এক প্রবাসী বাবার আহাজারি( অপরাধ একটাই পোলা আমার শিবির করতো)
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:১৮:৩২ বিকাল
)
কেয়ার টেকার মইন মিয়া বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘক্ষণ ধরে। তাই রাস্তার উপর অপেক্ষমাণ ট্যক্মিটি তার দৃষ্টি এড়ালোনা। ব্যাপারটা কি? এত লোক যাচ্ছে। আসছে। কিন্তু ট্যক্মিটি ভাড়া নেয়ার কোন লক্ষণই নেই। আরো বেশ খানিক্ষণ আপেক্ষা করে মইন এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল। আধাআধি নামানো ট্যক্মির জানালার কাছে মুখ এনে বলল- ভাইরে তো দেশিই মনে হয়। বিষয়টা কি? অনেক্ষণ ধইরা এইহানেই খাড়াইয়া আছেন? শরীর খারাপ নাতো ভাই? ড্রাইভিং সিট হতে মধ্য বয়সী জামশেদ আলী করুন চোখে তাকিয়ে বলল- নারে ভাই শরীর খারাপ না। তয় মনডা খারাপ। মইন বলল- তাইতো দেখতাচি- ভাড়া ও টানতাচেন না দেহি। জামশেদ আলীর মুখের আদল খানিকটা কঠিন হয়ে গেল। চড়ানো গলায় বললো- ভাড়া টাইনা টাইনাই তো জীবনডা শেষ করলাম। কিন্তু লাভটা কি হইলো। আমার তো সব শেষ হইয়া গেছেরে ভাই। সব শেষ হইয়া গেছে। মইন সমবেদনার সাথে জানতে চায়- কি হইছে মিয়া বাই খুইলা কন। জামশেদ বলল- ভাই আইজ ২০/২৫ বছর ধইরা এই সৌদিতে আইসা ড্রাইভারের কাজ করি। একটা মাত্র পোলা । অনেক কষ্টে লেখা পড়া শিখাইয়া শিক্ষিত করছি। ২ বছর আগে নিজে দেশে যাইয়া পোলারে বিয়া করাইলাম। ৭/৮ মাসের একটা ছোট নাতি ও আছে। কাইল রাইতে খবর পাইলাম আমার নিরিহ পোলাডারে নাকি পুলিশ গুলি কইরা মাইরা ফালাইছে। ঝরঝর করে অনিরুদ্ধ কান্নায় মধ্যবয়সী জামশেদ মিয়ার গাল আদ্রতায় ভিজে যায়। মইন অবাক চোখে তাকিয়ে জানতে চায়- কেন রে ভাই? পোলাটা কি কোন অপরাধ করছিল। জামশেদ আলী কান্নারত গলায় বলে- বড় ভালো পোলা আছিল। গেরামবাসী সক্কলেই তারে পছন্দ করতো। অপরাধ...হ ভাই অপরাধ তো একটা করছেই। পোলা আমার শিবির করতো।
( জানি এক প্রবাসী লিমোজিন ড্রাইবারের এই শোক পত্রিকায় কিংবা মিডিয়াতে তুলে ধরার মত সময় আমাদের মিডিয়া কর্মীদের নেই। তাই সম্পূর্ণ মানবিক দায়বদ্ধতা হতে মইন মিয়ার কাছ হতে শোনা ঘটনাটি উল্লেখ করলাম। গোপনীয়তা রক্ষায় উভয়ের জন্যই ছদ্মনাম ব্যবহার করলাম।)
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন