রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১২)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২২ মার্চ, ২০১৪, ০২:৪৬:৫১ দুপুর
পর্ব-১১
মফিজ সাহেব এ অফিসে আসবে শুনেই প্রদীপ বাবু ম্যানেজার সাহেবকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন, তার জায়গায় মফিজ সাহেবকে দেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে মৌখিক ভাবেও স্যারকে অনুনয় বিনয় করে বুঝিয়ে বলেছেন। ম্যানেজার সাহেব রাজী। তবে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তা হল, যদি মফিজ সাহেবকে কনভিন্স করা যায়। প্রদীপ বাবু আশ্বস্ত করল, স্যার এটা আমার উপর ছেড়ে দিন।
মফিজ সাহেব আজ এ অফিসে যোগ দিয়েছেন। সবার সাথে পরিচিত পর্ব শেষ। প্রদীপ বাবু মফিজ সাহবেকে ডেকে নিজের সামনে বসিয়েছেন। একান্ত আলাপচারিতায় এ অফিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মফিজ সাহেবকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এ পরিচয়ে ছিল, মফিজ সাহেবের প্রশংশায় ভরপুর।একেবারে পঞ্চমুখ। প্রদীপ বাবু বলতে লাগলেন,
- মফিজ সাহেব আমার র্খুব কাছের লোক। অনেক দিনের পরিচিত। পুরোনো বন্ধু। আমরা একই পাটির সমর্থক ও কর্মী। ব্যক্তি হিসেবে মফিজ সাহবে বড় সৎ মানুষ, এটি সর্বজন বিদিত। কথা কাজে দারুণ মিল। মফিজ সাহেব এ অফিসে আসাতে আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুব খূশী হয়েছি। কারণ এ অফিসের কর্মচারীদের মাঝে যে বন্ধন, মফিজ সাহেব আসাতে এটি আরও মজবুত হবে...। মফিজ সাহেব এমন একজন লোক, যার সাথে একশত বছর কাজ করলেও সমস্যা হবেনা। খুবই মাই ডিয়ার ম্যান।
প্রদীপ বাবুর কথা শুনে মফিজ সাহেব খূশীতে একেবারে আটখানা। প্রশংসা কে পছন্দ না করে! মফিজ সাহেবের সামনে প্রদীপ বাবু আমাকেও খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরলেন। শুণে মনে হল, আমি ও অনেক বড় কিং বদন্তীর নায়ক।
মফিজ সাহেব লম্বায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। চলাধারা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। খুব দ্রুত কথা বলতে অভ্যস্ত। বাড়ী চট্রগ্রামে। তবে কিছুটা পাড়া গায়ের। ভাষার দিক থেকে প্রদীপ বাবুর সাথে মিল থাকাতে বাড়তি আন্তরিকতা পুর্ব থেকেই রয়েছে। চট্রগ্রামের ভাষায় দুজনে কথপকথনে এমনটিই মনে হয়েছে।
আজ মফিজ সাহেবকে কোন কাজ দেয়া হয়নি। ম্যানেজার সাহেব বললেন, আপনাকে কাল থেকে কাজ দেয়া হবে। আজকে ঘুরে ফিরে দেখুন। সবার সাথে পরিচিত হোন। কথা বলুন।
মফিজ সাহেবের সাথে কথা বলতে বলতে এক সময় প্রদীপ বাবু মাথাটা মফিজ সাহেবের দিকে একটু ঝুকে দিলেন। তারপর কানে কানে ফিস ফিস করে বললেন, আজ আমরা তিনজনে একসাথে লাঞ্চ করবো। আমি খাওয়াবো। মফিজ সাহেবের সৌজন্য। তবে খবরদার। যাতে কেউ না জানে।
মফিজ সাহেব তো দারুণ খূশী। ওরে বাপরে বাপ! অতিথেয়তার আগেই প্রদীপ বাবু তাকে যে সম্মান দেখিয়েছে, এতে সে খুবই তৃপ্ত।
কিছুদিন হল, মফিজ সাহেবের পদোন্নতি হয়েছে। জুনিয়র হতে সিনিয়র ক্লার্ক হয়েছে। তাই বদলী হয়ে নুতন কর্মস্থলে এসেছে। এটি জীবনের এক ধাপ এগুনোর শুভ যাত্রা। তাই মফিজ সাহেবের এ বদলীতে চোখে মুখে আনন্দের চাপ।
দুপুরে তিনজনেই চুপে চুপে বের হয়ে গেলাম। হোটেলে লাঞ্চ করতে বসেছি। প্রদীপ বাবুর একটু বাড়তি আতিথেয়তায় মফিজ সাহেবের আন্তরিকতাটা আরও বেড়ে গেল।
যে কোন মানুষকে খেতে দিয়ে কনভিন্স করাটা খুবই সহজ। প্রদীপ বাবু তাই করলেন। খেতে কেতে বললেন, মফিজ সাহেব, মজুমদার সাহেব এ শাখায় নতুন যোগ দিলেও অত্যন্ত একজন্ ভাল মানুষ। সবচেয়ে বড় কথা হল তিনি সিবিএ নেতার ছোট ভাই। তাছাড়া যে কোন কারণে ম্যানেজার সাহেবের সাথে তার সখ্যতাটা অনেক বেশী।
আমি আর মজুমদার সাহেব একসাথে চলি। আপনাকে পেয়ে খুবই ভাল লাগছে। আমি আপনার খুব কাছের লোক হিসেবে কিছু কথা বলব। এসব কথা অফিসে বলা যাবেনা। তাই এখানে বলছি। প্রদীপ বাবুর আপ্যায়নে মফিজ এমনিতেই কাবু। যা বলছে, সবই সমর্থন করে যাচ্ছে।
প্রদীপ বাবু খুব গাম্ভীর্যতার সাথে বলছে, দেখুন মফিজ সাহেব। আমরা যে শাখায় কাজ করি, এটি চট্রগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে খ্যত ব্যবসায়ীক জায়গা। আপনি আগে যেখানে কাজ করতেন, ওখানে সব সুটকী আর চাউল ব্যবসায়। আর রেয়াজুদ্দীন বাজারের ব্যাবসায়ীরা সব কাপড় ব্যবসায়ী। এখানে দৈনিক কোটি কোটি টাকা লেন দেন হয়। এখানকার কাস্টমার গুলোর আত্মাও অনেক বড়। আপনি কল্পনাই করতে পারবেন না।
আমি যেহেতু লেজার ডিপার্টমেন্টে কাজ করি, এ লোকগুলো ব্যাংকে ঢুকেই প্রথমে আমার কাছে আসতে হয়। আমি যত তাড়াতাড়ি চেকটা ইস্যু করে দেই, তত তাড়াতাডি সে বিদায় নিতে পারে। অনেক সময় ব্যাংকে লম্বা লাইন থাকলেও এসব লোকদের আমি অগ্রাধিকার দেয়ায় ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর। ওরা আমাকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে। বড় কাস্টমারতো, এদের কারণেইতো মুলত একটি ব্যাংক টিকে থাকে।
আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে, এ শাখায় যোগ দেয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আপনার ভাবীর জন্য কোন কাপড় কিনতে হয়নি। ব্যাংক থেকে যাওয়ার সময় চোখে পড়তেই এসব কাষ্টমারগুলো আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। দোকানে বসিয়ে শুরু করে দেয় আলোচনা। চা পানি খেয়ে বিদায়ের সময় জোর করে ব্যাগে আপনার ভাবীর জন্য কাপড় গুজে দেয়। কখনও কখনও জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। বাসায় গিয়ে দেখি পাচশত টাকার দুটো নোট।
মফিজ সাহেব চেহারায় আনন্দের চাপ। খূব খূশি অনুভব করছে। এক সময় হঠাৎ প্রদীপ বাবুর হাত চেপে ধরে বলছে, প্রদীপ বাবু। আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি। ধন্যবাদ যে আমার হয়ে আমার জন্য এতটুকু ভেবেছেন। আমাকে কথা দিন যে, আপনার জায়গায় আমাকেই দেবেন। আমি রাজী আছি। কোন সমস্যা নেই।
প্রদীপ বাবু আর একটু বাড়িয়ে বলতে লাগলো, জানেন, এরা এমন যে বলতে হয়না। কখন কাকে কি জন্য দিতে হয় দিয়ে দেয়। ..আমি আপনাকে এসব বলার মুল উদ্দেশ্য হল, আপনি আসার আগে ম্যানেজার সাহেব আমাকে এলসিতে ট্রান্সফার করার কথা বলেছেন। এটি শোনার পর অনেক ষ্টাফ পাগল হয়ে গেছে আমার জায়গায় আসার জন্য। কারণ ওরাতো জানে যে এটি টাকার জায়গা। কাষ্টমার থেকে প্রাপ্য টাকা দিয়েই সংসার চলে। মাসিক বেতনে হাত দিতে হয়না।
আমি মফিজ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি আর মনে মনে হাসছি। ভাবছি, জীবনে যা কিছু শিখলাম, প্রদীপ বাবু দেখছি আরও অনেক বড় গুরু। তেলের ভান্ডার। কাউকে কনভিন্স করার ওস্তাদ।
প্রদীপ বাবু আবারও বলতে লাগল, উষা দেবী, রবি সাহেব, সোলায়মান সাহেব সবাই কিন্তু ম্যানেজারকে বলে রেখেছে এখানে দেয়ার জন্য। আমি ম্যানেজারকে বলেছি,
- স্যার। মফিজ সাহেবকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। খুব ভাল লোক। ব্যবহারও অমায়িক। এ লোকটাকে আপনি লেজারে দিলে খুব ভাল হবে।
মফিজ সাহেব, সত্যি কথা বলতে কি, আমি যদিও আপনার অনুমতি ছাড়াই এ বিষয়টা ম্যানেজার সাহেবকে বলেছি, তবুও ভাবছি আসলে আপনাকে বলা দরকার। তাই আমি আপনাকে এখানে ডেকে নিয়ে এসেছি। বাকীটা আমি ম্যানেজ করব। আজ থেকে এ শাখায় আমরা তিনজন সহোদার ভাই। বন্ধূ। একে অন্যর জন্য এগিয়ে আসব।
প্রদীপ বাবুর কথা শেষ না হতেই মফিজ সাহেব আবারও সম্মতি দিয়ে দিলেন। বললেন, কোন চিন্তা করবেন না প্রদীপ বাবু। আমি কাজ করবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আজ আবারও স্যারকে বলব। তবে আপনার সাথে যে আমরা খাওয়া খেলাম, খবরদার । যাতে কেউ না জানে। জানেন তো, কেউ জানতে পারলে সব বরবাদ হয়ে যাবে।
- না। না। বলবোনা। ধন্যবাদ প্রদীপ বাবু আপনি আমার জন্য এভাবে চিন্তা করায়।
খাওয়া শেষ। কথা ছিল প্রদীপ বাবু খাওয়ার টাকা দিবে। কিন্তু জোর করে মফিজ সাহেব টাকা দিয়ে দিয়েছে। শত হলেও আসার আগেই লেজার ডিপার্টমেন্টে এত বড় সুযোগ করে দেয়া চাট্রিখানি কথা নয়।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৭ বার পঠিত, ৭৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেখুন না আমাদের ৭১ সালের সব মফিজরা (প্রান্তিক মুক্তিযুদ্ধারা) আজ কোথায়। সমাজের মাফিজ শ্রেনীর লোকেদেরকে খুব সহজে ই ঠকানো যায। আমি এখানে প্রতিকি অর্থে মাফিজ শব্দটি ব্যবহার করেছি। প্রদীপরা বরাবর ই গাছের টা খায় এবং তলারটাও।
********************************
কবিতা আজ বিদ্রোহী-রক্তচক্ষ্যু দেখায়
নিরবতায় কেঁপে উঠে কবিতার হৃদয়
নিঃশব্দ চিৎকারে বলে হে ভীরু কবি
তুমি কবিত্বের সমাজে কলঙ্ক তিলক্,
মানবতার অবমাননার নিরব দর্শক
তোমায় ধ্বিক্কার হে পদলেহি কবি
কবিতায় তোমার চাটুকারিতার চাতুর্য্য
তুমি পদলেহন কর মানবতা বিরোধীর,
মানবতার গলাটিপে দাও শব্দের চাতুর্যে
তোমায় ধ্বিক্কার হে কবি শব্দচোরা
শব্দে শব্দে রচ মিথ্যার কথামালা
বিসর্যন দাও আত্মসম্মান হীন স্বার্থে,
কবি ধ্বিক্কার তোমায় ঘৃণার বর্ণমালায়
ধ্বিক্কার মজলুমের আর্তচিৎকারে-অভিসাপে
তুমি সময়ের নিরব খলনায়ক,
বর্তমানে ভীরুতায় নিক্ষিপ্ত-
তুমি আস্তাকুড়েড় কিট্।
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল মান্নান মুন্সী ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:১৭:৫২ সন্ধ্যা
<< আগের পোস্ট পরের পোস্ট >>
মানুষের বিভৎষ্য চেহারায় এত্তো বিনোদন-
কেউ কোন দিন দেখেনি !
প্রতিশোধ স্পৃহা সফলতার দ্বার প্রান্তে,
বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ফুর্তির কাতুকুতু-
আফসোস শিক্ষিত শেয়ালগুলো বুঝতে পারেনি !
মনের ভেতর আত্মতুষ্টি বাবা সফল হচ্ছি,
চোখে গ্লিসারিনের কাঁন্না ঘরে প্রিয় রান্না-
কেউ খায়নি এত্তো ক্ষূদা নিয়ে !
ক্ষমতার মেলেরিয়ারা ঝুট বেঁধেছে রক্ত খাবে,
জীবন বাঁজির পণ করেছে সর্বনাসিবে-
রক্তস্রোতে গাঁ ভাসাঁবে দিনে দুপুরে...
( ভাই এই ব্লগে আমার লেখা তেমন কেউ পড়েনা তাই ব্লগে অনিয়মিত লিখি...কিন্তু ভেতরে প্রতিবাদের গালমন্দ শব্দগুলো প্রায়শই তুফান তুলে, পাছে ভয় আমার চারিপাশেইতো নব্য মানবতাবিরোধীরা...কিছু দিন পূর্বে এমপি বাহার সাহেবের সাথে এক বিয়ের দাওয়াতে হাতমেলানোর সুযোগ হলো আমি গিয়েছিলাম আমাদের একজন ভাই জেলা নেতার সাথে আমরা দেখে এলাম ক্ষমতার দাম্বিকতা কাহাকে বলে...!!!
চলতে থাকুক....।
**************
গাড়ি ভাঙ্গচোড় সি এ জিতে আগুন
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
গরম পানির গোলাপি রং!
রাবার ভুলেটে এপার ওপার
লাল রঙ্গের রাজপথ
গ্রেফ্তারের রশি বাঁধা মিছিল
কোথাওবা ডান্ডা বেড়ি?
আবারো কর্মসূচি মৃদু হুংকার
ক্ষমতার গতিতে কাতুকুতু
লাল চোখের এলার্জি
বাহিনি রেডি সাদা কালো মেঠোপ্রিন্ট,
যোদ্ধংদেহি সাড়াশি দৌড়ানি
ডান্ডার উলোধ্বনি এলোপাথারি
আহত জানা নেই গুম অজানা
কয়জনা পরে আছেন মর্গে?
এভাবেই দেশ চলে চলবে
ভবিষ্যৎ এমনই উজ্জলতর হবে
রেখে যাওয়া আদর্শ পথ ধরে...
মেপে মেপে প্রতিশোধ নিবে।
ডান্ডার উলোধ্বনি এলোপাথারি
আহত জানা নেই গুম অজানা
কয়জনা পরে আছেন মর্গে?
এভাবেই দেশ চলে চলবে
ভবিষ্যৎ এমনই উজ্জলতর হবে
রেখে যাওয়া আদর্শ পথ ধরে...
মেপে মেপে প্রতিশোধ নিবে।
চমৎকার।
খুব ভাল লাগল.................
ধন্যবাদ।
চালিয়ে যান অনেক ভালো লাগছে,পড়ছি আর নিজে নিজে হাসছি। অনেক ধন্যবাদ।
তবে, বাবার ঘুষ হইতে বেঁচে থাকার চেষ্টাটি
kichu kichu spelling mistake ache. abar pore correction korar onurudh thaklo.
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ চালিয়ে যান, আমরা আপনার সাহিত্যে রসে ভরা কলসি থেকে নিয়মিত পানি খাইবার স্যরি পান কইরবার চাই।
মাটির ঘরে ।
ভালবেসে রাখব তাকে
খাতির করে ।
অবাক মনে চাঁদের আশে -
পথ পানে চেয়ে ।
একদিন সে পড়বে এসে
মেঠো পথ বেয়ে
কবিতার টানেই আপনার কাব্যিক শহরে গিয়েছিলাম। নাড়ীর টানে ফিরে যাওয়া ভালবাসার এক অতৃপ্ত স্বাদ নিয়ে ফিরে এসেছি।
ধন্যবাদ এ ব্লগে অনুভুতি রেখে যাবার জন্য।
প্রদীপ সাহেবের পাম্পের আলো জব্বর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন