Factors Accelerating De-islamizaiton/ Secularization in Bangladesh
লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:১৫:১৬ দুপুর
প্রেক্ষাপটঃ
ড. সাইদুল ইসলাম তাঁর এক গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ মুসলিম হলেও তাঁদের জীবন বিধান ইসলাম দিন দিন মাইনরিটি হয়ে যাচ্ছে। পাশ্চাত্যে মুসলিমরা তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা যতটুকু ভোগ করেন, বাংলাদেশের মুসলিমরা ততটুকু করতে পারেন না। এদেশে অনেকগুলো ইসলামী শক্তি কাজ করলেও দেশের মানুষের জীবন যাত্রায় ইসলামীকরণের চেয়ে ইহজাগতিকতার প্রভাব বেশি হারে বিস্তার লাভ করছে। Rate of de-islamization is higher than the rate of Islamization! সংখ্যার দিক থেকে মসজিদগুলোতে মুসল্লির সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম হারে বেড়ে থাকে, তবে এই মুসল্লি বৃদ্ধি কারণে উল্লসিত হবার তেমন কিছুই নেই।
সমস্যাঃ
উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে যে সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে তা হল, আমাদের পরবর্তী জেনারেশনগুলো ইসলাম থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছে। অনাগত দিনগুলোতে আমাদের জন্য তৈরি করবে তীব্র মানসিক যাতনা। অধরাই থেকে যাবে একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন। আরও কঠিন ও শ্বাপদসংকুল পথ সামনে তৈরি হচ্ছে দেশের ইসলামপন্থীদের জন্য। সর্বোপরি নিজেদের ঈমানের দাবী কতটুকু পূরণ হচ্ছে যাবতীয় কাজের মাধ্যমে, আমাদের নিজেদের কাছেই তা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে। আর মহান মা’বুদের কাছে কী জবাব দেব সে চিন্তা তো থাকছেই।
এই আলোচনার তাৎপর্যঃ
আমরা যারা একটা ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ তথা সমাজটাকে ইসলামীকরণ করতে চাই, তাদেরকে অবশ্যই নিজেদের সামাজিক বাস্তবতা উপলব্দি করতে হবে। স্থানিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান ঐ সমাজের কাংখিত পরিবর্তনের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক যে, একটা বিপরীতধর্মী আদর্শ যে পদ্ধতিতে কোন সমাজে ব্যপ্ত হবে, ইসলাম কখনোই একই পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করে না। তবে পর্যালোচনার মাধ্যমে এমন কিছু দিক অবশ্যই খুঁজে বের করা সম্ভব যা ঐ সমাজের মানুষের মন মানসিকতায় ইসলামী চিন্তা বপনের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। আমাদের এখানে যেহেতু rate of de-islamization is higher than rate of Islamization, সেহেতু এখানে de-islamizaiton এর প্রসেসটা জানা অনেক বেশি দরকার। ইতিমধ্যে দেশে একটা সেক্যুলার জেনারেশন তৈরি হয়ে গেছে সেক্যুলারদের বিভিন্ন পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত তৎপরতায়!
যুক্তি উপস্থাপনার পদ্ধতিঃ
উপরোল্লিখিত বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য এখানে মূলত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, কতিপয় চিন্তাশীল গুণীজনদের মতামত, অল্প কিছু লিটার্যাচার রিভিউকেই ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ঠিক যে, এবিষয়ে শুধুমাত্র কমনসেন্স নির্ভর আলোচনার চাইতে একটি বৈজ্ঞানসম্মত গবেষণা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
ফ্যাক্টরসমূহঃ
মানুষের কাছে যেকোন একটা আদর্শ গ্রহণযোগ্যতা লাভের জন্য দরকার হয় ঐ আদর্শের একটা পরিবেশ। আমাদের আশে পাশে যদি একটা সেক্যুলার পরিবেশ বিরাজমান থাকে, তবে ঐ পরিবেশ থেকে কখনোই ইসলামী মন মানসিকতার লোক বের হয়ে আসবে না। গোটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ যেধরনের আবহ তৈরি করবে, সে ধরনের জেনারেশনই তৈরি হবে ঐ সমাজে। উপরে বর্ণিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে de-islamization এর ক্ষেত্রে যেসকল ফ্যাক্টরকে দায়ী করা যায় সেগুলোকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি।
১। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ২। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন বহির্ভূত
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিতঃ
কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যারা থাকেন তাদের আদর্শ অনুযায়ীই সেগুলো নির্ধারিত হয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের চিন্তা অনুযায়ী সামগ্রিক পরিবেশের আবহ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে যেসকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায়-
ক) আইন ও বিচার ব্যবস্থা খ) শিক্ষা নীতি ও পদ্ধতি গ) শাসন পরিচালনার পদ্ধতি ও একাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আদর্শ ঘ) বহিঃবিশ্বের সাথে যোগাযোগের সীমা (বিশ্বায়ন)
এবিষয়গুলোর প্রত্যেকটি নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের কাছে দিবালোকের মতই স্পষ্ট হবে কীভাবে রাষ্ট্র একটা সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রন করছে।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন বহির্ভূতঃ
আর কতগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে যেগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকেও সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও আদর্শকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ক) মিডিয়া (প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) খ) প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি গ) পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত অন্যান্য সাহিত্য ঘ) বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ঙ) সামাজিক প্রথা ও রীতি-নীতি চ) ইসলামীকরণের পদ্ধতিগত শক্তি ও একাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তৎপরতা
এক্ষেত্রে হয়তো গবেষণা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে বর্তমানে একটা সেক্যুলার সামাজিক আবহ তৈরিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ফ্যাক্টরসমূহের তুলনায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ফ্যাক্টরগুলো বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
উপসংহার ও কর্তব্য নির্ধারণ:
এটা ঠিক যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবার আগে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ফ্যাক্টরসমূহকে ইসলামাইজ করা কিছুটা কঠিন, তবে একেবারেই অসম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ফ্যাক্টরগুলোকে ইসলামাইজ করার জন্য অনেক সুযোগ ইসলাম পন্থীদের সামনে আছে। তার আগে ইসলামের মৌলিক নীতিমালা জানা ও সে অনুযায়ী কাজের পদ্ধতি নির্ধারণ করা অনেক বেশি দরকার।
এক্ষেত্রে সবাই একই কাজ না করে ব্যক্তির যোগ্যতা ও অন্যান্য সামাজিক বাস্তবতার আলোকে তিনি এক বা একাধিক সেক্টরে কাজ করতে পারেন। ব্যক্তিকেই নির্ধারণ করতে হবে তিনি কোন সেক্টরের কোন কাজ করার জন্য উপযুক্ত। আর একই সেক্টরে কাজের জন্য নিয়োজিত লোকেরা নিজেরা একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন এবং কতগুলো সামষ্টিক কাজ করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন