বিদায় দু’ হাজার বার
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:১৬:৩৬ রাত
সময়ের চাকা গুরে গুরে আসে। সময়ের চাকা স্থিতিশীল নয়। ইংরেজি একটা প্রবাদ আছে- time and tide wait for none, অর্থাৎ সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। ইংরেজি সাল গননা থেকে আজ পর্যন্ত ২০১২ টি সাল ক্যালেন্ডার থেকে শেষ হয়ে গেলো। পদার্পণ করলো ২০১৩ সালে। আজকে সারা দিন কেন জানি ভাল লাগছেনা। মনকে কোথাও যেন স্থির করতেই পারছিনা। যত কাজ করলাম আর যত জনের সাথে কথা বললাম যেন অনেকটাই উদাসী হয়েই বললাম। মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম কেন আজ আমার এমনটি হচ্ছে। কি যেন আমি হারিয়ে ফেললাম। উত্তরটা আসতে যেন অনেক দেরিই হয়ে গেলো।
রাত ৮.৪৫। চারিদিকে কি যান আওয়াজ শুনছিলাম। অনেককেই নব বর্ষের শুভেচ্ছা দিয়েছি বলে এখন মনে হচ্ছে। কি দিয়ে নববর্ষ শুরু হোল তাও জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সম্ভিত ফিরে পেয়ে বুঝতে পারছি মন থেকে জানার আগ্রহ ছিলনা। এ ফাঁকে ঐ সব বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমার অনিচ্ছাকৃত এ দুর্বলতার জন্য। কারণ আপনি হয়তো মনে করতে পারেন আমি এ কি করলাম। যখন নেটে বসলাম চারদিকে শুধু আওয়াজ শুনছিলাম। বসে বসে গত এক বছরের নিজের, দেশের, জাতির এবং সমগ্র পৃথিবীর কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তা করছিলাম। যেন কোন কূল পাচ্ছিলামনা। হারিয়ে গেলো নিজের জীবন থেকে একটি বছর, কি অর্জন করলাম? নিজেকে কতোটুকু নিজের জন্য, দেশের জন্য, জাতির জন্য, পৃথিবীর জন্য সর্বোপরি দ্বীনের জন্য বিলিয়ে দিতে পারলাম এবং তৈরি করতে পারলাম? অনেকটাই হতাশার মাঝেই আছি। তবে এ হতাশার মাঝে আলোর দিক হচ্ছে ইতিহাস। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জীবন গঠন করতে না পারাটাই হচ্ছে বেকুবের জিন্দেগী।
ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার অনেক আত্মীয়কে হারালাম গেলো বছরটিতে। আমার দুজন নানাকে হারালাম। যার মাঝে আমার আপন নানা। যিনি আমাকে অনেকবেশী স্নেহ করতেন। মাঝে মাঝে যখন নানার সাথে ফোন করতাম নানা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কথা বলতেন। আর কখনো নানার সে ভাঙ্গা গলার কথা শুনা হবেনা। পাবনা নানার দেখা এ জিন্দেগীতে। জানিনা পরকালে কি হবে। আমার নানার সৃতি আমাকে আজ অনেক বেশী বেথা দেয়। পারিনা নানার আদরের ঋণ শোধ করতে।
আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। সে হিসাবে দেশ নিয়েও একটু ভাবতে হয়। আমার দেশ এবং জাতি কি পেলো একটি বছরে? আমার মনে হয়- অনেক ঘটন- অঘটন এবং বেদনার নীলিমা বহুল ছিল ২০১২ সালটি। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এবং চোখের কান্নার শেষ ছিলোনা। ছেলে হারা মায়ের আর্তনাদ, সন্তান হারা পিতার বেদনা, ভাই হারা বোনের আহাজারি বাংলার আকাশে বাতাসে মনে হয় এখনো ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দেওলিয়াপনা, মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞার মধ্য দিয়েই শেষ হোল ২০১২ সাল বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে। আওয়ামীলীগের স্বাদ পুরনের বছর ছিল ২০১২। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে আওয়ামী নেত্রী তার স্বভাব সুলভ নর্তন- কুর্দন করার অভিপ্রায়টি চুর মার করে দিলো নিজামুল হোক নাসিম। কত জগন্য ছিল তাদের পরিকল্পনা। একজন নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী সাজিয়ে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলানো। আল্লাহ তাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিলেন।
হত্যা আর গুম ছিল সারা পৃথিবীর আলোচিত একটি ঘটনা। রাজনৈতিক নেতাদের গুম আর হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার সারা পৃথিবীর মাঝে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলো। বাংলাদেশের মাথা হেট করলো। গ্রেফতার আর নির্যাতন সমগ্র পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে বিনা কারনে রিমান্ড এবং ডাণ্ডা বেড়ি পরানোর নির্লজ্জ নজির স্থাপন করলো আওয়ামীলীগ। এভাবে অনেক ইতিহাস উঠে আসবে। তা বলা আমার উদ্দেশ্য ছিলোনা। আমার উদ্দেশ্য ছিল দেশ জাতি এবং পৃথিবী পেছনের বছর থেকে আগামি দিনের জন্য কি সঞ্চয় করবে? তা চিন্তা করলেও গা শিউরে উঠে। কারণ ২০১২ সালের আওয়ামী কর্মকাণ্ডের জবাব যদি জাতি দিতে থাকে তাহলে ২০১৩ সালটিও হবে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে দুর্বিষহ। কারণ এটি হচ্ছে আওয়ামীলীগের শেষ বছর।
ব্যক্তি হিসাবে যারা নববর্ষ নিয়ে অনেক বেশী ফুর্তিতে আছে তারা কি চিন্তা করার সুযোগ পাবে গেলো বছরে কি করলো আর আগামি বছরের পরিকল্পনা কি নিবে? থার্টি ফাস্ট এর নামে কি eat, drink এবং enjoy এর নামে বেলেল্লাপনাই হবে কি জিন্দেগীর রুপ? কত জীবন চলে যাবে এ রাতে শুধু থার্টি ফাস্ট উদযাপন করতে গিয়ে।
আগামি জিন্দেগী হোক আমাদের সবার জন্য সুখের এবং আনন্দের। নতুন বছরটি হোক আমাদের জন্য কল্যাণকর আমরা আল্লাহর কাছে এ মুনাজাতটিই করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন