বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা

লিখেছেন লিখেছেন নব ধুমকেতু ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৩০:২৯ রাত

একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই মেতে উঠি বাংলা ভাষার চর্চায় আর বাকী মাসগুলোতে দৌড়াদৌড়ি করি বিদেশী ভাষার পিছনে। ৩ মার্চ ২০১০ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন চিল এই রকমঃ সিমরান ও সিম্ফনি প্রতি বছরই শহীদ বেদীতে আসে ফুল দিতে। বাবাও এসেছেন আর মাম্মী আসবে ক্লাবমেটদের সাথে। সিম্ফনির প্রিয় Red rose দিবে বেদীতে। আজ কেন এসেছে জানতে চাইলে সিম্ফনির উত্তর, Today is our international mother language day! shit, তুমি জান না? ছোট্ট সিমরান উল্টো জানতে চায়, Papa আপু Wrong answer দিল। international use হলে আবার our হবে কেন? ভুল শুধরে বাবা রাকিব হাসনাইন বলেন, এটা first অমাদেরই ছিল । পরে জাতিসংঘ এটাকে internationally receive করে। এটা আমাদের গর্ব।'গর্ব কি? সিম্ফনির প্রশ্ন। 'Rascall, proud! উত্তর সিমরানের।" পাঠক এটা একটা সাধারণ ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরণ। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা বাংলা সংস্কৃতির জ্ঞান থাকলেও ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠানে বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থা আরও করুন। কিছুদিন আগে একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা যায় অনেক ছাত্র ছাত্রীরা বাংলা সাল বা ঋতুর নাম সঠিকভাবে বলতে পারে না। এফ এম রেডিওর কথা আর কি বলব। এখানে বাংলাভাষাকে প্রতি মুহুর্তে হত্যা করা হয়। ফেব্রুয়ারীতে মনে পড়ে ভাষা আন্দোলনের কথা আর সারা বছর পড়ে থাকি Star jalsha, star plus, zee bangla সহ অসংখ্য বিদেশী চ্যানেল। যে দেশে আমাদের চ্যানেল নিষিদ্ধ সে দেশের সিরিয়াল না দেখলে মন ভরে না। তাদের নকল করে সিরিয়াল নির্মান করি। অথচ একটা সময় কলকাতার দর্শক সিলভারের হাড়ি দিয়ে এন্টেনা বানিয়ে বিটিভিতে হুমায়ুন আহমেদের নাটক দেখার জন্য কত চেষ্টা করত। নিজেদের মূল ভুলে অন্ধভাবে অন্যের অনুকরণ করছি। শিশুদের বাংলা ভাষার বিরু প্রভাবের কারণে Dorman নামক হিন্দি ডাবিংকৃত কার্টুন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এদেশে। স্যাটেলাইট যুগে, মোবাইল ফোন বিপ্লবে আমরা কজনই বা বাংলার প্রতি অনুরাগ দেখায়? আমাদের ফোনে বা পিসিতে তো হিন্দ গান আর সিনেমাতেই ভরপুর। আমাদের আচার আচরণ, কথা বার্তা, চাল চলন, সম্বোধনের শাব্দিক পরিভাষা, পোশাক পরিচ্ছদের এবং বিনোদনের একটা ঐতিহ্য আছে যা আমাদের শালীনতা আর পরমত সহনশীলতা এবং পরোপকারের শিক্ষা দেই। কিন পশ্চিমা ও হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমরা শিখছি পারিবারিক কলহ, সহিংসতা, পরকীয়া প্রেমের মত ভয়াবহ অনুশীলন। মেয়েদের শালীন পোশাকগুলো হারিয়ে যাচ্ছে জিন্স. টপস ও শর্টস এর আড়ালে। টিভিতে তো এখন মডেল নির্বাচনের অনুষ্ঠান হয় অল্প কাপড়ের মেয়েদের দিয়ে। International হওয়ার আকাঙ্খায় হারাচ্ছি নিজেদের মুল। অবমাননা করছি শহীদদের, মুক্তিযুদ্ধের বীরদের। বিজাতীয় সংস্কৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়ার জন্য এদেশ স্বাধীন হয় নি। এটা কারো দয়ার দান নয়। তাই এখনই সাবধান।

বিষয়: বিবিধ

১০০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File