"ভোটের রাজনীতিতে ব্যর্থ জামায়াত" রুখে দাঁড়াতে পারবে কি?

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩২:২৬ বিকাল

অপবাদের যন্ত্রণা নিয়ে জামায়াত হাটি হাটি পা পা করে কচ্ছপের গতিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগুলেও মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের যু্ক্তিহীন বিরোধীতায় শৃগালের গতিও পেয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বিগত দশ বছরে জামায়াতের সার্বিক উন্নতি বিরোধীদের কাছে রীতিমত ঈর্ষনীয়।

এটা স্বত:সিদ্ধ যে কারবালাহীন ইসলামের বিজয় বোকার স্বর্গে বাস করা মিছে স্বপ্নদ্রস্টার মতই। বদর, খন্দক, ওহুদ বিহীন যেমন মদীনার সোনালী রাজ ছিল অবিশ্বাস্য, তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইহীন বিজয়ও কল্পানাহীন।

যে কোন সংগঠনই ক্ষমতালোভীদের চরম সন্ত্রাস, বিরোধী দলকে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়ার মুকাবেলায় আপোষহীন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর রাজপথে ত্যাগে ইস্পাত কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে তৈরী হয় জাতির নি:স্বার্থ সুর্য সন্তান। মদীনার স্বর্ন যুগকে যারা ধরে রেখেছিলেন, তারা ছিলেন বদর ওহুদ, খন্দক, তাবুক সহ শত যুদ্ধের মাধ্যমে তৈরী হওয়া খাটি সোনা। আর তারা হলেন হযরাত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী সহ আরো অনেকে।

১৯৭১ সালে নয় মাসের প্রসব বেদনায় বাংলাদেশ নামের ভুখন্ডটির জম্ন হলেও এ রাষ্ট্রটি পরিচালনার জন্য গর্ভধারীনি দু:খিনী মা অথ্যাত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তার সন্তানসম নবজাত শিশু বাংলাদেশকে বুকের দুধ দিয়ে লালন পালন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। যারা ধর্ষিতা বোনকে বাচানোর জন্য জীবন বাজী রেখেছিল, যে মা তার ঐরষজাত সন্তানকে বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা হতে দেখে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল অন্য সন্তানদের হাতে, যারা পাকিস্তানী হানাদারদের তাড়াতে গিয়ে নিজের পৈতৃক বসত বাড়ি হারিয়ে ফেরারী আসামীর মত পথে পান্তরে কিংবা জঙ্গলে ক্ষুধার অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে অস্ত্র কাধে ঘুরে বেড়িয়েছে, এ জাতির বিজযোতসবে কেক কাঁটার সময় সে সব সুর্য সন্তানদের রাখা হয়েছিল পর্দার অন্তরালে। যারা রক্ষক্ষয়ী সংর্ঘের সময় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঘুমিয়ে দিন কেটেছে, ওরাই রুমে কবর খোড়ার মত মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিল জাতির কাছে অবিষ্মরণীয় নেতা হয়ে থাকার জন্য । তারা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এ জনপদের লোকদের তাজা রক্ত গড়িয়ে যেতে দেখেনি বলেই এ জাতির স্বপ্নের সোনালী পাওয়ার জন্য নি:স্বার্থ লোকদের নেতৃত্ব পায়নি। এটি দুর্ভাগ্য।

কথায় আছে, সোনার খনিতে সোনা তৈরী হয়। আর চোরের খনিতে চোরই তৈরী হয়। আর সে চোরের খনির তান্ডবেই এ জাতি তার অপার সম্ভাবনার মুকুটটিকে হারাতে বাধ্য হয়েছে।

তাই আক্ষেপ করে কবি বলেছেন

১৬ কোটি মানুষের হে মুদ্ধ জননী

রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি।


একটি দেশের শাসনভার নেয়া ক্ষমতাসীন সরকারের মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বশীল নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরকে যদি নীতি, নৈতিকতা ও দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা না হয়, তাহলে সে সরকারের শতভাগ ব্যর্থতা সময়ের দাবী। ক্ষমতা পালাবদলের ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগ , বি এনপি, দেশ পরিচালনায় কেন বার বার ব্যর্থ হয় , এটিকে বিশ্লেষন করার আর প্রয়োজন পড়েনা।

এদিক থেকে মদিনার সোনালী রাষ্ট্রের আদলে জামায়াত একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসলেও প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, জামায়াতের প্রাক্তন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের ভাষায় - ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত ব্যর্থ! কেন? – এটি খতিয়ে দেখা যেন আজ সময়ের দাবী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একগুয়েমী, দলীয় সংকীর্ণমনা, দলের ভেতর গনতন্ত্রের চর্চা না করার পরিণতি - এ শেষ বিকেলে টের পেয়ে তিনি নিজেই সংবিধান কাঁটাছেঁড়া করে ক্ষমতা থেকে নামার সিড়িটা নিজ হাতে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন। এর পর বলা শুরু করেছেন, আমি সংবিধানের বাহীরে এক চুলও নড়তে রাজী নই। কারণ নিজেই ক্ষমতা থেকে নামার রাস্তা রুদ্ধ করে দিয়েছেন।

এটি বিগত পাঁচ বছরের দু:শাসন আর অপকর্মের হালখাতার পুনরাবৃত্তির চিত্রের ভয়ংকর রুপমাত্র।

জাতির এ দু:সময়ে আদর্শ ও মেরুদন্ডহীন বিএনপিকে নিয়ে জনগন বড় হতাশ। আওয়ামী দু:শাসনের মুকাবেলায় শিবির-জামায়াতের রাজপথের আন্দোলন ছিল অবাক করার মত। গণতন্ত্রের এজেন্ট দাবীদার আওয়ামীলীগের বিগত পাঁচ বছরে গণতন্ত্রের বাস্তব অনূশীল ছিল অনেকটা এমন -

Government OFF the people

BYE the people

FAR the people..

আওয়ামী রাষ্ট্রীয় সস্ত্রাসের মুকাবেলায় শিবির জামাত যে হহুদ খন্দক বদরের তান্ডব মুকাবেলা করেছে, পুলিশের তাক করা বন্ধুকের নলের সামনে শিবিরের ছেলেদের বুক পেতে দেয়া ছিল অবিশ্বাস্য। হলুদ সাংবাদিকতার এ যুগে খন্ডিত সংবাদটুকু দেখেও জাতির লোকদের মাঝে এ বিশ্বাসবোধ জম্মেছে যে, শিবির জামায়াতই পারবে আদর্শ দিয়ে আওয়ামীলীগের মত সন্ত্রাসী দলের মুকাবেলা করতে।

প্রশ্ন হলো এ ত্যাগের মাধ্যমে আগামী দিনের একটি নতুন কল্যানকামী সুযোদয়ের জন্য শিবির জামায়াতের যে অসহ্য প্রসব বেদনা সহ্য করেছে, ভোটের রাজনীতিতে তার ফলাফল ঘরে তুলতে পারবে কি?

প্রথমত : রাজপথে যে সব শিবিরের নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, জামায়াতের সংবিধান অনুসারে তারা সেই নীতি নির্ধারনী ফোরামের সদস্য হবার সুযোগ নেই। তাহলে

ওহুদ বদর খন্দকের লড়াইয়ে গড়ে উঠা সেই স্বার্থহীন দুনিয়াত্যাগী যোদ্ধাদের অনুপস্থিতে কি ইসলামের সোনালী যুগ আশা করা কি বাস্তব না কল্পনা?

দ্বিতীয়ত – হযরাত ওমর আবুবকর ওসমানের নেতা তখনই তৈরী হয়, যখন নেতা নিজেকে লাখো মানুষের সামনে পেশ করে সমালোচনা করার জন্য। এটিই এক মুমিনের সামনে আর এক মুমিনের আয়নার স্বরুপ। আমরা স্লীপ সিষ্টেমের মাধ্যমে সেটিকে রহিত করে দেয়ার কারণে পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠা সিন্ডিকেট আর নীতি নৈতিকতাহীন অযোগ্য নেতৃত্বের সয়লাভে চেয়ে যাচ্ছে। উল্টো যোগ্য এবং প্রতিবাদীরাই বহিস্কারের সার্টিফিকেট নিয়ে বিদায় নিতে দেখা গেছে। এমতাবস্থায় দলের মাঝে গণতন্ত্র চর্চা কিংবা যোগ্য লোক উঠে আসবে কি?

তৃতীয়ত – প্রত্যেক এলাকায় প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতের নেতা ঐ এলাকার লোকদের কাছে যতদিন আদর্শের মডেল হিসেবে পেশ করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত বার বার ব্যর্থ হতে বাধ্য নয় কেন?

রাসুল (সা) এর সময়ে সাহাবাগন সর্বস্ব দান করে ইসলামের বিজয় এনেছিলেন। আর তারা এমন ছিলেন যে,

ক. নিজেদেরকে পুরোপুরি ইসলামে দাখিল করেছিলেন। নিজে নয় পুরো পরিবার এবং গোষ্ঠীকে। এ ব্যাপারে নিজের রক্তের আপন ভাইকেও ছাড় দেয়া হয়নি। জামায়াত কি এমনটি করতে পেরেছে?

খ. জামায়াতের কতজন নেতা আছে যার সন্তান বিদেশে পড়ালিখা করে এসে রাজপথে যোগ দিয়েছে। কতজন জামায়াত নেতার সন্তান এলাকা, জেলার দায়ীত্বে আছেন কিংবা মিছিলে গুলি খেয়ে শহীদ হয়েছেন? আতিয়ুল্লাহা.. এ আয়াতটি কি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়?

গ. প্রজেক্ট, বীমা ব্যাংক বিমুখ কতজন নেতা আছেন যারা শুধুমাত্র, কেবলমাত্র ইসলামের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন? যৌক্তির খাতিরে যত যুক্তিই দেয়া হোকনা কেন, দুনিয়াভোগে যার পদবী যত বড়, যার অর্থ যত বেশী, মিছিলে জীবন দেয়ার মত ঝুকিটাও তার তেমন কম। জনৈক নেতা একদিন বললেন, ভাই, বুঝেনতো, মানুষের ইনভেস্ট করা কোটি টাকার প্রজেক্টের আমি চেয়ারম্যান। এমতাবস্থায় আমি মিছিলে গেলে যদি মরে যাই বা জেলে যেতে হয়, তাহলে ইনভেষ্টরদের কি জবাব দেবো?

ঘ. সর্বোপরী হাজারো আকীদা বিরোধ নিরসনে ইসলামী দলগুলোকে উদার মন নিয়ে কাছে টেনে আনার প্রানান্তকর প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। নিজের দলে তরুন নেতৃত্বের পথ ছেড়ে দেয়ার নজির সৃষ্টি না করে জামায়াত এমনটি পারবে কি?

ঙ. ভোটের রাজনীতিতে সফলতা আনার জন্য জনগনকে কাছে টেনে আনার বিকল্প নেই। দিশেহারা বুদ্ধিজীবিরা এ দু:সময়ে তীরে ভীড়তে চাইলেও জামায়াতের দ্বার একেবারই রুদ্ধ? এ রুদ্ধতা ইসলাম না করলেও জামায়াত করে রেখেছে। তাহলে এরা কি জামায়াযে প্রবেশ নিষিদ্ধ? এদেরকে কি নাকে ক্ষত দিয়ে উপশাখা, এলাকার সিষ্টেমের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সামনে আসতে প্রতীক্ষা গুনতে হবে?

সার্বিক বিবেচনায়, যতদিন জামায়াতের নেতৃস্থানীয় লোকগুলো সবার কাছে মডেল হতে না পারবে, যতদিন পর্যন্ত এসব নেতার জন্য এলাকার লোকজন হ্যামীলনের বাশীওয়ালার মত ছ’টে না আসবে, যতদিন নেতা লোকদের সুখে সুখী ও দু:খে দু:খি হতে না পারবে, ততদিন কি ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত পাশ করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবেনা যে, পথে কাঁটা দেয়া বুড়ী অসুস্থ হলে দয়ার নবী রাসুল (সা) তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। রাসুলের (সা) ভয়ে পালিয়ে যাওয়া বুড়ীর বোঝাটি নবী নিজেই এগিয়ে দেয়ার পর বুড়ি জানতে পেরে ইসলাম কবুল করেছিলেন। এসময় কিন্তু কোরানের আয়াতের চেয়ে কোরানের জীবন্ত চরিত্র রাসুল (সা) এর পরোপকারীতাই বেশী কাছে লেগেছিল। জামায়াত কি এ দুবোধ্য অনুশীলনটি করতে পেরেছে বা পারবে?

আমি মনে করি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষদের বিশাল সমাবেশ রাজনৈতিক কিংবা সংবাদ মাধ্যম গরম করার জন্য প্রভাব বিস্তার করলেও ভোটের রাজনীতিতে এর কোন ভিত্তি নেই।

এক কথায়, আজ যেন সময় এসেছে, এসব বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার। ব্যর্থ ও একনায়কতন্ত্রী সরকার আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে রাজপথে শিবির জামায়াতের যে ইস্পাতসম দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার ফলাফল ঘরে তুলতে গিয়ে জামায়াত যদি ”ভোটের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য” রাসুল (সা) এর শিখিয়ে দেয়া জনগনের হৃদয় জয় করার মুল মন্ত্রটি বেমালুম ভুলে যায়, তাহলে মিশর, আলজেরিয়াবাসীদের গাড়ে চেপে বসার মত উতপেতে থাকা ফেরাউন, নমরুদ, আবুজেহেল, আবুলাহাবের প্রেতাত্তাদের অনাকাঙ্খিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের করুণ পরিণতি অনিবার্য নয় কি?

বিষয়: বিবিধ

২১৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File