জামায়াতে সালাত আদায়ের কী দরকার!
লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ০৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০৮:৩৭:৫৮ রাত
আমি যতদূর জেনেছি, শুধুমাত্র ইমাম আবু হানিফ রহঃ এর মতে জামায়াতে নামায আদায় করাটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা,আর বাকি সকল ইমামের মতেই ওয়াজিব।
আমাকে একজন বললেন যে, জামাতে নামায আদায় করলে ২৭ গুণ বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। ওনার ২৭ গুণ সওয়াবের এতো একটা দরকার নেই তাই তিনি জামাতে সবসময় যান না! তার মতে জামায়াতে সালাত আদায় না করলেও কোন ক্ষতি নেই!
অনেক আলেম, ইসলামী আন্দোলনের নেতা এমন কি যিনি সারাদিন ইসলাম নিয়ে বয়ান করেন, নিজেকে বড় Islamist হিসেবে জাহির করেন, তাদের অনেককেই দেখিঅবলীলায় জামাতে নামায না পড়ে নিজে নিজে আদায় করতে।
আমি দেখেছি, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন না, তাদের কাছে নামাযের ব্যাপারটা অনেক কঠিন একটা কাজ। ঠিক তেমনিভাবে যারা নামায পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করেন একা একা বা দু' একওয়াক্ত জামাতে আদায় করেন, তাদের কাছে সকল নামায জামায়াতে আদায় করাটা অনেক কঠিন মনে হয়।
খুবই দুঃখ লাগে, যখন দেখি আমাদের অনেকেই যারা ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন দিতে প্রস্তত অথচ জামাতে নামায আদায়ের ব্যাপারে বড়ই গাফেল!
জামায়াতের গুরুত্ব
আল কোরআনের রেফারেন্সঃ
তোমরা পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকু কারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর (ইমরানঃ আয়াত ৪৩);
আর নামায কায়েম কর,যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয় (বাক্বারাঃ আয়াত ৪৩);
সূরা নিসার ১০২ ও ১০৩ নম্বর আয়াতে বলাহয়েছে,
وَإِذَا كُنْتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُالصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْفَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَىلَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْوَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْفَيَمِيلُونَ عَلَيْكُمْ مَيْلَةً وَاحِدَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَبِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَنْ تَضَعُوا أَسْلِحَتَكُمْوَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا(102) فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًاوَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنْتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ إِنَّالصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا (103)
"হে নবী! আপনি যখন তাদেরসঙ্গে জিহাদে অংশ নেবেন ও তাদের সঙ্গে নামায আদায় করবেন তখন তাদের একদল যেন আপনার সঙ্গে নামাযে দাঁড়ায় ও নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখে ৷ যাদের সেজদা সম্পন্ন হলো তারা যেন সরে গিয়ে পেছনে দাঁড়ায় এবং অপর দল যারা নামাযে শরীক হয়নি, তারা নামাযে অংশ নেবে-তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে৷ কাফেররা চায় তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্রের ব্যাপারে অসতর্ক থাক, যাতে তারা তোমাদের উপর হঠাৎ আক্রমণ চালাতে পারে ৷ যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা অসুস্থ থাক,তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের জন্য কোন গোনাহ নেই, শুধুমাত্র আত্মরক্ষার অস্ত্রসঙ্গে রাখবে ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি রেখেছেন৷"(৪:১০২)
"এরপর যখন নামায শেষ করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে ৷ যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন যথাযথভাবে নামায আদায় করবে৷ নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরজ ৷" (৪:১০৩)
এর আগের আয়াতে জিহাদে অংশগ্রহণকারী ও সফরকারীদের জন্য নামায সংক্ষেপ করার নির্দেশ দেবার পর এই আয়াতে জিহাদের ময়দানে জামায়াতে নামায আদায়ের পদ্ধতিসম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে ৷
এই আয়াতে বলা হয়েছে, জিহাদের ময়দানে নামায পড়ার জন্য মুসলিম সৈন্যদেরকে প্রথমে পৃথক দু'টি দলে বিভক্ত হতে হবে৷ এরপর একটি দল জামায়াতের ইমামের সাথে নামাযে দাঁড়াবে ও নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখবে এবং প্রথম রাকাতের দ্বিতীয় সেজদা শেষ হবার পর তারা নিজেরাই ব্যক্তিগতভাবে খুব দ্রুত দ্বিতীয় রাকাত শেষ করবে৷ জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ফরজ নামায যেহেতু দুই রাকাতের বেশী নয়, সেহেতু প্রথম দলের নামায এখানেই শেষ হবে৷ এরপর প্রথম দল দ্রুত সরে গিয়ে দ্বিতীয় দলের স্থলাভিষিক্ত হবে, যাতে দ্বিতীয় দল দ্বিতীয় রাকাতের নামাযে অংশ নিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার ফজিলতের অংশীদার হতে পারেন৷ এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জিহাদের ময়দানেও অবশ্যই নামায পড়তে হবে৷
আর সম্ভব হলে তখনও জামায়াতে নামায আদায় করতে হবে এবং বিশেষ ঐপদ্ধতির কারণে সব মুজাহিদরাই জামায়াতে নামায পড়তে পারছেন৷এছাড়াও এই আয়াতে যে কোন পরিস্থিতিতে শত্রুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার এবং অস্ত্রসাথে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ৷
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে,
প্রথমত: জামায়াতে নামায পড়ার গুরুত্ব এত বেশী যে, যুদ্ধের ময়দানেও এক রাকাত নামাযের মাধ্যমে হলেও তাতে অংশ নিতে বলা হয়েছে ৷
দ্বিতীয়ত: নামাযের জন্য বিশেষ সময় নির্ধারণের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে সময়ানুবর্তী ও সুশৃঙ্খল হবার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে ৷
হাদীসের রেফারেন্সঃ
জামাতে ২৭গুন বেশি নেকি পাওয়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ); জামায়াতে না আসলে ঘরে যদি বাচ্চা মহিলা না থকত তাহলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিতাম (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত );
সুস্থ অবস্থায় ফরজ নামায ঘরে বসে পড়লে তা হবে না । সুন্নাত পড়া যাবে তবে অর্ধেক নেকি হবে(বুখারী হাঃ নং ১১১৫)
(বিশেষ কারন ছাড়া) যে ব্যক্তি আযান শুনে জামাতে না আসে তার নামায হয় না (ইবনে মাযাহ, দারাকুতনি, মেশকাত );
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলের সময়ে মুনাফিক এবং রোগী ছাড়া কোন লোকই জামায়াতে অনুপস্থিত থাকতো না। রুগ্ন ব্যক্তিও দু’জন লোকের কাঁধে ভর করে জামায়াতে আসতো।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সুনানুল হুদা শিক্ষা দিয়েছিলেন। আযান দেয়া হয় এমন মসজিদে সালাত আদায় করাও সুনানুল হুদার অন্তর্ভূক্ত।
অন্য বর্ণনা মতে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বিচারের দিন মুসলিমরূপেআল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেনো আযান শুনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হিফাজত করে। আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্যে সুনানুল হুদা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এগুলো সুনানুল হুদার অন্তর্ভূক্ত।
তোমরা যদি মুনাফিকদের মতো নিজেদের ঘরে সালাত আদায় করো তাহলে তোমরা তোমাদের সুন্নাত লঙ্ঘন করলে। তোমরা যদি নবীর সুন্নাত লঙ্ঘন করো তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে। - মুসলিম
নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জিন কর্তৃক জামা’আত হবার পরও প্রয়োজন বোধে একাধিক বার জামা’আত করা যাবে(আবু দাউদ ১ম খন্ড । তিরমিযী ১ম খন্ড );
ফজর বা অন্য কোন সালাতের জামা’আত শুরু হওয়ারপর কেউ মসজিদে এলে তাকে সুন্নাত না পড়েই জামা’আতে শরীক হতে হবে (বুখারী মিশরী ছাপা ১ম খন্ড ; মুসলিম ১ম খন্ড ; আবুদাউদ ১ম খন্ড ; তিরমিযী ১ম খন্ড ; নাসাঈ ১৮৩-১৩৯ ; ইবনু মাযাহ )
ফরজ নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া আরম্ভহলে আর কোন নামাযই পড়া যাবে না । এমনকি ফজরের সুন্নাত ও পড়া যাবে না (মুসলিম, মেশকাত ৯৬ );
জামাআত শেষে ঐ সুন্নাত পড়তে হবে(নাসায়ী ১ম খন্ড ; আবু দাউদ ১ম খন্ড )
নামাজ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক মহা নেয়ামত। জামাতে নামাজ আদায় করলে ঐ নেয়ামতের ফলাফল বহুগুন বৃদ্ধিপায়, এবং কোনো অনাকাংখিত কারনে নামাজের সুফল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
নামাযের জামায়াতে সব ধরনের মুসলমানই শামিল হয়ে থাকে।সেখানে ধনীও থাকেন। আবার একেবারে কপর্দকহীন দরিদ্রও থাকেন। উত্তম পোষাকে সুসজ্জিতব্যক্তিও থাকেন। আবার ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত দরিদ্রও থাকেন।
সুতরাং যাদের অন্তর অহংকারে পূর্ণ, যারা ধন-দৌলতের অহঙ্কারে বিভোর তারা চায় না কোন দরিদ্র লোক তাদের পাশে দাড়িয়ে নামায পড়ুক। এ অহঙ্কারের কারণেই তারা নিজেদের ঘরে একাকী নামায আদায় করে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মানসিক রোগের চিকিৎসা করার জন্যেই জামায়াতে নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিজেদের ঘরে একাকী নাময আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
এ বিষয়ে বিশেষভাবে বিবেচনাযোগ্য যে, জামায়াতে নামায আদায় করেল অন্তরে শয়তানি প্ররোচনাসৃষ্টি সম্ভাবনা কম থাকে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও মজবুত হয়। এ কারণেই জামায়াতে নামায পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরশাদ মুতাবেকসাতাশ গুণ ছওয়াব বেশি হয়ে থাকে।
মহান আল্লাহ-তায়ালা আমাদেরকেহেদায়েতসহ দুনিয়া ও আখেরাতে সকল নেক কামিয়াবী দান করে উম্মতে মুহাম্মাদী[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হিসাবে কবুল করুন -আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১২১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন