হাসি কান্না আর ভালবাসা-১,২,৩,৪,৫,৬
লিখেছেন লিখেছেন ফিদাত আলী সরকার ১৬ জুন, ২০১৬, ০২:৪১:৪৮ দুপুর
কবি আজ কবিতার বিষয় খুঁজে পায় না। তাই কবি তার কবিতা লেখা ছেড়ে দিল। কি হবে কবিতা লেখে? তারচেয়ে আধ মরা গল্প লেখা যাক।
সকাল উঠেই অতি আজকাল মুনমুনকে দেখে। মনটা ওর ভাল হয়ে যায়। মনে হয়, সারাটাদিন ভাল যাবে। মাত্র ৩ মাস হয়েছে ওদের বিয়ের। এর মাঝে কত কিছু ঘটে গেছে? মান অভিমান যন্ত্রণা নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা।
এখানে থেমে গেল লেখকের কলম। কলম আর আগাচ্ছে না। কি যন্ত্রণা।
আবার শুরু করি। একটা বিড়াল ছিল। আমি ওর নাম রেখেছিলাম ডট কম। আম্মা ওকে খুব আদর করতো। প্রতিদিন ওকে সন্ধ্যায় একটা পুরী খাওয়াতো। ডট কম বলে আম্মা যখন ওকে ডাক দিত, হাজার ব্যস্ততার মাঝে সে বাসায় চলে আসতো। আমার আব্বা বিড়ালদের সুন্দর করে মাছ ভেঁজে ভাত দিয়ে মাখিয়ে খেতে দিত। সবাই বলতো আমার আব্বা অনেক অপচয় করতো। তাতে আমার কি আসে যায়?
মুনমুন খুব যন্ত্রণায় আছে। অতি ওকে অনেক ভালবাসে। এতো ভালবাসা ওর সহ্য হয় না। আসলেই অতি ওকে অতিরিক্ত ভালবাসে।
পাঠক, আপনারাও বোধহয় খুব যন্ত্রণায় আছেন। কারণ, লেখক আপনাদের নিয়ে খেলছেন। ভালোই খেলছেন। দেখা যাক, কতক্ষণ সে খেলতে পারে।
রাহুল, একটা মেয়েকে ভালবাসত। মেয়েটা অনেক সুন্দরী ছিল। সুন্দরী মেয়েদের একটাই সমস্যা তারা বুঝে কম। এটাই রাহুলের জন্য কাল হয়ে গেল।
মোবারক অনেক দিন ধরে অতির সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। নিজের ব্যস্ততার কারনে ওর সাথে দেখা করতে পারছে না। মোবারকের বউয়ের বাচ্চা হবে। ওর কাজের মেয়ে অনেক অসুস্থ। রহস্যজনক ঘটনা।
ছটুবাবু আর তার বউ আজ ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসছেন। যে ফ্যাটে ওনারা উঠবেন তা এখন খালি। সেখানে তাদের তিনজন আত্মীয় ছিল। তাদের এর আগেরবার বার করে দিয়েছেন। কি শান্তি? শুন্য ফ্যাটে তারা এবার উঠতে পারবেন।
রাসেলের বুকটা অনেক ব্যথা করছে। এতো চাপ সহ্য হচ্ছে না। এক দিকে বউ অনেক চাপ দিচ্ছে। বলছে, ভালবাসার প্রমাণ দিতে হবে। দুই বছর এতো কিছু করার পর আবার প্রমাণ দিতে হবে। বোনটাকে বিয়ে দিল রাসেল এর মধ্যে। বোন জামাইটা বলদের বলদের গাছ বলদ। দুনিয়ার কিছু বুঝে না।
লতা জাপান চলে যাবে জামাইকে নিয়ে। জামাইটা কয়দিন পর পর যায় ধামরায় শিয়ালের ডাক শুনতে। এতো যদি শিয়াল ডাক পছন্দ, তাহলে একটা মহিলা শিয়ালকে বিয়ে করতে পারতো।
সোমা আজ আবার খারাপ স্বপ্ন দেখে উঠেছে। ওর জামাইকে নিয়ে নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। ওর সব কথাবার্তা রহস্যজনক। আগে সোমা ওর চোখ বুঝতে পারতো। এখন ওর চোখে ভিতরে হারিয়ে যায়। ওর চোখ দিয়ে যখন অশ্রু বের হয়, তখন তাতে ডুবে হাবুডুবু খায়।
প্রীতির বাংলাদেশে এসে খুব ভাল লাগছে। কতটা পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশ। গণতন্ত্র আত্মহত্যা করেছে। মানবতা নিষ্ঠুরতায় মুখ লুকিয়েছে। বলার অধিকার উপড়ে ফেলা হয়েছে। তাও প্রীতির ভাল লাগছে।
সম্রাট রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। সাথে তাঁর কলিগ। সম্রাট এখন শ্যামলী যাবে। ওখান থেকে বাসে করে উত্তরা। হঠাৎ একটা হুন্ডা ওর সামনে দাঁড়াল। হুন্ডা চালক তাঁর হেমলেট খুলল।
- আপনার নাম সম্রাট নয়?
অনেকদিন পর এই নামটা শুনল সম্রাট। এটা তাঁর কলেজের নাম। এখন ওকে সবাই আসল নামে চিনে সবাই।
-হ্যা।
- আপনি সিদ্ধিশরি কলেজে পড়তেন না।
-হ্যা।
- আমি বর্ণ। বাসের জানালা ভেঙ্গে আমার হাত কেটে ছিলাম।
বেশ কয়েক বছর আগে ফিরে যায় সম্রাট। ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ অংশগ্রহণের ছাড়পত্র পেল। সেদিন বর্ণ নামের ছেলেটা সম্রাটের ফতুয়া পড়ে রাস্তায় মানুষদের রং মারছিল। একটি বাস জানালা বন্ধ করে যাচ্ছিল। হাত দিয়ে জোরে ঘুসি। হাত রক্তে লাল।
রনি ঘুমিয়ে ছিল। রনি ঘুমিয়ে আছে। রনি ঘুমিয়ে থাকবে। এভাবে সারাজীবন থাকবে। এভাবে সারাজীবন থাকতে হবে। সবাই তাকে এভাবে রাখবে।
মিশু একটা কবিতা লেখেছে। ৫০ লাইনের কবিতা। তা কোথায় প্রকাশ করবে। কার মাধ্যমে প্রকাশ করবে। কেউ কি প্রকাশ করবে? মাত্র ৫০ লাইনের কবিতা। মিশু বাংলায়্ এম এ করেছে। অল্পের জন্য প্রথম বিভাগ মিস করেছে। কেন যে মিস করলো?
নিরব একটি প্রেম করেছে। তাঁর একটি প্রেমিক আছে। কিন্তু তাঁর দুই বড় বোকা ভাই থাকার জন্য্ সে বিয়ে করতে পারছে না। সব বড় ভাইগুলো বোকা হয় কেন? একটা প্রেম করতে পারে না।
কবি কবিতা ছেড়ে উপন্যাস লেখতে গিয়ে ঝামেলা পড়ে গেছে। কবিতায় কিছু লেখলে কেউ পাত্তা দিত না। উপন্যাসের প্রতিটা শব্দের বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। এটা কেন লেখল? এটা মুছতে হবে। আমি জানিয়ে দিব, অমুক নিয়ে তুই এটা লেখেছিস, তাকে জানিয়ে দিব। কেউ কেউ তো না পড়েই মন্তব্য শুরু করে দিয়েছে।
এতে কবির কচু এসে যায়। প্রথমে একটু ভঁয় পেলে এখন আর কোন কিছুতে পাত্তা দিবে না। সবাই তোরা স্বর্গে যা। কবিরা নরকেই যায়।
মিঃ মন্টু আজকাল খুব রাগের উপর আছে। একি কাজ প্রতিদিন করতে হয়। সকালে কতগুলো মানুষকে অফিসে ঢুকায়। তাদের জন্য রান্না করে। তাদের জন্য টেবিলে খাবার সাজায়। তাদের খাবার জন্য ডাকে। তিন বেলা চা দেয়। কিন্তু তার রাগ লাগে যখন এই মানুষগুলো মধ্যে কেউ কেউ অমানুষের মতো আচরণ করে।
মনির ছোট ফুপু আর ফুপুর ছেলে মলিন এসেছে। মনি আজ অনেক রান্না করে, টেবিল সাজিয়ে রেখেছে। তবে ফুপু আর তার ছেলের জন্য নয়। মনির খালাতো ভাই আর বউয়ের জন্য। বিরক্ত লাগছে মনির ছোট ফুপুকে দেখে। কেন এরা বারবার আসে? লজ্জা শরম কিছু নাই। কিছুক্ষণ থেকে না খেয়ে ফুপু আর তার ছেলে চলে গেল। এদিকে মনির খালাতো ভাই আর তা বউ এল না। খাবার গুলো নষ্ট হল।
মেরিন তার ছেলে নিয়ে আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। শুভ পরে আসবে। দেশ ছাড়তে মেরিনে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ছেলেকে সেই দেশে পড়াতে হবে বলে যাচ্ছে। নিজের দেশটা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। মানুষগুলো আরও খারাপ হয়ে গেছে। এদেশ মেরিন আর চিনতে পারে না। এদেশ কি তার সেই সুন্দর বাংলাদেশ? যার জন্য ৩০ লক্ষ প্রাণ দিয়েছিল।
গোল মিটিং বসেছে। কবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কবি বেশি সত্য কথা বলছে। বেশি সত্য কথা বলছে। ওকে থামাতে হবে। যেমন করে হোক ওকে থামাতে হবে। পিটিয়ে হোক, কাউকে লেলিয়ে দিয়ে হোক, ওকে থামাতে হবে।
