প্রসঙ্গ টিভি দেখা: জায়েয না হারাম
লিখেছেন লিখেছেন শান্তিপ্রিয় ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:১৬:১২ দুপুর
আমাদের দেশে এক শ্রেণীর আলেম আছেন, যাদের সৃষ্টিতে টিভি হারাম। চাই ইসলামী হোক কিংবা অনৈসলামী। এবার দেশে ছুটিতে গিয়ে কাদিয়ানীর চেলা বরকতুল্লাহর তনয় হাবীবুল্লাহ ভণ্ড নবুওতদাবীদারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে টিভিতে কাদিয়ানীদের প্রচার সম্পর্কে বলেছিলাম; যে তারা বিশ্বের অনেক ভাষায় সরাসরি তাদের দাওয়াত প্রচার করছে। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আলোচনা সংক্ষেপ করতে বলা হলো। উপস্থিত জনতা হতে আওয়াজ আসা শুরু হলো যে, হুজুর টিভির ওয়াজ বন্ধ করুন। আমি আমার আলোচনা যথা সময়ে শেষ করলাম। আমাকে ভিতরে ডাকা হলো, সকলে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, আপনি তো আজ টিভি দেখা জায়েয করে দিলেন! আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, এবং বললাম: আমি টিভি হালাল করতে যাবো কেন? টিভি তো আগ থেকেই হালাল। এই জবাব শুনে সকলে এক সঙ্গে বলা শুরু করলো, আপনি বলেন কি! টিভি দেখা হারাম, আমরা এই ফতোয়াই দিয়ে আসছি।
তখন আমি বললাম,আপনাদের এই ফতোয়া শুনে কয়জন লোক টিভি দেখা ত্যাগ করেছে? এবং কয়টি বাড়ি দেখাতে পারবেন যে, টিভি নাই? অথচ গ্রামের প্রতিটা ঘরে এখন স্যাটালাইট টিভির লাইন রয়েছে।
আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম,যে এই যুগটা মিডিয়ার যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমাদেরকেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দাওয়াতী কাজে ভূমিকা রাখতে হবে।
স্থানীয় এক শাইখুল হাদীস ও মুফতী বললেন, ২৫টি দলীলের ভিত্তিতে টিভি দেখা হারাম।
আমি বললাম, দুই একটা দলীল পেশ করুন। তিনি বললেন, দেখুন টিভিতে উপস্থাপনা মহিলারা করে থাকে, তাই হারাম। এই দলীল শুনে হাসবো না কাঁদবো, বললাম অনেক টিভি চ্যানেল এমন আছে, যার উপস্থাপক পুরুষ। মহিলাদের সেখানে কোন সুযোগ নাই। তখন তিনি বললেন, এমন হতেই পারে না। বললাম, হতে পারে। ক্বানাতে মাজদ, ( সৌদী আরব, ক্বানাতে রিসালা, কুয়েত, তাছাড়া ক্বানাত ইক্বরা, এছাড়াও মধ্যপ্রচ্যের সব দেশেই এমন চ্যানেল রয়েছে, যেগুলোতে ইসলামী আলোচনা, কুরআন তেলাওয়াত, হাদীসে রাসূলের আলোচনা হয়ে থাকে। আমার একথা শুনে শায়খ বললেন, যে তবুও হারাম। আমি বললাম এগুলোতে তো আর মহিলারা উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে না। তিনি বললেন, টিভির আবিষ্কারকরা অমুসলিম, তাই টিভি দেখার হারাম। (এটা তার দ্বিতীয় দলীল) আমি বললাম, মাশা আল্লাহ! আজব দলীল পেশ করলেন। এটা যদি হারাম হওয়ার দলীল হয়, তাহলে তো আজ আর এখান থেকে বাড়িতেই যেতে পারবনে না! কারণ, যে গাড়িতে চড়ে বাসায় যাবেন, তাও তো অমুসলিমদের আবিষ্কার, আপনার হাতের মোবাইল সেটটি অমুসলিমদের আবিষ্কার, আপনি হজ্জ করতে সৌদী আরব গিয়েছিলেন, প্যালেনে চড়ে তাও অমুসলিমদের আবিষ্কার, এই দলীলে যদি টিভি দেখা হারাম হয়, তাহলে তো আপনার হজ্জ হয় নাই, বাড়িতে যাওয়া হারাম হবে, মোবাইল ফোন রাখতে পারবেন না।
তাদের সবগুলো দলীল এমন খোড়া যা একজন সাধারণ গবেষক জবাব দিতে পারবেন। কুরআন ও হাদীস হতে একটি দলীলও দিতে পারেন নি। আরো কত কথা। আমার ইমেইজ বিলীন করে দিলাম, কারণ আমি টিভির পক্ষে কেন কথা বললাম। জনগণ আমার কোন কথাই আর শুনবে না। আমি বললাম, আপনাদের এমন ফতোয়ায় কি কোন বাড়ি টিভি ছাড়া হয়েছে, মোবাইল ছাড়া কোন লোক দেখাতে পারবেন। আপনার নিজের হাতেও অমুসলিমদের তৈরী হারাম মোবাইল রয়েছে।
একসময় এই শ্রেণীর আলেমরা ইংরেজি পড়া হারাম ফতোয়া দিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তাড়াও ইংরেজি পড়ান।
হক্কানী ওলামেয় কেরামগণ যদি এমন ফতোয়া না দিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতো, তাহলে ইসলামের সঠিক কথাগুলো বিশ্বব্যাপী সহজে পৌঁছে যেতো। বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি টিভিতে ইসলামী আলোচনা হয়, তাদের মধ্য হতে কিছু কিছু চ্যানেলে বেদআতী আলেমগণ অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু চ্যানেলে সঠিক কথা-বার্তা প্রচার হচ্ছে।
দেখুন টিভি একটি যন্ত্র, এর মাধ্যমে আপনি যা দেখাতে চাইবেন,তাই সে দেখাবে,এক কথায় টিভি আয়নার মতো,আয়নার সামনে যে ছবি ধরা হবে,সে তাই দেখাবে, ছবি সুন্দর না হলে যেমন আয়নাকে দোষারোপ করা যায় না, টিভিতেও খারাপ কিছু দেখালে, টিভিকে খারাপ বলা যুক্তি সঙ্গত হবে না। বরং যিনি পরিচালনা করছেন, তাকেই দোষারোপ করতে হবে। টিভিতে যদি ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়,সেই ক্ষেত্রেও টিভিকে হারাম ফাতাওয়া দেওয়া এক প্রকারের অজ্ঞতা বা গোঁড়ামী।
আমার এই কথাগুলো একটি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা, কাউকে হ্যায় করা উদ্দেশ্য নয়, আসুন আমরা প্রচারের যতগুলো প্রযুক্তি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে, ইসলামের সঠিক আলো সারা বিশ্বে পৌঁছে দেই। কারণ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং শোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যতদ্রুত সংবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, অন্য কোন উপায়ে এত দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব না।
আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
বিষয়: বিবিধ
৪৮০৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্ কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। সব ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার এই মহাগ্রন্থ আল্ কুরআন। এটি মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
এর অধ্যয়ন, অনুধাবন ও অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের কল্যাণ। আল কুরআনের বিধান মানবজাতির জন্য চিরন্তন, চিরদিনের, যা অপরিবর্তনীয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আমি আপনার কাছে আল কুরআন এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি, যেন আপনি মানুষের সামনে তাদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ বাণীসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন (সূরা নাহল-৪৪)।
পবিত্র আল্ কুরআনে আরো ঘোষিত হয়েছে - নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দেন’ (সূরা ইমরান-১৬৪)।
আল্ কুরআন মহান বিশ্বনিয়ন্তার এক মহা দান, যা পাঠ করলে হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্তি। আত্মায় ঢেউ খেলে যায় এক অলৌকিক নূরের, যা পাঠ করলে হতে হয় মোহগ্রস্ত, লোভাতুর, এক আবেগ যেন ছাড়তে চায় না মনকে।
কী মধুর সুর..! কী মায়াবী এক টান। প্রেম আর বিশ্বাস নিয়ে যখন কোনো মুমিন আল্ কুরআন পাঠ করে বা শোনে, তখন কি সে তার নিজের মধ্যে থাকে..?
তার অস্তিত্ব, তার হৃদয় কোথায় দোল খায়? সে কি বলতে পারে? নিশ্চয় নয়। আল কুরআন হচ্ছে এক মোহনীয় সুরের মায়াবি টান, যা পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষায় নেই। নেই পৃথিবীর কোনো সুরে।
তাই তো আরব্য ইতিহাসে পাওয়া যায় রাসূল (সাঃ)এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কুরআন পাঠ করলে মক্কার কাফেরেরা চুপিসারে এসে তা শুনত। আর বিমোহিত হতো। কিন্তু তাদের কপালে হেদায়েতের মতো মহান সম্পদ জোটেনি।
হজরত উমর ফারুক (রাঃ) তো তার বোনের তেলাওয়াত শুনেই পাগল হয়েছিলেন এবং নাঙ্গা তরবারি হাতে রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে এসে মুসলমান হয়েছিলেন।
কুরআন তেলাওয়াতকারীর ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সা: বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে আল কুরআন স্বয়ং শেখে এবং অন্যকেও শেখায়’ (বুখারি)।
যেহেতু কুরআনে ইসলামের মূল নীতিমালা এবং প্রচার-প্রসারের তাগিদ এসেছে বারবার, সেহেতু কুরআনের শিক্ষালাভ ও শিক্ষাদান এবং তা তেলাওয়াত করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়াই স্বাভাবিক।
তবে এখানে একটি কথা বলতেই হয়, আরবিভাষীরা তেলাওয়াতের সাথে সাথে কুরআনের অর্থ তথা তার মাঝে বর্ণিত হুকুম-আহকামকে বুঝত। আমাদের কুরআনের অর্থ জানা, বোঝা ও তার ওপর আমল করা অবশ্যই কর্তব্য।
আর সাধারণ জিকির থেকে কুরআন তেলাওয়াত অবশ্যই বেশি মর্যাদাশীল ও ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ানো এবং তেলাওয়াতের কারণে আমার কাছে কিছু চাইতে পারল না, আমি তাকে প্রার্থনাকারীর চেয়ে বেশি দান করি।
অপর হাদিসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, যে হৃদয়ে আল কুরআনের কোনো অংশ নেই, সে হৃদয় একটি বিরান গৃহের মতো। তেলাওয়াতকারী সম্পর্কে আরো বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে তাকে আল্লাহ তায়ালা দশটি নেকি দান করবেন (বায়হাকি)।
এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আল্ কুরআনের মধ্যে এমন সব নাজিল করেছি, যা বিশ্ববাসীর জন্য রোগমুক্তি ও রহমতস্বরূপ (সূরা বনি ইসরাইল ৮২)
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কুরআন তেলাওয়াতকারীদের আহ্বান করবেন এবং বলবেন, তোমরা কুরআন তেলাওয়াত করো এবং মর্যাদার আসনে উন্নীত হতে থাকো। নিশ্চয়ই তোমার মর্যাদার আসন হবে তোমার তেলাওয়াতকৃত আয়াতের শেষ প্রান্তে (মুসলিম, তিরমিজি)।
বস্তুত কুরআন পঠন ও পঠনে বিশেষ মনোযোগী হওয়া অবশ্যই কর্তব্য। কেননা, কুরআন কারিমের মাধ্যমেই মানবজাতি মনজিলে মকসুদে পৌঁছার পথ সুগম করতে পারে।
এর মাধ্যমেই মুমিন পায় তার স্রষ্টার পরিচয়। জানতে পারে প্রিয় রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শকে। বুঝে নিতে পারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বও-কর্তব্যকে। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত ও এর ওপর আমল করা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন