আমাদের দেশে হরতালের এ সংজ্ঞাটা এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে

লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ০৯ মার্চ, ২০১৩, ১১:৩৯:৪৬ রাত

হরতাল নিয়ে আমার একটা ব্লগ পোস্ট ছিল, সেটা শেয়ার করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু ঐ ব্লগই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাক, সে পোস্টে আমি যা বলতে চেয়েছিঃ

‘ বলা হয়ে থাকে হরতাল একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। আবার হরতালে কেউ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলে তাকে বাধা দেয়া হয়। কিন্তু রাস্তায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার সবার আছে। ফলে দেখা যাচ্ছে দুটো অধিকার পরস্পর বিপরীতমুখী হয়ে যাচ্ছে। একজনের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আরেকজনের অধিকারে হস্তক্ষেপ করাটা কখনোই অধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। তার মানে হরতাল নিয়ে এখানে একটা সমস্যা আছে।

আসলে হরতাল অধিকার, এটা ঠিকই আছে। এর মানে হল হরতাল আহবান করার অধিকার। যে কেউ কোন দাবী নিয়ে জাতিকে আহবান জানাতে পারেন হরতাল পালনের জন্য। তার মানে কোন দল বা গোষ্ঠী জাতিকে এই আহবান জানাতে পারে যে আপনারা একটা দিনের জন্য নিজেদের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখুন, দোকানপাট খুলবেন না, গাড়ি বের করবেন না ইত্যাদি। এই আহবানে দোষের তেমন কিছু নেই। জাতি চাইলে এই আহবানে সাড়া দিতে পারে আবার নাও দিতে পারে। কিন্তু কেউ আরেকজনকে হরতাল পালনে বাধ্য করতে পারে না। কাউকে বাধ্য করা মানে তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। এইটুকু পর্যন্ত হরতাল নিয়ে কোন সমস্যা ইসলামে আছে কি না, জানাতে পারেন।

মজার ব্যাপার হল, আমাদের দেশে হরতালের এ সংজ্ঞাটা এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। হরতাল মানেই ধরে নেয়া হয়েছে যে লোকজনকে হরতাল পালনে বাধ্য করতে হবে।

এর চেয়ে মজার বিষয় হল, হরতালে পিকেটিং। internet ঘাঁটাঘাঁটি করে পিকেটিং এর যে সংজ্ঞা পাওয়া গেল, তাতে বোঝা যায় পিকেটিং একটা non-violent সমাবেশ, যেখানে লোকজন কোন দাবী আদায়ের জন্য নিজেদের regular কাজ বাদ দিয়ে জমায়েত হয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। আপনি যদি আমাদের মিডিয়ার রিপোর্টগুলো দেখেন তাহলে আপনার মনে হবে, পিকেটিং মানে লোকজন রাস্তায় গাড়ি বের করলে তাকে আটকানো, কিংবা ভাংচুর করা।

কেউ হরতাল আহবান করে ঘরে বসে থাকলে কী এমন সমস্যা? আমার মতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু মিডিয়া তখন রিপোর্ট করবে- ''পিকেটিং ছাড়া হরতাল'', ''নিরুত্তাপ হরতাল'', ''ঢিলেঢালা হরতাল'', '' হরতালে মাঠে নামে নি কেউ'', ইত্যাদি। এসব কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত হরতাল আহবানকারীরা রাস্তায় নামে আর ভাংগাভাঙ্গি করে। পিকেটার বিহীন হরতালে যদি রিপোর্ট হত এরকম, '' শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত'', ''মাঠে নামতে হয় নি পিকেটারদের'', ''স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত'', ইত্যাদি তাহলে কেমন হত?

খুব খেয়াল করলে দেখবেন, non-violent হরতালকে দু'ভাবে লেখা যায়- ''নিরুত্তাপ হরতাল'' কিংবা '' শান্তিপূর্ণ হরতাল''। এর মাঝে একটা শিরোনাম হরতাল আহবানকারীদেরকে অসহিংস হতে উৎসাহিত করবে, আরেকটা সহিংস হতে ইন্দন যোগাবে।

হরতালে সংজ্ঞা পরিবর্তন হওয়ায় এখন লোকজন ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক হরতাল পালন করছে, পালন করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File