অহংকারী মহিলাটি আমার আত্নীয়ও হন
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ০৭ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৪৩:৪৪ রাত
আমার খুব কাছাকাছিতেই এক ভদ্র মহিলা থাকেন। মহিলার চারটি বাচ্চা। মাশাআল্লাহ প্রতিটি বাচ্চাই খুব সুন্দর। মনে হয় মায়ের সৌন্দর্যটাই পেয়েছে। কেননা মহিলা ও বেশ সুন্দরী। আমি আমার বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই মহিলাকে দেখি। বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন। খুব ইচ্ছে করে মহিলার সাথে পরিচিত হতে। আমার ছোট মেয়ে জুয়াইরিয়া তো প্রায়ই বায়না ধরে, মা আমি বেবিগুলোর সাথে একটু খেলতে চাই প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।
কিন্তু কি করা। চাইলেই তো সব হয়না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশ ক’বার চেষ্টা করে দেখলাম মহিলার সাথে ভাব জমাতে। কিন্ত ভাব করা তো দূরে থাক মহিলা আমাকে পাত্তাই দেয়না। অথচ বন্ধু হিসেবে আমি মোটেও নিরস মানুষ নই। শিশু, কিশোরী, সমবয়সী,অথবা সিনিয়রদের সাথে ও আমার বেশ সখ্যতা। আমার বাচ্চারা তো মাঝে মাঝে আবাক হয়ে বলে- মা, সবাই তোমাকে এত ভালোবাসে কেন? তুমি তো খুব পপুলার।
কিন্তু বিধি বাম। এই মহিলার কাছে তো আমার চিরদিনকার এই মান ইজ্জত এই প্রথমবারের মত পাংচার হবার জোগাড়। ভাবলাম মহিলা সুন্দরী বলেই কি তার অহংকারটা এত বেশী? অথচ দুঃখের কথা আর কি বলবো। মহিলা সম্পর্কে আমার এক রকম আত্নীয় ও হন। উনি আমার মামার খালা। তার মানে আমার দূর সম্পর্কের বোন। কিন্তু মহিলার কাছেই তো যাওয়া যায় না। অথচ আমার ছোট মেয়েটা উনার বাচ্চাদের সাথে ভাব জমাবার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
এবার সেদিন ভাবলাম মান আপমান যাই থাক কপালে। আল্লাহ ভরসা। আজ মহিলার সামনে যেয়েই দেখি সরাসরি। প্রতিদিনকার মত সেদিন ও মহিলা বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। শুনেছি ছেলেকে খুশী করলে বুড়োর মন পাওয়া যায়। তাই আমি মুখে হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে মহিলার দিকে তাকালাম। দেখলাম তিনি পাত্তা দিলেন না। এবার আর একটু হাসি হাসি মুখ করে মহিলার বাচ্চাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। -ওরে সোনাপাখি, ময়না পাখি এই জাতীয় কিছু আদরের পরিভাষা মনে মনে ফিট করে নিলাম। কিন্তু ওমা একি! মহিলা আমার এই ভালোমানুষি ভাবটাকে তো মোটেই পাত্তা দিলনা। বরং সুন্দর মুখটাকে এমন এক হিংস্র ভাব ফুটিয়ে তুললো যে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। তাড়াতাড়ি গার্ডেন ক্রস করে রাস্তার ধারে এসে গেলাম। কি জানি বাবা। মহিলা আমাকে ছেলেধরা ভাবলো কিনা?
মহিলা তখনো ক্রদ্ধ ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ও চোখে ঘৃণা, অবিশ্বাস মাখা এক অন্য রকম চাহনি। নিরাপদ দূরত্বে সরে আসতে আসতে শত ভেবে ও মহিলার এই অসংলগ্ন আচরণের মানে খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ রাস্তার পাশে অবস্থিত ডাস্টবিনটির দিকে তাকাতেই আমার নিরব ভাবনারা আমায় বললো- আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা হয়ে ও নিজেদের সন্তানদের ডাস্টবিনে ফেলে দিই। এক দুঃখী মায়ের অভুক্ত সন্তানকে দুটো খাবারের লোভ দেখিয়ে এনে নিজেদের জান্তব পৈচাশিকতায় মেরে ডাস্টবিনে ফেলে রাখি। তাই বোধহয় মহিলা তার বাচ্চাদের কাছে আমার উপস্থিতি নিরাপদ মনে করেননি। সেজন্যই এই রকম আক্রোশ দেখালেন। মনের ভেতর হতে তখনি এক সুরের পাখি গেয়ে উঠল- মানুষকে হতে হবে আবার মানুষ/ ভেঙ্গে ফেলে বিলাসী ও ভোগের ফানুস.....
আমার এই আকস্মিক ভাবোদয়ের পর আমি আবার তাকালাম মহিলার দিকে। এবার মহিলাকে আমার মোটে ও অমিশুক কিংবা অহংকারী মনে হল না। আমার মনে হল মহিলার ওমুখে মাতৃত্বের মমতা জড়ানো কি যে এক স্বগীয় আভা! নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য লজ্জায় আমার মাথা নীচু হয়ে এলো।
( সম্মানিত পাঠক আসল কথাই তো লিখা হয়নি। আমার সেই সুন্দরী প্রতিবেশীনী হচ্ছেন এক মা বিড়াল। আর বুঝতেই পারছেন তার সাথে ছিল খুব খুব খুব কিউট (এটা আমার মেয়ের দেয়া উপাধি) চারটে বাচ্চা বেড়াল। আমাদের মানুষ মেয়েদের মত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নিজের সৌন্দর্যের বিকিকিনি করার রুচিবোধ হতে মা বিড়ালটি সম্পূর্ণ মুক্ত বলে ইচ্ছে থাকা স্বত্তে ও তাদের কোন ছবি দিতে পারলাম না তাই আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।।)
বিষয়: বিবিধ
২৬৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন