আল্লামা সাঈদী মুক্তির দাবীতে কুয়েতে সর্বস্তরের প্রবাসীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

লিখেছেন লিখেছেন শান্তিপ্রিয় ০৯ মার্চ, ২০১৩, ১০:১৬:০১ রাত



গত ৮ মার্চ শুক্রবার আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ কুয়েত এর উদ্যোগে কুয়েতস্থ সর্বস্তরের প্রবাসীদের অংশ গ্রহণেবাংলাদেশের সম্প্রতি গণহত্যা, আল্লাহ ও রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে অশালিন মন্তব্য ও ইসলামী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদের প্রতিবাদে জমিয়াতুল ইসলাহ, রওদা অডিটরিয়ামে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ, কুয়েত এর সভাপতি বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, ইমাম ও খতীব আল্লামা মোহাম্মদ সালেহ আল-আজহারী।



পরিষদের অন্যতম সদস্য জনাব জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুয়েতস্থ মাথনবাধিকার সংস্হার সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. আদেল জাসেম আল-দামখী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন কুয়েতের বৃহত্তর সামাজিক সংগঠন জমিয়াতুল ইসলাহ আল-ইজতিমাঈ’র প্রবাসী বিভাগের প্রধান ড. সোলাইমান আল-সাত্তী, বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য পেশ করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও খতিব সর্বজনাব মাওলানা সফিকুর রহমান খান, মাওলানা এমদাদুল্লা বেলালী, মাওলানা মাশহুদুর রহমান, মাওলানা আওলাদ হোসাইন প্রমুখ। পেশাজীবি ও ব্যবসায়ীদের মধ্য হতে বক্তব্য পেশ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জনাব মুহাম্মদ আবুল কাশেম।



উক্ত গণসমাবেশে কুয়েতের বিভিন্ন স্তরের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আলেমে দ্বীন, পেশাজীবি, ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ সর্বস্তরের প্রায় তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা আব্দুর রউফ-এর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আদেল আল-দামখী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও সম্প্রতি যে গণহত্যার সংবাদ সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে তা মানবাধিকারের চরম লঙঘন। এমতাবস্হায় তিনি প্রবাসীদেরকে ধৈর্য ধারণ করার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাকে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি অবহিত করার পরামর্শ দেন এবং তিনি নিজে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।



বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ড. সোলাইমান আল-সাত্তী সূরা সফ-এর ৮ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যুগে যুগে ইসলাম বিরোধীরা জমিন থেকে আল্লাহর দ্বীনকে নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে প্রজ্জ্বলিত করবেনই। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্হা তারই অংশ বিশেষ। তিনি আরও বলেন মিশরে মুসলমাদেরকে ৪২ বছর পর্যন্ত নির্যাতন করেও নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। তিনি ধৈর্য ও ঈমানী জযবা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার আহবান জানান এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণহত্যার জন্য শোক প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ইসলামকে ধ্বংস ও জাতিকে বিভক্ত না করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। সভাপতির বক্তৃতায় পরিষদের সম্মানিত সভাপতি আল্লামা মোহাম্মদ সালেহ আল-আজহারী অবিলম্বে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে আল্লামা সাঈদীসহ সকল ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং এযাবতকালে গ্রেফতারকৃত সকলকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানান এবং প্রবাসীদেরকে সকল অবস্থায় ধৈর্য ধারণ ও মহান আল্লাহর কাছে নফল রোযা ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার আহবান জানান। আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ, কুয়েত-এর পক্ষ হতে গণসমাবেশে নিম্নের লিখিত বিবৃতি পেশ করা হয় ঃ-

১। যুদ্ধাপরাদের বিচারের নামে একটি মীমাংসিত বিষয়কে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে টেনে এনে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও জাতিকে বিভক্ত করার যে পাঁয়তারা হচ্ছে তা কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

২। দেশের বরেণ্য ইসলামী ও শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিচারের নামে এটি যে প্রহসন চলছে তা ইতোমধ্যেই দেশ ও জাতির কাছে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।

৩। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ এ পর্যন্ত যে কজনের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে তাতে পুরা বিচার ব্যবস্থার প্রতি জাতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এবং বিচার ব্যবস্থায় কালিমা লেপন করা হয়েছে।

৪। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত একেক ঘটনা প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে বা প্রয়োজনে এ বিচারের আয়োজন করেনি বরং নিজেদের স্বার্থে ও ইসলাম বিরোধী ও নাস্তিকদের খুশী করতেই তা করা হচ্ছে।

৫। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে দেশে গৃহযুদ্ধ অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়বে যা গত কয়েক দিনের ঘটনা হতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং এতে প্রবাসীরাসহ পুরা জাতি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ, কুয়েত বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত দাবী পেশ করছে : -

১। অবিলম্বে ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে যুদ্ধাপরাধ বিচার নামক মিথ্যাচার বন্ধ করা হোক এবং এ পর্যন্ত দেয়া রায় প্রত্যাহার করে দেশের বরেণ্য ইসলামী ও শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সকল নেতা কর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হোক।

২। যুদ্ধাপরাদের বিচার করা যদি সরকার সত্যিই প্রয়োজন মনে করে তাহলে এ বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করা হোক এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মানের তথা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস-এর অধিনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দল মত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হোক।

৩। সরকারের নেতিবাচক পদক্ষেপের কারণে এ পর্যন্ত জান মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তা নির্ণয় করে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দেয়া হোক, সরকারিভাবে নিহতদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব নেয়া হোক ও আহতদের সুচিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হোক। সর্বোপরি এ পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন মহান আল্লাহ যেন তাদের শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে আখেরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন, তাদের শোকাহত পরিবারকে উত্তম ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দেন, আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যান, ক্ষতিগ্রস্তরা যেন তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন এই দোয়া করে শেষ করছি। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন - আমিন।



বিষয়: আন্তর্জাতিক

২০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File