দিগন্ত টিভি
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১২ মে, ২০১৩, ০৪:৪৫:৫১ বিকাল
আমার কেন যেন মনে হত টিভি আমার মূল্যবান কাজের সময় গুলোতে ভাগ বসাবে। তাই প্রবাসী জীবনের নিঃসঙ্গতায়ও কখনো টিভি কেনার কথা ভাবতেই পারতাম না। কিন্তু বিডিয়ার হত্যাকান্ডের পর মনে হল আসলেই দেশের অনেক নিউজ মিস করছি। তাই বছর খানেক আগে আমার দীর্ঘ দিনের পণ ভেঙ্গে টিভি কেনা হল। আর কোন টিভি চ্যনেল নয়। শুধু দিগন্ত হ্যাঁ শুধু দিগন্ত টিভির নিউজের জন্যই হাভাতের মত অপেক্ষায় থাকতাম। মনে হত স্বদেশ ছেড়ে আসার বেদনাকে দিগন্ত টিভি যেন অনেক খানি পুষিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু প্রবাসীদের জীবনটাই বোধকরি সব হারানোর জীবন। কখন যে দিগন্তের ভাগ্যাকাশে ধীরে ধীরে কালো মেঘের উপস্থিতি ঘটছিলো বুঝতেই পারিনি।হঠাৎ সেদিন দেখি দিগন্তের কন্ঠ স্তব্দ হয়ে গেল। কালো মেঘের চাদরে ঢাকা পড়লো দিগন্ত। কি যে কষ্ট লাগলো অনুভবের অলিন্দে। সারাদিনের অগনিত কাজের মাঝে ও সময় করে ঠিক সুবোধ বালিকার মত বসে যেতাম দিগন্ত নিউজের সামনে। কিন্তু আমার সেই প্রতীক্ষার সময় গুলো যে আজ দিগন্তের মৌনতার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল। বাচ্চারা অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে - মা, তুমি এখন কোথায় খবর দেখবে? নিউজের সময় হলে নিজের বুকের ভেতর একটা অস্থিরতা নিজেই খুব টের পাই।
অন্যদের অবস্থা ও দেখি আমার চেয়ে আলাদা নয়। এ পর্যন্ত যতজনের সাথেই কথা হল সবাই একই প্রশ্ন করছেন- দিগন্ত টিভি কেন বন্ধ হল?
একজনতো বললেন- আমার স্বামী অফিস হতে ফিরেই বলেন - দেখি দিগন্তটা চালাও তো। সেদিন দিগন্ত বন্ধের পর বেচারা চিরাচরিত অভ্যাসে কথাটি বলেই নিজেই ছলছল চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
দিগন্ত বন্ধের পর বাংলা ভিষনে দেখলাম দিগন্ত খুলে দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের সমাবেশে দিগন্তের রিপোর্টার, সাংবাদিক ভাইরাও বসে আছেন। বুকের ভেতর হতে কষ্টের এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মনে হল দীর্ঘ দিন ধরে মজলুমের পাশে দাঁড়াতে দাঁড়াতে দিগন্ত আজ নিজেই মজলুমের কাতারে নাম লিখালো।
প্রবাসীদের উদ্যোগে সেদিন দিগন্ত বন্ধের প্রতিবাদে সভা হয়েছে। আমি এক জনকে প্রশ্ন করলাম- এতদিন দিগন্ত প্রবাসীদের কথা বলেছে। আজ দিগন্ত বন্ধ হয়ে যাবার পর দিগন্তের জন্য প্রবাসীদের এই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা কে জানিয়ে দেবে সবাইকে?
বিষয়: বিবিধ
১৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন