রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৩৩)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২০ মে, ২০১৪, ০৪:২৮:৪৪ রাত
পর্ব-৩২
ব্যাংকের নতুন ম্যানেজার অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেক জুনিয়র। শুনেছি, যোগ্যতার বলে নয়, মামুর জোরেই ম্যানেজার হয়েছে। বাস্তবে তাই মনে হয়েছে। তেল মারার দিক থেকে প্রাক্তন ম্যানেজারকে হার মানিয়েছে। উপরের কোন বসের সাথে কথা বলার সময় মনে হত, বস বুঝি স্যারকে খুব কাছ থেকেই দেখছে।
আগের ম্যানেজার চোর হলে এটা হল ডাকাত। এ শাখায় যোগ দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই স্যারের নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরী হয়ে গেছে। এটি অফিসার প্রমোশন প্রার্থীদের সমম্বয়ে গঠিত পর্দার অন্তরালের পদবী বিহীন সিন্ডিকেট। অলিখিতভাবে সমর্থনপুষ্ট এ সিন্ডিকেটের সদস্য বিশেষভাবে রবি সাহেব আর খায়ের সাহেবের দাপট টা যেন অনেক বেড়ে গেছে। ঘুষ খাওয়াটা অনেকটা প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপকদের নেতৃত্বে পরিচালিত শাখায় ভেতরের অফিসিয়াল চেইন অব কমান্ড না থাকলেও উপরে লোকদেখানো সম্মান ছিল নামে মাত্র। এ ধরনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে সেকান্দর সাহেব, মফিজ সাহেব দুজনেই ব্যাংক এম্প্লয়িজ ইউনিয়নে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ এ মিটিং, কাল ঐ মিটিং ইত্যাদি বলে বেলা অবেলায় অনুপস্থিতির বোঝাটা আমার উপর এসে পড়তে শুরু করল। এ শাখায় অনেকেই চৌধুরী গ্রুপকে সমর্থন করায় ভিত্তিটা অনেক মজবুত।
সিবিএ নেতা চৌধুরী সাহেব অনেকটা দুঃসাহসী লোক। কাউকে ভয় করে কথা বলে না। ব্যাংক ম্যানেজারও তাকে খুব ভয় করে। কারণ, মান ইজ্জত বলতে কথা। উল্টা পাল্টা হলে সোজা মার শুরু করে। অবশ্য সৎ ও যোগ্যদের সাথে এমনটি সম্ভব হয়না।
সেকান্দার আর মফিজ সাহেবের উপস্থিতি অনেকটা অনিয়ম হয়ে পড়ায় আমার পক্ষে ব্যাংক থেকে সঠিক সময় বের হওয়া সম্ভব হয়না। কাজ শেষে বিলম্বে বের হয়ে বিপুকে পড়াতে যাওয়ার আগ্রহটা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি। তবুও যেতে হয়। যাই। কারণ বিপুর পরীক্ষা চলছে। আর কয়টা দিন পর আর যেতে হবেনা, এমন আশা নিয়েই সময়গুলো জোর করেই কেটে দিচ্ছি।
বিপুর পরীক্ষা বিগত বছর গুলো থেকে খুব ভাল হওয়াতে পরিবারের সবাই খুবই খুশী। বেঁছে বেঁছে শেখানো অধিকাংশ প্রশ্নই কমন পড়ে যাওয়াতে ভাগ্যটা খুব সুপ্রসন্ন হয়ে উঠল। বিপুর মাতা পিতার কাছে আমার কদরটা অনেক বেড়ে গেল।
আগে বিপুকে পড়াতে গেল শুধুমাত্র চা নাস্তাই দেয়া হত। সন্ধ্যার পরই বিদায় নিতাম। ইদানীং পড়া শেষ করে বিদায় নিতে এশা পর হয়ে যায়। পাঠ শেষে স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে যায় ড্রইং রুমে। শূরু হয় খুচরা আলাপ। এর মাঝে থাকত ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয়সহ বিপুর পড়ালেখায় উন্নতির বিভিন্ন দিকে নিয়ে। বিদায়ের এ অবেলায় স্যারের সাথে আড্ডায় সম্পর্কটা দিন দিন আর ঘনিষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এসব আলাপচারিতায় বিদায় নিতে রাত দশটা বেজে যেতো। তাই প্রায়ই বিপুদের বাসায় রাতের খাওয়া খেয়ে আসতে হত। কথা বলতে বলতেই দেখি টেবিলের উপর খাওয়ার আযোজন। চোখের লজ্জায় নিজেই উঠতে উঠতে বলতাম
- আজকে তাহলে যাই স্যার। অনেক দেরি হয়ে গেল।
- অ্যারে কি বলেন। একটা কথা হল। এত রাতে না খেয়ে যাবেন।
- আজ থাক স্যার। অন্যদিন খাব।
- না না। বসেন। আপনি অবশ্যই খেয়ে যাবেন। আপনি আমাদের ঘরের সদস্যর মতই। লজ্জার তো কিছু নেই। আপনার বড় ভাই আমার বন্ধু মানুষ। দ্বিতীয়ত আপনি আমার মেয়েটার মাঝে যে পরিবর্তন এনেছেন, এটা কি পয়সা দিয়ে হয়। যেহেতু ব্যাংক থেকে দেরিতে আসতে হয়। আবার বিপুকে পড়িয়ে বাসায় যেতে অনেক সময় লাগে। কাজেই খাওয়া দাওয়ার ঝামেলাটা এখানে সেরে ফেলাই ভাল। এখন থেকে রাতে আমার বাসায় খেয়ে যাবেন।
..স্যারের কথায় না খেয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সৌজন্য তার খাতিরে না খেতে চাইলেও, মনে মনে ভাবি, দুর। খেয়ে যাওয়াই ভাল। ব্যাচেলর ম্যাচে এক তরকারি দিয়ে খাওয়ার ঝামেলা মুক্ত হওয়া কম কিসে!
বিপুর পরীক্ষা শেষ হবে এ সপ্তাহে। কিন্তু শেষটা কিভাবে হবে, এ নিয়েই বিপাকে পড়েছি। কারণ শেষ বিদায়ে শেষ কথা বলার সাহস আমার নেই। বাস্তবতা থেকে আমার কল্পনার অনুভুতি অনেক বেশী বলেই হয়ত বা এমন। বিদায় নেয়া অনেক কষ্টের। শেষ বেলার বিদায় নাটকের অভিনয় সবাইকে দিয়ে হয়না। এটি বড়ই কঠিন। ফেলে আসা জীবনের অনেক ষ্টেশন থেকেই বিদায় নিতে পারিনি। আমি পারিনা বলেই আবার আসব বলে অসমাপ্ত বিদায় নিয়েছি। অঘোষিত এ শেষ বিদায় শুধু আমিই জানি। কারো বগলের কাছে খুব আপন হয়ে দীর্ঘদিন থাকার পর না বলে পালিয়ে আসাটা প্রতারণা। কিন্তু অশ্রুসজল সময়ে ভেতরের জমে থামা কষ্টগুলোকে এভাবে চোখের পানিতে মুছে দিতে যেন পৌরুষত্বের জন্য বেমানান। এজন্যই হয়তোবা পুরুষরা কাদেনা।
এর আগে এক বিদায় বেলায় দারুণ বিপাকে পড়েছিলাম। আবেগঘন মুহূর্ত। আড়ষ্ট কণ্ঠে বিদায়ের শেষ কথা.. তোমাদের অনেকদিন পড়ালাম। আজ শেষ পড়া। জীবন চলার পথে হয়তোবা আর দেখা হবেনা...। না। আর পারিনি। মোমের হৃদয় বিগলিত হয়ে নিমিষেই লুটে পড়েছে। বড় ছাত্রী হঠাৎ জড়িয়ে ধরে অঝোরে কি কান্না। আমি হতভম্ব। ওর অবিশ্বাস্য আবেগে আমার মাথাটা লজ্জায় হেট হয়ে গেল।
.........এটি ছিল স্যারের প্রতি ছাত্রের অন্ধ আবেগ আর অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ। ভেতরের মানুষটার সাথে হৃদ্যতার বিস্ফোরণ। বিদায় মুহূর্ত এমনই হয়। মেয়েদের হাউমাউ কান্নায় সব ভেস্তে যায়।
আজ অনেকদিন হল। বিপুকে পড়াই। আর মাত্র তিন দিন। তার পর বলতে হবে, আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়..............।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১২৮৫ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আচ্ছা... "এজন্যই হয়তোবা পুরুষরা কাদেনা" এর মানে "সবার সামনে কাদেনা" বুঝাইছেন? তাই না? (রাতে তো লাইট অফ করে ঠিকই কাদেঁ )
হগলে আমারে কয় মুই নাকি গ্যাঞ্জাম লাগাই।
অহন থেইক্যা গভীর ঘোরে ফিকির কইরছি
মুই আর এহানে থাকমু না, সোজা চইল্লা যামু গা।
....২৪ মার্চ থেকে আজ ২৩ মে দুইমাস হলো। আপনি যান নাই। তার মানে ব্লগে প্রেমে হাবু ডুবু খাওয়া গেঞ্জাম খানের একটি ছিল প্রেমের অভিনয়. মান অভিমান। ধন্যবাদ।
আস্তানাতেই দেখতে গেলাম'
ব্লগার 'আমার আমি
নেইকো অাড্ডা নেইকো লিখা
শূন্য ব্লগার বাড়ী।
নিত্য যে জন ছোট্র করে
রেখে যায় নিজ কথা,
নেই সময় তার ভরা বাড়ী
নিজের পোষ্টে গাঁথা।
একি হল, নেইকো মানুষ
নেইকো কোন পোষ্ট,
বাড়ী নয়তো মানববিহীন
নির্জন ব্লগের গোষ্ট।
...
ফান করলাম আপনাকে নিয়ে।
Lodging Mastarer ai khonta minur jonno kharap lagchilo. Ai khane bipu, jodio duitai aktu vinnota ache.
Tao agiye jaan , shathe achi In Sha Allah.
দ্বিতীয়ত আমাদের সমাজে হাজারো মানুষের মাঝে দু চারজন ব্যতিত সবাই ভাল, এটিও বাস্তবতা বলে হুবহু তাই লিখেছি। ধন্যবাদ।
আহ্ হারে, সময় তো পার হয়ে গেল, আগে জানলে তো আমি কোন একটা ভালো পরামর্শ দিতে পারতাম ) ) ) )
ধন্যবাদ ভাইয়্যা, চালাই যান আন্ডা আছি আন্নের লগে...
আহারে ! বিদায় না নিলে হয় না ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন