নারীর মর্যাদা নিশ্চিত হয়েছিলো যাদের হাতে

লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ০৫ জুন, ২০১৩, ১১:০৩:৩৬ রাত



উসমান(রাঃ) এর শাসনকালে পরাক্রমশালী রাজা জার্জিসের ১লক্ষ ২০ হাজার সৈন্যের সাথে আবদুল্লাহ ইবন সাদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর আঘাতে ভেংগে পড়া বাহিনীকে উৎসাহিত করার জন্য রাজা জার্জিস ঘোষণা করেন-‘’যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি আবদুল্লাহর ছিন্ন মাথা এনে দিতে পারবে, রাজকন্যাকে তার হাতে তুলে দেব।‘’ জার্জিসের এই ঘোষণায় তার বাহিনীতে বেশ উদ্দীপনা দেখা দিল। এদিকে হযরত যুবাইর (রাঃ) সেনাপতি সাদকে পরামর্শ দিলেন –‘’আপনি ও ঘোষণা করুন ,যে তারাবেলাসের শাসন কর্তা জার্জিসের ছিন্নমস্তক এনে দিতে পারবে তাকে সুন্দরী জার্জিসের রাজকন্যাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেয়া হবে। তখন সেনাপতি সাদ তা ঘোষণা করলেন।

তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর যুদ্ধে এক সময় জার্জিস পরাজিত হল। তার কর্তিত মাথা মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হল। বন্দী হল রাজকন্যা নিজেও। মুসলিম সেনাপতি ঘোষণা করলেন আপনাদের মধ্য হতে যে বীর জার্জিসকে হত্যা করেছেন তিনি তার প্রতিশ্রুত পুরস্কার নিতে আসুন। গোটা মুসলিম বাহিনী নিরব। কেউ এগিয়ে এলনা। অবাক রাজকন্যা নিজেও। কেননা তার মত সুন্দরী যুবতীকে প্রত্যাখান করতে পারে কোন যুবক এটা তার চিন্তার বাইরে। সেনাপতির বার বার ঘোষণা স্বত্তেও কেউ যখন পুরস্কার নিতে এল না তখন সেনাপতির আদেশে রাজকন্যা নিজেই দেখিয়ে দিল কে তার বাবাকে হত্যা করেছে। আবাক ব্যাপার তিনি আর কেউ নন। হযরত যুবাইর নিজেই।

সেনাপতি সাদ যখন তাকে পূর্ব ঘোষিত পুরস্কার নিতে অনুরোধ জানালেন। তখন তিনি বললেন-‘’জাগতিক কোন লাভের আশায় আমি যুদ্ধ করিনি। যদি কোন পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

এই হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র। নারীকে তারা সব সময় সম্মানের চোখেই দেখেছেন। যুদ্ধের সময় আনন্দ উপকরণ হিসেবে তো দূরে থাক বিজয়ের পুরস্কার হিসেবে ও পরমা সুন্দরী রাজকন্যাকে প্রত্যাখান করতে এতটুকু ও কুন্ঠা বোধ করেননি একজন নৈতিক চেতনা সম্পন্ন মুসলিম যুবক।

অথচ ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও যুদ্ধের সময় জাপানি সামরিক বাহিনী অনেক এশিয়ান নারীকে পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করা করে। জাপানের ওসাকা শহরের মেয়র তরু হাশিমাতো বলেন- সে সময় মেয়েদেরকে জোর করা হয়েছিলো এমন কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া নিশ্চয়ই যোদ্ধাদের মাঝে শৃংখলা বজায় রাখতে এটা করা দরকার ছিল। বৃষ্টির মতো বুলেটের ঝংকারের মধ্যে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা সৈনিকদের মনোরঞ্জনের জন্য মেয়েদের দিয়ে আরাম দেয়ার ব্যবস্থা করাটা প্রয়োজন ছিল। এটা সবার কাছে পরিস্কার ।‘’ ঐতিহাসিকদের মতে চীন ও কোরীয় উপদ্বীপ হতে কমপক্ষে ২ লাখ নারীকে সামরিক পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

অথচ ইসলাম এমন একটি মহান ধর্ম যে ধর্ম নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আর্থিক বিপন্ন অবস্থায় নারীকে যাতে বাধ্য হয়ে এ ধরণের খারাপ পেশায় না জড়াতে হয় তাই ইসলাম সুনির্দিষ্ট ভাবে নারীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব কার উপর ন্যস্ত হবে তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে।

এছাড়া ইতিহাস হতে জানা যায় মুসলমানদের যুদ্ধকালীন অবস্থা সম্পর্কে সহায় সম্বলহীন, ঢাল তলোয়ারহীন সামান্য কিছু মুসলমান শুধু মাত্র নৈতিক চরিত্রের বলে বলীয়ান হয়ে বিরাট সংখ্যক শক্রুর সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিলেন। তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের দিন কাটতো যুদ্ধের ময়দানে রাত কাটতো জায়নামাজে। কোন নারী দিয়ে মনোরঞ্জন নয়। বরং আল্লাহর কাছে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত আত্নসমর্পন তাদের বিজয় ও সাহস দিয়েছিল দিনের পর দিন অভুক্ত অবস্থায়ও জেহাদের ময়দানে।

বিষয়: বিবিধ

২৪২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File