রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ০৮ মার্চ, ২০১৪, ০৯:০৩:৪৫ রাত
প্রথম পর্ব
নাটকীয়ভাবে চাকুরীটা পেয়ে গেলাম। বি. এস. সি. পরীক্ষার তিনমাস আগেই ব্যাংকে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, এ কঠিন প্রতিযোগীতায় চাকুরী পাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতই। বাস্তবে তাই হল। পরীক্ষা শেষ। কল্পিত স্বপ্নের বাস্তব আহব্না। ভেবেছিলাম, পরীক্ষার পর একটু লম্বা দম নেব। কিন্তু সে সুযোগ আর হল না।
যোগদান করার জন্য চট্রগ্রামে যেতে হবে। জীবনের প্রথম চাকুরী। সুতরাং এ সুবর্ন সুযোগটাকে হাত ছাড়া করা ঠিক হবেনা। তাই হঠাৎ ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। হাতে সময় আছে মাত্র দু'দিন। । এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শূরু হল নিজের সাথে সিরিয়াস বোঝা পড়া। কাগজে কলমে হিসেবের কষাকষি। কিছুটা কাঁটা-ছেঁড়া। প্লাস মাইনাসের বাদানুবাদ। মিল অমিলের দ্বন্দ। আপন জনের সাথে শলা-পরামর্শ। অতঃপর ফাইনাল সিদ্ধান্ত।
সব প্রস্তুতি শেষ । এবার যাবার পালা। চৌদ্দ বছরের স্মৃতিগাঁথা অধ্যয়ের পরিসমাপ্তির ক্ষণ এটি। বিদায়ের যাতনায় নিজের অজান্তেই গুণ গুনিয়ে মন গাইছে.. "আমার পায়ের চিহ্ন পড়বে না আর এই বাকেঁ গো...।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। একদিকে দীর্ঘ জীবনের স্মৃতি বিজড়িত ছাত্র জীবনের পরিসমাপ্তি। ... ফেলে আসা টিউশনি আর লজিং মাষ্টার জীবনের হাজারো স্মৃতির ইতিদৃশ্য। দু'বোনের প্রতিদ্বন্দিতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা অনাকা্ঙ্খিত প্রেমের করুণ আর্তনাদ। ..এ তিন বাহীনির যৌথ আক্রমণে আমি অনেকটা বাকরুদ্ধ। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিনিধিত্বকারী এসব গুপ্ত শক্রদের আক্রমন যে এত নিষ্ঠুর, তা এর আগে বুঝতে পারিনি।
২৮শে ফেব্রুয়ারী। ভোর ৫টা। কুমিল্লা রেল ষ্টেশনে চেপে বসেছি চট্রগ্রাম গামী ট্রেনে। এ পথে ট্রেন যোগে ইতিপুর্বে আরও অনেবার গিয়েছি। কিন্তু আজকের এ যাওয়ার অনুভূতি অন্যদিনগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন। দীর্ঘ এ যাত্রায় জানালার পাশ দিয়ে গা ঘেষে যাওয়া প্রকৃতির কোন কিছুই চোখে পড়েছে বলে মনে হয়নি। চোখের দৃষ্টি অতীতের সব স্মৃতিকে কল্পনার পর্দায় জড়ো করে খুব মগ্ন হয়ে দেখতে দেখতে কখন যে গন্তব্য পৌছেছে টেরই পায়নি।
ট্রেন থেকে নেমেই সোজা বড় ভাইয়ের বাসায় উঠেছি। ষ্টেশন হতে ৪ কিলোমিটার দুরে। মোল্লা পাড়া। আগ্রাবাদ। আগামীকাল সকালে ভাইয়ের সাথে নতুন অফিসে যাব যোগদান করতে। ভাবী আমাকে পেলে অনেকটা খুশীই হয়। কারণ, তার সব কর্মেই অতি প্রশংসা। এটি মেয়েদের চিরাচরিত অভ্যাস। কোন কিছু সামনে এগিয়ে দিয়েই ওৎ পেতে বসে থাকে প্রশংসাটা পাওয়ার জন্য। তারিফ করতে ভূলে গেলে অবশেষে বলেই ফেলে, আজকের তরকারীটা কেমন হল? আমাকে এ ব্যাপারে কখনো বলতে হয়না বলেই হয়তবা আতিথেয়টার মাত্রাটাও একটু বেশী পাই।
আজ ১লা মার্চ। ১৯৮৭ সাল। সকাল ৯টা। বড় ভাইয়ের সাথে নতুন চাকুরীস্থলে পৌছলাম। জীবনের প্রথম চাকুরী। অফিসের কাছে রিক্সা থেমেছে। নামতেই বুকের মাঝে হাতুড়ি পেটানোর মত শব্দ অনুভব হচ্ছিল। অজানা ভয়ে মিছে লাফালাফি। অফিসটা উপরের তলায়। দৃষ্টি মেলে কিছুক্ষণ দেখলাম। তারপর সিড়ি বেড়ে উপরে উঠার পালা।
দরজায় কর্তব্যরত দারোয়ানের সম্ভাষনটা গ্রহন করেই বড় ভাই ভেতরে ঢুকল। আমি আগন্তকের মত অনুসরণ করে চলছি। অফিসে ঢুকতেই দরজার ডানে বসা সেকান্দর সাহেব। ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে করমর্দন করতে এগিয়ে এল। আমিও হাত বাড়িয়ে দিলাম। ব্যস্ততার মাঝে আর ও কয়েকজন্ উঠে এসে করমর্দন করে চট্রগ্রামের ভাষায় কৌশল বিনিময় করল। কথোপকথনে ব্যবহৃত ভাষার কিছু শব্দ বুঝে আসেনি। মনে মনে ভাবলাম, অফিসে কর্মরত সবাই যেহেতু চট্রগ্রামের ভাষায় কথা বলছে, সুতরা নতুন চাকুরীতে কিছুটা সমস্যাতো হবেই। দেখা যাক। ভাবছি, মনে হয় "চট্রগ্রাম লেংগুয়েজ স্পিকিং কোর্স"টা না শিখে উপায় নেই।
কথা বলতে বলতে বড় ভাই সোজা ম্যানেজারের রুমে প্রবেশ করল। আমাকে পরিচয় করে দেয়া হল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ঢেকে চাকুরীতে যোগদান সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ পত্র পুরন করে সই নেয়া হল। চায়ের মাধ্যমে হালকা আপ্যায়ন সেরে ম্যানেজার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। হাত ধরে আমাকে নিয়ে শাখার সবার সাথে পরিচয় করে দেয়া হল। শুরু হল চাকুরী জীবনের নব যাত্রা।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৯ বার পঠিত, ৯৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আমার ব্লগ পরিদর্শন করে যাবার জন্য।
দেখে সত্যিই বিমোহিত হয়েছি। নিজের প্রিয়দের তালিকায় যোগ করে নিয়েছি ছবিগুলো।
ধন্যবাদ।
চলতে থাকুক আপনার অভিজ্ঞতার বিবরন।
ধন্যবাদ।
একটা গোপন কথা বলি। কাউকে বলবেন না কিন্তু। আমি সিরিজে হাত দিয়েছি মাত্র। ব্লগাররাও আসার শুরু করেছে মাত্র। আমি তাদের ব্লগে মন ভরে মন্তব্য করে আসছি নিয়মিত। যখন ওরা ও আমার ব্লগে মত দিতে শুরু করবে তখন বুঝবো ওরাও অন্দরমহল নিয়ে ভাবছে। তখনই লিখাটা বড় করে দেব।
ধন্যবাদ। পরমর্শ স্বাদরে গ্রহনযোগ্য। ভাল না লাগলে আওয়াজ দিয়েন। অ্যাই মাইন্ড কইত্তান্ন।
আপনার লেখা পড়ে স্মৃতিচারণ লিখতে মন চায়-
কিন্তু আমার স্মৃতিবিভ্রাটের সমস্যা থাকায় সাহস করিনা-
কি জানি, কী লিখতে কী লিখে ফেলি-
তার চেয়ে পাঠক থাকাতেই সুবিধা বেশী!
কবিতা লিখেছিলাম। ভাল হয়নি জানি। তবুও এক ব্লগার মন্তব্য করেছেন, কবিতা নয় ছাঁই হয়েছে। এটাকে নেগেটিভলী নেইনি। পজেটিভলি ভেবে নিজের ক্ষোভটকু দিয়ে ছাঁইয়ের উপর কবিতা লিখেছি
লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ০৩ এপ্রিল ২০১১, বিকেল ০৪:৪৯
কবিতা নয় ছাই হয়েছে
ছাই পেলেই বা মন্দকি,
সভ্যতার এ আবডালে আজ
ছাই নাছে ঐ নর্তকী।
ছাইতে কৃষক ফসল ফলায়
ছাই জ্বলে ঐ চিতাতে,
উনুন জ্বলে ছাই উবে যায়
ছাই ভেসে যায় আকাশে।
ছাইয়ের কবি ছাই কবিতা
ছাই আছে সব সৃষ্টিতে,
ছাইয়ের নামেই নোংরামী সব
ছাই মুছে যায় বৃষ্টিতে।
ছাইয়ের রাজ্য সব মোরা ছাই
প্রলয় শেষে থাকবে ছাই,
ছাইয়ের মাঝেই ছাইয়ের জম্ন
ছাই ছাড়া আজ কিচ্চু নাই।
ছাইতে আজি ফুকুট পদ্ম
ছাই হতে আজ উঠুক বীর,
ছাইয়ের মাঝেই গড়ে উঠকু
মানবতার শান্ত নীড়।
আপনিও পারবেন। শুরু করুণ। তার পর বোঝা যাবে।
কবিহে তোমার কবিতার আডডায়
এসে হই বিভোর,
বাকহীনের মত ভাবি কি লিখবো
মিলেনা ছন্দ মোর।
তবুও ভাবি লিখি দু কলম
জমে উঠুক এ আসর,
কবির জন্য কবিতাই শ্রেস্ঠ
কাবিতায় পুর্ন ঘর।
তোমার কবিতায় হই বিমোহিত
লিখে যাও জীবনের ছবি
শব্দ বুননে তুমি অনন্য, তাই
তুমিই এ যুগের কবি।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
আপনি চাকরিতে জয়েন করেছেন ১৯৮৭ সালে। আর আমার প্রথম চাকরি ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের চকবাজারে একটি কম্পিউটার কোচিং সেন্টারে। কম্পিউটার শিখার শখ ছিল বিধায় ভাতে-পেটে চাকরী নিয়েছিলাম। মহসিন কলেজে ডিগ্রীতে অধ্যায়নরত ছিলাম তখন।
দুঃখিত আমি আপনার ব্লগ পড়ে মন্তব্য করতে গিয়ে নিজের কাহিনীই বলা শুরু করে দিয়েছি।
নারীরাই আসলেই প্রশাংসা শুনতে আগ্রহী বেশী। আপনি ভাবীর প্রশংসা না করলে যেমন ভাবী তরকারীর স্বদ কেমন হলো জানতে চাইলেন তেমনি আমার ক্ষেত্রে অনেক সময় মিথ্যা প্রসংশাও যে করতে হতো! বিয়ে করেছি প্রায় ৯ বছর হতে চললো। আমার বৌ তো নিয়মিত তরিতরকারী দিয়ে লবণ পাক করেন। মাঝে মধ্যে লবণ অথবা হলুদ নতুবা মরিচ রান্না করেন তরিতরকারী দিয়ে। তার পরেও প্রশংসা না করলে কোপালে বৌয়ের রান্না করা ভাত যে ঝুটবে না!!!
ভাল লাগলো আপনার রসালো সাহিত্যিক বর্ণনা। চালিয়ে যান।
চালিয়ে যান ইনশাআল্লাহ সাথে আছি।
লিখিব জীবনের অজানা কাহিনী
গাহিব আজি না গাওয়া গান
মাতিব আড্ডায় লিখিব যা চাই
জুড়াবো মোদের অতৃপ্ত প্রাণ।
লাজ নেই বলিতে কহিতে কিংবা
চীতকার দিয়ে বলিতে কাহিনী
আড্ডা জমেনা যদিনা না বলি
আমরা যে সব ব্লগার বাহিনী।
ধন্যবাদ।
অনেক ভাল লাগছে, ধন্যবাদ।
আমি অতৃপ্ত হৃদয়ে ভালবাসা জাগাতে এসেছি
এসেছি পুরোনো ভালবাসাকে নুতন করে ভাবতে।
অবুজ মনের এ প্রেমানুভুতির প্রকাশই আলাদা। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
ধন্যবাদ।
আমিতো এক পায়ে খাড়া আপনাদের খুনসুটির দলে <:-P যোগ দিতে।:D/ :D/ :D/ @সূর্যের পাশে হারিকেন।
চমৎকার পরিবেশনা। শব্দের গাথুনি অসাধারণ।আগমী পর্বে আবার ....
By the way, porchi.
২০ বছর চট্রগ্রাম থাইকাও এখনও আয়ত্ত করতে পারি নাই।
গলা শুকায় নাই?
আমার শুকাই ছিল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন