নতুন বছরের প্রথম দিনে শীত বস্ত্র বিতরণ ঃ দারিদ্র বিমোচন সুদূর পরাহত
লিখেছেন লিখেছেন সালমান আরজু ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:১৬:৫৫ রাত
আজ হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরে গেলাম শীত বস্ত্র বিতরণ করতে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্ররা গত প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে নিজেরা অনেক কষ্ট করে সিলেট শহরের বাসায় বাসায় গিয়ে আর ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও পুরাতন শীত বস্ত্র সংগ্রহ করেছে। কণকণে এই শীতে গ্রামের দুস্থ, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাদের এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নিজেদের ত্যাগের চরম পারাকাষ্ঠা দেখিয়েছে তারা আজ নতুন বছরের প্রথম দিনেই এই অসহায় মানুষগুলোর হাতে সামান্য হলে কিছু শীত বস্ত্র তুলে দেয়ার মাধ্যমে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আর আট-দশটি ছেলেমেয়ে নিজেদের প্রিয়জনকে নিয়ে নতুন বছর উদযাপনের নানা আয়োজনে ব্যস্ত, সেখানে এমন একটি কাজ! আমরা প্রশংসা না করে পারি না।
ছাত্র হওয়ায় তাদের টাকা পয়সা আর সংগ্রহের পরিমাণও ছিল সীমিত। এই সীমিতটা যে কী পরিমাণ কম ছিল, তা বুঝা গেল যখন আমরা গিয়ে দেখি বানিয়াচং উপজেলা সদরের মাঠে শীতের এই কর্মমুখর দিনের ব্যস্ততাকে ফেলে রেখে শত শত নারী, পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা এসে জড়ো হয়েছে। জড়ো হয়েছে কিঞ্চিৎ শীত বস্ত্র পাবার আশায়। ছাত্ররা দুদিন আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করে তাদের হাতে একটি কুপন দিয়ে এসেছে। সেই কুপন নিয়েই আজ সবাই হাজির! শুধু কি তাই, কুপন পায় নি এরকম নারী-পুরুষের সংখ্যাও ছিল শত শত!
সে এক অভাবনীয় দৃশ্য! মানুষের প্রয়োজন দেখে, একটুকরো কম্বল কিংবা একটি পুরাতন জ্যাকেট পাবার জন্য সে যে অপেক্ষা, আমাদের আয়োজনের স্বল্পতা দেখে তখন নিজেদেরকে খুব ছোট মনে হয়েছিল। অসহায় মানুষগুলোর প্রত্যাশার কাছে আমাদের ক্ষুদ্র আয়োজনটি তখন ম্লানপ্রায়! হায়রে মানবতা!
এমন একটি দেশে আমরা বাস করি, যেখানে হাজার হাজার কোটিপতি! আর কোটি কোটি বনী আদম আজো বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে! যারা ৩ বেলা পেট পুরে খেতে পায় না। এই তীব্র শীতে পায়না একটুকরো কম্বল কিংবা একটু গরম কাপড়, খানিটা উষ্ণতার পরশ! অথচ এই যে আমাদের ধনী সমাজ, এই যে মধ্যবিত্তদের ক্রমবর্ধমান বিলাসিতা, এসব থেকে যোজন যোজন দূরে গ্রামের কোটি কোটি মানুষের অবস্থান। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে কিংবা একটি পার্টিতে যে পরিমাণ খাবার অপচয় করা হয়, নষ্ট করা হয়, তা দিয়ে কতগুলো মানুষের ক্ষুধা নিবারণ সম্ভব; তা কি আমরা কেউ চিন্তা করি?
দারিদ্র বিমোচনের নামে বছর বছর নানা সেমিনার, দাতাগোষ্ঠীদের কত দান-অনুদান, মাইক্রো-ক্রেডিট নিয়ে এত এত হইচই, এসব কিছুই আজ বৃথা মনে হল।
যখন আমরা দিনের আলোকে বাদ দিয়ে রাতের বেলায় ফ্লাড লাইটে স্টেডিয়ামে খেলার আয়োজন করি, তখন কি এ ভুখা-নাংগা মানুষগুলোর কথা একবার মনে হয় না? যখন আমরা খাবার অপচয় করি, নষ্ট করি, তখন কি তাদের অভুক্ত চেহারাগুলোর কথা একটু হৃদয়ের ক্যানভাসে ভেসে উঠে না? যখন বিভিন্ন উপলক্ষে বিলাসিতায় মেতে উঠি, তখনও কি আমাদের আশে পাশের এই কোটি কোটি বনী আদমের কথা একটু চিন্তা করতে পারি না?
বিষয়: বিবিধ
১১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন