মৌলবাদ ও মৌলবাদী
লিখেছেন লিখেছেন শান্তিপ্রিয় ১৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৯:১২:৩৮ রাত
মৌলবাদ শব্দ বাংলা ‘মূল’ হতে সৃষ্ট। এর অর্থ মৌল বা মৌলিক। আর ‘বাদ’ শব্দের অর্থ কথা, মৌলবাদ অর্থ মূলকথা, আবার অনেক সময় ‘বাদ’ বিশেষ ক্ষেত্রে মতবাদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ‘মূল’ আসল সৃষ্টির ভিত্তি। মূল বা মৌল হল সত্য ও অকৃত্রিম সকল সত্যের ও সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন মৌলিক উপাদান। এজগতের সমুদয় সৃষ্টির মূলেই সেই সব মৌল উপাদান বিদ্যমান, যা বদলায়না। যেমন আকাশ, বাতাস, আগুন, পানি, মাটি ইত্যাদি। বিজ্ঞ জনেরাও বলেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা সকলেই আমাদের মূল সত্তায় ফিরে যাবো। অতএব সকল বস্তু ও জীবনের বৃদ্ধি-হিস্তি-বিনাশ তথা শেষ পরিণতি মৌল নির্ভর। মৌলতাই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি।
মৌলবাদীতার আভিধানিক সংজ্ঞা:
’ওয়েবস্টার’ অভিধান অনুসারে ’মৌলবাদীতা’ হচ্ছে একটি আন্দোলন যা আমেরিকার প্রটেস্ট্যান্ট কর্তৃক বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক লগ্নে শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল আধুনিকতার বিরুদ্ধে এবং উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বাস, নৈতিকতা ও ইতিহাস হিসেবে বাইবেল সত্য ও চিরন্তন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখা। এই আন্দোলন বাইবেলকে স্রষ্টা থেকে আগত ধর্মগ্রন্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চেয়েছিল। অতএব মৌলবাদীতা আসলে একদল ব্যক্তির উপর আখ্যায়িত হয় যারা কিনা বাইবেলকে সকল ভুলের উর্ধ্বে স্রষ্টার নিজস্ব মুখনিঃসৃত বাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চেয়েছিল।
অক্সফোর্ড অভিধান অনুসারে মৌলবাদীতা বলতে প্রাচীন কোন ধর্ম বা কোন বিশ্বাসকে দৃঢ়তার সাথে ধারন করা বোঝায়- উল্লেখযোগ্যভাবে ইসলাম ধর্ম।
আজকে যখনই কোন ব্যক্তি মৌলবাদী শব্দটি ব্যবহার করে তখনই তার মানসপটে একজন মুসলিম ব্যক্তির কথা মনে হয় যে কিনা সন্ত্রাসী। মূলত সন্ত্রাসের স্থান ইসলামে নেই। যারা এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তারা ইসলামই বুঝে নাই। আল্লাহর রাসূলগণ হতে এমন আকস্মিক হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত নাই। রাসূল (সা.) প্রতিরোধ মূলক যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
মৌলবাদ এমন একটি পরিভাষা, যা কোন ধর্মীয় ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ও মৌলনীতির সত্যায়ন ও এসবের অনুবর্তী থাকার প্রচেষ্টাকে বুঝায়। অন্য কথায় কোন ধর্মের মূল বিষয়ের প্রতি দৃঢ় আনুগত্যকেই মৌলবাদ বলা হয়। অপর দিকে ধর্মভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বে মৌলবাদ, ফান্ডামেন্টালিস্ট, ধর্মান্ধ ইত্যাদি পরিভাষিক গালিসমূহ প্রচার করা হচ্ছে। শব্দটিকে তারা গালি অর্থে ব্যবহার করলেও ধাতুগত বিচারে এটি অর্থ সূচক নয়। ফান্ডামেন্টালিস্ট শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো মৌলিক নীতিমালার অনুসারী ব্যক্তি। যদিও বা তাদের ভাষায় মৌলবাদ একটি গালি। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, মূল নির্ভর এই মৌলবাদ কথাটি এ পৃথিবীতে খারাপ হয়ে গেল, গালির বস্তু হয়ে গেল কেমন করে? অপর দিকে যে কোন বাদ মতবাদ মৌলই হওয়া দরকার। মৌলিকত্বই মানুষের কাম্য। কারণ আজও এ পৃথিবীতে মিথ্যা, খারাপ বলে চিহ্নিত। মিথ্যা ভালো, সত্য মন্দ; এ কথা বলার দুঃসাহস আজও পৃথিবীতে কেউ দেখায়নি। মৌলবাদ, যদি সত্যবাদই হয়, তাহলে মৌলিক খারাপ হয় কেমন করে? আজ আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মৌলবাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে। এদ্বারা তাহলে তারা কি জীবনে মিথ্যাবাদকেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মসজিদে বসে শুধু ইবাদত, তিলাওয়াত করার নাম ইসলাম নয়। অনুরূপভাবে ইবাদত, তিলাওয়াত, মসজিদ ত্যাগ করে মন যা চায় তা করার নামও ইসলাম নয়। ইসলাম আল্লাহপ্রদত্ত এক সর্বজনীন জীবন বিধান। ধর্মনিরপেক্ষতা হলো মানব রচিত এক মতবাদ। এই মতবাদ মানুষকে পশুত্বের নিম্নতম স্তরে নিক্ষেপ করতে পারে। সুতরাং মুসলমান কোন অবস্থাতেই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষ কথাটা একজন মুমিনের জন্য কৌতুক প্রদ ও হাস্যকর। যে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে জাহির করে, খুঁজ নিলে দেখা যাবে সে ইসলাম বিরোধী অমুসলিম বুদ্ধিজীবী।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! প্রকৃত ইসলাম পালন করতে গেলে চতুর্দিক হতে বাধা-বিপত্তি আসবে, শুনতে হবে অশালীন ভাষা, যেমন, মৌলবাদ, ধর্মান্ধ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী প্রভৃতি নানান গালি। আমাদের মনোবল দৃঢ় করতে হবে, পথিকের ইট নিক্ষেপের কারণে মনের মণিকোঠায় কোন রাগ-অভিমানকে স্থান দেওয়া যাবে না। কারণ আমরা তো প্রতিষ্ঠিত রয়েছি তাওহীদের ফলে পরিপূর্ণ একটি গাছে। যেমনিভাবে গাছের ফল যখন পরিপক্ক হয়, তখন যে কেউ সেই গাছে ইটপাটকেল মারে।
সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো, আসুন অমৌলবাদীদের রুখে দাঁড়ানোর শপথ নিয়ে মৌলবাদীদের পতাকা তলে জমায়েত হয়ে গগন-পবন কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলি “ইসলামী মৌলাবাদ জিন্দাবাদ”। “মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা নিপাত যাক”।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন