রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১৭)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৭ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৩৪:৫৪ রাত
পর্ব-১৬
বড় আশা নিয়ে ইসলাম সাহেব এ শাখায় এসেছিলেন। তার সততা আর নিষ্ঠার খ্যাতির কারণেই ম্যানেজমেন্ট একজন বিদায়ী অফিসার নিতাই বাবুর জায়গায় তাকে ট্রান্সফার করেছে। কিন্তু ভেতরে ওৎপেতে থাকা শকুনদের বিছানো জালের মহড়া দেখে ইসলাম সাহেব বড় বিস্মিত !
অনেক আক্ষেপ করেই একদিন বললেন, " মজুমদার সাহেব। আপনারা ইয়াং লোক। জানিনা, কেন যে এসেছেন এসব বাংকে চাকুরী করতে।" আমরাতো ফেঁসে গেছি। যাওয়ার রাস্তা নেই। অনেক দুর এগিযে এসেছি। দুনীতি আর নোংরামীর পদভারে নুইয়ে পড়া এসব প্রতিষ্ঠানের চার দেয়াল আজ ঘুষ খোরদের হাতে বন্দী। এদের ভীত এতটা শক্ত যে, ভাঙ্গার চিন্তাটাই কল্পনাতীত। যদি কখনও এ দেশে আর একটি নতুন বিপ্লব হয়, সব কিছুকে ঢেলে সাজানো যায়, তাহলেই সম্ভব। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। আর তা হল, সে সৎ নেতৃত্বের রাজনীতিবিদ কি এ দেশে তৈরী হয়েছে? যদি তাই না হয়, তাহলে এসব আত্মতৃপ্তিমুলক নীতিকথা নিজেকে শান্তনা বৈ কিছুই নয়।
চোখে দেখা ব্যাংকের এসব নিয়ে ব্যাংকের উধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু এটি সে পর্যন্তই। কারণ, যাদের কাছে এসব বলি কিংবা যারা এসব কিছুর পরিবর্তনের কর্ণধার, ওদের নিজেদের স্টেটাস আর উন্নতি দেখলে মনে হয়, ওরা নিজেরা আরও বড় চোর। এসব সিন্ডিকেট ক্রাইমের লিডার ওরা। বাস্তবেও তাই।
মজুমদার সাহেব। আপনাকে দেখে ভাল লেগেছে। আপনার বড় ভাইকেও আমি ভাল করে চিনি। আমার পরামর্শ হল, যদি পারেন, চাকুরীটা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান। আপনি যদি সততা নিয়ে এখানে নিজের জীবন গড়তে চান, তাহলে এটি হবে জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত। একটা সময় আসবে, আপনার গতি স্থির হয়ে যাবে। সামনে আর যেতে পারবেন না। কারন প্রমোশনের জন্য যদি ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবাইকে তেল মারতে হয়, এমন চাকরীতে আশানুরুপ পদোন্নতি না পেলেও শেষ পর্যন্ত তোষামোদের প্রাকটিসটাই মুলত ভালভাবে আয়ত্ম হয়। আপনার চারিপাশে আজ যারা আছে, এরা এক একজন তোষামোদে সিদ্ধহস্ত। তোষামদে অভ্যস্থ এসব মানুষগুলো সব অপকর্মকে মেনে নেয়ার কারণে ওরা আমার আপনার চেয়ে অনেক ভাল আছে। ওদের বিবেক এসব ঘুষ আর দুনীতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এজন্য ওরা খুব ভাল আছে।
দুর থেকে আপনাদের কাছে মনে হয় আমি বড় ভাল আছি। আসলে বাস্তবে তা নয়। কারণ, এ বেতনে আমার ষ্টাটার্স চলেনা। একজন দারোয়ানও আমার চেয়ে অনেক ভাল আছে। আমার এ সততার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে আমার সন্তান, সন্ততি, স্ত্রী, সবাইকে। আপনি কতদিন কতজনকে মানাবেন? চারিপাশে বাস করা স্বল্প বেতনের লোকদের উপরি আয়ের দাম্বিকতায় আমি এক পরাজিত সৈনিক। আর এ পরাজিত সৈনিকদের নেতৃত্বে বাস করা পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যর আত্মা ও দৈনন্দিন চাহিদাগুলোকে মিটাতে না পেরে চাওয়া পাওয়ারা আত্মহত্যা করেছে।
মাসিক বেতনে বাচ্ছাদের স্কুলের ফি, সংসারের চাহিদা, আপনার ভাবীর দৈনন্দিন সাংসারিক খরচ, সব কিছুর সাথে লড়াই করে এ টিকে থাকার মাঝে কোন আনন্দ নেই। একা সৎ থাকা কিছুটা সহজ হলেও পুরো পরিবারকে মানিয়ে সৎ জীবন যাপন অস্তিত্বের সাথে এক ধরনের লড়াই বৈ কিছুই নয়। আমি সেই অস্তিত্বের সাথে লড়াই করা এক বাকহীন সৎ মানুষ।
আপনি একটু তাকিয়ে দেখুন, আমার নীচের ষ্টাফগুলো অফিস শেষে পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে হাসিমুখে বের হয়ে যায়। রেয়াজুদ্দীন বাজার হতে হাতভর্তি কাঁচা বাজার করে সবাই রিক্সা বা টেক্সি হাকিয়ে হাস্যেজ্জল মুখে বাসায় ফিরে। আর আমি ফিরি খালি হাতে। কারণ আমিতো মাসে বেতন পাই একবার। আর ওরা পায় প্রত্যেক দিন। ওরা মাসিক বেতন দিয়ে শাড়ী গহনা কিনে। আর আমি ঋনের টাকা পরিশোধ করি।
গতকাল ম্যানেজার সাহেব আমাকে যা বলল, এতে আমার দুটো পথ খোলা আছে। হয়তঃ ওদেরকে ঘূষ খাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। আর এ কাজটিতে সহযোগীতা করা আর নিজে খাওযা একই কথা। যদি বলি আমাকে অন্য শাখায় বদলী করে দিতে, তাহলে একই পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
- তাহলে কি করবেন? জানতে চাইলাম।
রাস্তা একটা খোলা আছে। আমাকে জোনাল অফিসে ট্রান্সফার করে দেয়া এটি নিজেকে ও.এস.ডি. খেতাবে ভুষিত করার নামান্তর। দুনীতি গ্রস্থ ম্যানেজার দেরকে শাস্তি স্বরুপ চেয়ার টেবিল দিয়ে হেড অফিসে কর্মহীনভাবে ওখানে বসিয়ে রাখা হয়। এতে সমস্যা হল, আপনি জীবনে আর পদোন্নতি পাবেন না। কারণ কাষ্টমার বিহীন চাকুরীতে কোন ক্রিয়েটিভিটি থাকেনা বলে এরা অনেকটা বৃদ্ধাশ্রমের মত দিন কাটাতে হয়।
সর্বশেষ রাস্তাটি হল, চাকুরী ছেড়ে দেয়া। জীবনের এ পর্যায়ে এসে এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়ার মত আমার পরিস্থিতি নেই।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৬১ বার পঠিত, ৬০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
.........কোনমতে বললাম আব্বা আমাকে কই রেখে গেল! মাদরাসার হোষ্টেল থেকেতো একদিন বাসায় ফিরবো সান্তনা পেতাম। কিন্তু আমার সেই বাসাটাইতো আর নাই! এই হোষ্টেল থেকেতো আর কোনদিনই ফেরা হবেনা! কেন বড় হইলাম!
ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
agiye jaan, shathei paben, In Sha Allah.
তাই বদঅভ্যাসটা বদলারেই সব ঠিক হতো । ধরাবাহিক এমন সুন্দর পোষ্ট দেবার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাধ।
আসলে আল্লাহর উপর দুঢ় বিশ্বাস আর আল্লাহর সরাসরি সাহায্য না থাকলে কর্দমাক্ত এ সমাজে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়।
ভাল লাগল আপনার লিখাটা আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
বর্তমান বাংলাদেশের সচিবালয়ে এরকম বৃদ্ধাশ্রমের মানুষ ই বেশী। আর বাবুদের চরম সময় যাচ্ছে।
ইসলাম সাহেবরা অসহায়।কিন্তু একটা শক্তি তো আছেই।
সর্বস্তরে দীন প্রতিষ্ঠা করা ফরজ, এ চরম সত্যটি জাতির অধিকাংশ সদস্যের কাছে অজানা। আর পার্থিব জীবনের সব সমস্যার সমাধান যে ইসলামের মাধ্যমে করতে হবে তাও অজানা।
একদল ঈমান মজবুত করতে এমন ব্যাস্ত যে, জাতিকে বুঝাবে কখন? আরেক দল ক্যাডার তৈরী ব্যাস্ত, জনগণকে বুঝাবে কখন? আরেক দল দুশ বছর ধরে ঘুমিয়ে।
হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিমদের পাশাপাশি মক্কার কাফেররাও মুসলিমদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল।
আল্লাহ সবাইকে সাহায্য করুন । আমীন।
নিজেকে চেনার বাকি আছে এখনও অনেক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন