রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৩৫)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৬ মে, ২০১৪, ০৩:৫৯:৫০ দুপুর
পর্ব-৩৪
......না। বিপু আর পেছন ফিরে তাকায়নি। সংসারের ছোট ছেলে মেয়ে এমনই হয়। এরা বড় হলেও অবুঝ থাকে। চির জনম কচি খোকা খুকি। এদের অসীম আবেগ। কুল নেই কিনার নেই। আর এসব অবুঝ শিশু সম কনিষ্ঠদের অসীম আবেগ যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা এদের পাগলামী নিয়ে খুবই আন্দোলিত হয়। হাসির খোরাক হয়। এসব বাঁধাহীন আবেগী পাগলদের পাগলামী কে উপেক্ষা করে কিছুই করা যায়না। হিতে বিপরীত হয়। নুন থেকে চুন খসতেই একেবারে লঙ্কা কান্ড ঘটিয়ে দেয়। বিপু ও তাই করছে।
আবেগ মানুষের স্বভাব ধর্ম। এটি ছাড়া মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারেনা। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য এটি আগুনের তেজকে আরও বাড়িয়ে দেবার জন্য জ্বালানির তেল হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রজ্বলনের এ লেলিহান শিখাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়, তাহলেই সমস্যা বাধেঁ। নিয়ন্ত্রণহীন আবেগী মানুষ আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে একটুও দ্বিধাবোধ করেনা।
বিপুর চোখ বেড়ে পানি পড়া ছিল অতি আবেগের বহি প্রকাশ মাত্র। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নয়, ভালবাসার বীজ বুননের প্রক্রিয়া এটি। মনের মাটি ফেটে বিকশিত হতে চায় এটি । সেই বিকশিত হবার যাতনায় কাতর বাকহীন অবুঝ মনের কষ্টের অশ্রু ফেলে গেল বিপু। ও যদি স্যারের মুখ থেকে আশ্বস্ত হবার মত কোন যাদুকরী শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাতে, তাহলে কল্পনার রাজ্য সব মিছে সুখের প্রত্যাশায় এসব যাতনা কে ভুলে যেত।
অবুঝ মন এমনই। মিছে আশায় বুক বেধেঁ নিজের স্বপ্নের রাজ্য গড়ে তুলতে চায় নক্সা বিহীন ভালবাসার নতুন প্রাসাদ। চোখ ধাঁধানো এ স্বপ্নময়ী প্রাসাদ বড়ই ভয়ংকর। কোন স্বপ্ন দ্রষ্টা মানুষ এটির স্বত্বাধিকার হারাতে চায়না। কালজয়ী প্রেমের ইতিহাস সৃষ্টিকারী পৃথিবীর সব কপোত কপোতিরাই কল্পিত এ ভালবাসার প্রাসাদে বাসর গড়ার স্বপ্নে বিভোর। অতি আবেগে অর্থৈই সাগরে প্রেমের তরী ভাসিয়ে পাল তুলতে গিয়ে প্রচন্ড ঝড়ে সাগরের নোনা জলে ভেস্তে দিয়েছে সব। বিপু যদি অতি আবেগী হয়ে নিজেই অদক্ষ মাঝির মত পাল তুলে বসে, তাহলে ধেয়ে আসা বিপদ কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
দর্শকের গ্যালারী থেকে দেখা ফেলে আসা অতীতের মঞ্চে এসব পাগল প্রেম-যুগলের অভিনীত নাটকের করুণ পরিণতি ছিল দুঃস্বপ্নের মত। তাই ভাবছি কি করবো । বিপুর চোখের অশ্রু কারো চোখে পড়লে সমস্যার দানা বেঁধে উঠবে। জটলা খোলার জন্য উত্তর দেয়াটা সহজ মনে করলেও বিষয়টাকে এত হালকা ভাবে নেয়া ঠিক হবেনা।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়ে তাহুরা এসেছে। খুব পরিপক্ক মেয়ে। বয়সে বিপুর চেয়ে বড়। চোখে মুখে কথা বলে। চাল চলন অভিব্যক্তিতে মনে হয় এ বাসারই একজন। পরিচয় করে না দিলে কাজের মেয়ে বলে ধারণাই করা যায়না। এ মেয়েটি বিপুর বান্ধবীর মতই। ওই বিপুকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অনেক চালাক বানিয়েছে। সাহস দিয়ে এগিয়ে দিয়েছে। স্বপ্ন দেখিয়েছে এক অনন্ত পথের, যেখানে সবই রঙ্গিন।
আমাকে নিয়ে বিপুর স্বপ্ন দেখা, মিছিলের অগ্রভাগে শ্লোগান রত স্যারকে দেওয়ান হাটের মোড়ে পুলিশের বন্ধুকের নল থেকে বের হয়ে আসা গুলি স্যারের বুক ভেদ করে ঢুকে যাওয়া, এসব শিহরিত হবার মত মিছে স্বপ্ন পরিকল্পনাকারী কাজের মেয়ে তাহুরা। আমার বিশ্বাস, আজকের এ আবেগাপ্লুত বিপুর অবুঝ হৃদয়ে গাঁথা অনুভূতির বিস্ফোরণ তাহুরা ঘটিয়েছে। সুপ্ত দানার মুখ ফাটিয়ে বেড়ে উঠা বীজের মুল নক্সা ডিজাইনার এই তাহুরা।
বিপু চলে যাবার কিছুক্ষণ পর তাহুরা এসেছে। প্রতিদিনের মত ট্রেতে চা নাস্তা আর পানির গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকেছে। মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে দুষ্টামির চাউনিতে টেবিলের উপর নাস্তার ট্রে রাখতেই প্রশ্ন করলাম,
- কি ব্যাপার। আজ এত খুশী কেন?
