রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১৫)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৬ মার্চ, ২০১৪, ১২:২৫:৩৯ রাত
পর্ব-১৪
এ সপ্তাহের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল একটি চেক নিয়ে। একজন কাস্টমার দশ হাজার টাকার চেক নিয়ে এসেছে টাকা উত্তোলনের জন্য। পোস্টিং করতে গিয়ে দেখা গেল হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা নেই। বিষয়টি জানানোর পর বেচারার মাথায় যেন আকাশ ভে্ঙ্গে পড়ল।
গত সপ্তাহে হিসেব থেকে পাঁচ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে মাত্র। তার হিসেবে একাউন্টে আরও ত্রিশ হাজার টাকা ব্যালেন্স থাকার কথা ছিল। কিন্তু আছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। বিশ হাজার টাকা উধাও! না। এত বড় অংকের ব্যবধান কিছুতেই হতে পারেনা। বড় অবিশ্বাস্য! মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিলনা। অথচ এটিই বাস্তবতা। এ নিয়ে লেজার ডিপার্টমেন্ট অফিসারও বড় বিপাকে। এ কি করে হয়। বিশ্বাস করার জন্য কাস্টমারকে অবশেষে ডেকে লেজারে রক্ষিত হিসাবটাও দেখানো হল। কিন্তু তার পরও মন মানছিলনা।
গত সপ্তাহে ইস্যুকৃত পাঁচ হাজার টাকার চেক দিয়ে কিভাবে পচিশ হাজার টাকা উঠানো সম্ভব! বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গত সপ্তাহে পোষ্টিং করা চেকটি ফাইল থেকে আনা হল। কিন্তু টাকার অংক আর কথায় কোন গরমিল নেই। অফিসার হাঁফ চেড়ে বাঁচলেও কাস্টমারকে বুঝানো গেলোনা। তার ছেলের মাধ্যমে তোলা পাঁচ হাজার টাকার চেক পচিশ হাজার হয়ে গেল! বড় অবিশ্বাস্য!
বেচারা কাস্টমার! অবশেষে বাসায় গিয়ে চেক বইটা নিয়ে এল। বইয়ের সাথে থেকে যাওয়া কর্তিত চেকের ছোট অংশে পাচ হাজার টাকা হুবহু লিখা আছে। তাহলে পঁচিশ কি করে হল? এ নিয়ে পুরো অফিসে হৈ চৈ পড়ে গেল। কাষ্টমারও দৃঢ়তার সাথেই চ্যালেঞ্জ করে বসল। না। এ কাজটি নিশ্চয়ই ব্যাংকে হয়েছে। আমি এর সমাধান চাই।
অবশেষে কাষ্টমারের ছেলেকে ডেকে অফিসে আনা হল। ম্যানেজার তার সাথে কথা বলল। কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে স্বীকার করল, এ কাজটি সে নিজেই করেছে।
- কিভাবে?
চেকের টাকার ঘরে লিখা ছিল = ৫,০০০/=টাকা
কথায় লিখা ছিল- পাঁচ হাজার টাকা মাত্র।
সে ৫ এর আগে রাখা ফাঁকা জায়গায় ২ বসিয়ে এটিকে ২৫,০০০/= বানিয়েছে। আর পাঁচ এর 'প' এর আকারকে ই কার বানিয়ে 'চ' এর সাথে 'শ' বসিয়ে 'পচিশ লিখেছে। এ ক্ষেত্রে কাজটি সুনিপুন ভাবে করার জন্য একই রঙ্গের কালীও ব্যবহার করেছে।
তৃতীয় ঘটনাটি ছিল লেজার ডিপার্টমেন্টের অফিসার নিতাই বাবু আর মোস্তাক সাহেবকে নিয়ে। একদিন সকালে এসে দেখি ওরা দুজনেই চাকুরী থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। প্রথম দিকে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খূললেও পরবর্তীতে আঞ্চলিক অফিস থেকে জানা গেছে, হিসাব জনিত গরমিলের কারণেই ওদের চাকুরি গিয়েছে।
গত কয়েকমাস আগে এ অফিসে অডিট এসেছিল। অডিট টিমটি ছিল হেড অফিস থেকে্। তিন দিনের এ অডিটে লেজার ডিপার্টমেন্টে বড় ধরনের একটা গরমিল পাওয়া গেল। এর সাথে জড়িত ছিল অফিসার নিতাই বাবু আর মোস্তাক সাহেব। এ অনাকাংখিত ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করে দিল। ব্যাংকের ইতিহাসে এসব ঘটনা বিরল। লোভের পরিণতি যে এত ভয়াবহ, এটিই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৪ বার পঠিত, ৭১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বস্ কাহিনীটা যেন লেবুর সরবতের মত এই মূখে দিলাম আর এই ফিনিশ.....
হা হা হা হা হা হা . . . . . . . . . . . . . . .
. . . .
. . হা
কিছু বুঝে থাকলেতো ভালো কিন্তু কিছু মনে করবেন না। ফোরামের মত গোপন মেসেজিং থাকলে সেখানেই দিতাম।
আবার ছেলের কাজ সে ৫ এর আগে রাখা ফাঁকা জায়গায় ২ বসিয়ে এটিকে ২৫,০০০/= বানিয়েছে। আর পাঁচ এর 'প' এর আকারকে ই কার বানিয়ে 'চ' এর সাথে 'শ' বসিয়ে 'পচিশ লিখেছে। তাহলে উপরের চেকটা ঠিক থাকলো কেমনে ?
ধন্যবাদ।
যদি সন্তানটি তার বুনিয়াদী শিক্ষা এবং পরিবেশগত শিক্ষায় নৈতিকতার থিউরীটিক্যাল ও প্রেক্টিক্যাল জ্ঞান অর্জন করতে না পারে তবে সন্তানদের ক্ষেত্রে এমন অনৈতিক কাজ কর্মে জড়িয়ে যাওয়া খুবই সহজ। তার উপর যদি হয় তা আবার অর্থনৈতিক বিষয়। তখন তো লোভ সামলানো খুবই কঠিন হয়ে দাড়ায়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে একমাত্র নৈতিক শিক্ষা অর্জন এবং সে অনুযায়ী বাস্তব জীবনে সে রকম অনুকুল পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ। কিন্তু অভিভাবকরা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারে তার সন্তান-সন্তুতি সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি? আলোচ্য বর্ণনাটিতে মূখ্য গিল্টীর ভূমিকায় ছিল একাউন্ট হোল্ডারের সন্তান। কিন্তু সন্তানটি এভাবে চুরি বিদ্যা অর্জন করার সুযোগ বা অনুশিলন কোথায় অর্জন করলো? তার অভিভাবক কি জীবন যুদ্ধে একশত ভাগ সঠিক পথে চলে আসছিল? হয়তো খোজ নিলে সেখানেও ব্যায়াপক অসংগতি ধরা পড়বে। আর এ অসংগতিগুলোর খারাপ উপসর্গগুলো কি নিজ সন্তানদের মধ্যে জারি থাকবে না? এক কথায়- কোন একজন মানুষ ভুল বা গলদ পথে পরিচালিত হলে শুধু সে একাই এর নতীজা ভোগ করে না। বরং তার এ ভুল পথে যাওয়ার ফলে সামাজিক জীব হিসেবে আরো অনেকেই নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যায়। আর এভাবেই বিস্তার লাভ করে সমাজে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ যাবতীয় অনাচার।
এ বিষয়ে আরো লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা যেহেতু কমেন্ট করার জায়গা তদুপরি পাঠকদের ধর্য্যচ্যুতির তো একটা ব্যাপার আছে। ব্লগ লিখলেন আপনি। বেফাস বোলচাল শুরু করে দিলাম আমি। কেমন যেন একটু বেখাপ্পা লাগে। তাই এখানেই ঘ্যাচাং।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
স্বাধীনতা তুমি কোথায় গেলে
বলনা আমায় ।
আর কতদূর পথ চললে
মিলবে তোমায় ।
আর কতটুকু রক্ত বহালে
আসবে তুমি ঘরে ।
আপনার ইচ্ছাটা পূরণ হউক। আড্ডা দেয়া খুবই ভাল এবং উপকারী বিষয়।
এরকম আড্ডা থেকেই বড় কিছু করার আউডিয়া আসে।
মেধাবী চোর বটে। বাপেরই পকেট কাটছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন