পিতার কাঁধে পুত্রের লাশঃ করুণ এক বাস্তবতাঃ সরকারের অমানবিকতা

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:২৮:২১ রাত

বাস্তবতা অসহ্য হলেও মেনে নিতে হয়। অনেক বাস্তবতা মানুষকে সারা জিন্দেগী বেদনা দিয়েই যায়। বেদনার নিলাব কষ্টটি তাকে বার বার আঘাত দিয়েই যায়। পৃথিবীর যত বাস্তবতা আছে তার মাঝে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হচ্ছে মৃত্যু। এ মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহন করতেই হবে। আল্লাহ বলেছেন- প্রত্যেক জীবনকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। সকল জীবের মাঝে মানুষ নামের জীবগুলো যদিও এ মৃত্যুকে ঘিরে অনেক উক্তি করেছে। কোন উক্তিই তাকে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারেনি।

কিছু মৃত্যু মানুষকে কাঁদায় অনেক বেশী। মানুষ বিশেষ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কামনা করেন মৃত্যুর পর তার প্রিয় সন্তানটি তার জানাজায় ইমামতি করবে। আর সে পিতা তার সন্তানকে সেভাবে গঠন করেন। ভালো আলেম বানানোর চেষ্টা করেন। আর যাদের পরকাল বা আখেরাত নিয়ে চিন্তা নেই তাদের কথাটি ভিন্ন।

আজ এমন এক বাস্তবতা নিয়ে লিখার চিন্তা করলাম যা শুধু একজন পিতা নয় সমগ্র মানবতাকে ব্যথিত করেছে। সবার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। যিনি ছিলেন পরিচিত একটি নাম। পিতার অনুকরণে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অনেকের ধারনা ছিল পিতার আসনটি জীবিত রাখবেন হয়তো। কে জানতো এতো দ্রুত বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।

১৩ জুন। সকাল ৯.৩০ টা। বাসা থেকে বের হয়ে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম। সাংগঠনিক কাজে কেপটাউন যাব। ১১.২৫ টায় প্লাইট। যেতে লাগবে ৩৫ মিনিট। আমি একটু আগেই বের হলাম। মনে হয় দশ মিনিট পথ যাওয়ার পরেই একজন ভাই ফোন করলেন আল্লামা সাইদি সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাফিক বিন সাইদি ইন্তেকাল করেছেন। সংবাদটি হঠাৎ করে আমাকে একটা ঝাঁকুনি দিলো। বিশ্বাস করতে যেন কষ্ট হোল। একটু পরেই আরেকজন ভাই একই খবর দিলেন। সাথে সাথেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো- আহ, পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ এ এক অসহনীয় বেদনা।

আওয়ামী হায়েনার কারাগারে বন্দি বিশ্ব বরেণ্য আলেম আল্লামা দেলাওয়ার হুসাইন সাইদি। মিথ্যার বেসাতি দিয়ে বন্দি রেখেছে তাঁকে। সাক্ষী নেই। দলীল প্রমান নেই। জুলুমবাজি আর পেশী শক্তিই যাদের হাতিয়ার। সাক্ষী চোর। তদন্ত কর্ম কর্তা চোর। সব চোরের মেলা যেখানে। সেই আদালতে পিতার বিরুদ্ধে শুনানি হচ্ছিলো। প্রতি দিনের মতো সেদিনও ৪ ভাই আদালতে হাজির হলেন। শুনানির একপর্যায় তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন বুকের ব্যাথায়। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা দিলেন। বিশ্ব বরেণ্য পিতার বিরুদ্ধে জালিমের আদালতে দেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য তাঁকে অনেক বেশী কষ্ট দিয়েছিলো। যে কষ্ট তাঁকে কবর পর্যন্ত নিয়েছে। এ মৃত্যু সাইদি সাহেবকে নয়, মানবতাকে কাঁদিয়েছে।

আল্লামা সাইদি সাহেবের স্বপ্ন ছিল মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় রাফিক তাঁর জানাজায় ইমামতি করবেন। কিন্তু হোল তার বিপরীত। পিতা যখন পুত্রের জানাজার ইমামতি করেন তখন আকাশ- বাতাস ভারী হয়ে যায়। পিতার ইয়ামতিতে পুত্রের জানাজা, পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ(!) এ এক কঠিন বাস্তবতা। তার সামনে দাঁড়ালেন আল্লামা দেলাওয়ার হুসাইন সাইদি।

পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যাকে বেশী ভালো বাসেন তাঁকেই পরীক্ষা করেন বেশী। তিনি বলেন না, আমরা জানি আল্লামা সাইদি সাহেব আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একজন। তাইতো আল্লাহ তাঁকেই পরীক্ষা করছেন অনেক বেশী। মাত্র আট মাস আগে মারা গেলেন তাঁর গর্ভ ধারিণী মা। একই মাঠে মায়ের জানাজার ইমামতি করলেন মাত্র ৩০ মিনিটের প্যারল মুক্তি নিয়ে। আর ২ ঘণ্টার জামিনে ছেলের জানাজা। কেমন ব্যাদনা! ভাবতে কষ্ট হয়।

পৃথিবীর আদি থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে এভাবে অনেক পরীক্ষা করেছেন। সকল নবী- রাসুল এ পরীক্ষা দিয়েছেন। পৃথিবীর সকল ইসলামী আন্দোলন জালিমের জুলুমের শিকার হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস আমরা জানি। যদিও আজ সাইদি সাহেবের জন্য আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ইব্রাহীম এবং ইসমাইল (আঃ) এর পরীক্ষার সাথে তাঁর পরীক্ষার কিছুটা মিল পাওয়া যায়। এখন মিশরের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে মিলেনি। মিশর ইখয়ানুল মুসলিমুনের নেতা শহীদ হাসান আল বান্নার শাহাদাতের পর কাউকে জানাজা পর্যন্ত পড়তে দেয়নি জালিম জামাল নাসের সরকার। তারা জীবিত নয় মৃত বান্নাকেও ভয় পেয়েছিলো। জানিনা বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত কি? পরীক্ষার পরেই কিন্তু সফলতা আসে। মিশরে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার সকল আয়োজনের পরও আজ তারাই শাসন ক্ষমতায়। আল্লাহর সিদ্ধান্তের সাথে মানুষের সিদ্ধান্ত সমান হবেনা।

সাইদি সাহেব কলিজার টুকরা সন্তান হারিয়ে যতটুকু কষ্ট পেলেন আমরা অনেক বেশী কষ্ট পেলাম আওয়ামী জালেমসাহির আচরনে। ১৩ তারিখে সন্তান মারা গেলেন কিন্তু তাঁকে জানানো হোল জানাজার সামান্য আগে। জানাজার আগ সময়ে সামান্য আলোচনার সুযোগও দিতে সরকার ভয় ফেলো। সামান্য আলোচনার সময় যেন বার বার মাইক কেড়ে নেয়া হচ্ছিলো। এ কেমন আচরণ! আওয়ামীলীগ কি তবে বন্ধি সাইদিকেও ভয় পায়?

আমাদের হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস, ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস যে গতি নির্ধারণ করেছে সেই গতিতেই বাংলাদেশে নেতৃবৃন্দের ত্যাগের বিনিময়ে ইসলামের পতাকা উড়বেই, ইনশাল্লাহ। আওয়ামী জালিমসাহি পারবেনা ঠেকাতে। আওয়ামী মসনদ একদিন চূর্ণ হবেই। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেই তারা। এক সাইদির ছেলের জানাজায় লক্ষ লকের সমাগম হয়েছে, তোমাদের জানাজা পড়ার লোকও পাবেনা। সময় কথা বলবে।

ছেলের জানাজা পড়ে যাওয়ার পথে তিনি নিজেই হৃদ রোগে আক্রান্ত হলেন। আজও হাসপাতালে।

আমরা আজ মহান রবের কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন সাইদি সাহেবকে সুস্থ করেন জাতির জন্য এবং ধহ্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।

বিষয়: বিবিধ

১২০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File