রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১৯)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪১:১৯ রাত
পর্ব-১৮
বিরয়ানীর প্যাকেটগুলো ব্যাংকের এক কোনায় রাখা হয়েছে। এজিএম সাহেবের অফিসে যাওয়ার জন্য সেকান্দর সাহেব প্রস্তুত! সবার আগে বিরিয়ানির প্যাকেট দুটো নিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়লেন। স্যার অপেক্ষা করছে। বড় বসের সাথে দেখা করার এ সুবর্ণ সুযোগ কে ছাড়ে?
জুবিলি রোড পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে টেক্সীতে হেঁকে বসেছে। সোজা মিমি সুপার মার্কেট চল। আজ টেক্সী ওয়ালার সাথে ভাড়া দাম-দর করারও সময় নেই।
কিছুক্ষনের মধ্যে সেকান্দর সাহেব এজিএম সাহেবের দরজায় গিয়ে উপস্থিত। জামাটা একটু টেনে নিল। না ঠিক আছে। এবার গলায় কাশি দিয়ে স্বরটা পরিস্কার করে নিল। লক্ষ্য, স্যারের সাথে স্মাটলী কথা বলতে হবে। অফিসার হওয়ার জন্য লুকিংটা একটু....।
স্যারের দরজার সেক্রেটারী বসে আছে। অন্য সময়ে অনুমতি চাইলেও আজ প্রয়োজন বোধ করেনি। সোজা স্যারের রুমে। যাওয়ার সময় মুচকী হাসি দিয়ে শুধুমাত্র সৌজন্যতার খাতিরেই বলল, স্যার অপেক্ষা করছে আমার জন্য। ভেতরে যাচ্ছি।
দরজায় টোকা দিয়ে স্লামালাইকুম বলে সেকান্দর সাহেব ঢুকে পড়ল। মুখে স্বস্তির হাসি।
- কেমন আছেন সেকান্দর সাহেব - এজিএম সাহেব জানতে চাইলেন।
- এইত স্যার। আপনার দোয়ায় ভাল আছি।
বিরিয়ানির প্যাকেট দুটো স্যারের সামনে রেখেই সেকান্দর সাহেব সামনে বসে পড়েছেন। লক্ষ্য একটু আলাপ না করলে এসে লাভ কী? এক কথা দু কথা দিয়ে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে সেকান্দর সাহেব শুরু করেছে তার চাকরী জীবনের জমে থাকা সব কষ্টের কথা। ও জানে। আজ স্যার সব কথাই শুনবে। মুডটা খুব ভাল। এটাই সুযোগ। স্যার একটিবার হ্যা বললেই প্রমোশনটা হয়ে যাবে।
কথা বলতে বলতে সেকান্দর সাহেব এগিয়ে যাচ্ছে পেন্ডিং প্রমোশনের কথাটা বলতে। স্যার। জানেনতো। আজ দশ বছর হল, সিনিয়ার ক্লার্ক হয়ে বসে আছি। অফিস আওয়ারের পরেও স্যার কাজ করতে হয়। করিও। দায়ীত্ব পালনে কখনও অবহেলা করিনা। এজন্য ম্যানেজার সাহেব আমাকে অনেক পছন্দও করেন। চাকুরীর জন্য বাহীরে প্রাইভেট ব্যাংকে দু একটা অফারও পেয়েছিলাম। কিন্তু এ ব্যাংকের মায়ায় কোথাও যাইনি। ভাবলাম এখানেই প্রতিস্টিত হব। আপনাদের মত স্যারদের অধীনে কাজ করতে ভাল লাগে বলেই নিবেদিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। স্যার। আমার প্রমোশনটার জন্য আপনি যদি এবার একটু দয়া করেন.....।
এজিএম সাহেব ভাবছে, শত হলেও বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে সেকান্দর আমার অফিসে এসেছে। সৌজন্যতার খাতিরে অন্তত একটু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে হয়। স্যার সেকান্দরের কথা শুনতে শুনতে বিরানির প্যাকেট খূলছে।
চোখে মুখে আনন্দের হাসি ফুটিয়ে সেকান্দর এবার বিরিয়ানির সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে লাগল - স্যার। এবারের পাটিটা আমাদের ব্যাংকের বড় মক্কেল হাজী রমজু মিয়া দিয়েছে। অনেক বড় মক্কেল। সবার আগেই আপনার জন্য এ প্যাকেট দুটো নিয়ে এসেছি..।
বিরিয়ানির প্রথম প্যাকেটটি খুলেই স্যার কিছুটা স্মম্বিত হয়ে গেল। এবার বুক ভরা আশা নিয়ে দ্বিতীয়টাও খূলল। কিন্তু এটির একই অবস্থা। বাস! স্যারকে আর রুখে কে? মুহুর্তের মধ্যেই অগ্নিশম্মা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রাগে ক্ষোভে একবারেই ফেটে পড়ল। প্রচন্ড আক্রোশে দুচারটি কড়া বাক্য বলতেই সরি স্যার বলতে বলতে বাঘের তাড়া খেয়ে ভেগে যাওয়া অসহায় মানুষের মত অলিম্পিক দৌড়ের গতিতে বের হয়ে পড়ল সেকান্দর।
খুব ভিষন্ন মনে ব্যাংকে ঢুকেই সোজা ম্যানেজারের রুমে প্রবেশ করল। হতাশার সুরে বলতে লাগল, স্যার, অন্য কাউকে দিয়ে আরও দুটো বিরিয়ানীর প্যাকেট এজিএম সাহেবের জন্য পাঠিয়ে দিন প্লীজ। আমি মনে হয় চাকরি আর করবোনা স্যার। আমার আশা ভরসা সব জলে গেল।
- কেন। কি হয়েছে?
- না স্যার। যা হবার তাই হয়েছে। মানুষের কপাল যে এত খারাপ হয় এ প্রথম দেখলাম। এটি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। ব্যাংকের আমার আর থাকা ঠিক হবেনা স্যার। কারন প্রমোশন না হলে থেকে আর লাভ কি? স্যারকে বিরিয়ানী দিতে গিয়ে যা ঘটল, ইচ্ছে হচ্ছিল, মাটি ফেটে যাক। আমি লজ্জায় নীচে চলে যাই।
- অ্যারে বলবেনতো কি হয়েছে?
- স্যার। আমি এজিএম সাহেবের রুমে ঢুকতেই প্যাকেট দুটো দেখে স্যার খুব খূশী হয়ে গেলেন। দাড়িয়ে আমার সাথে হ্যান্ডসেক করলেন। কৌশল বিনিময় করতে করতে বিরিয়ানির প্যাকেট দুটো খূললেন। কিন্তু দুভার্গ্যটা হল, স্যারের জন্য নেয়া প্যাকেটগুলো খুলে দেখলেন যে, "দুটোই সালাদের প্যাকেট।"
এজিএম সাহেব এমনিতেই খুব রাগী মানুষ। বুঝতেই পারছেন রাগে ক্ষোভে স্যার কি করেছেন! মুখে যা এসেছে, স্যার তাই বলেছেন। শুধু তাই নয়, স্যার এও বললেন যে, এজন্যই আমার মত আদু ভাইদের প্রমোশন হয়না। গাদা কোথাকার!!!!!
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৮২১ বার পঠিত, ৬৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পদে চাকুরী করতে এসে সামান্য সালাদের প্যাকেট দেওয়ার কারণে তাকে এত অপমান হয়ে আসতে হল 'ছি'।
আসলেই কি টাকায় সব ব্যক্তির আত্নমর্যাদা বলে কোন শব্দ নেই জীবনে।
আমার নিয়মিত পড়া হয়ে ওঠেনি!
তবে আপনার লেখা অনেক উন্নতমানের!
ক্লাসিক...
বিরিয়ানির পেকেটের ভিতর ছালাদ?
আহহারে পোড়া কপাইল্যা আদু ভাই!
আমানত শাহ দরগাহে আয়োজন কর মিলাদ
ঠাই হবে না ব্যংকে চাকরী খাবে কর্তা মশাই।
আহআহ ঘটনা টা যদি বর্তমানে ঘটত তাহলে একটা ভাল তৈল সিক্ত জবাব দেয়া যেত।
"স্যার এখন তো সব কিছু ভেজাল তার উপর আপনার হার্টের সমস্যা তাই ভাল করে সা লাদ নিয়ে আসছি"।
তবে ক্ষুদার্ত অবস্থায় কেউ যদি এভাবে বিরানির অপে ক্ষায় বসিয়ে রেখে সালাদ দেয় তা হলে আমিও তাকে মাইর দিতাম।
হা হা হা !! সালাদের প্যাকেট !! বেচারার কপালটাই খারাপ।
সুন্দর উপস্থাপনা।
সব খারাপ তার, শেষ খারাপ যার - ব্যাপারটা এমন হয়েছে।
ওই ডিম ওলার মতো হইল। দিবাসপ্ন দেখতে দেখতে নিজের ডিম নিজেই ভাংছে।
প্রথমে সেকান্দর সাহেবের যে বৈশিষ্ট্য বললেন তাতে তো মনে হয় ভুল করার কথা না।
দিবা সপ্ন তারে শেষ করছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন