অপারেশন গুম
লিখেছেন লিখেছেন ফিদাত আলী সরকার ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫২:৩২ সকাল
রকেটটা ৩০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছে। এটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়ল ০০৭ উপর। অর্থাৎ আমার উপর। মহাবিশ্বের মহাপরিচালকের সাথে এইমাত্র কথা হলো। রকেটটিতে ক্রূ ছিল ১১৮ জন। পারমাণবিক চুল্লি নষ্ট হওয়ার কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমি অতিযন্ত্রে অনুসন্ধান করে দেখলাম পারমাণবিক চুল্লি নষ্ট হওয়ার কথা নয়। বোধহয় কেউ বন্ধ করে দিয়েছিল।যেমন ঘটেছিল ২০০ বছর আগে পৃথিবীতে রুশ ডুবোজাহাজে।আবার একশ বছর আগে নেপচুনে পাঠানো রকেটে। রুশের ডুবোজাহাজে ঘটনা পর সে দেশের জনগণ সে দেশের শাসকদের বেজন্মা বলেছিল,নেপচুনের ঘটনার পর পৃথিবীর মহাপরিচালককে পচা টেস্টটিউবের বাচ্চা বলেছিল আর এই ঘটনায় আমরা মহাবিশ্বের মহাপরিচালককে বলছি সর্বনিম্ন শ্রেণীর রবোটিক ।
আমার হাতে সময় নেই। দুই মিনিটের মধ্যে অনুসন্ধানী রকেটে উঠতে হবে।অর্থাৎ আমার একটি শুক্রানু রকেটের মধ্যে অবস্থিত বিশেষ ক্লোন তৈরির যন্ত্রে দিয়ে দিব। ৩০ বছর পর আমার মত মানুষ সেখানে অনুসন্ধান করবে। এরকম আমার পঁচানব্বইটি শুক্রানু থেকে ক্লোন বিভিন্ন অনুসন্ধানে গেছে। তার মধ্যে তিরিশ জন ফিরেও এসেছে।
(তিরিশ বছর পর)
আজ আমি চেম্বারের দরজা দিয়ে নগ্ন অবস্থায় বের হলাম।জীবাণুনিধন ঘরে নিয়ে আমাকে পরিষ্কার করে বিশেষ বস্ত্র পড়িয়ে দিল। আমি অপারেশন গুম ফাইলটি ভাল করে পড়লাম।
আমার অনুসন্ধানী রকেটটি এ ব্যাপারটি সহজ করে দিয়েছে।হারিয়ে যাওয়া সাথে প্রবেশ পথে সংযোগ করে আছে আমার রকেটটি। আমি অতিযন্ত্রের সাহায্যে জানতে চেষ্টা করলাম রকেটের অবস্থা কি? রকেটের সকল ক্রূ মারা গেছে। তাদের লাশ বাতাসবিহীন রকেটে ভাসছে। কিন্তু লাশের সংখ্যা দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৩৬। তাহলে মহাবিশ্বকেন্দ্র মিথ্যা বলল।যে রকম রুশরা বলেছিল।কিন্তু রবোটিক তো মিথ্যা বলে না। ব্যাপারটা অনুসন্ধান করতে হবে।
তার আগে মহাবিশ্ব কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। যোগাযোগ করতে গিয়ে মহামুশকিলে পড়লাম।
- হ্যালো।
- হাম্বা।
- হ্যালো।
- হাম্বা ।
আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।
আমি দৈনিক মহাবিশ্ব দট কমে অতিযন্ত্রের সাহায্যে জানতে চাইলাম ব্যাপার কি? রবোটিক তন্ত্রের পতন ঘটেছে। পশুতন্ত্রের শাসন চলছে। বর্তমান মহাপরিচালক একজন গরু। মানুষ জনে আর কি করা, তারা গরুর ভাষায় কথা বলে। পরাধীন জাতির তো আত্মসম্মানবোধতো নাই। যেমন একসময় বাংলাদেশ নামক দেশের স্বাধীন জাতির এমন দশা ছিল।
মানুষ নিজেরা নিজেদের শাসন করত,তারপর কম্পিউটারের এমন উন্নয়ন হলো যে তারা শাসন করত,তারপর রবোটিক আর এখন পশুরা। অতিযন্ত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম খুব তাড়াতাড়ি কীটপতঙ্গ ক্ষমতায় আসবে।
অতি যন্ত্রে মাধ্যমে গরুর ভাষা শিখতে হলো। আধ ঘন্টা গরুর সাথে হাম্বা হাম্বা করলাম।
আগের চারশো বছর কোন ভাল পরিচালক ছিল না । তারা সবসময় ভুল তথ্য দিতো। তারা মহাবিশ্বের কিছুই করেনি। বর্তমান পশুতন্ত্রের সরকার মহাবিশ্বকে চরম শিখরে নিয়ে যাবে। এরকম কত কি?
ওর সাথে হাম্বা হাম্বা করে আমার কয়েক শতক আগের পৃথিবীর তৃতীয় বিশ্বের শাসকগোষ্ঠীদের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁরাও এভাবে কথা বলত। আসলে তখন শাসকগণের মেধা গরুদের মতই ছিল।
অপারেশন গুম সম্পর্কে উনি কিছু জানেন না। বিদ্রোহের সময় সকল ইনফোকম মেমরি ভাইরাসের মাধ্যমে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তিনি তার ছাগল বুদ্ধিজীবী দিয়ে তদন্ত করবেন আর বাদুড় উপদেষ্টা দিয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন।
তবে আমাকে আমার অপারেশন চালিয়ে যেতে বললেন। অতিযন্ত্রের সাহায্যে মহাশূন্যের বস্ত্র পরিধান করে রকেটে প্রবেশ করলাম।
তদন্ত শেষ। রকেটটি আমার রকেটের সাথে লাগিয়ে গ্রহাণুগ্রহে ফিরছি। গ্রহাণুগ্রহ মানুষের অপূর্ব নির্মাণ। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি গ্রহাণুগুলো সংযুক্ত করে একটি গ্রহের সৃষ্টি করেছে যা বৃহস্পতি থেকে বড়। এটি মানুষের দ্বিতীয় বসতি।
তদন্তরিপোর্টে লিখলাম যাত্রার সময় এই রকেটে কোন মহাশূন্যের বস্তুর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যেহেতু তারা মাঝের অংশে ছিল তাই তারা কিছু সময়ের জন্য রক্ষা পায়। রুশ জাহাজের মতো তাঁরাও পারমাণবিক চুল্লি বন্ধ করে দেয়।তাদের হাতে দুইদিনের অক্সিজেন ছিল। তাদের শুক্রনু ক্লোন তৈরি যন্ত্রে প্রবেশ করিয়ে দেয়। তারা আশা করেছিল এই তিরিশ বছরের মধ্যে কোন উদ্ধারকারী রকেট এসে যাবে। বরাবরের মতোই শাসকরা ভুল করল। বিশেষ যন্ত্র থেকে ক্লোনগুলো মারা গেল। এ নিয়ে শাসকরা হয়তো শোক দিবসের ঘোষনা দিবে। আর আমরা তাদের বলব গরু বাচ্চা বাছুর।
বিষয়: সাহিত্য
১৫৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন