ঐক্যতানের ডাক দিয়ে যাই
লিখেছেন লিখেছেন সূর্য রশ্মি ০৩ মার্চ, ২০১৩, ১০:৩৫:১৫ সকাল
গত কয়েকদিন ধরেই মনটা অস্থির। কোন কাজই স্বাভাবিকভাবে করতে পারছিনা। একদিন যে সহিংসতার সচিত্ররূপ দেখছি তা মন মস্তিস্কে খুব ভালরকমের প্রভাব পড়েছে। চোখের সামনে ভেসে আসছে নিহত মানুষদের রক্তাক্ত মুখচ্ছবি, ভেসে আসছে দিগবিদিগশূণ্য হয়ে দৌড়ঝাপরত মানুষগুলোর অসহায় অবয়ব, ভয়ার্ত চাহনী। খাবার খেতে গেলে মনে হয় ঐ হতভাগাদের রক্তের গন্ধ তরকারীতে মিশে আছে। একটু আনমনে পায়চারি করব তারও জো নেই। অনুভব করি তাদের অস্তিত্ব, ফিস ফিস করে আমার কানে কি যেন বলতে চাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখি একটি বুলেট শা করে এসে আমার মাথাটা ফুটো করে পাশের একটা দেয়ালে আঘাত করে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করি তখন। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও অনুমিত হয় সেই যন্ত্রনা। দুচোখ ঝড়ে নামে অশ্রুধারা। ছোটবেলা থেকেই ঝগড়াঝাটি, মারামারি এড়িয়ে চলতাম, ঘৃনা করতাম গ্রুপিংকে। সবার সাথে একটা আন্ডারস্ট্যানডিং ভাব বজায় রাখার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালাতাম।
কিন্তু আজ চোখের সামনে দেখছি ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি, হত্যা ধ্বংসযজ্ঞ। পৃথিবী কি শীতলতা পছন্দ করেনা? এসব করে কার কি লাভ হচ্ছে বুঝিনা। কি এক বিভক্তির মরণ খেলায় আমরা মেতে উঠেছি। খেলছি রক্তের হলিখেলা। চোখে মুখে ক্রোধান্বিত মানুষের এক ভয়ংকর উন্মাদনা। সবাই মিলে যেখানে ভাল কিছু গড়ার স্বপ্ন দেখতে চাই সেখানে হাজির হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ বিপক্ষ নামক এক ভন্ডামী মনোভাব। মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত রেখে কি আসলেই সমাজের উন্নয়ন করা যায়? সবাইতো এদেশেরই আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠা আদম সন্তান। সবারইতো অধিকার আছে এদেশকে বসবাসের যোগ্য করে গড়ে তোলার। পক্ষ বিপক্ষ মতবাদ কেবল অশান্তিই ডেকে আনে, একে অপররের মৃত্যুতে উল্লাশ প্রকাশ করতে শিখায়। এ শিক্ষা যে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য একটা হুমকি স্বরূপ।
বিভেদের রাজনীতি করে আমরা দুই পক্ষেরই কত প্রিয়জনদের হারাচ্ছি। একবারও কি চিন্তা করে দেখছি সবারই একটা ব্যাক্তিগত জীবন আছে, সংসার আছে, মা-বাবা, ভাইবোন আছে। যাদের আয়ে সংসার চলে এদের ঘরে ফেরার জন্য পরিবারের সদস্যরা তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করে। সন্তান অপেক্ষা করে বাবা আজকে একটা ক্রিকেট ব্যাট কিনে দেবে, স্ত্রী অপেক্ষা করে “ওগো খুব ক্ষিদে পেয়েছে জলদি ভাত বাড়” এরকম প্রেমমিশ্রিত ডাকটি শুনার জন্য। ভাই অপেক্ষা করে “কিরে তোর দিনকাল কেমন চলছে” জন্মদাত্রী অপেক্ষা করে “মা” ডাকটি শুনার জন্য আর জন্মদাতা অপেক্ষা করে “বাবা” ডাক। অথচ দলাদলি নামক এক বর্ডার আমাদের এই ভালোবাসাময় জগৎ থেকে আলাদা করে দিচ্ছে।
অনেক হয়েছে। আর বিভেদ নয়। সবার মাঝে একতা চাই। পক্ষ বিপক্ষ শক্তি ভুলে সবাইকে এককাতারে আসতে হবে। ভাগাড় বনে যাওয়া এদেশটিকে একটি বাগিচায় পরিণত করতে হবে। যে বাগিচার ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়বে একদেশ হতে আরেক দেশে। হাতে অনেক কাজ। আসুন সকল ভেদাভেদ পায়ের তলায় পিশে একই সূরে গান গাই। দেশটিতে বইবে শান্তির সুবাতাস। সত্যিকারের প্রমান মিলবে, এটি আসলেই আমার প্রিয় সোনার বাংলা।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন