কেবলা বাবার দরগাহের রাজনীতি ও প্রবাসী মুরিদ ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩৭:০৪ বিকাল
কেবলা বাবার দরগাহের রাজনীতি ও প্রবাসী মুরিদ ভাবনা - এ শিরোনামে সোনারবাংলা ব্লগে একটি সিরিজ লিখতে গিয়ে অনেক নেগেটিভ মন্তব্যও পেয়েছি। আমাদের টলারেন্স এত কম যে, নিজের কিংবা দলের বিরুদ্ধে্ যুক্তি নির্ভর কোন সত্য কথাকেও রুখে দেয়া যেন ঈমানী দায়ীত্ব। এটি যেন একটি জাতিগত রোগ। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী হতে শুরু করে টকশো কিংবা সুশীল সমাজসহ পুরো জাতির একটি বিস্ময়কর অংশ এ রোগে সিরিয়াসলি আক্রান্ত। এ রোগের কারণে অনেক প্রথিত যশা রাজনীতিবিদের বিদায়েও কেউ খবর রাখেনি।
যাইহোক, গত ১১ই আগষ্ট - কবি মল্লিক ও জেদ্দার ঈদ পূনমিলনী এবং কিছু কষ্টের ভাবনা - শিরোনামে নিম্মের পোষ্টটি দিয়েছিলেন জেদ্দার সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্লগার ইবনে আহমেদ্। লিংকটি ছিল
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/24545#.Ugk655BwbmQ
তার লিখার সুত্র ধরেই ইচ্ছে করছিল হারিয়ে যাওয়া অতীত থেকে কিছুটা স্মৃতিচারণ করতে। এ বিষয়ে লিখবো কি লিখবোনা এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক সপ্তাহ গড়িয়ে গেল।
জেদ্দার হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিমনা লোকদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ব্লগার 'ইবনে আজাদ' তার যে আক্ষেপ বা অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, এর সাথে আমি একমত।
ইবনে আজাদের ভাষায়--"আরো কয়েকজন ভাই আছেন, যারা এখনো আছেন জেদ্দায়, যাদের এখনো সমন্নয় হলে অনেক বড় অনুষ্ঠান করা যায়। এর মধ্যে আপাদমস্তক সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব জনাব আব্দুল্লাহ আলফারুক- সাংস্কৃতি সংগঠক,জনাব আনোয়ার হোসেন মজুমদার - কৌতুক অভিনেতা, জনাব রঈস উদ্দিন- নাট্যকার,জনাব মাওলানা আলমগীর হোসাইন -অভিনেতা ও শিল্পী,জনাব এনায়েত উল্লাহ - নাট্যকার ও সুরকার,জনাব হোসাইন আহমদ - সাইমুম শিল্পী,জনাব আলফু ভাই - অভিনেতা ও আলী আসকর -নাট্যকার প্রমুখ। শুধুমাত্র আলফু ভাই ও আলী আসকর ভাই দেশে অবস্থান করছেন।
অতীব দুঃখজনক হল আনোয়ার হোসেন ভাই এখন প্রবাসী মজুমদার হয়ে জেদ্দাতে নির্জন শহরের বাসিন্দা। অর্থ্যাৎ জেদ্দার মুল কমিউনিটির আড়ালে রয়েছেন বর্তমান শক্তিমান ব্লগার প্রবাসী মজুমদার।"
সিন্ডিকেট রাজনীতি বেড়াজালে আটকে পড়া পুরো জাতিই যেন আজ মুক্তি চায় অশুভ নেতৃত্ব থেকে। কিন্তু কিভাবে? প্রতিবন্দী বিবেকের চোখে চলে আসা নিয়মটিই যেন একমাত্র সত্য পথ। সেটি থেকে বের হয়ে আসা কল্পনাতীত। আর এটি চাট্রিখানি কথাও নয়।
দলীয়ভাবে বিভক্ত প্রত্যোকটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীই সীমানার বাইরে চিন্তা করা যেন এক বিস্ময়! প্রত্যাহিক আড্ডায় স্বগোত্রীয় লোকদের বেষ্টনীতে বিরোধী দলের ত্রুটিযুক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার ঝড়ে নিজের ভেতর গড়ে উঠা হিংসাটা যখন পাহাড় সম হয়, তখন বিবেকের এ বন্দীশালা হতে উত্তরণ একেবারেই অবিশ্বাস্যই। বিশ্বাসবোধে গড়ে উঠা এ ভ্রান্ত প্রাচীর যেন হিমালয় থেকেও উচু। এ পাহাড় উষ্ঞ তাপে কখনো বিগলিত হয়না। জিরো ডিগ্রীতে এর উপর কোন প্রভাব পড়েনা। তাই বিশ্বাসবোধের এ পাহাড়ের পাদদেশে কোন বরফ গলা নদী নেই। বরং আছে সাহারার মত প্রাচীর। ফেটে একেবারে চৌচির। এখানে কোন প্রকৃতি নেই বলে ডালে বসে সুললিত কন্ঠে গান গাওয়ার কোকিলও নেই। তাইতো বিরোধী দলীয় কেউ মারা গেলে এসব রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে ইন্না লিল্লাহে পড়াটাও বিবেক বিরোধী!
১৯৭৮ থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত এ ধরনের এক বন্ধ্যাত্ব রাজনীতির জালে আটকে পড়ে ছিলাম। পারিবারিক সুত্রে পাওয়া ছাত্র ইউনিয়ন ছিল মহামুক্তির পথ। শিবির-জামাতকে মারতে পারলে মনটা খুব হালকা হত। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাহাড় সম অপরাধ নিয়ে বেচে থাকা এ মানুষগুলোকে সমাজে রাখাটাই যেন বড় বোঝা।
১৯৮৪ সালের শেষের দিকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ায় বি.এস.সিতে ভর্তি হতে গিয়ে বড় একা হয়ে গেলাম। ছাত্র ইউনিয়নের পরিচিত কেউ নেই। রাজনীতিমুক্ত ধর্মীয় চর্চায় অভ্যস্ত হওয়ায় একাকীত্ব কাটাতে মসজিদে যেতে ভূল করতামনা। নিত্য নামাজের কাতারে দেখা হওয়া সদালাপি মিষ্টভাষী কয়েকজন ছাত্র নতুন বন্ধু হিসেবে হাত বাড়িয়ে দিল। চায়ের আ্প্যায়ন, ইসলাম নিয়ে তথ্যনির্ভর আলোচনা, বই আদান প্রদান... এভাবেই রাজনৈতিক ধর্ম ছাত্র ইউনিয়ন হতে ছাত্র শিবিরে মাইগ্রেটেড হলাম। এটি আমার পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সপ্তাচার্যের এক আশ্চর্য হলেও আমার কাছে ছিল স্বাভাবিক। কারন যে নদীর দু কুল দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, তার সিদ্ধান্ত অপেক্ষাকৃত ভাল। কিন্তু ফেলে আসা বন্ধুদের কাছে আমি হয়ে গেলাম 'পথভ্রষ্ট'!!!!!!
আমার সাথে আমি আরও এক পথভ্রষ্টকে নিয়ে এলাম। সে ছিল চিওড়া কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি । নাম গিয়াসউদ্দীন। ও শিবিরে যোগ দেয়ার বিষয়টি সহকর্মীরা কেউ মেনে নিতে পারেনি। তাই একদিন চিওড়া বাজারে চায়ের দোকানে সবাই তাকে ধরে বসল। বলল
- আচ্ছা গিয়াস, কেউ ওয়াদা করে যদি তা ভঙ্গ করে, তা মুনাফেকী নয় কি?
- হ্যা। গিয়াস জবাব দিল।
- তুই সহ আমরা চিওড়া বাজারের মসজিদের সামনে শপথ করেছিলাম, শেখ মুজিদের আদর্শ হতে কখনো বিচ্যুত হবোনা। এখন তুই শিবিরে যোগ দিয়ে কি আল্লাহর সাথে বেঈমানী করিসনি?
- হ্যা। করেছি।
- কারণ কি?
এবার গিয়াস বলতে লাগল- মনে কর আমি আগে মদ পান করতাম। মদের নেশা এত গভীর ছিল যে, মসজিদের সামানে গিয়ে জীবনে মদ না ছাড়ার জন্য শপথ ও করলাম।
এখন আমি আমার প্রতিবন্ধী বিবেকের ভূল বুঝতে পেরে সত্য পথে এসেছি। কাছে এতে যদি মদের সাথে বেঈমানী হয়, তাহলে আমার বিবেকের বিচারে এটিই ঠিক ও সঠিক সিদ্ধান্ত....।
বিবেকের স্বাধীনতার কথা বলছিলাম। আমার মাঝে সব সময় এক ধরনের স্বাধীন চেতা মন কাজ করে। রাজনৈতিক বেড়াজালে আটকে পড়া সিন্ডিকেটের বেড়াজালে অনেক যোগ্য লোককে অযোগ্য নেতৃত্বের অধীনে শেষ হতে দেখেছি। অনেক সময় এসব অযোগ্য লোকদের কাছে শিক্ষিতদের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হতে দেখে বিস্মিত হই। মনের মাঝে এ বিদ্রোহ আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। এভাবেই অযোগ্য নেতৃত্বের একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলেও জাতির ভাগ্য হা্ডিড ও মেলেনা। আজকের বাংলাদের রাজনীতি যেন তারই এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।
আগেই বলে রাখা ভাল যে, একজন শিল্পী তার কল্পনা, অনুভুতি, দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে রংতুলির আচড় দিয়ে আকা চিত্রটি ঠিক হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য চিত্রটিকে সঠিক ভিউতে রেখে নিজেই বার বার দুরত্বে চলে যায়। একজন বোদ্ধা দর্শকের মত নিরপেক্ষ মন নিয়ে দুর হতে দেখে তার শিল্পটি ঠিক হয়েছে কিনা। ছুটে আসা দর্শকদের ভুয়সী প্রশংসার সাথে নিজের অন্তচোখে দেখা সিদ্ধান্ত মিলিয়েই সে এটিকে বাজারজাত করে একসময় জাত শিল্পীতে পরিণত হয়। কিন্তু এ পদ্ধতিটি ব্যবসায়িক উন্নয়নে আমরা কাজে লাগালে ও নিজের বেলায় একেবারেই বিবেকহীন হয়ে যাই।
বিবেকের এ স্বাধীনতা যাদের নেই, তারা নিজেদেরকে যতই জ্ঞানী মনে করুকনা কেন, বাস্তবে এদের কর্মকান্ড 'সময় অপচয় বে কিছুই নয়'।
জামায়াতের নায়েবে আমীর, প্রাজ্ঞ আলোচক জনাব নাজির আহমেদ এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, - আপনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। সংগঠনকে দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা দেয়ার পরও সাপ্তাহিক বৈঠকের পাশাপাশি অনেক অর্থকড়িও দিয়ে থাকেন। আপনার দাওয়াতে আজ ইসলামী আন্দোলনে অনেকে বড় নেতা তৈরী হয়েছে। এভাবেই আপনাদের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে এক সময় দেশে হয়তবা কোরআনী শাসন ও আসবে। সারা দেশের মানুষ সে সুফল ভোগ করবে। ধরুণ, সময়ের বিবর্তে আপনি মারা যাওয়ার পর যদি নসীবে জাহান্নাম হয়, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে?
আমি আন্দোলন করি। বক্ততায় হয়রাত ওমর ও ভৃত্যর কথা বলে কর্মীদের আবেগে আপ্লুত করি। অথচ, ব্যক্তি জীবন এর পুরো উল্টো। আমার আমানতদারী প্রশ্ববিদ্ধ। আমি সিন্ডিকেটের বাহীরে চিন্তা করতেই পারিনি। আমার চলা ফেরা, কথা বার্তা কমীরা ক্যামেরার মত নিজের চোখ দিয়ে ছবি তুলে বিশ্লেষন করে। সে বিশ্লেষনে যারাই ভূল ধরিয়ে দিয়ে চায়, তাদেরকেই আমি গায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠি। আর সেই বলির পাঠা আব্দুর রহমান, বশির ভাবী, বজলুর রশীদ, মতিউর রহমান খান, আনোয়ার হোসেন, ফরিদা আক্তার সহ আরো নাম জানা অনেকে।
এসব ভাই-বোনদের সাথে অনেকের আলাপচারিতা ছিল এমন
- ভাই, আপনি নিস্ক্রীয় হওয়া ঠিক হয়নি
- আমার বিদায়ের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? আপনার সাথেতো ২০ বছর আন্দোলন করেছি। কৈ? আমার নিস্ক্রীয়তায় তো আপনাকে চুপ থাকতে দেখেছি?
- কোন জবাব নেই। কারন। এ বিষয়ে নাক গলাতে গিয়ে না জানি নিজের সদস্যপদ চলে যায়।
আজ খুব মনে পড়ে জেদ্দার প্রাক্তন সে সব ভাইদের কথা, যাদের ত্যাগ, অবদান ভূলার মত নয়। এদের মাঝে বজলুর রশীদ, মতিউর রহমান খান, আজাদ সোবহান, সাহাবুদ্দীন, আব্দুল্লাহ ফারুক, রাইস উদ্দীন, আলতাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আলফু হাসান অন্যতম।
বজলূর রশীদ ভাই ছিলেন জেদ্দার অবিস্মরণীয় দায়ীত্বশীল। তার মত সংগঠক জেদ্দায় দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু ই্ন্সিউরেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা এ ব্যক্তিটির্ সাথে যে ব্যবহার করেছে, তা ভূলার মত নয়। খুব কাছ থেকে দেখেছি এদের নোংরামীর জাল যে কত শক্ত। দিগন্ত টিভি আর স্কুল পরিচালনায় দেখেছি এদের আত্মহত্যা করা নীতি নৈতিকতাহীন বিবেকের বাস্তব রুপ। এরা সবই করতে পারে। বজলু ভাই পরে দেশে গিয়ে আর ফেরত আসেনি। মারা গিয়েছে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন।
কুষ্টিয়ার আলতাফ ভাই ছিলেন সাংস্কৃতিক পাগল এক নিবেদিত সংগঠকের নাম। আব্দুল্লাহ ফারুক, আলতাফ ভাই, আলফু হাসান, রাইস উদ্দীন, এদের সাথে কাধেঁ কাধ মিলিয়ে কাজ করার মজাই ছিল আলাদা। এরা সবাই নাট্যকার ও লিখক। ষ্টেজ কাঁপানো এ লোকগুলোর অভিনয় আজও কল্পনা করলে অট্রাহাসিতে ফেটে পড়ি। এদের অনেকেই জেদ্দা হতে বিদায় নিলেও বাকীরা অনেকটা নিরামিষভোজী। কারন এখন এসব সাংস্কৃতি মনা লোকদের কোন কদর নেই। এখন যোগ্যতার চেয়ে নিজের সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়াটাই বাঞ্চনীয়।
মতিউর রহমান খান। কবি মল্লিক ভাইয়ের দীক্ষা গুরু। শব্দার্থে কোরআনের প্রাজ্ঞ লিখক। এ ব্যক্তিটির ঈর্ষনীয় যোগ্যতা আজ বড় উপেক্ষিত। সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তাকে এখন 'ও.এস.ডি' করে রাখা হয়েছে।
........ থাক। লিখতে আর ইচ্ছে হচ্ছেনা। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কি লিখবো? চোখে দেখা এসব নোংরামীগুলো ভাবতে গেলে খুব কষ্ট লাগে। কোরআন হাদিসের সাথে এসব স্বপ্নদ্রস্টাদের চরিত্রের মিল যোজন যোজন ফারাক দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। ভাবতে আর ভাল্লাগেনা। তাই আজকের মত এখানে থেমে গেলাম। অসমাপ্ত লিখার জন্য দু:খিত।
বিষয়: বিবিধ
২৫৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন