রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-১১)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৪১:০৬ দুপুর
পর্ব-১০
আজ টিউশনি থেকে একটু বিলম্বেই বিদায় নিয়েছি। রুটিন ঠিক করতে হবে। আগামী শনিবার হতে সপ্তাহে তিন দিন আসব। সুতরাং যাতে কোন সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল করে দিন দিক করতে হবে।
স্কুলের রুটিনটা দেখে নিয়েছি। তারপর অংক, ইংরেজী এ দুটো সাবজেক্টকে ঠিক রেখে শনিবার, সমবার ও বুধবার কে বেচেঁ নিয়েছি পড়ানোর জন্য। সিদ্ধান্ত হল, আগামী শনিবার থেকে সপ্তাহে তিন দিন বিপুকে পড়াতে আসবো।
পরদিন সকালে অফিসে যেতেই স্যার পিয়নকে দিয়ে আমাকে ডাকলেন। জানতে চাইলেন, মেয়ের পড়ালিখা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে। আমি ফিডব্যাক দিলাম। শুনে স্যার খূশী হলেন। সাথে নিজের কিছু অনুভুতির কথা শেয়ার করলেন। অফিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে কিছু উপদেশ দিলেন। তারপর বললেন, সত্যি কথা বলতে কি, আপনি আমার মেয়েকে পড়ানোর পারিশ্রমিক হয়তঃ পুরো দিতে পারবোনা। শিক্ষার মুল্য টাকায় পরিশোধ হয়না। এটির একটা মর্যাদা আছে। ..কথা বলতে বলতে আমার দিকে একটা ইনভেলপ এগিয়ে দিয়ে বললেন, আমার মেয়েকে পড়ানোর জন্য আপনাকে সম্মানিত ভাতা দিলাম। এটি আপনার পারিশ্রমিক নয়।
আর আগেও দু চারজন শিক্ষক রেখেছিলাম মেয়েটার জন্য। কিন্তু তেমন কোন উন্নতি হয়নি। অবশেষে ভাবলাম, হয়তবা মেয়েটার মেধা বেশী ভাল নয়। কিন্তু আপনি পড়ানোর পর আমার দৃষ্টিভঙ্গীটা পাল্টে গিয়েছে। অফিস ষ্টাফ হিসেবে যদিও আমি আপনাকে এ আবদারটুকু করা ঠিক হয়নি, তবুও আপনার বড় ভাইয়ের সুবাদেই মুলত অনুরুধটা করেছি। আর আপনি সম্মতি দিয়ে মেয়েটাকে পড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খূশী।
স্যারের অফিস হতে বের হয়ে ইনভেলপটা খূলে দেখি - টিউশনির মাসিক সম্মানি ভাতা ছয়শত টাকা ধার্য হয়েছে। ঠিকই আছে। চলে। অফিসে স্যার থেকে পাওয়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে এ নিয়ে অন্য কিছু না ভাবাই উত্তম। ঘূষ যেহেতু খাইনা, এভাবেই বাড়তি কিছু আয় হলে মন্দনা।
ম্যানেজার সাহেবের সাথে দিন দিন আমার সম্পর্কটা একটু গভীর হতে থাকল। একটা পর্যায় আসল, অফিসার ষ্টাফদের মাঝে আমি কিছুটা সেতু বন্ধনের মত কাজে লাগতে শুরু করলাম। হাতের লিখা সুন্দর হওয়ার কারণে অফিসের গুরুত্বপুর্ন গোপনীয় চিঠিগুলো ম্যানেজার আমাকে দিয়ে লিখে নিতেন। লিখার ফাঁকে কখনও কখনও আমার সাথে পরামর্শ করতেন। আমার মতামতে স্যার কখনও কখনও মাথা নেড়ে সায় দিতেন। বলতেন, ঠিক আছে, আপনারটাই লিখুন।
আগামী সপ্তাহে মফিজ সাহেব নামে একজন ষ্টাফ যোগ দেবে এ শাখায়। চকবাজার শাখা হতে বদলী হয়ে আসছে। তাকে কোথায় দিবে এখনও ঠিক হয়নি। বিষয়টি সিনিয়র ষ্টাফ প্রদীপ বাবু জানতে পেরেছে। ভাবছে, এখনই সুযোগ, নিজের স্থানটা পরিবর্তন করার।
প্রদীপ বাবু একজন সিনিয়র ক্লার্ক। লেজার ডিপার্টমেন্টে দির্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে । এ ডির্পার্টমেন্টের সমস্যা হল, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাউচার ও চেক বই পোস্টিং দিতে হয়। প্রদীপ বাবুর হাতের লিখা ছিল লোভনীয়। সুন্দর লিখার প্রতি সখের কারণে আমি এটি শেখার জন্য চর্চা শুরু করে দিলাম। যাদের হাতের লিখা সুন্দর, ওদের মাঝে সব সময় একটি প্রতিহিংসা কাজ করে। আর তা হল, তার চেয়ে বেশী সুন্দর কারো হাতের লিখা দেখলে তা শিখতে মরিয়া হয়ে উঠা।
চট্রগ্রামের বাশার ভাই। খুব দ্রুত লিখতে পারতেন। হাতের লিখা নয়। যেন ছাপা অক্ষর। তিনি সব সময় একই কলম ব্যবহার করতেন। তার সে লিখাটি রপ্ত করার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে চট্রগ্রাম হতে। এ ধরণের লিখা শিখতে অনেক প্রাকটিসের দরকার বলে হয়ে উঠেনি।
প্রদীপ বাবুর লিখার এ ষ্টাইলটি যে কোন অবস্থায় লিখা যায়। দাড়িয়ে, বসে কিংবা শূয়ে লিখলে এটির সৌন্দর্যে বিঘ্ন ঘটেনা। এ লিখাটির মাঝে যেন দারুণ একটা আর্ট লুকায়িত আছে। এটি সাধারণত এ্যাড ফার্মগুলো বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড বা ষ্টাইলিস্ট লিখার সময় ব্যবহার করে থাকে।
লিখার সুবাদে তার সাথে আমার সখ্যতাটা একটু বেড়ে গেল। কিন্তু মফিজ সাহেব বদলী হয়ে আসার সুবাদে প্রদীপ বাবু নিজেই আমার সাথে আর একটু ঘনিষ্ট হওয়ার শূরু করলেন। বললেন,
- জানেনতো। অনেকদিন ধরে লেজার ডিপার্টমেন্টে কাজ করছি। এখন বয়স হয়েছে। প্রমোশনও দরকার। তাই কাজ শেখার জন্য আর একটু গুরুত্বপুর্ন জায়গায় যাওয়া দরকার। এখন যেহেতু মফিজ সাহেব বদলী হয়ে আসছে, এটাই সুযোগ আমার জায়গাটা পরিবর্তন করার। আপনি যদি একটু সহযোগীতা করেন।
- মফিস সাহেব কি লেজারে কাজ করতে রাজী হবে? জানতে চাইলাম।
- এটি আমার দায়ীত্ব। তবে আপনি জাস্ট আমাকে সমর্থন দেবেন। দেখেন তারে আমি ক্যামনে পটাই।
- ঠিক আছে।
প্রদীপ বাবু কাউকে সহজে কনভিন্স করার কৌশলটা খুব ভাল ভাবে জানেন। আমারও বিশ্বাস, তিনি পারবেন। সামান্য কোন ঘটনাকে রস লাগিয়ে তেল জোল মেখে গ্রহনযোগ্য করে তোলার দক্ষতাটা খুব সুন্দর। খুব ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। কথা বলার সময় মুখের ভঙ্গীমা, হাতের মুভমেন্ট সব কিছু মিলিয়ে শ্রোতার কাছে মনে হয়, খুব গুরুত্বপুর্ন কথা। মফিজকে পটানো ব্যাপারই না - এটি আমার বিশ্বাস।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৮ বার পঠিত, ৭০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব সুন্দর লাগলো পড়ে। ং
সমানি সমশর্ষানি বর্তুলানি ঘণচি চ
মাত্রাস্ত........
ভালো মনেও নেই।
তিনি অনুবাদ করে বলেছিলেন এরকম-
অক্ষরগুলো সমান হবে
অক্ষর থেকে অক্ষরের দূরত্ব সমান হবে
শব্দ থেকে শব্দের দূরত্ব সমান হবে
লাইন সোজা হবে; ইত্যাদি।
আপনার গল্প পড়ে মনে হচ্ছে- একবার চেষ্টা করে দেখবো নাকি!!!!!!!!
ঈদের ছুটি থেকে এসে টিউশনীর ছাত্রটার বিভিন্ন খাতার প্রতি নজর বুলাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে এসে দেখলাম ছাত্রটাকে লিখে দেওয়া আমার এমন নিখায় বেশ কিছু ভূল শব্দ। নিজের ভিতরে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ছেলেটিকে শিখাতে গিয়ে আমি এতগুলো ভুল শব্দ কিভাবে টাইপ করলাম। ছেলের বাবা ডাক্তার মা শিক্ষক। ভেতরে ভেতরে ঘেমে উঠলাম, পিতা-মাতা এসব দেখলে তো ভারী লজ্জার!
ছাত্র সবিনয়ে প্রশ্ন করলেন, স্যার আপনাকে এত বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন? তাকে বললাম এই লিখা আমি কবে তোমাকে লিখে দিয়েছি।
ছাত্র বলল, স্যার এটাতো আমার হাতের লিখা, আপনাকে অনুকরণ করতেছিলাম।
বিষ্ময়ে যেন মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ল, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, হুবহু শতভাগ নির্ভুল করে সে আমার লিখাই লিখেছিল। যা আমিই চিনি নাই। এই অসাধারণ প্রতিভা দেখে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
তার ধনাঢ্য পিতা-মাতা আমার উপর এত খুশী হয়েছিল যে, আমাকে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়ে দিলেন, যাতে করে আমি আমার প্রয়োজন মত পোগ্রাম শিখে নিতে পারি। এসব পোগ্রামের মূল্য এসেছিল আমার এক বছরের টিউশনীর সমান এবং আমার টিউশনীর মাসিক ফি ছিল আমার চাহিদার চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশী।
আপনাকে ইমেইল দিয়েছি। খুশী হলাম। বিস্তারিত জানাবেন্।
ধন্যবাদ অনুভুতি রেখে যাবার জন্য।
আমার নিজের লেখা পড়ার জন্য সেক্রেটারীর প্রয়োজন হয়।
আবার অর্ধেক একদিন আমার লেখা দেখে বলে -তুমার দেখি অক্ষর জ্ঞান নেই।
আমি ভ্যবচেকা খেয়ে আমতা আমতা করে বলি হয়তো। কখনো ভাবি আসলে ই আমার অক্ষর জ্ঞান নেই। হলে তো প্রবাসীর মত লিখতে পারতাম।
প্রবাসী তাহা নয় যাহা বলা হয়। ধন্যবাদ ভূয়সী প্রশয়সার জন্য।
স্ট্যাম্পে লিখে দিতে পাড়বো।
ভাইয়া আমি লিখা সুন্দর করার আশা ছেড়ে দিছি।
অফটপিকঃ ছয়শত টাকা যখন বেতন পেলেন তখন গরুর গোস্তের কেজি কত ছিলো?
পড়ের পর্বটা কবে দিবেন।
চলুক.......
এক্সপ্রিয়েন্সড হচ্ছি
যায়গাটা কিন্তু পাকাপোক্ত হয়ে গেছে আপনার।
ধন্যবাদ।
প্লাষ্টিকের ফূল দাও
নইলে কাগজের ফূল
হেগেনে বেশীদিন লাস্টিং করে...।
কোন ভুল কোন ভয়.. কোন শঙ্কা থাকবে না মনে
বাধাহীন সংসার.. সকল কিছুই সহজতর.. ধন্য হবো
তুমি পরিচিত করে তুলবে সেদিন
আমি রবো তৃষ্ণার্ত চাতক দৃষ্টি মেলে।
﴿الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ﴾
৪) যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন৷ ৫
৫. অর্থাৎ তাঁর অশেষ মেহেরবানী। এই হীণতম অবস্থা থেকে শুরু করে তিনি মানুষকে জ্ঞানের অধিকারী করেছেন এটি সৃষ্টি সবচেয়ে বড় গুণ হিসেবে স্বীকৃত। আর তিনি মানুষকে কেবল জ্ঞানের অধিকারীই করেননি , কলম ব্যবহার করে তাকে লেখার কৌশল শিখিয়েছেন। এর ফলে কলম জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার , উন্নতি এবং বংশানুক্রমিক প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যদি তিনি ইলহামী চেতনায় সাহায্যে মানুষকে কসম ব্যবহার করার ও লেখার কৌশল না শেখাতেন তাহলে মানুষের জ্ঞানগত যোগ্যতা স্তব্ধ ও পংগু হয়ে যেতো। তার বিকশিত ও সম্প্রসারিত হবার এবং বংশানুক্রমিক অগ্রগতি তথা এক বংশের জ্ঞান আর এক বংশে পৌঁছে যাবার এবং সামনের দিকে আরো উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করার সুযোগই তিরোহিত হতো।
﴿عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ﴾
৫) মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন , যা সে জানতো না৷ ৬
৬. অর্থাৎ মানুষ আসলে ছিল সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। আল্লাহর কাছ থেকে সে যা কিছু জ্ঞান লাভ করেছে। আল্লাহ যে পর্যায়ে মানুষের জন্য জ্ঞানের দরজা যতটুকু খুলতে চেয়েছেন ততটুকুই তার জন্য খুলে গিয়েছে। আয়াতুল কুরসীতে একথাটি এভাবে বলা হয়েছে : আরবী --------------------------------------- "আর লোকেরা তাঁর জ্ঞান থেকে তিনি যতটুকু চান তার বেশী কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। " ( আল বাকারাহ ২৫৫ ) যেসব জিনিসকে মানুষ নিজের তাত্বিক আবিস্কার বলে মনে করে সেগুলো আসলে প্রথমে তার জ্ঞানের আওতায় ছিল না। আল্লাহ যখন চেয়েছেন তখনই তার জ্ঞান তাকে দিয়েছে। মানুষ কোনক্রমেই অনুভব করতে পারেনি যে , আল্লাহ তাকে এ জ্ঞান দান করছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম যে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল সেগুলোর আলোচনা এখান পর্যন্ত শেষ। যেমন হযরত আয়েশার ( রা) হাদীস থেকে জানা যায় : এই প্রথম অভিজ্ঞাতটি খুব বেশী কঠিন ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাইতে বেশী বরদাশত করতে পারতেন না। তাই তখন কেবল এতটুকু বলাই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে , তিনি যে রবকে প্রথম থেকে জানেন ও মানেন তিনি সরাসরি তাঁকে সম্বোধন করছেন। তাঁর পক্ষ থেকে অহীর সিলসিলা শুরু হয়ে গেছে এবং তাঁকে তিনি নিজের নবী বানিয়ে নিয়েছেন। এর বেশ কিছুকাল পরে সূরা আল মুদদাসসিরের প্রথম দিকের আয়াতগুলো নাযিল হয়। সেখানে তাঁকে বলা হয়েছে, নবুওয়াত লাভ করার পর এখন কি কি কাজ করতে হবে।
অবশ্যই সময় করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন