আজ শিল্পী আবদুর রোউফ সরকারের দ্বিতীয় মৃত্যু দিবস

লিখেছেন লিখেছেন ফিদাত আলী সরকার ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:২৯:১৭ দুপুর



আজ আমার আব্বা আবদুর রোউফ সরকারের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী ২ বছর আগে এইদিনে তিনি ৬মাস ক্যান্সারে ভুগে আমাদের ছেড়ে এক অজানা পথের পথিক হন।

শিল্পী আবদুর রোউফ সরকার ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদ শিল্পী। তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রচ্ছদ শিল্পী বইয়ের প্রচ্ছদে কম্পিউটারের ব্যবহার করেন। যার জন্য তাঁকে ইসলামী ফান্ডেসন তার ৪৮ হাজার তাঁকে দেয়নি। সেখানে তিনি সেজান সরকার নামে অগ্রপথিক নামক ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ করতেন। বাংলা একাডেমীর প্রায় অর্ধেকের বেশী বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি করেন। তাঁকে শিল্প অঙ্গনে রোউফ ভাই নামে পরিচিতি ছিল।

তিনি ১৯৫০ সালে ভারতের রায়গঞ্জ দিনাজপুরে ১৯৭১র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ খরসেদ আলী সরকার এবং শিক্ষিকা সালমা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ডাঃ খরসেদ আলী সরকার কংগ্রেস করতেন আর সালমা খাতুন মুসলিম লীগ করতেন।ব্রিটিশ আমলে আমাদের আদি বাড়ীতে দুই দলের ক্যাম্প করা হয় যা সারা ভারতবর্ষে বিরল ঘটনা। আবদুর রোউফ সরকারের আরও তিন ভাই আর দুই বোন ছিল। বাংলার বিখ্যাত ঔপানাসিক শওকত আলী তার মেজ ভাই।

তার মা তাঁকে তিন বছরে রেখে মৃত্যুবরন করে। তার বড় বুবু তাঁকে লালন-পালন করে। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় ভাল ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তার পরিবার তৎকালীন পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশের দিনাজপুরে চলে আসেন।পরে কালিতলায় আট বিঘার উপর বাড়ি কিনেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দিনাজপুর ক্রিকেট দলে সুযোগ। ডান হাতে বল করতেন আর বা দিক দিয়ে ব্যাটিং করতেন। এছাড়া কবিতা আবৃতি, ছবি আঁকা আর গল্প লিখতেন। তবে কিছুতে স্থির ছিলেন না। তাই তার সেজদা ঢাকায় এনে তাঁকে আর্ট কলেজে ভর্তি করে দেন। তার অনেক বন্ধু ছিল।

ছাত্র অবস্থায় তিনি প্রচ্ছদ করা শুরু করেন। লালসালু ,সূর্য দিঘির বাড়ি সহ অনেক নাম করা উপন্যাসে তিনি প্রচ্ছদ করেন। তখন তার প্রচ্ছদে নাম হিসেবে আবদুর রউফ নামে দেওয়া ছিল যা পরবর্তী কালে আবদুর রউফ নামে আরেক প্রচ্ছদশিল্পীর কাজ বলে কিছু প্রবন্ধ লেখকরা উল্লেখ করে। তাতে আমার আব্বার কিছু আসে যায় নি । তিনি এত প্রচ্ছদ করেছেন যে দুই একটা কাজ অন্যের বললেও কি আসে যায়।

১৯৭৩ সালে তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে যোগ দেন। সেখানে তিনি ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের হয়ে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৬সালে ১৩ জুন আমার আম্মা হাজেরা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের কিছুদিনের পর জার্মান থেকে আমার মেজবাবুর শওকত আলীর শিশুতোষ উপন্যাস ‘নীল হাতি’ বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য এশিয়ার মধ্যে প্রথম তিনি পুরস্কার পান।

তার দুই সন্তান। আমি আর আমার বোন। ২০০৭ সালে তিনি বর্ণমালা নামে কবি শামসুর রহমানের ছড়া নিয়ে প্রদর্শনী করেন। এছাড়া তিনি হাজারখানিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেন। তিনি বেক্সিকো মিডিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। তার হাতে শৈলী, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, Daily Independent, আনন্দ ভুবন প্রকাশিত হয়।

তিনি অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। বিনিময় তিনি পেয়েছেন অনেক ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর আদর। তিনি বাচ্চাদের খুব ভালবাসতেন। তিনি গল্প করতে ভালবাসতেন। আমার বন্ধুরা দল বেধে তার সাথে দেখা করে গল্প করতে আসত।

তিনি ধার্মিক ছিলেন না, কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন। তিনি যেকোন বই পড়ে তারপরই প্রচ্ছদ করতেন।

আমার হাজার খানিক বইয়ের পাঠাগারের তারই অবদান বেশী।আব্বার বাংলা ১৪০০সালে কুরআন এখনও পড়ছি আর দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাঁকে মাফ করে দেন জানা ও অজানা পাপ থেকে আর তার সকল ভাল কাজের প্রতিদান দেন।(আমিন)

বিষয়: বিবিধ

১১৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File