মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা.... ৩)

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৪৬:৫৮ সকাল

চতুর্থ পর্ব দেখুন

তিন দিন আগে ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের র্হার্ট স্পেশালিষ্টের কাছে কথা বলে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পরবর্তী টেষ্টের ধরন আর কর্তব্যরত ডাক্তারদের মুখ থেকে নিঃসৃত বাণী বিশ্লেষন করে রুগী মুর্চা যাবার অবস্থা। তবুও বাঁচার তাগিতে আশা নিরাশা নিয়ে অপেক্ষা করছি।

ডাঃ সিহাব উদ্দীন খুবই ব্যস্ত মানুষ। তবুও বিরক্ত করি। কিছু করার নেই। অবশ্য তার সাথে সাক্ষাতে কিংবা ফোনে কথা বলে চেহারায় কখনো বিরক্তির চাপ লক্ষ্য করিনি। আজ বড় ডাক্তার ব্যস্ত, কাল ছূটিতে, পরশু সময়ের সমস্যা। সব কিছূ মিলিয়ে তিনদিন পর সংবাদ এল - ভাবীর হার্টের মুল রহস্যা উদঘাটন করার জন্য এনজিওগ্রাম করতে হবে। আর এ কষ্টলি টেষ্টটি এখানে থাকলেও সবার জন্য উত্মুক্ত নয়। অথচ এ টেষ্টটি আপনাকে করতেই হবে। এর মাধ্যমে বুঝা যাবে হার্টে কোন ব্লক কিংবা সমস্যা আছে নাকি। এ টেষ্টটি করার জন্য আরও দুএকটি টেষ্ট করা দরকার। এখানে হাসপাতালের স্পেশালিষ্ট ডাক্তারদের পরিচালনায় নিচেই একটি ক্লিনিক আছে। আপনাকে বরং সেখানে দেখানোর ব্যবস্থা করে দেই। যতটুকু কম খরচে করা যায় সে ব্যবস্থা করে দেবো।

হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরেছি। রোগীর অবস্থা কাহিল। আসল রোগ থেকে মানসিক রোগটাই যেন বেশী হতাশ করে ফেলেছে।

রাকিব ভাই। ভাল মানুষ হাসপাতালে গিয়েছে। বের হয়ে আসার সময় দেখি ৯০ বছরের কুজো বুড়োর মত বাকা হয়ে মলিন চেহারা নিয়ে ফিরছে। জিজ্ঞেস করলাম

- কি রাকিব ভাই? জোয়ান মানুষ হাসপাতালে গেলেন। ফেরার সময় মনে হয় একেবারে বুড়ো হয়ে গেছেন। কারন কি?

- দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আর বলিসনারে ভাই। আমি শেষ। আমার জন্য দোয়া করিস।

- মানে?

- মানে আর কি। ভাল মানুষ ডাক্তারের কাছে এলাম। টেষ্ট করে বলেছে, আমার নাকি ক্যন্সার হয়েছে। আহ। আমার ভেতর মরন বেদী লুকিয়ে আছে তা কে জানতো। আহারে আল্লাহ...।

- এটা কি আগে জানতেন। না এ প্রথম?

- এইতো প্রথম জানলাম।

পরে জানতে পারলাম, ডাক্তারের ভূল রিপোর্টের কারণেই এমনটি হয়েছে। আসলে রাকিব ভায়ের কোন রোগ নেই।

নাজুর কেইসটা এমন হবেনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। কিন্ত শংকা উড়িয়ে দেয়ার কোন যুক্তি খুজে পাচ্ছিনা। তবুও তাকে ভয়ে কিছু বলছিনা। কারণ এখন ঠাট্রা করার সময় নয়।

ওর হার্টের ব্যথা শুরু হওয়ার পর থেকেই বাসায় গান গাওয়া একেবারে বন্ধ। কারণ কিছুটা উৎফুল্লতা দেখাতেই ও বলে বসে

- হ। তোমার কি? আমি মরে গেলেতো তোমার নতুন বউ আসবে। তোমরা পুরুষরা এমনই। মুত্যুর তিন দিন পরেই ভুলে যাবে। তারপর বিয়ার শখ..।

- আচ্ছা, ইসলামে চারটি বিয়ে জায়েজ। তুমি কি ধর্ম কর্ম মানোনা? আমি উত্তর দিলাম।

- পাইছতো যুক্তি একটা। আর কি? তোমাদের জন্য সবই সিদ্ধ।

- দ্যাখ, তোমার সন্তানগুলো দেখার তো একটা লোক লাগবে। খাদ্দামা রাখলে যেহেতু পর্দা লংঘন হয়, এর চেয়ে বিয়ে করা্ উত্তম নয় কি... এমনটি বলতেই নাজু উত্তেজিত হয়ে পড়ে। থাক। আর এগুনো যাবনো। সিরিয়াস ইস্যু। পানিপথের মিছে যুদ্ধ এড়াতে চুপ মেরে গেলাম। কোন নারিই তার স্বামীর ভাগ দিতে চায়না।

আমার অফিসের ইন্ডিয়ান টি বয় ফখরুল নতুন বিয়ে করে এসেছে। নতুন স্ত্রী তাকে হাতে আঁকা দুটি রুমাল দিয়েছে। অফিসে এসেই আমাকে একটি গিফট করেছে। আমিও রুমালটি সযতনে বাসায় নিয়েছি। নাজুর সামনে গিয়েই রুমালটি দিয়ে মুখটা মুচ্ছে নিতেই ওর নজরে পড়ল।

- এই। এটা কি?

- রুমাল।

- কে দিয়েছে?

- অফিসের টি বয়।

- তার মানে?

- না। ও নতুন বিয়ে করেছে তো। তার স্ত্রীর দেয়া একটি প্রিয় রুমাল আমাকে গিফট করেছে। মেয়েটার অনেক গুন। আহ কি সুন্দর রুমাল। গন্ধটাও দারুণ । জানিনা কি দিয়েছে।

- ছি, ছি, ছি। তুমি এমনটি পারলে?

- কেন? সমস্যা কি?

..এতক্ষণে নাজুর হাই প্রেসার তুঙ্গে। সহ্যর একটা সীমা আছে বলেই ছু মেরে রুমালটি কেড়ে নিয়ে সোজা জ্বলন্ত উনুনে...।

কিছু কিছু সেন্সর করা গান আছে, যা গাওয়া নিষিদ্ধ। যেমন তুমি আর একবার আসিয়া, যাও মোরে কান্দাইয়া,

চণ্দন পালক্ঙে শূয়ে..

যাবার আগে দোহাই লাগে...

এসব গানে অন্য কোন রমনীকে আহব্বান করার ঢংটা স্ত্রীদের খুবই অপছন্দ। থাক। ভালবাসা অটুট রাখতে এতটুকু সেক্রিফাইস অবশ্যই দরকার। তাই এসব গান মাঝে মাঝে বাহীরে গেয়ে আসি।

মেয়েদের ভালবাসার এ অনুভুতিটুকু কার ভাল না লাগে? ওর হার্টের সমস্যা। থাক। ওকে রাগানো যাবেনা। তাই ইদানিং বাসায় গান গাওয়াও ছেড়ে দিয়েছি। কোন ফাকে সেন্সর করা কোন গান আবার গেয়ে বসি....।

আজ রোববার। পাশের ভাবী বাসায় এসেছে। ঢুকতে প্রশ্ন

- ভাবী, আপনি ইদানীং সময়-অসময়ে বাহীরে যাচ্ছেন কেন? কারণটা কি? কি কোন সমস্যা হয়েছে?

- আর বইলেননা ভাবী। আমার উপর মহা বিপদ নেমে এসেছে।

- কেমন?

- হঠাৎ করে হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু সবখানেই হতাশা নিয়ে ফিরে আসছি। জানিনা কি করবো। কোথায় যাবো। কাকে দেখালে মুল সমস্যাটা জানতে পারবো। এখন আবার ডাক্তার বলছে এনজিওগ্রাম করতে হবে।এটি করতে আমার খুব ভয় হয়।

- আরে ভাবী। আপনার ভাইয়েরও এমনটি হয়েছিল। আপনি হয়ত জানেন না, আমার কি যে অবস্থা হয়েছিল। কয়েকটি মাস ঘুম একেবারেই হারাম হয়ে গিয়েছিল।

- তারপর?

- আর কি ? অবশেষে এনজিওগ্রাম করে ব্লক ধরা পড়ল। সিদ্ধান্ত হল অপারেশন করতে হবে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ভিষন্ন মন নিয়ে হাসপাতাল হতে বের হয়ে আসছিলাম। আগামী সপ্তাহে অপারেশনের ডেট দিয়েছে। স্বামী স্ত্রী দুজনই অন্য মনস্কভাবে হাটছিলাম। হঠাৎ আমার স্বামীর পুরোনো পরিচিত এক পাকিস্তানি দেখেই জানতে চাইল

- কিরে সেলিম। তোর কি হয়েছে? মন এত খারাপ কেন?

- বিস্তারিত খুলে বলতেই সে কিছু পরামর্শ দিল। বলল, নিজ হাতে এ দাওয়াইটা বানিয়ে এক সপ্তাহ সেবন করলে হার্টের ব্লক চলে যাবে। ওর পরিচিত অনেকেরই নাকি এটি খেয়ে হার্ট ব্লক চলে গিয়েছে।

শূনে সেলিম খুব খূশী হল। তাড়া তাড়ী হার্টের নিরাময়ের জন্য কবিরাজী ওষুদের নিয়ম পদ্ধতি যত্মসহকারে পাকিস্তানি হতে লিখে নেয়া হল। বাসায় আসার আগেই সবকিছু কিনে ফিরেছে। লিখিত নিয়ম দেখে দেখে নিজস্ব ল্যাবে ওষুধ বানানো হলো এভাবে

১- আদা এক পোয়া,

২- রসুন এক পোয়া,

৩- মধু এক বোতল

প্রথমেই আদা রসুনকে ভালভাবে ব্লেন্ডিং করে নিতে হবে। তার পর মৃদু আগুনে পাতিলে আদা রসুনের পেষ্ট ঢেলে আস্তে আস্তে গরম করতে হবে। একটা সময় আসবে যখন আদা-রসুন লালবর্ন ধারণ করবে। পরিস্কার একটি পাতিলে ঢেলে ঠান্ডা করে নিতে হবে। অবশেষে মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিবে। এভাবেই তৈয়ার হয়ে গেল হৃদরোগের মহৌষধ নামে পরিচিত কবিরাজি-হালুয়া।

মহিলা আবারও বলতে লাগলো, জানেন ভাবী, আমার স্বামী এক চা চামচ করে দিনে তিন বার এটি খেয়েছে। এক সপ্তাহ পর হাসপাতালে গিয়েছি অপারেশনের জন্য। ডাক্তার চেকআপন করে আশ্চার্য হয়ে গেল। অতীতের রিপোর্টগুলো অনেকবার চেক করে চোখ চানাবারা হয়ে গেল। একি? অবশেষে আমার স্বামীর অপারেশনটা আর করতে হয়নি। আপনি ও এ কবিরাজী ওষধটি বানিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। নিশ্চিত ভাল হয়ে যাবেন।

হার্ট সমস্যা হতে বাচার নতুন পথ খূজে পেয়ে নাজু দারুণ খুশী । আমাকে অর্ডার করা হল সব নিয়ে আসতে । আমি তাই করলাম। শুরু হল নাজুর কবিরাজী হালুয়া খাওয়ার।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২২০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File