আমিই কি ভুল করছি (ধর্মীয় পোস্ট)

লিখেছেন লিখেছেন পরিবর্তন ১৯ মে, ২০১৩, ০২:২৭:৪৯ দুপুর

অনেক দিন ব্লগে আসা হয়নি, অথচ কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই মাসে ঘটে গেল। সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে ফেসবুক, ব্লগ, পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টিভিতে অনেক আলোচনা শুনেছি নিজেরও কিছু বলার ছিল। কেন জানি একটু অলসতা আর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ব্লগের প্রতি বিমুখ করে তুলছে।

যা হোক ছোট একটা পোস্ট দিয়ে শুরু করি-

১. শুক্রবারে আমি একটা প্রফেশনাল কোর্স করি ঢাকার পল্টনেই ক্লাস হয় ১০-১টা পর্যন্ত। অনেক সময় ১ টার পরও হতে থাকে আমার টিচার একজন মুসলমান, শিক্ষার্থী যারা আছেন তারাও মুসলমান কিন্তু যখন ১টার পরও ক্লাস হতে থাকে তখন আমার ক্লাসে মন টেকে না জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য (জামাত সোয়া ১টা / দেড়টায়) এবং আমি চলেও যাই (শুধু ১দিন যাই নি) যদিও তখন ফিনিশিং ক্লাস হতে থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই যখন টিচারও ক্লাস ১টার পরও বন্ধ করতে চাচ্ছেন না এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার আমার সহপাঠিরা যারা আছেন তারাও কখনই জুমার নামাজ পড়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিনি।

এই ব্যাপারটায় মনে হচ্ছে যেন আমি একা মুসলমান এবং আমি বোধ হয় নামাজ পড়ে ভুল করছি কারণ তারাওতো মুসলমান আর তারা যদি নামাজ না পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় তবে তো আল্লাহ নিশ্চয় ক্ষমা করবেন। তাহলে আমি কেন শুধু শুধু নামাজ পড়ে ক্লাস মিস করছি।

এখানে আরেকটা ধর্মীয় ব্যাপার লক্ষণীয় "কোন মুসলমান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পর পর তিন জুম আ ছেড়ে দেয় তাহলে তার নাম মুসলমানের খাতা থেকে বাদ দেয়া হয় এবং অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়"

(হাদিস নাম্বারটা আমার মনে নেই)

তাহলে যারা এতদিন জুমার নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবেই পড়েননি তারা কি মুসলমান দাবিদার আছেন............

২. আমি সোয়া ১টা ক্লাস থেকে বের হয়ে বায়তুল মোকারমে যাচ্ছিলাম তখন রাস্তা-ঘাটে দোকান পাট খোলার দৃশ্য, লোকজন চলাচলের দৃশ্য, যানবাহন চলাচলের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল না যে আজকে জুমার নামাজ হচ্ছে এবং এই এলাকাতেই বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম অবস্থিত।

অথচ আল্লাহ কুরআনে শুধু জুমআর নামাজ নিয়েই একটি পূর্নাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন এবং যেখানে স্পস্টভাবে উল্লেখ আছে যে যখন জুমআর আযান হওয়ার সাথে সাথে সবরকম কাজ-কর্ম ফেলে মসজিদের যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩. বায়তুল মোকারমে জুমআর দিনে যে ভিড় হয় সেই হিসেবে চলাচলের পথ এবং জুতার রাখার স্থান পর্যাপ্ত নয়।

এক ভাই কে দেখলাম একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে ছিলেন সামনে কোন ছুতরা ছিলনা তার সামনে দিয়েই আরেকজন ভাই হেটে গেলেন উনাকে দেখতে হুজুর টাইপের মানে পাঞ্জাবি, দাড়ি সুন্নতি মনে হলো। যখন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম ভাই আপনি তো একজন নামাজ পড়তে ছিলেন তার সামনে হেটে আসলেন- জবাবে উনি বললেন কিছু হবে না (অথচ নিজের অজান্তে যারা এরকম করেছেনে আমি তাদেরকে দেখেছি অনুতপ্ত হতে, অনুশোচনা করতে এই প্রথম আমার জীবনে এইরকম একজন লোক দেখলাম যে কি না বলল কিছু হবে না)

একটি হাদিস আছে যা অনেক মসজিদে লেখা দেখেছি -

"একজন মুসল্লির নামাজের সামনে দিয়ে যাওয়া কঠিন গুনাহের কাজ, গুনাহের পরিমাণ এ্তই বিশাল যদি কোন ব্যক্তি তা জানত তাহলে ৪০ দিন নয় ৪০ বৎসর পর্যন্ত সে অপেক্ষা করত নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যেত না।"

৪. আবার নামাজ শেষে মিম্বারের সামনে মিলাদে গেলাম এখানে তো আরেক অবস্থা দুরুদ শরীফ পড়ার সময় সবাই দাড়িয়ে গেল। আমি তো জানতাম কিছু মাজার পূজারী আছেন যারা এই ধরনের কাজ করেন, জাতীয় মসজিদে এই রকম আকীদার কাজ হয় তাতো আমি জানতাম না.....।

একটা ছোট গল্প দিয়ে শেষ করি-

এক লোক বাংলাদেশ থেকে আরব দেশে গেল, সে দেখতে পেল যে সবাই আরবীতে কথা বলে শুধু আযান আর নামাজ বাংলায় পড়তেছে এইখানে আর কি বিশেষত্ব আছে। মানে সে বাংলাদেশে আযান আর নামাজের সাথে পরিচিত যার কারণে তার কাছে মনে হইছে যে আযান আর নামাজ বাংলা।

ঠিক এর উল্টোটা যদি বাংলাদেশে চিন্তা করি-

আযান আর নামাজ আরবীই যার কারণে আযান যখন হয়, কি বলে বুঝি না মনে করি আরবীতেই ডাকতেছে, যখন ইকামাত হয় তখনও বুঝি না মনে করি এটাই নামাজের নিয়ম তাই পড়তেছে কিন্তু বুঝি না যে-

আল্লাহু আকবার- মানে আল্লাহ মহান

.....

হাইয়া আলাছ ছালাহ- এসো নামাজের দিকে

হাইয়া আলাছ ফালাহ- এসো কল্যাণের দিকে

........

কাদকা মাতিছ ছালাহ- নামাজ শুরু হল.

উপরোক্ত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ পূর্বক আমি কিছু রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিকৃতির ইঙ্গিতই খুজে পেলাম যাহা আমাদের মুসলিম সমাজ ঘুনে আক্রান্ত বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হল যা কিনা ধীরে ধীরে পুরোটাই গ্রাস করবে, শুধু থাকবে নামকাওয়াস্তে মুসলমান সমাজ এবং এর পেছনে যারা কাজ করে যাচ্ছেন বলা চলে তারা খুবই সফল হচ্ছেন।

বি: দ্র: ব্লগে কোন বিজ্ঞ আলেম থাকলে উপরোক্ত ঘটনার সঠিকতা নিরূপণ করার জন্য অনুরোধ রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে।

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File