রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-২৩)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:২৩:০৮ রাত
পর্ব-২২
বাস্তব হোক আর কল্পনা হোক, বিপু আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। এটিকে আপাতত বিপুর মাথা থেকে সরাতে না পারলে খবর আছে। নিজের মাঝেই কল্পলোকে এক অজানা অনুভুতির জাল বুনতে শূরু করবে। মানুষ কিছু পারুক আর নাই পারুক, এ বিষয়ে ক্রিয়েটিভিটি খুব দ্রুত কাজ করে।
অফিসের বড় বসের মেয়ে পড়াই। সমস্যা হলে আমও যাবে ছালাও যাবে। জীবনের শুরুতেই নিজের ক্যারিয়ারে সর্বনাশা ঝড় ধেয়ে আসবে। এ নিয়ে কানে কানে সারাজাহানে ছড়িয়ে পড়বে হাজারো কল্প কাহীনি।
বিপুর ভেতরের মতিগতি বুঝার জন্য রোগের কিছু উপসর্গ সনাক্ত করার চেষ্টা করলাম। কোন ছেলে বা মেয়ে প্রেমে পড়লে প্রেম রোগ নির্ণয়ের দু ধরনের পরীক্ষা রয়েছে। বিজ্ঞজনের দীর্ঘ রিচার্চের সারসংক্ষেপ হলো - কোন ছেলে প্রেমে পড়লে, গাইতে না পারলেও গুণ গুনিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করবে। প্রেমিকার বাড়ী বা ঘরের পাশ দিয়ে অযথা আনাগোনা শুরু হবে। বিশেষ করে মেয়ের ছোট ভাই বোনকে চকলেট জাতীয় কিছু দেয়ার অযথা চেস্টার কমতি থাকবে না । প্রেমিকার আত্মীয় স্বজন কিংবা মাতাপিতার প্রতি অতিভক্তির মিছে অভিনয় শূরু করে দিবে। যেমন মেয়ের পিতা মাতা বা বড় ভাইকে দেখলে পথের ধারে দাড়িয়ে এমন ভাবে সালাম দিবে, যাতে মনে করে, আহ! ছেলেটা কিয়ে ভদ্র! পোলা নয়তো যেন মানিক!পাশে মসজিদ থাকলে বেনামাজী হলেও মেয়েকে দেখার চুতোয় মসজিদে আনাগোনা বেড়ে যাবে। চলাধারায় হঠাৎ স্মার্ট হয়ে যাবে। বন্ধুদের সাথে আলাপের সময় ঐ মেয়্টোর গুন প্রকাশ করবে। খাতায় কবিতা কিংবা প্রেম জনিত ভাল ভাল প্রবাদ লিখার চর্চা শুরু হয়ে যাবে..ইত্যাদি।
কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে রয়েছে ভিন্ন পদ্ধতি। গৃশিক্ষক হলে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্যার খুব ভাল্। দারুণ পড়ায়। একেবারে খাইয়ে দেয়। কি সুন্দর করে স্যার হাসে গো..। স্যার কখন আসবে এ নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনবে। পড়া না পারলেও টেবিলে যথাসময়ের আগে উপস্থিত। নাস্তা পানির প্রতি খুবই যত্মশীল। সাজগোজ অভ্যাসের চেয়ে একটু বাড়াবাড়ি থাকবেই...।
একদিন পর বিপুকে পড়াতে গিয়েছি। আজ সমতল ভুমি হতে পাহাড়ের উপর উঠতেই নজর দিলাম বিপুদের বাসার ছাদের উপর। অনেক দুর হতে লক্ষ্য করছি, বিপু দাড়িয়ে আছে। মনে হল কারো জন্য প্রতীক্ষা করছে। আমি কাছে যেতেই চলে গেল। ভেবেছে আমি দেখিনি। দিন দিন সবকিছুতে অতি আতিথেয়তা লক্ষণীয়। বিপুর সহযোগী কাজের মেয়ে তাহেরা কিছুটা বাঁচাল হয়ে উঠল। পড়ার ফাঁকে অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে বিপু কথা বলার চেস্টা করে। আমি না জানার ভান করি। নিজেকে পড়ায় মনোনিবেশের বাহানায় সিরিয়াসলি ব্যস্ত দেখাই।
কয়েকদিন পরের কথা। পডার ফাঁকে একটু বিরতি নিলাম। বিপুর সাথে ইচ্ছে করেই আলাপ জুড়ে দিলাম। সাথে তাহেরাকেও বসতে বললাম। কারণ, রুমে কেউ ঢুকতেই আলাপ দেখে না জানি আবার কি মনে করে?
আমার বন্ধু মানিক। পড়ার ফাঁকে ছাত্রীর সাথে প্রেমের গল্প জুড়ে দিল। হঠাৎ তার অর্ধশিক্ষিত বাবা রুমে ঢুকতেই প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলতে শুরু করল, বুঝলে। ইংরেজী গ্রামারে টেন্স খুব গুরুত্বপুর্ন। এটির যে ফরমগুলো, না পড়লে ইংরেজী পারবেনা। তাই টেন্স অবশ্যই পড়তে হবে। টেন্স তিন প্রকার। প্রেজেন্ট, ফাষ্ট ও ফিউচার...আর মনে মনে কয়, বেটা তাড়াতাড়ী যায়না ক্যান। এক জিনিষ কতক্ষণ পড়ানো যায়...!
এ অনাকাঙ্কিত সমস্যা এড়ানোর জন্য তাহেরাকে সাথে বসিয়ে রাখলাম। বললাম, জানো, মানুষের যে মন, বিশাল ব্যাপার! এটি অচেনা কল্পনা জগতের এক "রহস্যময় বিশ্ববিদ্যালয়"। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যে বিষয় নিয়ে রিচার্স করেছে, সে ঐ বিষয়ে পন্ডিত হয়েছে। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সহজ ও কঠিন সাবজেক্ট হল "ভালবাসা / প্রেম"। এটি আই লাভ ইউ দিয়ে শুরু হয়, আর আই হেট ইউ দিয়ে শেষ হয়।
বিপু তম্ময় হয়ে শুনছে। তাহেরাও। খূব জনপ্রিয় পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে স্যার আলোচনায় বসেছে। বড়ই মজাদার বিষয়। মনে হল গভীর ধ্যানে গিলছে স্যারের দেয়া আজকের গুরুত্বপুর্ন লেশনস।
এ সাবজেক্টটি অনেক বিশাল। এখানে প্রশ্নোতর দিয়ে কেউ পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনা। অনেকেই অনার্সের ফাষ্ট পার্ট শেষ না করতেই বিদায় নেয়। অনেকেই অনেক ছড়াই উতরাইয়ে মাষ্টার্স শেষ করলেও বাস্তব জীবনে এ বিষয়ে চাকুরী না পেয়ে হয়ে যায় আজীবন ভবঘুরে। এটি দিয়ে অনেকেই মহাকাব্য রচনা করে ইতিহাসে অমর হয়ে যায়। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া প্রজম্নের জন্য আগাছা বৈ কিছুই থাকেনা। তাই এ বিষয়ে ভর্তি হওয়ার আগে ভাবতে হবে এর মেরিটস, ডিমেরিটস কি? এ গন্তব্যর শেষ পরিণতি কি? পাঠ্য পুস্তক তালিকায় অনুপস্থিত এ সাবজেক্টএ রিচার্স করে গোড়ার ডিম না কচুর ডিম আবিস্কার হবে..ইত্যাদি। এটি যতটা আনন্দদায়ক ও থ্রিলিং মনে হয়, বাস্তবে ততটা বিপদজনকও বটে। তাই এ নিয়েই আমি কিছু গুরুত্বপুর্ন ও তথ্যবহুল শিহরণ সৃস্টি করার মত কাহিনী বলতে চাই। কি বল?
- জ্যী স্যার। বলেন।
- মানবেতো?
- অবশ্যই।
- থাক আজ আর নয়। সময় অনেক হয়েছে। অন্য একদিন সময় করে এ ব্যাপারে কথা বলব। খুবই গুরুত্বপুর্ন আলোচনা।
.....আমার অসমাপ্ত কথাগুলো অধীর আগ্রহে শোনার জন্য বিপুর মাঝে এক অজানা অনুভূতি রেখে আজকের মত বিদায় নিলাম।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৮০ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু পাঠক হিসাবে আপনার অভিজ্ঞতা শুনতে কোন সমস্যা নেই। ধন্যবাদ।
প্রেমরোগ এর যে উপসর্গগুলো দিলেন সেগুলি পড়ে খালি হাসতেই আছি। (আল্লাহ বাঁচাইছে, আমি কখনো পতিত হইনি।)
অনেক কিছু বলতে চাহিয়া ও বলিতে পারিলাম না,,,,,
ভাইয়া প্লজ দেরী না করে তারাতারি দিয়ে দেন গল্পের বাকি অংশ।
ভালো লাগলো।
শিবির তাদের ছেলেদের ক্লাস ৫ এর উপরে ছাত্রী পড়ানো নিষিদ্ধ করে এজন্যই বোধ হয়।।
মন্তব্য করতে লগইন করুন