোকাহত হৃদয়ের আহাজারি হতে বুঝেছি ভদ্রলোক আসলেই বেশ ভালো মানুষ ছিলেন।
ঘটনা ২- এ ভদ্রলোকের বিয়েটা বেশ হুট করেই হল। বিয়ের বেশ অনেকদিন পর তিনি শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেলেন। তখন আবিস্কার করলেন তার স্ত্রীর পূর্বে আর এক বিয়ে হয়েছিল। শুধু তাই নয়। একটি খুব ছোট বাচ্চা ও তার আছে। ভদ্রলোক স্ত্রী’কে যখন প্রকৃত ঘটনা কি জানতে চাইলেন তখন স্ত্রী সব স্বীকার করলেন। বেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার আগের স্বামীর দু:শ্চরিত্রতার কারণে বাবা মা ডিভোর্স দিয়ে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। তখন ভদ্রমহিলার বাচ্চাটি ভুমিষ্ঠই হয়নি। আমি ঘটনাবর্ণনা কারীর কাছে জানতে চাইলাম – ভদ্রলোক এরপর কি করেছিলেন। বর্ণনাকারী বললেন- ভদ্রলোক প্রথমে খুব মনে কষ্ট পেয়েছিলেন। কেননা ব্যাপাটি তিনি আগে হতে জানতেন না। পরে ঠান্ডা মাথায় ভাবলেন- আহারে হ্যজব্যণ্ডের কত বড় নিষ্ঠুরতার কারণে এ অবস্থায় মহিলা তাকে ছেড়ে এসেছে। আমি যদি আজ তাকে ডির্ভোস দিয়ে দিই তবে আমি ও তো সেই নিষ্ঠুরতারই পথ বেছে নিলাম। তিনি বললেন –আমি আমার স্ত্রী’কে ক্ষমা করে দিলাম। আর বললাম – এখন হতে আমিই বাচ্চাটির দায়িত্ব নেব।
অন্যরকম ঘটনা
১. জনাব আজিজ বেশ নামী দামী একজন মানুষ। বিয়ের কিছুদিন পরই বিদেশ চলে এলেন। একটি ফুটফুটে বাচ্চার জনক হওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির কোন এক দু:সম্পর্কের আত্নীয়ের মাধ্যমে জানতে পারলেন তার স্ত্রীর বিয়ের পূর্বে কোন ঘটনা আছে। তিনি দেশে যেয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন গোপনে। স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি অস্বীকার করলেন। এর মাঝে আরো একটি সন্তানের পিতা হলেন তিনি। কিন্তু মনের মাঝে পুঁতে থাকা সন্দেহের কাটা প্রতিনিয়ত তাকে খোঁচাতে লাগলো। এক পর্যায়ে তিনি আবিস্কার করলেন প্রকৃত ঘটনা। তার স্ত্রী বিয়ের আগে একজনকে পছন্দ করতো। তাই পালিয়ে তাকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু ছেলেটি পরে দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় বিয়েটি ভেঙ্গে যায়। তখন তার বাবা মা লুকিয়ে দ্রুত আজীজ সাহেবের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। ভদ্রলোক এই সত্য জানার পর স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। আত্নীয় স্বজনের অনেক চেষ্টা তদবির স্বত্তেও এক পর্যায়ে স্ত্রী কে ডিভোর্স দিয়ে দেন। যতটুকু জানি ছেলে মেয়ে দুটো বড় হবার পর তাদেরকে বিয়ে শাদী দিয়ে ভদ্রলোক এখন একা নি:সঙ্গতার জগদ্দল পাথর বয়ে বেড়াচ্ছেন । কেননা প্রথমা স্ত্রীর প্রতি আক্রোশ হতে তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। তার ক্ষমাহীন আচরণের পথ ধরে বাচ্চারা ও কখনো বাবা মায়ের সম্মিলিত উপস্থিতিতে পারিবারিক যে পরিপূর্ণ ভালোবাসা তা পায়নি। শুনেছি বাচ্চারা ছোটবেলায় প্রায় বাবাকে প্রশ্ন করতো – বাবা, মা কেন আর আমাদের সাথে থাকেনা? নিজের ক্ষমাহীন কঠোর চরিত্রের কথা বাচ্চাদের কাছে অনুচ্চারিত থাকলেও জীবনের পরিক্রমায় তারা আজ জানে তাদের মায়ের অপরাধ গোপনের শাস্তি ভোগ করতে গিয়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে তাদের শৈশব জীবন।
