জাতির উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের (?) চিঠি

লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২৯:৩৩ সকাল

প্রিয় দেশবাসী,

আসসালামু আলাইকুম।


আপনারা অবগত আছেন যে, গত প্রায় ৩ বছর যাবত আমরা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জেলে আছি। আমাদের ফাঁসির দাবীতে একদল লোক আন্দোলন করছে। ফাঁসির মাধ্যমে যদি আমাদের মৃত্যু আল্লাহপাক নির্ধারণ করে রাখেন তাহলে এই দুনিয়ার কেউই তা আটকাতে পারবে না, আর যদি আল্লাহপাক অন্যকোন উপায়ে মৃত্যু নির্ধারণ করে রাখেন তবে যতই শাহবাগ আর গণজাগরণ মঞ্চ করা হোক না কেন, কোন কিছুই হবে না। এ বিশ্বাস আমাদের আছে। আমাদের ফাঁসি যদি গায়ের জোরেই দিতেই চান, তো দিয়ে দিন। এত নাটক করার কি দরকার? আমাদেরকে ফাঁসি দিয়ে যদি দেশের উন্নতি হয়, সমাজে শান্তি আসে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরা মরেও শান্তি পাব। সমস্যা হল, একটা সভ্য সমাজে- স্বাধীন দেশে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই কি তাকে শাস্তি দিয়ে দেয়া যায়? তাহলে আইন- আদালতের কাজটা কী?

বিবেকবান দেশবাসী,

সারা জীবন যেসব অপরাধ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি, আজ সেসব অপরাধ আমাদের উপর আরোপ করা হয়েছে! আমরা যদি সত্যিকারের অপরাধী হতাম তাহলে বিগত চল্লিশ বছর যাবত কেন একটি মামলাও হয়নি আমাদের বিরুদ্ধে? আসলে এই প্রসিকিউশন আমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারবে না মিথ্যার আশ্রয় নেয়া ছাড়া। সুতরাং দেশের এত কোটি কোটি টাকা খরচ করার কী প্রয়োজন?

আমাদের মুক্তির দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, হামলা-মামলা আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। মিথ্যাচার করা হচ্ছে মিডিয়ায়। নাস্তিকদের ইসলাম বিরোধিতা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। গোটা জাতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, এ ধরনের বিভেদ আর ভেদাভেদের একটা দেশ কি কেউ চেয়েছিল?

দেশে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে যারা বেশি মাতামাতি করেন, তারা আজ একেবারেই নিশ্চুপ! এইধরনের একচোখা মানবাধিকারের কী দরকার? সৌদিআরবে যখন মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়, তখন আমাদের দেশের বিবেকবানরা (?) আর সুশীল সমাজ একে একটা নিষ্ঠুর শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করে হইচই শুরু করেন। এগিয়ে আসে Amnesty International ও। তাছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে রহিত করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের সুশীলসমাজ আজ একব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়ার জন্য আন্দোলনে নেমেছে! দুর্ভাগ্যজনক হল, আজ ফাঁসি দেয়ার জন্য আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে! এই কি আইনের শাসন?

যারা অন্যদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার জন্য সবসময় নছিহত করেন, তাঁরাই এখন মাননীয় আদালতের রায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। ভাবখানা এমন, বিচার মানি, তালগাছ আমার! জাতির উচ্চ শিক্ষিত লোকগুলোও আজ রাজনৈতিকভাবে অন্ধের ভূমিকা পালন করছে। কেউ কেউ এতই আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছেন যে বিবেক দিয়ে চিন্তাই করতে পারছেন না।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায়না।এনাফ ইজ এনাফ।অনেক রক্ত ঝরেছে।এবার গৃহযুদ্ধ প্রতিরোধ করুন।শো সাম গাটস।সবপক্ষের সবধরণের উস্কানিমূলক কথাবার্তা কাজকর্ম বর্জন করুন প্লিজ,এখনি।স্ট্যাটাস -কমেন্ট -লাইক -শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সবধরণের উস্কানি ,যুদ্ধহুংকার ,প্রতিপক্ষ নির্মূল আহবান,হেট মেসেজ ছড়ানো বন্ধ করুন সবাই প্লিজ,এই মুহূর্ত থেকে।কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন?ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন এই ছোট দেশে আপনার প্রতিপক্ষ আপনারই ভাই -বন্ধু -স্বজন।সবাই একই জিনিস চায় ,পার্থক্যটা শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির।এই একুশ শতকে এসে আমরা কেন বুঝতে পারছিনা কোন কারণেই প্রোভোকেটিভ যুদ্ধ হতে পারে না!আর আপনি যুদ্ধে নামলে আপনার অপোনেন্টও নিশ্চয়ই বসে থাকবেনা।সভ্যতা যত এগিয়েছি আমরা তত উগ্র,অন্ধ ,রক্তলোলুপ ,প্রতিহিংসাপরায়ণ ,যুদ্ধংদেহী,প্রতিপক্ষ হননেচ্ছু হয়েছি।শিক্ষার হার বেড়েছে ,মনুষ্যত্ব শূণ্যের কোটা পেরিয়ে নিগেটিভে নেমেছে। ছিহ ছিহ ছিহ!সভ্য সমাজে সবাইকে নিয়েই বাচতে হবে ,আপনার পছন্দ হোক বা না হোক।হয় সর্বশক্তি দিয়ে গৃহযুদ্ধ ঠেকান নতুবা জাতির জন্য ধংস অনিবার্য। (রেফারেন্সঃ সাকিব, ২৫-০২-১৩)

আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, এই যে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, এটা নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। কখনো রাজাকার-আলবদর, কখনো ঘাতক-দালাল, কখনো যুদ্ধাপরাধী আবার কখনো মানবতাবিরোধী অপরাধী ইত্যাদি বলে গত ৪০-৪২ বছর ধরে জাতির সামনে একটা মুলা ঝুলানো হচ্ছে। এর একটা অবসান হওয়া দরকার। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও এসে যদি আমরা স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে বাদাবাদি করতেই থাকি, জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কখনোই চাইবে না আমরা উন্নত আর সমৃদ্ধশালী একটা জাতিতে পরিণত হই।

তাই প্রিয় দেশবাসী,

জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের আছে আমাদের আকুল আবেদন, যতদ্রুত সম্ভব দেশের স্বার্থে একটা জায়গায় এসে আমরা একমত হই। চিরদিনের জন্য এই ইস্যুটির একটা নিস্পতি হোক যাতে আর কেউ এ বিষয়টা নিয়ে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে না পারে। মহান আল্লাহপাক যেন আমাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমীন।

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ

আল্লাহ হাফেজ


কৃতজ্ঞতাঃ মুস্তাফিজ

(যদিও পুরাই কাল্পনিক এই চিঠি, ভাল লাগলে শেয়ার করতে পারেন) ।

বিষয়: রাজনীতি

১১৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File