রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-২৯)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:১১:০৩ দুপুর
পর্ব-২৮
নতুন ম্যানেজার আসার পর বিপুদের বাসায় যাবার সিডিউলটাও পরিবর্তন হয়ে গেল। আমার অফিসের নিয়মটাও বদলে গেল। আগের মত দিনের দুটোয় বিপুকে পড়াতে যাবার সুযোগ নেই। অন্য দশজনের মতই সকাল বিকাল সময় মত অফিস করি। ছুটির শেষে বিপুকে পড়াতে যাই। কিন্তু ইদানিং এ যাওয়াটা অনেকটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। বিপুদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। পড়া শেষ করে বের হতে এশা পার হয়ে যায়। পাহাড়ের উপরে ফাকা জায়গায় সবেমাত্র কয়েকটি বিল্ডিং উঠেছে। একটি থেকে আর একটির দুরত্ব অনেক। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে নিস্তব্ধতা নেমে আসে চারিদিকে। রাস্তার ধারে অপর্যাপ্ত বিদ্যুতের কারণে রাস্তায় মৃদু আলোতে একা চলতে খুব ভয় হয়। না জানি পেছন থেকে কে ঝাপটে ধরে সব নিয়ে গেল! অসময়ে এভাবে বিপুদের বাসায় আসা যাওয়ার অজানা শংকায় মনটা দিন দিন খারাপ হতে থাকল।
অন্যদিকে পাহাড়ের উপর মাঝে মধ্যে দু একটা টেক্সী পেলেও আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাওয়ার বাড়া সাধ্যাতীত। এতটুক পথ কিছূটা পায়ে হেটে, কিছুটা রিক্সা করে আসা যাওয়ার বিড়ম্বনায় হাঁফিয়ে উঠলাম। বাসায় পৌছতে রাত নয়টা পার হয়ে যায়। এরপর ম্যাচে পাকশাঁকের ঝামেলা। খেয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে বেশ দেরী হয়ে যায়। সকালে ঘোম চোখেই ছুটতে হয় অফিসের দিকে। ঘুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেকবার ফেল করেছি। পারিনা। ঘুম যখন আসে মনে হয় পুরো দুনিয়া ভেঙ্গে দুচোখে ঘুম আসে। বি এস সি পড়াকালীন অবস্থায় পড়ার নেশাটা তুঙ্গে উঠল। কিন্তু ঘুম বাধা হয়ে দাড়াল। হোমিও প্যাথিক ডাক্তারের কাছে গেলাম ঘুম তাড়ানোর ওষুধ আনতে। বেচারা, বই পড়ে পড়ে ৪-৫ বার ওষুধ দিয়েও কাজ হলনা। বিপুদের বাসা থেকে দেরীতে ফেরার বিড়ম্বনায় অপর্যাপ্ত ঘূমের কারণে বাড়তি অসস্তি যেন নতুন মাত্রা যোগ হল।
ম্যাসে আমাদের মোট সদস্য সংখ্যা তিন জন। ব্যাচেলরদের ক্ষণস্থায়ী এ সংসারে পাকশাকের জটিলতার সমস্যা দির্ঘদিনের। আমি রান্না বান্নায় এক্সপার্ট নয়। শুধূ ডিম ডাল পাকাতে পারতাম। বাকী দুজন পাকে বড়ই ওস্তাদ। দারুণ মজাদার পাকাতে পারতো। তাই শিক্ষানবীস হিসেবে আমার কাজ ছিল হাড্ডি, পাতিল, প্লেট, গ্লাস ধোয়াসহ তরি তরকারী কেটে ছেটে দেয়া। বাজার সদাই সপ্তাহে তিন দিন করতাম। অফিস থেকে যাবার পথে কেনা কাটা সেরে নিতাম। কিন্তুু পুরোনো ম্যানেজার বদলী হয়ে যাওয়ার কারণে ইদানীং তাও আর হয়ে উঠেনা। ফলে ম্যাচেও কিছুটা অঘোষিত ধাক্কাধাক্কি শুরু হল।
বিপুকে সপ্তাহে তিন দিন পড়াতে গিয়েও এখন আর পারিনা। অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছি। মাঝপথে টিউশনিটা বন্ধ করতে না চাইলেও পরিস্থিতি যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। এ নিয়ে পরামর্শ করার কেউ নেই। সেকান্দর সাহেব এখন আর আগের মত নেই। ম্যানেজারের কথা শুনলেই রাগের মাত্রাটা ১২০ ভোল্টের উপরে চলে যায়। শুরু হয় অনর্গল ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। সামনে আর একমাস বাকী। স্যারের পাঠানো অফিসার পদোন্নতিটা এসে গেল শুরু হবে ঝামেলা। আর যদি আহমাদুল্লাহ সাহেবের নাম আসে, তাহলেতো সেকান্দর রবি সাহেবের ক্ষোভটা আরও বেড়ে যাবে।
ভাবছি কথাটা বিপুকে বলব। পরক্ষণে বাদ দিলাম। ওক বলাটা সমীচিন হবেনা। ম্যানেজার সাহেবকে বলতে গেলে মানবেনা। কায়দা করে আবারও কয়েকমাস পড়ানোর কথা বলবে। মানা করার হিম্মত আপাতত আমার নেই। চোখে লজ্ঝা শরম বলতে কথা। এমনও মনে করতে পারে, আমার ক্ষমতা শেষ, সব শেষ। এমতাবস্থায় আমি সন্তোষজনকভাবে বিদায়ের কথাই ভাবছি। থাক। আর এক মাস বাকী। বিপুর অর্ধবার্ষিকী পরিক্ষাটা হয়ে গেলেই ছেড়ে দেবো।
মানসিকভাবে পুব প্রস্তুতির পথ হিসেবে একদিন বিপুকে পড়াতে গিয়ে কস্টের কথাগুলো বলে ফেললাম। ওদের বাসায় যাওয়া আসার ফিরিস্তি আর ঝামেলার কথা শুনে সেও খূব অনুতপ্ত হল। আমি বললাম, যাইহোক, যত সমস্যাই হোকনা কেন, তোমার পরীক্ষাটা শেষ হোক। তার পর দেখা যাবে। এতে বিপু স্বস্তি পেল। কিন্তুু আমাকে যে বিদায় নিতে হবেম, এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারলনা। এ বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে হয়তবা সবাই সয়ে যাবে। তখন আমার বিদায়টা কস্টের হলেও অসন্তুষ্ট হওয়ার মত সুযোগ থাকবেনা।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৮ বার পঠিত, ৬২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আগে মনে হয় সালাত আদায় করতেন। তার পর ব্যংকের দৌড়। তাই না।
আপনার পরামর্শর জন্য ধন্যবাদ।
আহা। যে লোকটা ২৫-৩০ টা টিউশনি করেছে, ১৭ টা লজিং করেছে, তার কাছে এসব পান্তা ভাত। আদর্শ শিক্ষকের কাছে মানুষেরা এভাবেই ভীড় জমায়।
সবাইকে ধন্যবাদ।
আপনি আন্ডা রান্না করতেন কিভাবে? রেসিপিটা দিলে আমরা চেষ্টা করে দেখতাম।
ওস্তাদ, বুকে হাত দিয়া কন তো দেখি, উপরের কথাগুলোর মাঝে অন্য কোন গূঢ় তত্ত্ব লুক্বায়িত নাই, যাহা বলিয়াছেন ১০০ ভাগ সত্য বলিয়াছেন????
মেয়েটার চাউনী, রুপ, অভূতপুর্ব। এটি আল্লাহর সৃস্টির মোজেজা। চোখের ক্যামেরার অনুভুতি যেন এক অনন্য বিস্ময়। কিন্তু দুঃখজনক হল, এসব সুন্দরীদের মেধা আর গরুর গোবর সমান। গোবরে ডানা মেলে থাকা চোখ ধাধানো সৌরভহীন ফূলের আকর্ষণ কিন্তু বেশী থাকেনা। আমনে কি আ্যারে হাগল মনে কইচ্ছেন নি।
এটিতো আমার কাজ.
ভালো লাগলো এপর্বটি। নিজের কিছু স্মৃতি স্বরণ হলো।
lojja jinistai bole dey akhane manobikota ache. Oneke selfish howar karone eta hariye fele.
Agiye jaak Apnar series , shathe achi.
মন্তব্য করতে লগইন করুন