জেল জুলুম আর নির্যাতন করে গন আন্দোলন বন্ধ করা যায়না

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ০২ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:১৪:৩৯ রাত



বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে কালবৈশাখীর ঘনকালো মেঘ। মনে হয় যেকোনো সময়ে ঝড় এসে উড়িয়ে নিবে নিরীহ মানবতার বসতবাড়ি। কেউ নির্যাতিত। কেউ নির্যাতনকারী। সমগ্র দেশে অজানা আতংক কাজ করছে। কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে! বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অস্থিরতা আর দেখা গিয়েছে বলে মনে হয়নি। কোন স্বৈরাচার এমনকি শেখ মুজিবের মতো লোককেও এমন বেপরোয়া দেখা যায়নি। সে বাকসাল এমনকি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও সফল হয়নি। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ৯৯ ভাগ। তিনি যে সস্তা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তা ধরে রাখতে পারেননি খুব বেশীদিন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জানাজা পড়ার লোকও পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবের ভুমিকা নিয়ে কথা বলবনা, কিন্তু তিনি একটা সুযোগে নেতা হয়েছেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যেভাবেই হউন তিনি নেতা হয়েছিলেন, কিন্তু যখনি ইসলাম- মুসলমানদের ঈমান- আকিদার উপর হাত দিয়েছিলেন, একনায়কতন্ত্রের শিকলে আবদ্ধ করতে ছেয়েছিলেন জাতিকে ঠিক সঠিক মহুরতে জাতি ফিরে দাঁড়াল। আমরা কোন শিকলে আবদ্ধ হবোনা। ঠিক তাই হোল। জাতি ফিরে পেল তাদের স্বকীয়তা। টিকে থাকলো তাদের অস্তিত্ব।

আজ কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে? এ নিয়ে স্বাধীনতাউত্তর তৃতীয়বার ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ। একটা ফাঁকে দিয়েই ক্ষমতার চেয়ারটি পেয়ে গেল শেখ হাসিনা। কাকুতি- মিনতি আর আহাজারির করুনারতে জনগণ ভুলে গেল আওয়ামী অতীত। মনে করেছিলো তৃতীয়বার হয়তো পা পিছলাবেনা। কিন্তু কি হোল বা হচ্ছে? সমগ্র জাতির নাভিশ্বাস। খাই খাই সব খাই ভাব। সারা জিন্দেগীটাই ক্ষমতায় থাকা চাই। এ মনভাব নিয়েই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে সকল ক্ষেত্রে। একদিকে দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি, বিদ্যুৎহীন সমগ্র জাতি। চতুর্দিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। এমতাবস্থায় জাতিকে সঠিক পথ দেখাবে কারা?

রাজনৈতিক ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকবেই। কিন্তু কেউ যদি রাজনিতিকে শোষণের হাতিয়ার বানায় তখনই শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। বাংলাদেশে আজ তাই হচ্ছে। আওয়ামীলীগ বিরোধীদল দমনের মহা মিশন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন জগন্য মনভাব কোন সরকারের ছিল বলে আমার মনে হয়না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একসাথে রাজনৈতিক এত নেতাকে জেল- জুলুম দিয়ে আবদ্ধ রেখেছে এমন ইতিহাস নেই। বিরোধীদল দমনের ঘৃণ্য কৌশল আওয়ামীলীগের পুরনো অভ্যাস। কথায় আছে কয়লা ধুলে ময়লা যায়না। আওয়ামীলীগ মরলেও স্বভাব যায়না।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের ইতিহাস শুরু হোল জামায়াতে ইসলামীকে দিয়েই। ৪১ বছরের মীমাংসিত ইস্যু দিয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু করল। গ্রেফতার করা হোল সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, আমীরে জামায়াত, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেলদের। গ্রেফতার করা হোল বিএনপির দু’নেতাকে। কি করতে চাইছে সরকার গেরফতারকৃতদের? দলীয় আদলতে দলীয় চোর- চ্যাপ্টাদের সাক্ষী নিরে বিচারের মুখোমুখি করিয়ে সরকার নিজের বিপদ ডেকে এনেছে বলে সারা পৃথিবী মনে করে। একই মামলায় আদালতের দ্বিমুখী আচরণ। কাউকে সর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয়া যাবে, আর কাউকে গায়ের জোরে আটকিয়ে রাখবে। এতেই সরকার দ্বারা আদালত নিয়ন্ত্রিত বলে বুঝা যায়। নব্বই বছরের অসতিপর বৃদ্ধ অধ্যাপক গোলাম আযমের দ্বারা এ সময়ে কি করা সম্ভব? যুগের দুনিয়া বাচা নেতা। পৃথিবী ব্যাপী যার খ্যাতি। নিজে খেতে পারেননা, টয়লেটে যেতে পারেননা। হাঁটতেতো পারেনই না। এমন ব্যক্তিকে জেলে পুরে সরকার তৃপ্তি পাচ্ছে। নির্যাতনের যে সিঁড়ি সরকার তৈরি করলো তা কিন্তু একদিনের জন্য নয়। যেমনিভাবে জামিন অযোগ্য বিধান করে আজ বিএনপি নেতারাই সে আইনে বন্দি। একই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।

শেখ হাসিনার অফিসের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলা। আদালত পাড়ায় হট্টগোল। অথচ নেতারা নিজ অফিসে। কিভাবে তারা এমন কাজে জড়িত হোল? নেতারা জামিনের জন্য আবেদন করলেন। উচ্চ আদালতে গেলেন। উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতে পারাল। নিম্ন আদালত জামিন না দিয়ে জেলে পাঠাল। একসাথে ৩৩ জন বিরোধী নেতাকে জেলে পুরার ইতিহাস আওয়ামীলীগ তৈরি করলো। কিভাবে সম্ভব! আমি আরেকটি লিখায় বলেছিলাম- মানুষের জন্য আইন, না আইনের জন্য মানুষ? তারা দেশের শীর্ষ নেতা এমনকি সংসদ সদস্যও অনেকে। তাদের ব্যাপারে আদালতের করার মতো অনেক কিছু ছিল। কি করলো এ আদালত? বিচারকদেরও মনে রাখা উচিৎ ছিল সব কিছুর শেষ আছে। আওয়ামী নেতাদের হুমকি- ধমকি আদালতকে পর্যন্ত জিম্মি করে রেখেছে। ন্যায়ের আসনে বসে যদি বিবেক জিম্মি রাখতে হয় তাহলে তা ছেড়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ভালো। বিবেক বিক্রি কোন সভ্যতার কাজ নয়।

আমরা জানি পৃথিবীর যে কোন দেশে জুলুমবাজরা বেশীদিন টিকে থাকতে পারেনি। মিশরের ইতিহাস আমাদের কাছে খুবই স্পষ্ট। জামাল নাসের ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েও সে আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আজ তারা ক্ষমতায়। লিবিয়া- বাহরাইনসহ অনেক দেশই সাম্প্রতিককালে ঝুলুমবাজদের করুণ পরিনতির চিত্র দেখাল। কিন্তু আমরা হতভাগা, ইতিহাসের করুণ পরিনতি থেকে আমরা শিক্ষা নিইনা।

আমাদের দেশের শুধুমাত্র শেখ মুজিবের করুণ কাহিনী থেকে শিক্ষা নিলেও বর্তমান আওয়ামীলীগের পক্ষে আজকের গন বিরোধী কাজগুলো করা সম্ভব হতোনা। সুতরাং আমরা এটাই বুঝি, জেল-জুলুম আর নির্যাতন করে গন আন্দোলন বন্ধ করা যায়না। আজকে সরকার যে আগুন জ্বালিয়েছে এ আগুন হয়তো আওয়ামী মসনদ জ্বলে চাই হওয়া পর্যন্ত জলতেই থাকবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File