কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake): দুঃসাহসিক নৌযাত্রা (পর্ব-২)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের পথিক ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০৭:৪২:২২ সন্ধ্যা

কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake): দুঃসাহসিক নৌযাত্রা (পর্ব-১)

পরবর্তী দুটি উপায়ই আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আমরা বারবার সবাইকে সতর্ক করছিলাম যাতে সকাল ৮.০০ টার মধ্যে সবাই প্রস্তুত থাকে............

পর্ব-২ঃ

যথারিতি পরেরদিন সবাই সকাল সকাল তৈরী হচ্ছে। সকালের নাস্তা, ব্যাগ গুছানো, সাজু-গুজু ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে কারও কারও ব্যক্তিগত ঘোরা-ঘুরি সেরে নিচ্ছে, কেউ কেউ বিদায় মুহুর্তের স্মৃতি ফ্রেমে বন্দি করে নিচ্ছে। কত বিচিত্র যে সময় তা দেখেই উপলব্ধি করি, মুহুর্মুহু সেলফির মহড়া চলছে ব্যক্তিগত বা গ্রুপে। ইতিমধ্যে সবাই জিপে উঠতে শুরু করেছে। কে কার পাশে আগে থেকেই ভ্রমন করেছিল পরখ করে নিচ্ছে। জিপে ১২ জন যাত্রী ভালভাবে বসতে পারে। তিনটা জিপে আমরা মানিয়ে নিয়েছিলাম কোন অসুবিধা হয়নি।

জিপ ছাড়তেই সবার সরব উল্লাস জানান দিচ্ছিল ভ্রমনের ক্লান্তি কাউকে কাবু করতে পারিনি। হোটেল থেকে ছেড়ে মিনিট এর মত রাস্তা চলতেই জিপ চেকপোস্টে এসে থামল। সবার মনে একটাই উদ্দীপনা আর বেশি সময় বাকী নেই সেই ঐতিহাসিক কাপ্তাই যাত্রার। যার বহিঃপ্রকাশ জনে জনে প্রকাশ করছিল উচ্ছাস আর উল্লাসে। জিপ চেকপোস্টে থেমেছে এ ভ্রুক্ষেপ কারো মাঝে নেই। আমিসহ আরও কয়েকজন চেকপোস্টে যে দুইজন গার্ড আছে সম্ভবত সাধারন সৈনিক হবে, তাদের কাছে গেলাম। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সেনাবাহিনীর প্রটোকল শুরু হওয়ার পূর্বপর্যন্ত। অর্থাৎ সকাল ১০.৩০ টা পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে আমাদের যাত্রা শুরু করতে, এটাতো আগে কারও জানা ছিলনা। আমরা একে অপরের সাথে পরামর্শ করে নিলাম যে গার্ডদ্বয়কে বুঝিয়ে আগে যাওয়া যায় কিনা। তাদেরকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে, আমাদের বেলা ১.০০ টার মধ্যে লংগদু পৌছতে হবে নতুবা আমরা ফেরি মিস্ করবো, আমাদের মধ্য একজন অসুস্থ্য রুগী আছে ইত্যাদি কোন কিছুতে কাজ হলো না। বলে রাখা দরকার আমাদের মধ্যে একজন রাঙামাটিতে ঘুরতে যেয়ে দর্ঘটনায় পড়ে বেশ চোট পায় এবং পরবর্তীতে তাকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।

আমরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথেও কথা বল্লাম কিছুতেই কোন উপায় বের হলোনা। সবাই হতাশ, কেউ গাড়ী থেকে নেমে পড়লো, কেউ কেউ বসেই রইল। সবাই চিন্তিত যে আমাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। এর মধ্য আবার শুরু হয়ে গেল ছবি তোলার মহড়া। অপেক্ষার সময় আর শেষ হতে চায় না, সকাল ৮.০০ টা থেকে ১০.৩০ টা পর্যন্ত দেড় ঘন্টা সময় মনে হচ্ছিল যেন পুরো একটা দিন। অবশেষে ঘড়ির কাটা ১০.৩০ মিনিট ছুয়ে গেল, চেকপোস্টে গার্ডরা গ্রিন সিগনাল জানাচ্ছিল সামনে এগিয়ে যাবার জন্য। সাথে সাথে দাড়িয়ে থাকা সব গাড়ী থেকে উল্লাস ধ্বনি ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে।সারি সারি গাড়ীগুলো থেকে ভেসে এলো রবীন্দ্রনাথের সেই কথা...............

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ

আমার মন ভুলায় রে...

জীপের ছাঁদে যাত্রী ওঠা সেনাবাহনীর নিষেধ। যদিও প্রটোকলের বাহিরে অন্যান্য যায়গায় ছাঁদের উপরে ওঠার যাত্রী সংখ্যাই বেশী থাকে। এর মধ্যেও লোক চক্ষুর অগচরে যে, কেউ কেউ ওঠেনা তা কিন্তু নয়! তবে আমরা সবসময় সব নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই আমাদের ভ্রমন সম্পন্ন করেছিলাম। এদিকে মহুর্মুহু ক্রস-গানের ধ্বনি ভেসে আসছে আশেপাসের জীপগুলো থেকেও। পাহাড়ী আঁকা-বাকা, খাড়া উঁচু-নিঁচু রাস্তা বেয়েই চলছে আমাদের জীপ লংগদুর দিকে। যেন হেইলা দুইলা চলছে অন্তহীন চলা.... তাই গুন-গুনিয়ে যাই.......

এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হবে তুমি বলতো

যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হবে.........

এভাবে চলতে চলতে কখন যে মাচলং সেনাবাহনী ও বিজিবি র যৌথ ক্যাম্পে এসে পৌছালাম বুঝি নাই। প্রায় এক ঘন্টার মতো রাস্তা অতিক্রম করে গাড়ী থামতেই বুঝলাম আবার চেকপোস্ট এ বাঁধা পড়েছি। শুনতে পেলাম এখানে যাত্রা বিরতি হবে। আর এই বিরতেতেই অপরপ্রান্ত থেকে (দীঘিনালা) সেনাবাহীনি প্রটোকল আমাদেরকে অতিক্রম করবে। কতক্ষন যে বিরতি চলবে সেটাও তাৎক্ষণিক জানতে পারিনি। অনিশ্চিত অপেক্ষমান সময় সামনে রেখে আবার সবাই গাড়ী থেকে নেমে পড়ল।

চলবে ইনশাআল্লাহ....

বি.দ্রঃ ভাষা ও বানান ভুল সংশোধন এর অনুরোধ রইল।

বিষয়: বিবিধ

৭৪৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386539
০৪ মার্চ ২০১৯ রাত ১২:০০
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : কয়েকটা ছবি দিলে এই গরীবের উপকার হতো!
বড্ড জাগছে ঐ ছবি দেখার।


অসম্ভব সুন্দর হয়েছে চালিয়ে জান সাথেই আছি।
০৪ মার্চ ২০১৯ সকাল ০৬:২৭
318339
সত্যের পথিক লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ দেখতে পাবেন। অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File