- না স্যার। এমনিতেই।
- এমনিতেই মানে?
মাথায় ঝুলন্ত চুলগুলোকে একটু নাড়া দিয়ে ন্যাকামির ভঙ্গীতে জবাব দিল,
- আপনার ছাত্রী বিপুর পাগলামি দেখে হাসছি।
- ওর আবার কি হয়েছে? না জানার ভান করেই জানতে চাইলাম।
- আহারে! আপনি জানেন না বুঝি? ওতো আপনার রুম থেকেই চোখের পানি নিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
- তাই নাকি? কই। চোখের পানিতে দেখিনি! দেখেছি, কিছু না বলে ভেতরে চলে যেতে।
- স্যার। ভেতরে গিয়ে দ্যাখেন, ও উপুড় হয়ে বালিশের উপর কেমন করে কাঁদছে।
- তাই নাকি? আচ্ছা, ও কাঁদছে কেন ?
- আপনিই ভাল জানেন।
- অামি ভাল জানি মানে? তুমিত ওর ওস্তাদ। সারা বেলার সাথী। সেহলী।
- না স্যার। আমি কিচ্ছু জানিনা, ঢং মেরে মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে চলে গেল তাহুরা।
তিন পাগলের মেলায় আমি একলা এখন,
নাস্তা খেয়ে দেখব 'পাগলা প্রেমের' যখম।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ৪৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিপুর ক্ষেত্রে সর্বশেষ গৃহশিক্ষকের বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেগ তাড়িত যাদুকরি ক্যারিশমেটিক শিক্ষকসূলভ কৌশল প্রয়োগের কারণে তার মধ্যে একদিকে যেমন লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা জেগে উঠতে সহায়ক হয়েছে, অন্যদিকে বিপুর বয়সজনিত জটিল আবেগের সমিকরণটাও সমানতালে ক্রিয়াশীল ছিল যা সে শেষ মুহুর্তে এসে চোখের পানিতে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আপনার কমেন্টস টা সত্যিই দারুণ। খুব খুব ভাল লেগেছে। অনেকেই বিপুর আবেগকে বলতে পারে, আহ। প্রবাসী মজুমদার শিক্ষক হয়ে এ কি লিখে। কিন্তু বাস্তবতাতো এটিই যা আপনি লিখেছেন।
ধন্যবাদ।
হিয়েন মনে অয় ।
নাইলে বেচারির রাগ-দুঃখ-শোক-অভিমান বেজ্ঞিন চোখের হানিতে উড়াইছে ।
খারাপ অইলে কিন্তু অই হাউস টিউটরের খবর আছিল ।!
লাছা লাগাইছে গায়ে
হেতে ঢং ধরচে পায়ে
অ্যাই কইতাম হাইত্তান্ন,
হেতের খালি উকি মারে
অ্যাই প্রেমে হইত্তান্ন।
ধন্যবাদ।
অনেক তৃপ্তি পাচ্ছি গল্প পড়ে চালিয়ে যান জনাব
আন্নের নাস্তা-
খাই লন ।
তারহর-
প্রেমের যখন আন্নেও দেখেন আন্ডারেও দেখান !
একটি মনের দাম দিতে গিয়ে
জীবন চলার পথটি হারিয়ে
কি আমি পেলাম।
হারানোর ভয়ে আমি নাই। বাস্তবে তাই হয়।
ট্র্যাজিডি না কমেডি তাই বুঝতে পরছিনা।
Onekgulo vari vari kotha bollen, Ahmed Musa vai ojon arro bariye diche. Kototuku shojjo hoy shetai dekhar bishoi.
Allah amader ai bastobvittik bepargulo bujar o aita theke shikkha neyar taufiq daan koruk.
আগের পর্বগুলোতে মন্তব্য করতে পারিনি। পরের পর্বে কি হয় জানার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন