ফেলে আসা সেই দিন গুলো মনে পড়ে যায়( বান্ধবীদের আড্ডা)
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৩৪:৪১ রাত
স্কুলের ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে কলেজের বৃহত্তর সীমানায় পা রাখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। যেন সামান্য জলাশয়ের সীমানা ছাড়িয়ে বিশাল জলাধারে অবগাহনের মতই। কত মুখ। চেনার চাইতে অচেনা মুখের মিছিলই বেশী। স্কুলের দুটি বেণী দুলিয়ে হেঁটে চলা কিশোরীদের অনেককেই দেখা যেত অতিরিক্ত ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠতে। প্রথম প্রথম এত বাহারী চুল আর ফ্যাশনকারীনিদের ভিড়ে আমার প্রাণটা আকুঁপাঁকু করতো। ঘুরে ঘুরে স্কুলের সে দিন গুলোকেই মনে পড়তো। এক সময় দেখা গেল কলেজে ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষার পর ধীরে ধীরে চারদিকে একটু সুবাতাস বইতে শুরু করলো। আমার ও জানে পানি এলো। প্রায়শই দেখি বান্ধবীদের আড্ডার মুখ্য বিষয় থাকতো প্রেম সংক্রান্ত বিষয়। তাই আমি আর সিমি ঘুরে ঘুরে কোথায় রাধাকৃষ্ণ ফুল ফুটলো, কোথায় গোলাব গাছটার আগায় দুষ্ট ছেলের মত কুড়িটির উঁকি ঝুঁকি তাই খুঁজে বেড়াতাম ক্লাসের অবসরে।
তবে ক্লাসের প্রায় ২০ জনের মত মেয়েদের বেশ জম্পেশ এক আড্ডা জমতো প্রায়ই মাঠের এক কোণে। ওরা আমাদের দু'জনকে ও সেখানে আহবান করতো। আমরা স্বভাবে একটু অন্য রকম ছিলাম বলে দুষ্ট হেসে মিলিটা বলতো- বুঝেছিস আমারা তো সারাক্ষণ ফাজিল মার্কা কথা বলি। তাই তোরা এসে মাঝে মাঝে যোগ দিলে পরিবেশটা সুন্দর হয়।
একদিন ওদের সাথে গিয়ে বসলাম ঘাসের গায়ে পা ছড়িয়ে। এমন সময় রিমিটা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমার হাত চেপে ধরে বলল- এই তুই আমার জন্য একটু দোয়া কর প্লিজ। আমি খুব বাজে একটা কাজ করে ফেলেছি। ওর বারংবার একই অনুরোধে বললাম- আগে তো শুনি তোমার সেই খারাপ কাজটা কি? ও বললো- তুই আসার একটু আগেই কলেজ গেট দিয়ে একটি ছেলে এসে ঢুকলো।
আমাকে রেবা বলল- এই তুই তো খুব সাহস দেখাস। আজ যদি তুই ওই ছেলেটির কাছ হতে যে করেই হোক বিশটি টাকা ভাংতি চেয়ে আনতে পারিস তাহলে বুঝবো সত্যিই তুই খুব সাহসী মেয়ে। আর তোর অনারে কালকের আড্ডার খাওয়ার খরচটা আমিই দের। রিমি নিজের সাহস দেখাতে গিয়ে আগ পিছু না ভেবেই বলল -আমি পারবো। আমাদের কলেজটি ছিলো মেয়েদের কলেজ। বেচারী ঠিকই সাহস দেখিয়ে এগিয়ে গেল। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই ভয়ে লজ্জায় জমে গেল। এদিকে ছেলেটি ও সম্ভবত কলেজে এই প্রথম এসেছে। তাই রিমিকে দেখে জিজ্ঞেস করলো- এই যে শুনুন, প্রিন্সিপলের রুমটা কোন দিকে?
রিমি চট করে ডান দিকে হাতের ইশারা করলো। ছেলেটি সেদিকে পা বাড়াতেই ও দৌড়ে ছুটে এলো। আমরা সবাই তো শুনে চেঁচিয়ে উঠলাম- হায় আল্লাহ কি করেছো তুমি? অন্যরা তো রীতিমত কিল ধাক্কা চালালো এক পশলা ওর উপর। ওতো খালি হাতটা মুনাজাতের ভঙ্গিতে তুলে- আল্লাহ আমাকে এই যাত্রা বাঁচাও। আর কখনো এমন দুষ্টমি করবো না। হায় আল্লাহ প্রিন্সিপল জানলে তো আমার খবর হয়ে যাবে। এর প্রায় আধাঘন্টা পরে ছেলেটি কলেজ হতে বেরিয়ে যেতে যেতে মাঠের দিকে তাকালো রিমি ভয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। না বাবা আজ বড় বাঁচা বাঁচা গেল। ও কলেজ হতে ফেরার পথে অন্ধ ফকিরটিকে টাকা দেবে বলে মানত করেছে ইতিমধ্যেই। সেই সাদাকার উসিলায় কিনা জানিনা প্রিন্সিপলের তলব বা এ ধরণের কিছু ঘটলো না। আসলে আমাদের কলেজের প্রিন্সিলের রুম ও অনান্য শিক্ষকদের রুম ছিলো সব হাতের বা দিকে। আর রিমি যে দিকে ইশারা করেছিলো সেটি ছিলো মেয়েদের টয়লেট। সেদিনের সেই ঘটনাটি মনে হলে এখনো মনের অজান্তেই হেসে ফেলি। অথচ সেদিন রিমির জন্য কত ভয়ইনা পেয়েছিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন