দেখি ব্যাটা কী করে

লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৩৭:০৯ সকাল

এক লোকের ঘরে গভীর রাতে চোর ঢুকেছে। সাথে সাথে তিনি টের পেয়ে গেলেন। কিন্তু কিছুই করলেন না। দেখি ব্যাটা কী করে! কোন নড়াচড়া না পেয়ে চোর ব্যাটা বুঝতে পারল সে ঘরে ঢোকার পর কেউ টের পায় নি। চোর প্রথমে ঘরের বিভিন্ন দরকারি জিনিসপত্র তার ঝোলাতে ভরতে লাগল। গৃহস্থ বিষয়টি খেয়াল করল, কিন্তু তারপরও চুপ থাকল। দেখি ব্যাটা কী করে! চোর ব্যাটা এরপর তার ঝোলা নিয়ে আস্তে করে ঘর থেকে বের হল। পা টিপে টিপে পেছন পেছন আসল গৃহস্থ। তার মাথায় একটাই চিন্তা, দেখি ব্যাটা কী করে! হঠাৎ চোর দিল একটা ভোঁদৌড়। আর এক দৌড়েই পগার পার! গৃহস্থ তখন মাথায় হাত!

ইস! আরেকটু আগে হলে ধরেই ফেলতাম চোর ব্যাটাকে।

বাংলাদেশের Islamist দের উপর জুলুম- নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই মুহূর্তে। Islamization এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে আমাদের সমাজে De-islamization আর secularization এর কাজ হচ্ছে।

আর আমি আপনি ভাবছি, দেখি ব্যাটা কী করে! আমরা এরকম বোকা গৃহস্থ হতে চাই না। আসুন, এক ঝলকে দেখে নেই আমরা কী কী করতে পারি।

একথা মনে করার দরকার নেই, আপনি এখন খুব প্রফেশনাল ব্যস্ততায় আছেন কিংবা দেশের বাইরে। দেশের এসব পরিস্থিতি আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একবার ভেবে দেখুন, এই যে শাহবাগে এত এত ছেলে মেয়ে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বাপ-দাদারাও কিন্তু আপনার আমার চেয়ে অনেক বড় ঈমানদার, আমলদার ছিলেন। কিন্তু তাদের বংশধরেরা?

আর আমাদের পরবর্তী বংশধরেরা যে কেমন হবে আগামীদিনগুলোতে তা অনুমান করা অনেক কঠিন।

এই মুহূর্তে আমাদের ইমোশনাল হয়ে কোন কাজ করার সুযোগ নাই। মিডিয়া তথা প্রচারযন্ত্রের আধিপত্যের কথা ভেবে নিজেদেরকে অসহায় মনে করে ভেঙ্গে পড়ারও কোন সুযোগ নেই। আমাদের যার যা সামর্থ্য আছে তা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করে গেলে অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য আসবে, এই বিশ্বাস মনের ভেতর সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখতে হবে। উপরের লেভেল থেকে কেউ একজন কাজ দিবে আর আমি আপনি তখন ঝাপিয়ে পড়ব, এরকম পরিস্থিতি মনে হয় এখন নেই।

চলুন দেখি আমরা কি কি কাজ করতে পারি:

১। আপনার ভাই-বোন, আব্বা-আম্মা, বন্ধু-বান্ধব, কলিগ, সন্তান সহ সকল পরিচিত মানুষকে বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক তথ্য জানান। কারণ, মিডিয়া তাদের কে সঠিক তথ্য জানতে দিচ্ছে না। সবার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখুন। কারো সাথে রেগে যাবেন না, কেউ নেগেটিভ কথা বললে মনোযোগ দিয়ে আমাদের শুনতে হবে। তারপর আপনার কথা বলুন। সম্পর্ক খারাপ করা যাবে না। একদিন হয়ত ঐ ব্যাক্তি বুঝবেন।

২। নেক্সট জেনারেশন, যেমন আপনার ছোটো ভাই-বোন,সন্তান, এলাকার জুনিয়রদের সাথে বেশি করে সময় দিন, তাদের বন্ধু হন। তাদেরকে ইসলাম বুঝান,তাড়াহুড়া করবেন না, ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে। সবচেয়ে বেশি সময় এদের জন্য allocate করুন।

৩। বিদেশী ও দেশী পত্রিকাগুলোর নিউজের নিচে কমেন্ট করুন। মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করুন। অনেকে আপনাকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে পালটা কমেন্ট করবে, ওইসব কমেন্টের কোনও জবাব দেবার প্রয়োজন নেই। ওদেরকে ওদের দুর্গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে থাকতে দিন।

৪। লেখালেখি করা। যিনি কোনও দিনই লিখেন নি, আমি আপনাকে অনুরোধ করবো আজ, এখনি লেখা-লেখি শুরু করার জন্য। লিখুন আপনার অনুভূতি নিয়ে,অভিজ্ঞতা নিয়ে, ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে, রসুল (সঃ) জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে। আপনার যা ভালো লাগে তাই লিখুন। লেখা আপনার ফেসবুকে,ব্লগে পোষ্ট করুন। পরিচিত কেউ থাকলে, যিনি লিখেন, তাকে দেখান, পরামর্শ নিন।প্রয়োজনে ছদ্মনামে লিখুন।

৫। লেখালেখির জন্য পড়াশুনা করতে হবে। যা লিখতে চান তার উপরে বই, ম্যাগাজিন ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিন। ভালো ভাবে চিন্তা করে তথ্যগুলো সাজিয়ে নিন। তারপর লিখা শুরু করুন।

৬। ফেসবুক, টুঁইটার, ব্লগে একটিভ হন। খুব বেশি ব্যস্ত থাকলে at least একটা স্ট্যাটাস আপডেট করুন।

৭। সংগঠনের দাওয়াত প্রথমে না দিয়ে পরিচিত অপরিচিত সকল মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে। এই মুহূর্তে আরও বেশি করে দিতে হবে। তাদেরকে ইসলাম মানতে উৎসাহিত করুন, সহায়তা করুন। মৌলিক বিধান গুলোর ব্যাপারে সচেতন করুন, যেমন, নামায, পর্দা, শিরক ইত্যাদি।

৮। প্রতিদিন কিছু অর্থ ইসলামের জন্য ব্যয় করা। অসহায় কাউকে হেল্প করুন, বিশেষ করে ছাত্র এবং এতিম। ২টাকা হলেও।

৯। কুরআন পড়ুন, প্রতিদিন! বিশ্বাস করুন, কুরআন পড়া ও কুরআন অধ্যয়ন আমাদের কাজ সহজ করে দিবে, আমাদের শক্তিশালী করবে।

১০। জামায়াতে নামায নিয়মিত করা। সাথে সাথে তাহাজ্জত পড়া, নফল রোজা রাখা। দোয়া করা।

১১। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে, সকল গুনাহ, তা যত ছোটো গুনাহই হউক না কেন।

১২। বিশেষ করে, এই মূহুর্তে যে কাজটি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে করে যেতে হবে তা হল ধর্মবিরোধী আওয়ামীলীগ, নাস্তিক ও ধর্ম বিদ্বেষী বামদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের মিডিয়ার বিভিন্ন বৈপরিত্যপূর্ন আচরণ এবং চলমান পরিস্থিতির পেছনে নাস্তিকদের একচ্ছত্র মদদ দেয়ার বিষয়টি জনে জনে যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক ভাবে তুলে ধরতে হবে। এতে করে জনগণ সহজেই বুঝতে পারবে যে জামায়াত-শিবিরকে উপলক্ষ করে মূলত ইসলামের বিরুদ্ধেই জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

মনে রাখবেন, যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু একটাও না করতে পারি এই সংকটময় মুহূর্তে, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা থেকে কি বাঁচতে পারব?

বিষয়: বিবিধ

১১৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File