রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৩২)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ০৭ মে, ২০১৪, ১০:৩২:০১ রাত
পর্ব-৩১
ম্যাচে তিনজনের মধ্যে কামালের মেজাজটা ছিল কিছুটা খিটখিটে। বৈদ্যুতিক স্বভাবের। একটু খোচাঁ দিতেই সিরিয়াস রিএ্যাকশান। মুহুর্তেই রাগের কাটা ১২০ ভোল্ট এ গিয়ে ঠেকে। ওকে ক্ষ্যাপানোর মাঝে অন্যরকম একটা আনন্দ ছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, রাগের মাথায় ওর মুখ থেকে বের হয়ে আসা অনর্গল 'নোয়াখালী শুদ্ধ স্পিকিং ল্যাংগুয়েজ'।
রাত বারোটা। কথা নেই বার্তা নেই। আনমনা হয়ে গানের টান দিয়েছে হেলাল। বিচ্ছেদের গান। গানতো নয় - যেন শত বছর পুর্বের চ্যাকা খাওয়ার করুণ আর্তনাদ। চোখ দুটো বন্ধ করে লম্বা সুরের মুর্চনা। লয় নেই তাল নেই। তবুও সুরটা এমনভাবে তুলেছে, মনে হয় গলার উপরে ভেসে থাকা রগ দুটো দিয়ে প্রবাহিত রক্তের ঠেলায় নালিটাগুলো অবিশ্বাস্যভাবে মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে।
কামাল নিশ্চুপ! সেই কবে থেকে ঘূমানোর জন্য প্রাণান্তকর চেস্টা চলছে । কিন্তু ঘুম আসছেনা। বার বার ডান-বাম কাত হয়ে ঘুমানের ব্যর্থ প্রচেস্টার মাঝে বাথরুম সিঙ্গার হেলালের কন্ঠ থেকে বের হয়ে আসা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অসহ্যনীয় বিচ্ছেদের সুর...।
সামনের রুম থেকে আমার কন্ঠের যোগ দিল হেলালের সুরের সাথে। দুজনের কন্ঠে গাওয়া কোরাশ সঙ্গীতে ওর ঘুম আসার শেষ সম্ভাবনাটকু ও ভেস্তে গেল। কামালের রাগটা আর একটু সহ্য সীমার বাইরে যাবার জন্য সুরের ভলিউমটা আরও বাড়িয়ে দিলাম। খাটের কাঠে আঘাত করে দুহাতে বাজনার পাগলামী।
...হঠাৎ করে কামাল উত্তপ্ত হয়ে উঠল। দৌড়ে এসে হেলালের মাথার নীচ থেকে বালিশটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। ক্ষিপ্র কন্ঠে বলতে শুরু করল,
- কত্তুন যে এই হাগলের গোষ্ঠীর লগে দেখা হইছিল। তোরগো গানের গুষ্ঠিরে কিলাই বেডা। অার সময় হাছনো। অ্যার ঘূমের বারোটা বাজাই বাল্লাই গান গাইতি আইসোস। কুত্তায় শোনেনা ভাটিয়ালি সুর। হালার। এগুনের লগে থাইকবারলাই অ্যারে কোন হাগলে কইছে। ওমারে মা। পথঘাট হালাই থুই রাইতের তিনটায় আঁইছে গান গাইতো। বিচ্ছেদের গান।
খাড়[। কাইল্যা অ্যাই খালাম্মারে কুম তোরগোরে বাইর করি দিবাল্লাই। গান গাইবার এত শখ থাইকলে হাত্তরের ভিত্তে যা বেডা....।
কামালের রাগটা বাড়িয়ে দেবার জন্য বলতে লাগলাম,
- হেলাল। তোর কন্ঠে পল্লীগীতি আসলেই দারুণ হয়। আমারতো মনে হয় তোর কন্ঠটা আল্লাহর স্পেশাল দান। এ গানের সুরটা দারুণ তুলেছিস। শুনলে মনটা ভরে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, একমাত্র পাষান হৃদয়ের মানুষেরাই এসব গান গাইতে দেয়না। ..এসব ভূয়সী প্রশংসা শুনতেই কামাল আরও উত্তপ্ত ...।
- ওই তোর প্রশংসার ক্ষ্যাতা কিলাই বেডা। আইজ ইগ্গারেও গুমাইবাল্লাই দিতান্ন....।
মাঝে মধ্যে যদি বলতাম, কামাল, চল। দোকানে গিয়ে দুধ চা খাব। উত্তরে বলত, চল। হারুইন্নার কাছে যাবো। একটু মজাও করবো। সাথে চাও খাওয়া যাবে। তোরা দুইজনে ভাল একটা রাস্তা পেয়েছিস। কে যে বলছে তোদেরকে চাকুরী করতে। এসব ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় ওষধ বিক্রী করলে খুব ভাল করতে পারতি। কোথা থেকে যে আল্লাহ এসব আদম মিলিয়ে দিলো..।
- হুম। তুমিতো একেবারে আরবের খুরমা খাজুর কামাল মিয়া। মনে হয় কিছুই জানোনা। খালাম্মাদের সাথে অভিনয় করতে গিয়ে তোর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। এজন্য তুই আমার ওস্তাদ।
হারুণের বাড়ী নোয়াখালী। চাকুরী করে সোনালী ব্যাংক, মেডিক্যাল শাখা, চট্রগ্রাম। সিনিয়র ক্লার্ক। কিছুটা সহজ সরল ও রসিক টাইপের মানুষ। সামান্য প্রশংসায় একেবারে মোমের মত গলে যায়। খুশী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আতিথেয়তায়।
হারুণ ভাই নতুন শার্ট বানিয়েছে। পলিস্টার জাতীয় কাপড়। এসব কাপড়ের উপর দুপুরের কাঠফাঁটা রৌদ পড়লে খুব ঝক ঝক করে। শুক্রবার সকালে নতুন শার্ট গায়ে দিয়ে হারুণ দোকানে যাচ্ছে সকালের নাস্তাটা সেরে নিতে। সামনে যেতেই বললাম, আরে হারুণ ভাই! এমন একটা শার্ট গায়ে দিলেন, দুর থেকে বুঝাই যাচ্ছিলনা যে আপনি হারুণ ভাই। জামাটা এত মানা মানিয়েছে, আপনার বয়স মনে হয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রংটা খুবই আকর্ষনীয়। এটা কোথা থেকে কিনেছেন?
- মিমি সুপার মার্কেট থেকে।
- জামাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আসলে আপনার পছন্দটাই অন্যরকম। দেখি এমাসে হয়তবা আমিও একটা কিনবো। সাথে আপনাকে নিয়ে যাবো।
হারুন দারণ খুশী ওর পছন্দকে সমর্থন করায়। বুকটা আনন্দে ভরে গেল। জোর করে হাত ধরে টেনে নিয়ে সোজা হোটেলে..। আসুন। নাস্তা আজ আমিই খাওয়াবো। এভাবেই হারুণের প্রশংসা করে কতদিনযে চা নাস্তা খাওয়া হয়েছে ইয়ত্তা নেই।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৪১ বার পঠিত, ৫১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ও মোর ছকিনা তুই কি গেলা ?এরম ছিল মনে হয় গানের কথা ???
হারুন ভাইকে পেলে আমি বলে দিতাম ভাইয়া আপনার চা খাওয়ার জন্য মজুমদার সাহেবরা ফন্দি করে আপনাকে ফাম দিয়ে ফুলিয়ে রাখে।
চালিয়ে যান অনেক মজা পেলাম এই পর্বে সকল পর্বের সেরা পর্ব আজকের এই পর্ব। (মিছিল দিয়েছি )
ছাত্রজীবনের হোস্টেল পর্বে এক বন্ধু ছিল, যে কিনা পটিয়ে খেতে উস্তাদ। আমরা বুঝতাম যে সে পটাচ্ছে; তবুও তাকে খাওয়াতাম।
কোনো কিছু কিনে এনে খাবার সময় ওর পটানোর ভঙ্গি ছিল এমন-
নাঈম, দোস্ত তুইতো কিছুই খাচ না, ছব দিয়ালাস। আছলে দেখছি তুই আমাক ছারা খাইতেরোস না!! ওর বাড়ী ছিল লক্ষ্নীপুর। এখন সে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল। মাঝে মাঝে আসলে সেইসব দিনগুলোর কথা বলতেই হো হো করে হেসে বলে...........
ভাই নোয়াখালী শুদ্ধ ভাষা পড়তে গিয়ে বারোটা বেজেঁ গেছে।
হাহাহা.......কত্তুন যে এই হাগলের গোষ্ঠীর লগে দেখা হইছিল। তোরগো গানের গুষ্ঠিরে কিলাই বেডা। অার সময় হাছনো। অ্যার ঘূমের বারোটা বাজাই বাল্লাই গান গাইতি আইসোস।
সময়ের অভাবজনিত কারণে অল্প একটু সংশোধন করে দিলাম। 'কত্তুন যে এই হাগলের গুষ্ঠীর লগে দেয়া অইছিল। তোগো গানের গুষ্ঠিরে কিলাই বেডা। আর সময় হাছনো...... অ্যাঁর গুমের বারোটা বাজাই বাল্লাই গান গাইতি আইসোস।'
এক রুমমেট বন্ধু ছিল, এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম চলছিল। সে খুব সকালে উঠে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হতো - আর এই সময়টা ছিল আমাদের জন্য কঠিন সময়। কারণ, এই সময় সে বাইরে বের না হওয়া পর্যন্ত একটা অসহ্য টাইপের গান বিকট গলায় গেয়ে যেতো আর প্রত্যেকের ঘুমের বারোটা বাজাতো। সকালের ঘুমের সময় কেউ যদি কানের পাশে গান গায়, এটা যে কি পরিমাণ বিরক্তিকর, ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তার গানটিঃ
"একটাই কথা আছে বাংলাতে, বুক আর মুখ বলে একসাথে ..."
অবশ্য মাখরাজ নাই যে ও ঠিক । ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ইশ্শিরে, আমি যদি এই মহা গুনের অধিকারী হইতে পারতাম!
মন্তব্য করতে লগইন করুন