রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৮)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৫:১৬:০৩ বিকাল
এক সপ্তাহ হল। আমি নিরুৎসাহিত হতে শুরু করেছি। আসা যাওয়ার এ লেফট রাইট এ আগ্রহে ভাটা পড়তে শুরু হয়েছে। মন থেকে ছেড়ে দেয়ার তাগীদ অনুভব করলেও, ভাবছি, আর একটু অপেক্ষা করি।
জীবনে অনেক ছাত্র ছাত্রী পড়ালাম। সব সময় নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। অন্য দশজন থেকে নিজের দৃস্টিভঙ্গীকে পৃথক করে ভেবেছি। এক সময় অদম্য আগ্রহে পয়সা ও কামিয়েছি। কিন্তু এখন আর ভাল্লাগেনা।
যাওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বিপুর পড়ালিখায় একটা আমুল পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ওর আগ্রহটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্লাশের শিক্ষকদের প্রশংসাও কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে তার আত্মবিশ্বাস ফিরতে শুরু করেছে। অন্যদিকে তার মাঝে অার্ট শেখার এক অদম্য আগ্রহ চেপে বসেছে। সুযোগ পেলেই কিছু একটা আকা জোকার অভ্যাস শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে সে নিজেকে নিয়ে খুবই ব্যস্ত। আমি যা বলি তাই মানতে মরিয়া। আমার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধটা দেখে খুব ভাল লাগত। ওর মনটা একেবারেই নির্মল। সাত পাঁচ বুঝার মেয়ে নয়। পথের দুরত্ব আর মেয়েটার পড়ার আগ্রহ সব মিলিয়ে আমি প্রমাদ গুনছি - থাকবো কি থাকবোনা।
ওরা দু ভাই দু বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাই দুটো অনেকটা ভবঘুরের মত। বড়টা নিয়মিত চিল্লাতেই থাকে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কেটে দেয়। কখনও কখনও সপ্তাহে ও বাসায় ফিরেনা। চট্রগ্রাম ইউনভার্সিটির আউটডোর স্টুডেন্ট। বেকার পার্টি। পারিবারিকভাবে অবহেলার কারণেই হয়তবা মেয়েটি মেধার দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
এস. সি. পড়ার সময় এ্যাসিষ্টেন্ট হেড স্যারের একটি ঘটনা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সে্ই মুগ্ধতা দিয়ে আমি অনেক ছাত্র ছাত্রীকে মুগ্ধ করতে পেরেছিলাম। একদিন পড়ার শেষে বিপুকে সেই মুগ্ধতার গল্পই শোনালাম। শোনালাম এরিষ্টটলের পড়ার পদ্ধতি কি ছিল। ও থ হয়ে শুনল। মুখস্থ করল। তার পর নিজেকে এরিষ্টটলের মত করে ভাবতে শুরু করল।
এসব কাদামাটির স্কূলগামী ছেলে-মেয়েগুলোকে চিন্তার জগতে পরিবর্তন খুবই সহজ। শূধ প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ আর শিক্ষার। আর মোটিভেটেড আলোচনা অনেকটা এ্যাটম বোমার মত।
১৯৭৮ সাল। আনিস ভাই তখন নবম শ্রেনীর ছাত্র। চিওড়া হাই স্কুল। হত দরিদ্র কৃষকের এ মেধাবী সন্তানটির পেটে তিন বেলা খাওয়া জুটতোনা। প্রায় সকালে কিছু না খেয়ে যে আনিস ভাই স্কুলে আসতো তা এ্যাসিস্টেন্ট হেড স্যার বুঝতে পারতেন। তার ভাষায়,
আনিস ছিল একটা সম্ভাবনাময়ী ছেলে। এ ছেলেকে একটু যত্ন করলেই বাজিমাত করে ছাড়বে। স্কুলটিও বোর্ডের মাঝে শীর্ষ তালিকায় এসে যাবে। ভাবলাম, ওকে আমি ষ্টাইকার বানিয়ে ছাড়ব। যেমন চিন্তা তেমন কাজ।
একদিন আনিসকে ডেকে বললাম, তোমাকে আর বাড়ী থেকে পড়তে হবেনা। আজ থেকে তোমার খাওয়া পড়া সব কিছুর দায়ীত্ব আমার। তুমি সব কিছু নিয়ে হোষ্টেলে এসে যাও।
নিজের রুমেই আনিসকে জায়গা করে দিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, রাত দশটা বাজতেই আনিস হারিকেন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম
- কোথায় যাও?
- হল রুমে স্যার।
- কেন?
- পড়তে।
- এখানে পড়বেনা কেন?
- স্যার আপনার ডিষ্টার্ব হবে।
আনিস সারারাত পড়ে সকাল বেলায় রুমে ফিরে আসত। স্কুলের প্রহরীকে বলে দিলাম তার দিকে খেয়াল করতে। মাঝে মধ্যে চা বানিয়ে দিতে। তাই হল।
এস. এস. সি পরীক্ষা শেষ। ফলাফল ও বের হল। পুরো কুমিল্লা বোর্ডে আনিস দ্বিতীয় স্থান দখল করল। আনিসের এ অভূতপুর্ব সাফল্যতে মনটা ভরে গেল। স্কুলের সুনামটা বেড়ে গেল...।
..কি বিপু? তুমি কি পারবেনা এমনটি করতে? আনিস পারলে তুমি পারবেনা কেন? আমারতো বিশ্বাস তুমি পারবে। তোমার যে মেধা...।
বিপুর ভেতরের অন্তরাত্মা জেগে উঠেছে। শূরু হয়েছে ওর রাত জেগে পড়া। কিন্তু আমি ক্রমেই পিছু হটার ভাবনায় অস্থির। বিপুদের বাসায় দৈনিক আসা যাওয়ায় আমার পকেটে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। এ দুভিক্ষ হতে বাচঁতে হলে বিকল্প একটা পথ বের করতেই হবে। অন্যদিকে রাত ১০ টায় বাসায় ফিরে পরদিন অফিসে সময়মত যাওয়া খুবই কস্টকর..। ভাবছি, স্যারকে বললে না জানি কি মনে করে...? তবুও বলতে হবে। তবে সরাসরি নয়। সেকান্দর সাহেবের মাধ্যমে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৭ বার পঠিত, ৮৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা এখনো পড়ানোর কাজটা করেন তাদের জন্য ফ্রি কিছু পয়েন্ট যোগ হল।
মেয়েটাকে ছেড়ে যাবেন না। নুন্যতম পরিক্ষা পর্যন্ত পড়ান।
আগামীর জন্য অপেক্ষা।
পরবর্তী লিখার অপেক্ষায়। আপনার ভাবীও কিন্তু দারুন মজা নিতেছে। উনিই প্রথম আবিষ্কার করে ফেলেন, গতরাতেই ৭ নং পাঠ করেছেন, আজ সকালে ভবিষ্যদ্বানী করিলেন যে ৮ নং টি আজই পাওয়া যাবে। অফিসের কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি উনি মনোযোগ দিয়ে আপনার ৮ নংটি পাঠ করছেন আর মুচকি হাসিতেছেন.....
যেহেতু চাকুরী নিয়ে লিখতে বসেছি, টিউশনিটা বড়তে গিয়ে পাঠক যাতে মুল জায়গা থেকে সরে না যায়, তাই এটি কাটছাট করে লিখছি। এখন দেখছি এটাতেই বেশী মজা পাচ্ছে। কি করবো বলুনতো?
ভালো লাগছে চলতে থাকুক। আর একটু দীর্ঘ হলে ক্ষতি নেই!!!
তাই অভিজ্ঞতা বিনিময়ে এগুলোর গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে।
..হিছামার। এবেটার পুরান ইতিহাস কে পড়বো।
একজন ছাত্রছাত্রিকে শুধু পড়া মুখস্ত করিয়ে নয় বরং তাকে পড়াটা নিজের মত পড়তে দিলেই সে ভালভাবে বুঝতে পারে। টেকনিক্যাল ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাতে দেখেছি যারা মেধায় পিছিয়ে তাদেরকে যদি বিষয়টি তাদের মত করে ভেবে নিয়ে লিখতে বলি তারা ভাল না করলেও পাশ করার এবং কাজটি এপ্লাই করার যোগ্যতা অর্জন করে।
কিন্তু কতই আর দুরে। আপনি বোধ হয় ভুল টেম্পুতে উঠতেন। নিউ মার্কেট এর মোড় থেকে বায়েজিদ এর টেম্পুতে উঠলে আরামে বসে সোজা চলে যেতে পারতেন।
ধন্যবাদ
জীবন্ত গল্পের স্বাদ ই আলাদা।
ধন্যবাদ কষ্ট করে এমন কোয়ালিটি লিখার জন্য এবং বিনা পয়সায় পড়তে দেবার জন্য।
বরাবরের মত সুন্দর পোষ্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আনিস সাহেবের আপনার প্রতি খেয়ালটা খুব ভালো লাগলো।
উনার খবর জানেন কি করছেন , কেমন আছেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন