প্রবাসে বাংলাদেশ (পর্ব-০১)

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৪৮:৪৫ সন্ধ্যা

৩রা জুলাই। সাল ১৯৯১।

মাত্র দু'দিন হল জেদ্দা এসেছি। ঘর থেকে এখনও বের হইনি। গরমের দাবদাহে অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। তদুপরি এখনও আকামা পাইনি। বাহীরে পুলিশের ধরপাকড়ের আতংক। তাই ঘুমিয়েই সময় পার করছিলাম।

..ঐ ব্যাটা। উঠ। এখানে কি ঘুমাইতে আসছিস? চল। বাহীরে যাবো।

-আরে মিলা তুই?

-হ। তোর বাপ। মিলা উত্তর দিল।

- উঠ। উঠ। কম্বল ছাড়।

-কোথায়?

-আমার বাসায়।

-তোর বাসা কোথায়?

-তুই কি জায়গা চিনিস? উঠ। গেলে বুঝবি। কতদিন পর তোর সাথে দেখা হল। চল একসাথে ঘুরবো।

-বাহীরে এত গরম। এখন না গেলে হয়না?

-দুর ব্যাটা। কথা কম বল। তোকে উঠতে বলেছি্ উঠ। বাস।

নাছোড় বান্দা মিলার ধাক্কা ধাক্কিতে না উঠে পারলামনা। তাই দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম।

মিলা আর আমি লেংটা কালের বন্ধু। সম্পর্কে - জগতের ভাতিজা। আগা মাথাহীন বংশসুত্র। পাশের বাড়ী। ওরা বাবাকে সবাই ভাই বলে। তাই সে জগতের ভাতিজা।

দু'জনে একই স্কুলের একই ক্লাশে পড়তাম। দুষ্টোমিতে মাতিয়ে তুলতাম পুরো গা। হাজারো স্মৃতি গাথা সেই শৈশবের বন্ধুত্ব। তাই ওর আজকের আবদারটা ফেলতে পারিনি।

দ্রুত রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। বাগদাদিয়া যাবো। ২০ মিনিটের রাস্তা। লেমুজিনে উঠে বসলাম। এ প্রথম বারের মত ভিন্ন একটি দেশের রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে কখনযে বাগদাদিয়া পৌছে গেলাম টেরই পাইনি।

ওর রুমটা দোতলায়। বাসায় এখন কেউ নেই। দুপুর দুইটায় সবাই ডিউটি হতে ফিরে আসবে।

রুমে ঢুকেই ও সযত্নে আমাকে আপ্যায়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফল কেটে দিল। প্লেট ভর্তি আঙ্গুর। আবার জুস। আমি খাচ্ছি আর কথা বলছি। ও পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে করতে আলমারীতে হাত দিল। কিছুক্ষন পর দেখি কাগজ কলম নিয়ে হাজির। টেবিলের উপর কাগজ কলম রেখে ছাত্র জীবনের মতই বলে বসল, ধর। চিঠি লিখ।

-কিসের?

-ঢং করিস না শালার ব্যাটা? তুই জানিসনা আজ কতদিন হল তোর হাতে আমার ডালিংকে চিটি লিখিনা?

-ওমাগো? তোর সাথে সম্পর্কটা এখনও আছে?

-ছিলনা। কিন্তুু আবার সুত্র পেয়েছি। তাই নবায়ন করতে হবে। বুঝিসতো। একবার প্রেমে পড়লে ফিরে আসা অনেক কষ্ট। মনকে বুঝানো বড় দায়। মানতে চায়না। অনেক চেস্টা করেও ভুরতে পারিনা।

-আচ্ছা, ও কি তোকে এখনও ভালবাসে?

-তোর হাতের লিখা চিঠি পেলে ভাল না বেসে উপায় আছে?

-সৌদি আরবে এসে এসব পাগলামী এখন বাদ দেয়া যায়না?

- দুত্তরি। আমাকে এত কোরান হাদিস দেখাসনাতো? আমার কইলজা পুড়ে যায়। আর তুই আছিস ফতুয়া নিয়ে। প্লীজ। এত কথা বলার সময় নেই।

তুই আমার প্রেমের কনসালটেন্ট আগেও ছিলি, এখনও আছিস। বিয়ে করলেও তোকে কনসালটেন্ট হিসেবেই রাখবো। চিন্তা করিসনা। আমি তোকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছিনা।

মিলা বলতে লাগলো...ভুলে গেছিস সেই সব চিঠির কথা। রাতকে রাত আমার প্রিয়ার জন্য কত চিঠি লিখে নিতাম তোকে দিয়ে। ও ভাবতো এটা আমার লিখা। ও কিযে প্রশংসা করতো আমার। হাতের আর্ট সহ তোর সুন্দর হাতের লিখা, আর ভাষার শৈল্পিকতায সে মুগ্ধ হয়ে যেতো। বলতো, তোমার চিঠি এত জীবন্ত। বাপরে বাপ। পড়ে আমি পাগল হয়ে যাই। প্রতিটি চিঠি কতবার যে পড়ি তার ইয়ত্তা নেই।

ওর সম্মোহনী কথাগুলো শুনে আমি মনে মনে খুব সুখ অনুভব করলেও ঢরে হাটু কাপতো। না জানি কোনদিন ধরা খাই। তাহলে সব জলে যাবে। আমার হাতের লিখা আর ভাষার যে জটিল কারুকার্য। তা দেখলে নিজেরই পড়তে কস্ট হয়। ওকে কি বলব?

যাক। তুই চিন্তা করিসনা। ছাত্র জীবনের মত এখনও তোর জন্য চা নাস্তা ফ্রি। যা চাস তাই খায়াবো। আগেতো বাপের হোটেলের টাকায় শুধু চা নাস্তা খাওয়াতাম। এখন তোকে প্রমোশন দিলাম। চা নাস্তার সাথে যা চাস তাই দেব।

-দ্যাখ মিলা। চিঠি লিখতে মুড লাগে। আমার এখন কিন্তু মুড নেই।

-দুর ব্যাটা। তোর মুডের গোষ্ঠী কিলাই।যা আসে তাই লিখে দেয়। আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। তোকেতো আর চিন্তা করতে হবেনা। তাছাড়া অনেকদিন তাকে চিঠি লিখিনা। কাজেই মনে যা আসে তাই লিখ। বল তোমার জন্য আমার কলিজা ছ্যাদা হয়ে গেছে। গর গর করি রক্ত বাহীর হয়। মাঝে মধ্যে প্রচন্ড ব্যাথায় ঠুস করে আওয়াজ ও হয়....।

চলবে..

বিষয়: বিবিধ

১২৩০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385094
১১ এপ্রিল ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
শেখের পোলা লিখেছেন : লেখাটা দু বার এসেছে। যাক, আশা করি ভাল আছেন। আগের মত এ ব্লগে মজা পাইনা। পরিচিত অনেকে নেই। প্রায় দেড় বছর দেশে ছিলাম। এখন আবার পুরানো ঠিকানা। ভাল থাকেন।
১৫ এপ্রিল ২০১৮ বিকাল ০৫:১২
317562
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
আপনাদের খুব মনে পড়ে, কিন্তু বিশৃঙ্খল ব্যস্ততার কাছে প্রতিনিয়তই হার মানতে হয়!
Broken Heart
385099
১২ এপ্রিল ২০১৮ দুপুর ০২:২৯
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। বিডি টুডেতে অনেকদিন পর এসে ভাবলাম একটি সিরিজ লিখা শুরু করি। হয়তবা পুরোনোদের সবাইকে খুজে পাব। কিন্তু অবস্থাতো খুব করুন। দিনে একটি পোষ্ট ও হয়না্ মন্তব্যকারীতো নেই বললেই চলে। ব্লগ্টা যদি ব্লগার মুখর না হয় তাহলে জনশ্যন্যই হবার কথা। পরামর্শও তেমন আমলে নেয় না। তাই সবাই বিদায নিয়েছে। যাক, স্বৈর সরকারের হাজারো হীনমন্য আচরণের মুখে বিডি টুডে টিকে থাকলেও এটিকে ব্লগার মুখর করার পদক্ষে নেই বললেই চলে। যাক এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যবাপার। আপনি কোথায় আছেন। ভাল আছেনতো?
385152
২৩ এপ্রিল ২০১৮ দুপুর ০১:৩৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : প্রবাসে বাল্যকালের বন্ধু! তাও আবার খায়ের খা! আর কি চাই...চলতে থাকুক।
385363
১৭ মে ২০১৮ সকাল ০৯:১৪
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
385634
০৪ জুলাই ২০১৮ রাত ০৯:২৪
আবু নিশাত লিখেছেন : প্রবাসী ভাই, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা সৌদি আরব হতে ফেরত আসার পর পত্রিকার মাধ্যমে যা জানা যায়, তার মর্মার্থ হলো সৌদি জনগণ একেবারে জাহিল । এ সম্পর্কে যদি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সঠিক তথ্যবহুল লেখা দেন,তাহলে ভাল হয় । যদি লেখা দেন,তবে ফেসবুকে একটু জানাবেন । ভাল খাকুন ।
385783
২০ আগস্ট ২০১৮ সকাল ০৯:৫৩
আবু নাইম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ. অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File