তারা হীরাকে সব সময় হিংসা করেছে। তারার বর একজন ডাক্তার। ছেলে একজন ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ে একজন মডেল। তারা ইংল্যান্ডে থাকে। প্রতি বছর বাংলাদেশে আছে। তাঁর তিন ভাই তাকে নিয়ে এমন তোয়াজ করে, যেন কোথাকার কোন লাট সাহেব এসেছে। এদিকে, হীরার বর একটা বোকা মানুষ।সারাজীবন সৎ চলেছে। তাই উন্নতি করতে পারে নাই। ছেলে নকল করতে পারে না বলে,পরীক্ষায় পাস করতে পারে না।তারপরেও তারা হীরাকে হিংসা করে।
সিহাব টিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এটা ওর ভাবী। এত সুন্দর মেয়ে রবি ভাইয়ের বউ। রবি ভাইয়ের এতো ভাগ্য। সামান্য একটা চাকুরি করে তাঁর জীবনে এতো সুন্দর একটা চমৎকার মেয়ে আসতে পারে। এতো সুন্দর করে কথা বলে, এতো গুনের অধিকারী। সিহাব তাঁর মায়ের দিকে একবার তাকাল। হ্যা, এই মানুষটার জন্য সিহাব আজ একা রয়ে গেছে। তাঁর জীবনে একজন এসেছিল। তাঁর ভালবাসা সায়না। তাঁর মায়ের কালো মেয়ে পছন্দ নয়। আজ সিহাব একা। খুব একা। বড় একা। রাতগুলো বড় একা লাগে। বড় কষ্ট লাগে।
ফরিদ আজ প্রথম মিশুর সাথে নাচল। মিশুর দুলাভাই অনেক দুষ্টু। সে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে তাকে নাচতে হয়েছে। ফরিদের খুব ভাল লাগছে। মিশুকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আশা পরী। আজ পূর্ণিমা। আজ বলে পরীরা আকাশ থেকে নেমে আসে। তারা সুন্দর মানুষের সাথে আনন্দ করে। আজ বোধহয় আকাশ থেকে মিশু নেমে ফরিদ নামক সুন্দর মানুষের সাথে নাচছে। মিশুর দুলাভাই আসলেই দুষ্টু।
কোমল জেলখানায় বন্দি। মিথ্যা একটা মামলায় বন্দি হয়ে রয়েছে। একজনের উপকার করতে গিয়ে আজ সে বন্দি। সবাই চেষ্টা করছে তাকে বের করার। একসময় অনেক উন্নতি করেছিল। ব্যবসায় অনেক লাভ করেছিল। মিতা আসলো তার জীবনে। বিয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে একটা খারাপ ছেলের সাথে পালিয়ে গেল। ভাল ছেলেদের ভালবাসার কোন মুল্য নেই এইসব মেয়েদের কাছে। কোমলের বোন, বোন জামাই আর ছোট ভাই এসেছে তাকে দেখতে। সবাই চিৎকার করছে। কিছু কথা শুনা যাচ্ছে, কিছু শুনা যাচ্ছে না। কোমল একটা কথাই বলল, জীবনে কাউকে উপকার করবি না। বোনটা অনেক কাঁদছে। বোন জামাইটাও কাঁদছে। কিন্তু এতো বেড়াজালে কোমল কিছুই দেখতে পারছে না।
নিপুন একটা মোটা মহিলা। তার আবার মোটা বুদ্ধি। তার চরিত্র আকাশের মতো পরিবর্তন হতেই থাকে। আজ রৌদ্র উজ্জল কাল ১০ নম্বর মহা সংকেত । মলিন গিয়েছিল নিপুন ভাবীর বাসায়।
- মলিন, তোমাকে একটা কথা বলি ভাইয়া। কিছু মনে করবে না।
- বলেন।
- আচ্ছা, তোমার বউভাতে ওই চাইনেজে খাওয়ার বুদ্ধি কে দিয়েছে?
- আমি আর আমার বউ মিলে ঠিক করেছি।
- এতো বাজে চাইনিজ একটা হয় না। এরপরে কোন অনুষ্ঠান হলে আমাদের বুদ্ধি নিবে।
- কিন্তু সবাই তো ভাল বলল।
- না, সবাই খারাপ বলেছে।
মলিনের মন খারাপ হয়ে গেল। অনেক কষ্ট করে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। তিন মাস পরে এরকম হঠাৎ কেউ এমন কথা বললে আসলেই মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা।
নিপুন মনে মনে হাসলো। আমার শ্বশুর এতো বড়লোক, তারপরেও সুমিত আর আমার বউভাত করে নাই, তুমি কয় টাকা রোজকার কর, তার উপর তোমার বাবা মরে গেছে, এতো বড় রেস্তরাঁয় বউভাত। দিলাম বাঁশ মেরে। হাঃ, হাঃ, হাঃ। মনের হাসিতেও তাকে শাকচুন্নি আর রাক্ষসীর মতোই লাগছিল।
বিষয়: সাহিত্য
১৫১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন