রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১৪)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৪ মার্চ, ২০১৪, ১১:০১:৪১ রাত
পর্ব-১৩
গত কয়েকদিনে ব্যাংকে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা ঘটে গেল। এসব ছিল-
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু এ চিরন্তন সত্যটির বাস্তব রুপ। সপ্তাহের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রবি সাহেবের সাথে। সময়টা ছিল বিকেল ৩টা। এক ঘন্টা পর ব্যাংক ছুটি হয়ে যাবে। হঠাৎ করে এক বয়োবৃদ্ধ প্রতিবাদী কাষ্টমার উচ্চ কন্ঠে চীৎকার দিয়ে উঠল। ক্ষিপ্র কন্ঠে বলতে লাগল,
- আপনাদের মত লোকদের জুতা দিয়ে পেটানো দরকার, যাতে জীবনের শিক্ষা হয়ে যায়। ঘুষখোর কোথাকার। বেতনে না পোষালে চাকুরী করেন কেন? ছেড়ে দিন। রাস্তায় ভিক্ষা করুণ। এভাবে চেয়ারে বসে ভিক্ষা করার দরকার কি? আপনাদেরকে আমরা আর কত ভিক্ষা দেবো?
তম্ময় হয়ে শোনা অন্য স্টাফদের দিকে তাকিয়ে তিনি আবারো বলতে লাগলেন, আশ্চর্য ব্যাপার! সামান্য একটি কাজের জন্য আমাকে তিন দিন আসতে হল। আর এখন বলছে, দুইশত টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে!!!! কেন দেব? আমি কি প্রাপ্য ফি দেইনি? ছি। লজ্জা থাকা দরকার!!
- উচ্চ আওয়াজ শুনে ম্যানেজার সাহেব চেম্বার থেকে উঠে আসলেন। উত্তেজিত লোকটি থেকে জানতে চাইলেন, দাদা কি হয়েছে! আমাকে খুলে বলুন।
- অ্যাঁর বলবেন না স্যার। এ সব ঘোষখোর লোকগুলো কেন যে রেখেছেন? এরা পুরো দেশটাকে জিম্মি করে ফেলেছে। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার।
- আচ্ছা বলুনতো কি হয়েছে?
আমি টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়ন করতে দিয়েছি তিন দিন হল। তিনি আমার থেকে সাড়ে চারশত টাকা ফি ও নিয়েছেন। আর আজ বলছেন, তাকে আরও দুইশত টাকা বেশী দিতে হবে।
- কেন?
- কারণ, উনি নাকি প্রচন্ড কাজের চাপের কাজে এসব অফিসিয়াল সময়ে করতে পারেন না। পরে করতে হয়। এজন্য অফিস তাকে কোন ওভারটাইম বা মজুরী দেয়না। সুতরাং তার এ অতিরিক্ত সমযের জন্য আমাকে দুইশত টাকা দিতে হবে।
আচ্ছা, বলুনতো। বাংলাদেশ সরকার টেলিভিশন লাইসেন্স নবায়ন করার দায়ীত্ব আপনাদেরকে দিয়েছে। আপনারা পোষাতে পারবেন বলেইতো নিধারিত ফি দিয়ে রিনু করতে এসেছে। তাহলে এর উপর অতিরিক্ত কোন টাকাটা আমাকে দিতে হবে? টাকা কি গাছে ধরে যে চাইলেই দিতে হবে?
ম্যানেজার সাহেব কাস্টমারকে ডেকে রুমে নিয়ে গেলেন। চা পানি খাইয়ে শান্তনা দিয়ে বিদায় করলেন। রবি সাহেবকে কিছুই বলা হলনা। কারন, এ অফিসে সিনিয়র ক্লার্ক হতে অফিসার পদে যে কয়জন সিরিয়াসলি তদবীর করছেন, এদের মধ্যে রবি সাহেব ও অন্যতম। স্যারকে কারণে অকারণে গিফট দেয়া, বাসায় স্ত্রী সহ গিয়ে কিছু দিয়ে আসা ইত্যাদি। বড় কথা হল, রবি সাহেব সিবিএর একনিস্ট সদস্য। কিছু বললে আগামীকাল ম্যানেজারের থলের বিড়ালও বের করে দেয়া হবে।
পরদিন অফিসে আসলাম। রবি সাহেব আমার জন্য চায়ের অর্ডার দিয়েছে। আজ তার মনটা খুব খারাপ। এত বড় লজ্জা আর কোনদিন কাউকে পেতে দেখিনি। তাই সহমর্মিতার ভান করে একটু খোঁচা দিয়ে বললাম, গতকাল এ পাগল কাস্টমারটা আপনাকে এভাবে অপমান করল! আমার খুব খারাপ লেগেছে। ইচ্ছে হয়েছিল, তারে ধরে কয়টা লাগিয়ে দেই। কারণ আপনাকে অপমান করা মানেই আমাদের সবাইকে অপমান করা। আমিতো একেবারে রাগে ক্ষোভে অগ্নীষ্মর্মা হয়ে ছিলাম। আপনি তাকে কিছু বলেন নি কেন? এভাবে ছেড়ে দেয়া কি উচিত ছিল?
আমার কথা শুণে রবি সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। খূশী হলেন। তারপর নিজেকে একটু সহ করে বললেন,
- দ্যাখেন মজুমদার সাহেব। চাকুরী করতে গিয়ে এ ধরনের অনেক বদমেজাজী কাষ্টমারের সাথে দেখা হয়েছে। লাখের মাঝে এ ধরণের দুচারজন থাকবেই। আমি বুঝতে পারিনি যে লোকটা এত বদমেজাজী। না হয় প্রথতেই কেটে পড়াতাম। সামান্য একটু কথা নিয়ে লোকটা যা করল। কিছূ করার নেই।কারন কাষ্টমার ইজ অলয়েজ রাইট। দ্বিতীয়ত একটা প্রবাদ আছে. "কুকুরের সব সময় হাটুঁর নীচেই কামড় দেয়।" কাজেই কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে। এতে আমিত আর কুকুর হতে পারিনা। তাই নিশ্চুপ ছিলাম।আমারও অনেক রাগ আছে। কিন্তু চাকুরীরর খাতিরে হজম করতে বাধ্য হয়েছি।
হুম। না। অবশ্যআপনি ঠিক কাজটিই করেছেন। বয়োবৃদ্ধ মানুষতো। মেজাজ একটু খিটখিটে থাকবেই।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৭১৩ বার পঠিত, ৬৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
(সংশোধনি;-ঘোষ নয় ঘুষ হবে৷)
(ঘসে মেজে ঠিক করার জন্য আপনার নামে কবিতা পোরষ্ট করলাম৷)
ধন্যবাদ।
সময়..
ফুরালে মনে হয় সব অভিনয়।
কাস্টমারটা আপনাকে এভাবে অপমান
করল! আমার খুব খারাপ লেগেছে।
ইচ্ছে হয়েছিল,
তারে ধরে কয়টা লাগিয়ে দেই। কারণ
আপনাকে অপমান করা মানেই
আমাদের সবাইকে অপমান করা।
আমিতো একেবারে রাগে ক্ষোভে অগ্নীষ্মর্মা হয়ে ছিলাম।
আপনি তাকে কিছু বলেন নি কেন?
এভাবে ছেড়ে দেয়া কি উচিত ছিল?"
lobon baloi chitailen kintu jala pura nai monehoi.
Shathe achi, agiye jaan.
ধন্যবাদ্
কত্ত বড় নির্লজ্জ
ইজ্জত যাদের নেই। তাদের আবার যায় কি ভাবে।আপনার খোঁচাটা সঠিক ছিল।
বর্তমানে এ টেক্স সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বেসরকারী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানেও টেক্সের দেলদেনের দেখা যায়। এমনকি ক্ষুদ্র দোকানীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও এ টেক্সের লেনদেন হয়। এ এক অদ্ভুদ ও বিচিত্র রকমফের আবার। আমি নিজেও এরকম একটি ক্ষুদ্র দোকানের কর্মচারীর অদ্ভুদ টেক্স কালেকশনের পদ্ধতি দেখে তাজ্জব বনে গেছিলাম।
ঘুষ! তুমি মোরে করেছো মহান,
দিয়েছো অনেক ইজ্জত
আগাও খেলাম গোড়াও খেলাম
তবুও রুজিতে হয় না বরকত
আমি সরকারী কর্মচারী
আমার ছিল না জমিদারী
ঘুষ খেয়ে রাতারাতি হবো কলা গাছ
করিব দুনিয়াটারে আরামের স্বর্গবাস
নেই পরকালের জবাদিহিতার ধান্ধা
তাই তো আমি চোখ থাকিতেও আন্ধা
এটা খেলাম সেটা খেলাম শেষে হলাম আতেল
জীবন সায়াহ্নে হিসেব কষলাম সবকিছু বাতেল
তখন আন্ডু করার থাকবে না আর সুযোগ
অনন্ত কাল পোহাতে হবে কবরের দুর্যোগ।
ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
‘মামু ছাড়া চাকরী হয় না
চাকরী হয় না ঘোষ ছাড়া
বসের বউয়ের জন্য পাঠাও
লিপিস্টিক আলতা।’
লোকটা আসলেই বদ মেজাজী, কিন্তু......
তাই সহমর্মিতার ভান করে একটু খোঁচা দিয়ে বললাম, গতকাল এ পাগল কাস্টমারটা আপনাকে এভাবে অপমান করল! আমার খুব খারাপ লেগেছে। ইচ্ছে হয়েছিল, তারে ধরে কয়টা লাগিয়ে দেই। কারণ আপনাকে অপমান করা মানেই আমাদের সবাইকে অপমান করা। আমিতো একেবারে রাগে ক্ষোভে অগ্নীষ্মর্মা হয়ে ছিলাম। আপনি তাকে কিছু বলেন নি কেন? এভাবে ছেড়ে দেয়া কি উচিত ছিল?" -এতো ভাই কঠিন খোঁচা।
চোরের মার বড় গলা।
যুক্তি খাটাইছে কোথায় দেখেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন