চা দিয়ে শোপিস বানানোর গল্প

লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০৬:২১ দুপুর



আমার বিবাহের পয়গাম এসেছিলো ইন্টার পরীক্ষার শেষ দিন। পড়া লিখার আন্ধার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করিয়া আমি কান্দিয়া কান্দিয়া শেষ। তখন আমার বড় ননদ সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন- আমাদের এক কাজিনের ওয়াইফ সম্ভবত ক্লাশ এইটে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়েছিলো। আর ভদ্রমহিলা পরে তার শেষ সন্তানের সাথে মাষ্টার্স করেছিলেন। উনি এক সময়ের স্বনামধন্য সাময়িকী 'বেগম'এর লেখিকা ফাহমিদা আমীন। ডুবন্ত যাত্রীর খড়কুটো ধরে হলেও বেঁচে থাকার চেষ্টার মত তখন সেই অদেখা ভদ্রমহিলা আমার মনে গেঁথে গেলেন।





একবার 'যায় যায় দিনে' ফাহমিদা আমীনের একটি লিখা পড়ার সুযোগ হয়েছিলো। কিন্তু প্রচন্ড লোভ থাকা স্বত্তেও আমার যাযাবরী জীবনের ফাঁক গলিয়ে কিছুতেই সেই ভদ্রমহিলার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে আমার আম্মার সাথে উনার দেখা হয়েছিলো। আম্মা একদিন আমাকে বলেছিলেন- জানো, ফাহমিদা আমীন খুব শান্ত ও সুরুচির মানুষ। স্বামীর মৃত্যু উপলক্ষেই তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কত সুন্দর করে যে স্বামীর স্মৃতি চারণ করলেন। উনি বলছিলেন উনি যদি লিখালিখি করতে গিয়ে রাত করে ফেলতেন তখন উনার স্বামী সঙ্গ দিতে চা বানিয়ে নিয়ে আসতেন।











আমার প্রবাসী জীবনে রহিমার মা বুয়া ও আমি। মফিজ মাষ্টার ও আমি। সংসারে অনেক কিছুই আমাকে করতে হয়। তাই মাঝে মাঝে আমার উনাকে বলি- জানো আজ কত বছর তোমার সংসারে তোমার টিগার্ল এর কাজ করছি? আর তুমি তো কখনো আমার জন্য টিবয় হলেনা। আহারে ফাহমিদা আমীন ভাবীকে, আমীন ভাই চা বানিয়ে খাওয়াতেন। তুমি তো কখনো আমাকে আমীন ভাইর মত চা বানিয়ে খাওয়াও না। তাই সে দু:খে আমি ও কখনো ফাহমিদা আমীন ভাবীর মত বড় মাপের লেখিকা ও হতে পারবনা। আমার উনি শুনে মিট মিট করে শুধু হাসেন। উনাকে দিয়ে আর চা বানানো হয়না। কিন্তু উনার নিজের চা খাওয়ার নেশা খুব বেশী।

একদিন ক্লে নিয়ে বসেছি একটি ওয়াল হ্যাঙ বানাবো বলে। উল্লেখ্য এই ধরণের কাজ গুলো আমি আমার মন হতেই করি। তাই মনে মনে একটি ডিজাইন আইডিয়া করে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলাম- দেখি কেমন হয়। উনি এসে চা চাইলেন। আমি ক্লে মাখা দুই হাত দেখিয়ে বললাম- আজ তোমাকে টিবয় হতেই হবে। দুষ্টটা মুচকি মুচকি হেসে বলে- ওমা সেকি কথা। আগে শিখিয়ে দিতে হবে না চা কি করে বানাতে হয়। আজ তুমি দেখিয়ে দাও কি করে বানাতে হয়। আমি বেচারা তখন বোকার মত টি পটটি ধুয়ে চুলায় উপর বসালাম। এরপর তাতে পানি দিতে দিতে বললাম দেখ - এই ভাবে। দেখি ওর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখাটা বরাবর চওড়া হচ্ছে। হঠাৎ আমি বুঝে গেলাম চালাকিটা- এই রে আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে। শিখার নাম করে আমাকে দিয়েই চা বানিয়ে নেয়ার চালাকি না? এবার তো ধরা পড়ে ও হাসিতে ফেটে পড়লো। আমার এত রাগ হল। বললাম- আজ কোন চালাকিতেই কাজ হবেনা। আমার ক্লে গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি শোপিস বানাতে বসে গেলাম। এবার ও বলল- আজ তাহলে লেমন টি করি। আমি বললাম- আপত্তি নেই।

নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দই আলাদা। আলহামদুলল্লিাহ আমি এক মনে লেগে থেকে আমার কল্পিত ওয়াল হ্যাঙের ডিজাইনটি প্রায় করেই ফেললাম। মাটি গুলো দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে একটু পর পর একটি কাপে রাখা পানি হতে আঙ্গুল চুবিয়ে পানি দিচ্ছি। এর মাঝে ওর লেমন টি বানানো হয়ে গেল। চা এ আমার নেশা নেই। আমি চা বানিয়ে রেখে কাজকর্ম সারতে থাকি। এর মাঝে চা প্রায় ঠান্ডার স্টেজে আসতেই আমি সরবতের মত ঢকঢক করে গিলে ফেলি। আজ ও ওই পর্যায়ে আসতে চা'য়ে ১/২ চুমুক দিলাম- বাহ! বেশ মজা হয়েছে তো। বললাম -তোমাকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলাম। তোমার হাতের চা তো বেশ মজা হয়! এখন হতে তুমিই চা বানাবে। ও বললো- ইস কেন যে ভালো করে বানাতে গেলাম। এরপর ও কম্পিউটার নিয়ে বসে গেল। আমি একমনে আমার কাজ করছি। চায়ের কাপ আর মাটিতে পানি মেশানোর কাপ দুটি পাশাপাশি রাখা। কাজের ফাঁকে ১/২ চুমুক দিচ্ছি। হঠাৎ ক্লেতে পানি মেশানোর সময় খেয়াল করলাম- কি ব্যাপার পানির রং কেন এরকম? টেবিলের উপর রাখা অন্য কাপটির দিকে তাকিয়ে চোখ তো ছানাবড়া- ওমা আমি বেখেয়ালে চায়ের কাপ আর পানির কাপ দুটোর জায়গা কখন যে বদল করে ফেলেছি খেয়ালই করিনি। অতএব শেষ ২/১বার মাটি মেশানো পানিকেই....ওয়াক থু

ওকে পরে দুঃখ করে বললাম- তোমাকে দিয়ে জোর করে চা বানানোতে বোধহয় বদদোয়া লেগে ছিলো তাই না? ও সান্ত্বনা দিয়ে বলল- না, না দেখ কত সুন্দর ওয়াল হ্যাঙ বানিয়েছ তুমি। হোক না চা দিয়ে। আমার মন খারাপটা চলে গেল। কি আর করা। আমার দুঃখের সময় যে, দুষ্ট মানুষটা সবসময় ভালো বন্ধুর মত পাশে দাঁড়ায় সেই কৃতজ্ঞতায় আমিই না হয় সারাজীবন টিগার্ল থাকলাম। কি বলেন আপনারা? আচ্ছা আপনারাই বলুন তো পাঠক সত্যিই কি জিনিস গুলো সুন্দর হল?

বিষয়: বিবিধ

৭১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File