৪. জামশেদ সাহেবদের এ ঘটনাটি আর একটু ব্যতিক্রম। না এই দম্পতি ক্ষমাহীন আচরণের পথ ধরে সম্পর্কের ছেদ টানেননি ঠিকই। বরং পারস্পরিক তিক্ততা, সন্দেহ, ভুলবুঝাবুঝি নিয়েই সংসার করছেন বছরের পর বছর। এই তিক্ত পরিবেশেই বাচ্চারা বেড়ে উঠছে। এই অবস্থা শুধু তাদের পরিবারের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা দুজনই দুজন সম্পর্কে বলে বেড়ান আত্নীয়, পরিজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মাঝে ও। আর এই তিক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা বাচ্চারা ও বাবা মায়ের ঝগড়া কথা কাটাকাটি এসব দেখতে দেখতে দুজনকেই ঘৃণা করে এখন। স্বামী স্ত্রী একজন অন্যজনের প্রতি অযাচিত সন্দেহ, স্বামী কেন তার বাবা মা,ভাই বোনের জন্য টাকা পাঠায়, এ জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক রেশারেশী। সম্মানিত পাঠক শেষোক্ত এই পরিবারের অবস্থা যে এত বেহাল না দেখলে কেউ অনুভব করতে পারবেন না। এই পরিবারে বেড়ে উঠা বাচ্চাদের পরবর্তী জীবনে ও এ আচরণ বিরুপ প্রভাব ফেলবে নি:সন্দেহে।
সমাধানের পথে আসি
পারিবারিক পরিবেশে সঠিক ইসলামী অনুশাসন মেনে না চলার কারণে বিবাহ পূর্ব সম্পর্ক এমনকি তা গোপনে বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো আজকাল আমাদের সমাজে কমন একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর ফলে পরবর্তীতে সামাজিক ভাবে অনুষ্ঠিত বিয়ের সময় তথ্য গোপন করা ও একই ধারাবাহিকতায় চলে আসছে। এক্ষেত্রে
অনেকে মনে করেন বিয়ের পর জানলে কোন সমস্যা নেই। কেননা বিয়েতো হয়েই গেছে তাই মেনে নিতে বাধ্য হবে। কিন্তু শুরুতেই যে কথাটি মনে রাখতে হবে পরের সমস্যার চাইতে আগের সমস্যা ভালো। কেননা অতীত জীবনের গোপন করা ঘটনার কারণে কেউ কেউ পরবর্তীতে মেনে নিলে ও কোন কোন সম্পর্ক আজিজ সাহেবের মত গড়ায়। আর না হয় জামশেদ সাহেবের মত তিক্ততার সাথে ঝুলে থাকে। যার কোনটাই আসলে কাম্য নয়।
তাই ১. পরিবারে ইসলামী অনুশাসন এর সঠিক ও আন্তরিক চর্চা থাকতে হবে। বাবা মায়ের ভয়ে নয় বরং আল্লাহকেই ভয় করে ছেলে মেয়েরা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা হতে দূরে থাকবে।
২. বিয়ের সময় পাত্র বা পাত্রীর কোন অতীত ঘটনা থাকলে তা সুন্দর করে অপর পক্ষের সামনে বুঝিয়ে বলতে হবে।
৩. বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী’র যদি কোন অতীত সামনে এসে যায় তাহলে যার ভুল তিনি যদি অকপটে স্বীকার করেন ও আর অন্য পক্ষ যদি তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে মেনে নিয়ে উদার হতে পারেন তাহলে জটিলতা অনেক কমে যায়।
৪. নিজেদের পূর্ব ঘটনার জের ধরে সম্পর্কের ইতি টানার কারণে সন্তানদের জীবন যে কতবড় সমস্যার আবর্তে জড়িয়ে যায় সেটা বাবা মাকে উপলব্দি করতে হবে।
তাই সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করেই নিজেরা সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
৫. মহান আল্লাহর পক্ষ হতে তালাক সবচেয়ে ঘৃণিত জায়েজ বলা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এ ধরণের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভালো ভাবে পরিস্থিতি উপলব্দি করা উচিত। কেননা নতুন করে আবার জীবন শুরু করলেও যে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা সেটা কেই পূর্ব হতে জানেন না।
৬. ইসলাম ক্ষমা ও ভুলের পর তওবা করাকে অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। তাই এক পক্ষ অপরাধের কারণে লজ্জিত হয়ে তওবা করলে অন্য পক্ষ তা মেনে নেয়া উচিত।
৭. পারিবারিক পরিবেশে যে কোন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী মনোমালিন্যতা পুষে রাখা শুধু স্বামী স্ত্রী’র জন্যই ক্ষতিকর নয়। বরং সেই বিষাক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা বাচ্চাদের জীবনকে ও তা কুলষিত করে। ফলে সেই বাচ্চারা জীবনের একটি পর্যায়ে এসে নিজেদের দাম্পত্য জীবনে নিজেরাও কখনো সুখী হয়না। তাই যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে স্বামী- স্ত্রী দুজন বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা সবচেয়ে কল্যাণকর। এক্ষেত্র চাইলে সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য কোন তৃতীয় পক্ষের ও সাহায্য নেয়া যায়।
মহান আল্লাহ যেন আমাদের পরিবারগুলোকে অনাবিল সুখের জান্নাতী আবহে ভরিয়ে দেন এই শুভ কামনা রইলো।
বিষয়: বিবিধ
২০৬৮ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আমরা কয়জন মুসলমান সেই আল কোরআনের বাণী আর নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনি মেনে চলি। আমার ঘরে যদি সারাদিন ভারতীয় সিরিয়াল চলে আর আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে ঘরে ঢুকাই তাহলে আর শান্তি আসবে কোথ্থেকে।
আমাদের সন্তানরা কিভাবে জানবে হিংসা , ঈর্ষা , লোভ , অহংকার , অশ্লিলতা, চুগলখুরী , গীবত , অপবাদ এসব কি ? এসব আমাদের জীবনে কি ক্ষতি করে ? এসব থাকে বাঁচার উপায় কি ?
ক্ষমা কি ? সহনশীলতা কি ? উদারতা কি ? মানবতা কি ? সহমর্মিতা কি ? এই দুনিয়ার জীবন কয়দিনের ?
পোস্টটি স্টিকি হওয়া খুবই জরুরী।
একমত
গুরুত্বপূর্ণ এ পোস্টটির সারমর্ম হলো উপরের কোটকৃত অংশটি, আশা করি সবাই একমত হবেন।
আপার জন্য রইলো অনেক অনেক দুয়া। আগের মতো বেশী বেশী লিখার অনুরোধ রইল।
পরের সমস্যার চাইতে আগের সমস্যা ভালো - সম্পূর্ন একমত। বিয়ে একবার হয়ে গেলে আর সমস্যা হবেনা ভাবা মানে তো ফাঁদে ফেলার মানসিকতা। এভাবে কি একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করা যায়?
বিষয়গুলো আলাপ করার জন্য ধন্যবাদ
বাস্তবতা তুলে ধরায় ধন্যবাদ আপনাকে নিয়মিত লিখবেন
দাম্পত্য জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোকে ইসলামের দৃস্টি দিয়ে পজেটিভ লি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ্। খুব মন দিয়ে পড়লাম। ভাল লাল। শিক্ষনীয়ও বটে।
ধন্যবাদ আপনাকে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি বিয়ে উত্তর ভালোবাসা এতো গভীর হয় কি করে। আমি যখন খুব প্রানবন্ত একজন সুস্থ স্বামী ছিলাম তখন যে ভালোবাসা পেয়েছি, মারাত্মক এই অসুস্থ জীবনে আরো প্রগাঢ় সে ভালোবাসা অনুভব করি। এটা আল্লাহর দান ই তো। মানুষ আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার সন্ধা কেন করে বুঝিনা। ধর্মহীন জীবনের কিয়মতের আগুন গুলো সরাতে আমাদের মত ধর্মের লোকদের যখন ঘন্টার পর ঘ্নটা সময় দিতে হয়, তখন ওদের উপর বড়ই করুনা হয়। জীবনে তোদের কীইবা পেলি। ধর্ম গেলো, আল্লাহ রাসূল গেলো, কুরান বুঝলিনা মানলিনা। আর টাকার কাড়ির মাঝে থেকেও এত অসুখী তোরা!!!!
জাযাকিল্লাহ খায়রান। লেখাটা আসলেই সুন্দর হয়েছে।
ভুলের মাশুল। লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৮:১৬ রাত << আগের পোস্ট পরের পোস্ট >>
নিত্যদিনের মত সাদেক আলি সাহেব অফিসে বের হলেন।তিনি জাজিরাতুল আরবে একটি প্রতিষ্ঠিত কম্পানির মধ্যম শ্রেনীর অফিসার।অফিসে ঢুকেই ইলেক্ট্রনিক ফিংগারিং করে মোড় ফিরতেই রিসেপ্সনে বসা একজনকে দেখতে পেলেন।সাদেক আলি সাহেব লোক হিসেবে ভাল তবে ভাল মন্দ মিলেই কাজ করেন।ভদ্রলোককে দেখে বা্ংলাদেশি মনে হতেই জিজ্গেস করলেন আপনি কি বা্ংলাদেশি? আগুন্তক জবাব দিলেন জি হাঁ।কুশালাদি জিজ্গেস করে জানতে পারলেন তিনি এ কম্পানিতে একজন সেলস এ্ক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন করতে এসেছেন।সাদেক আলি সাহেব বললেন সেলস ম্যানেজার আসতে সময় লাগবে আপনি আসুন আমরা কথা বলি।সাদেক আলি সাহেব নাম ধাম দেশের বাড়ি ইত্যাদি জিজ্গেস করে পিয়নকে ডাকলেন।ছালামত সাহেবকে বললেন, চা না কফি খাবেন। ছালামত সাহেব বললেন ,এ্যানিথি্ং এ্যালস।সাদেক আলি সাহেব বললেন একটা চা চিনি ছাড়া ও একটা কফি নিয়ে আস।চা পান করতে করতে কোম্পানি সম্পর্কে মোটামুটি ব্রিফি্ং দিলেন সাদেক আলি সাহেব।সেলস ম্যানেজার আসলো ছালামত সাহেব মিটি্ং রুমে গেলেন। এক ঘন্টা মিটি্ং হলো।অন্চল সেলস ও রুট সম্পর্কে ব্রিফি্ং দিলেন আর বললেন আগামি কাল বিকেলে রুট সেলসম্যানদের সাথে মিটি্ং কল করুন।সেক্রেটারিকে বললেন একটা মেমো ইস্যু করো যেন সব সেলসম্যান আগামি কাল মিটি্ং এ জয়েন করে।ছালামত সাহেব একটা ডায়েরিতে সব নোট করে পরের দিনের প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছু হোম ওয়ার্ক করলেন।এদিকে বেলা প্রায় দু'টোর কাছা কাছি।সাদেক আলি সাহেব বাসায় বলে দিয়েছেন একজন মেহমান আছে ভালমন্দ রান্না কর।আর ছালামত সাহেবকেও জানিয়ে দিলেন।ছালামত সাহেব বলললেন কি দরকার আছে।সাদেক আলি সাহেব বললেন বাসাটাও চিনা হবে আমার ছোট মেয়েটাকেও দেখে আসবেন।ছালামত সাহেব পাশের ষ্টোর থেকে একটি চকলেটের ব্ক্স ও কিছু বই কিনলেন মেয়েটির জন্য।এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় পৌঁছে গেলেন।কলিং বেল টিপতেই সাদেক আলি সাহেবের মেয়ে টুসিয়া বাবার গলার স্বর শুনে মাকে বললো মা দরজা খোল বাবা এসেছে।দরজা খুলতেই সালাম বিনিময় হলো।ছালামত সাহেব সেলসম্যানদের আচরনে ভাবির খুব প্রশংসা করলো।সাদেক আলি সাহেব ছালামত সাহেবকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিলেন।ছালামত সাহেব উপটৌকন যা নিলেন তা মেয়েটির হাতে দিলেন আর নাম , কোন স্কুলে পড়ে ইত্যাদি জিজ্গেস করলেন।সাদেক আলি সাহেব ফ্রেস হয়ে এসে ছালামত সাহেবকে বললেন ড্রেস পরিবর্তন করুন ও ফ্রেস হয়ে নিন। ছালামত সাহেব বললেন আমি অফিস থেকে সব সেরে এসেছি।এবার বেগম সাহেবা খাবার ডাইনিং এ সাজিয়ে দু'জনকেই ডাকলেন।সবাই একসাথে বসলেন।সাদেক আলি সাহেব খাবার উঠিয়ে দিলেন।ভাবি এবার ছালামত সাহেবের পারিবারিক খবরাদি জিজ্গেস করলেন। ছালামত সাহেব বললেন আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাবি প্রশংসা করে বললেন বা: সুন্দর ছোট পরিবার।ছালামত সাহেব উত্তর দিলেন আপনারাও তো তাই।খাওয়া শেষ।ছালামত সাহেব ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন।সাদেক আলি সাহেব বেগম ও মেয়েকে নিয়ে অন্দরে রেষ্ট করতে গেলেন।এক ঘন্টা পর আবার অফিসের উদ্দেশ্যে দু'জন বের হয়ে পড়লেন।ছালামত সাহেব একটি ফার্নিশড এ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন।রাতে সেখানে সাদেক আলি সাহেব ড্রপ করে দিলেন।
ছালামত সাহেব অফিসে সেট হয়ে গেলেন। নতুন গাড়ি পেলেন।সপ্তাহিক ছুটির দিনে আসেন ,একসাথে বেড়াতে যান , খাওয়া দাওয়া করেন।এভাবে কিছুদিন কাটে।ছালামত সাহেব চিপচিপে "ছ" ফুট লম্বা হলেও চেহারায় একটা মায়া আর তার সাথে কথার চমক চিল। কারন সেলসম্যানদের এটা একটা বড় পুঁজি।যে সেলসম্যান যত চতুর তত বেশি সেলস ফিলড জমাতে পারে।এরই মধ্যে ভাবি ও বাচ্চাকে ভাল গিফট দিয়ে একেবারে পরিবারের সাথে মিশে গেছে।সাদেক সাহেবের বাসার ঠিক উল্টো দিকে আর একজন বাংলাদেশি পরিবার থাকে।ভাইদের সাথে তেমন উঠা বসা না থাকলেও ভাবিদের যোগাযোগ আছে।একদিন সাদেক আলি সাহেব অফিসের কাজে একদিনের জন্য আর একটি শহরে যায়।সকাল দশটার দিকে ছালামত সাহেব এসে সাদেক আলি সাহেবের বাসায় কলিং বেল টিপলো।অনেক বাসার কলিং বেল পাশের বাসা থেকে শুনা যায়।পাশের বাসার ভাবি ছিলেন ধার্মিক প্রকৃতির এবং ইতিমধ্যে আসা যাওয়ার সময় তাদের কথায় হাস্যালাপের কিছু আলামত লক্ষ্য করেছেন।তাই এত সকালে কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজার কাছে এসে দেখলেন ছালামত সাহেব দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবি হাসিবরন মুখে আমন্ত্রন জানাচ্ছেন।পাশের ভাবি সন্দেহ করলেন একজন অফিস কলিগ এত সকালে এসেছে।তাছাড়া উনার স্বামি বা ময়েটিও নেই।২০/২৫ মিনিট পর ভাবি গেলেন ও কলিং বেল টিপলেন।টুসিয়ার আম্মু দরজার কাছে এসে যখন ভাবিকে দেখলেন তখন বললেন ভাবি আমি একটু ব্যাস্ত আপনাকে পরে ডাকছি।ভাবি বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন আমি একটু আপনার টয়লেটটি ইউজ করবো।এবারতো না করার কোন উপায় নেই। বললেন একটু দাঁড়ান।ঘুরে এসে দরজা খুললেন।পাশের ভাবি টয়লেটের ভান করে এক মিনিট পরই বের হয়ে আসলেন।টয়লেটের দরজার শব্দ শুনে সাদেক ভাবি ড্রয়িং রুম থেকে দৌড়ে আসলেন।পাশের ভাবি ড্রয়িং রুমে যেতেই সাদেক ভাবি বাধা দিলেন এই বলে আমাদের একজন মেহমান আছে।ভাবির নিয়াত ছিল ভাল।তিনি বললেন কে এই মেহমান।সাদেক ভাবি বললেন আপনি চিনবেন না।এবার ভাবি বললেন আমি তো দেখেছি ছালামত সাহেব এসেছেন।এবার সাদেক ভাবি রেগে গিয়ে বললেন আপনার কত বড় আস্পর্ধা পরের ঘরের খবর করতে আসছেন। আর কখনো আমার বাসায় আসবেন না।পাশের ভাবি বেরোতেই ছালামত সাহেব বেরিয়ে গেলেন।পাশের ভাবি রাতে ভাইকে বিষয়টি জানলেন।যদিও সাদেক সাহেবের সাথে উঠাবসা নেই পরের দিন সাদেক সাহেবের অফিসে গিয়ে হাজির।সাদেক সাহেব তো ভদ্রলোককে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন।বললেন আমরা পাশা পাশি অথচ যোগাযোগ নেই।শুধি পাঠক আমি এ বিষয়টিতে আসছি কোরানের কয়েকটি আয়াতের পর যা আপনাদের দাম্পত্ব জীবনকে বুঝতে সাহায্য করবে।সূরা নূরের ২৭/২৮/২৯/৩০/৩১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষন না তোমরা অনুমতি পেয়েছ এবং তাদের বাসিন্দাদের সালাম কর।যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও তোমরা ফিরে যাবে এটিই তোমাদের জন্য উত্তম।আর মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন মহিলারা দৃষ্টি অবনত করুক ও তাদের আঙিক কার্যাবলির হেফাযত করুক এবং তাদের অঙ শোভা যেন প্রদর্শন না করে।' এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টই বুঝা যাছ্ছে কিভাবে আমরা পারিবারিক ভাবে মেলামেশা করবো।
সাদেক ভাবি ইতিমধ্যে ভাইকে পটিয়ে ফেলেছে ঠিক উল্টো তথ্য দিয়ে।সাদেক সাহেব এবার বললেন ভাই যে ব্যাপারে আমার আপনার কাছে যাওয়ার কথা সে ব্যাপারে আপনিই আমার কাছে এসেছেন।আপনি অফিস থাকা কালিন সকালে আপনার বাসায় লোক আসে।পাঠক এখানে একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হলো আপনি যদি পরিবারের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকেন তাহলে আপনার পরিবারকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন। পাশের ভাই ভাবিকে এ ব্যাপারে কোন কিছু না বলে পরের দিন সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত এক সপ্তাহ বাসার কাছে অপেক্ষা করলেন।দেখলেন দু'দিন ছালামত সাহেব এসেছে ও এক বা দেড় ঘন্টা থেকে চলে গিয়েছে।এবার আবারো সাদেক সাহেবকে কথাটা বললেন।সাদেক সাহেব কি করে বিশ্বাস করবেন যে নারী সকালে নিজের জুতো শাড়ির আঁচলে মুছে দেয়, অফিসে যাওয়ার আগে সব প্রস্তুত করে রাখে আবার অফিস থেকে ফিরলে স্বামীর পরিচর্যা করে।এ নিয়ে দু'পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও হয়ে যায়।কিন্তু এরই মধ্যে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।ছালামত সাহেব কানাডায় ট্রান্সফার নিয়ে নেন তবে কিছুদিন এখনো বাকি।পরামর্শ হলো সাদেক ভাবি দেশে বেড়াতে যাবে আর ওখান থেকে সাদেক ভাবিকে নিয়ে যাবে কানাডায়।এদিকে সাদেক ভাবি ভাইকে বললো আমার কেন জানি ভাল লাগছে না মাকে ক'দিনের জন্য দেখে আসি।আর টুসিয়ার ও ছুটি আছে। সাদেক সাহেব ভাবলো এতগুলো কথা হছ্ছে আর দেশে ঘুরে আসাটাই ভাল।এ্ক্সিট রিএন্ট্রি লাগানো হলো।সাদেক ভাবি চলে যাওয়ার আগের দিনও পাশের ভাই কান্না কন্ঠে বললো ভাই আপনি যতই আমাকে খারাপ ভাবুন আমি আপনার উপকার করতে ছেয়েছি।এবার নিশ্চয়ই আপনি ভুলের মাশুল দিবেন।সাদেক ভাবি চলে গেল টুসিয়াকে নিয়ে।১৫ দিন পর হঠাৎ খবর এলো টুসিয়ার মাকে পাওয়া যাছ্ছেনা।সাদেক সাহেব দেশে গেলেন।থানায় ডায়েরি করে জানতে পারলেন এ নামের যে পাসপোর্ট টির পাছেন্জার কানাডায় চলে গেছেন।সাদেক সাহেব টুসিয়াকে নিয়ে বিমর্ষ চিত্তে কর্মস্হলে চলে এলেন।মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিলেন।অত্যন্ত ধার্মিক হলেন আর পাশের ভাই ভাবিকে জীবনের কথাগুলো বলললেন যা আমি আপনাদের অবগতির জন্য বর্ননা করলাম।এটি একটি সত্য ঘটনা যা আপনিও আপনার আশে পাশে দেখতে পাবেন সচরাচর ঘটছে।
সম্মানিত পাঠক আমাদের সমাজে এ কাহিনির শেষ নেই।তবে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে পরিবার লালন পালনের ক্ষেত্রে। আপনার একটি ভুলের জন্য সারা জীবন আপনাকে চরম অশান্তি ভোগ করতে হবে।শুধু আপনাকেই নয় সন্তানদের জীবনে ও নেমে আসে অশান্তি।আপনার মেহমান যতই আপন হোক, মেহমানের যায়গায় মেহমানকে রাখুন।পর্দার সুরক্ষা করুন।ইসলামের বিধিবিধান তথা হালাল হারাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলুন।সামাজিক এ বিপর্যয়গুলো আসে বেপর্দা ও পরিবারকে স্বাধীনতা দেয়ার কারনে।সেজন্য পরিবারকে কোরআন ও সূন্নাহের আলোকে সুরক্ষা করুন। আসুন আমরা দৈনন্দিন জীবনে কোরান ও সূন্নাহকে আঁকড়ে ধরে পরিবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করি তাহলেই এই সামাজিক অবক্ষয় থেকে বাঁচতে পারবো।
বিষয়: বিবিধ
আপনার কোনো লেখা এটাই প্রথম পড়লাম।
খুব ভালো লিখেন আপনি।
একটানা পড়ে গেলাম। একটুও বিরক্তি আসেনি। এটাই আপনার লেখার বৈশিষ্ট্য। এক চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত আপনার লেখাটি।
অনেক ভালো লাগলো।
একে একে অন্যগুলোও পড়বার আশা রাখছি। ঘটনা-১ এর ভদ্রমহিলা এবং ঘটনা-২ এর ভদ্রলোক স্যালুট পাবার যোগ্যতা রাখেন ওনারা সাদা মনের মানুষ।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার প্রতি।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন