মিডিয়া-সংবাদকর্মীদের মাঝে বোধদ্বয় ঘটবে কবে?

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য রশ্মি ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:২২:৫৮ রাত

মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম প্রতিটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। কোনদেশের কি পরিস্থিতি তা আমরা এসবের কল্যানেই জানতে পারছি। সেজন্য এসব সেক্টরে যারা কর্মরত আছেন তারাও সমান গুরুত্বের দাবী রাখেন। একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক বা মিডিয়াকর্মী যেমন একটি সত্যকে দিনের আলোর মত সবার মাঝে তুলে ধরতে পারেন তেমনি একজন অসৎ কর্মী জাতিকে তার মিথ্যে প্রপাগান্ডার মাধ্যমে পুরো জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে তুলতে পারেন। তাই নিজস্ব মতপথ থাকা সত্ত্যেও নিরপেক্ষ সংবাদ বা ঘটনা পরিবেশন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এদের কথা মানুষ বিশ্বাস করে। তাই সংবাদ-মিডিয়াকর্মীদেরকে যখন দেখা যায় কোন বিশেষ দলের পদলেহনে ব্যাস্ত। তখন গোটা সেক্টরটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

একটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো যখন পশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে তখন তা ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনীসংকেত হয়ে দাড়ায়। আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যম-মিডিয়াকর্মীদের চাটুকারীতার অভ্যাস কোন নুতন বিষয় নয়। প্রতিটি স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা আসল সংবাদটিকে নানারকম বিশেষ্য বিশেষন যোগ করে সংবাদটির আসল চেহারাকেই পাল্টে দেন। এতসব চাটুকারদের ভিড়ে যারা সততাকে গুরুত্ব দেন তাদেরকে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন রকম সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতায়।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনাবলীতে মিডিয়া-সংবাদজগতের রহস্যজনক ভূমিকার দরুন এ মাধ্যমটি সবচেয়ে কলংকজনক অধ্যায় পার করছে। চোখের সামনে ঘটিত বিষয়গুলো যখন সংবাদমাধ্যম বিকৃত করে প্রকাশ করছে, জনগনের মাঝে তখন মিডিয়ার প্রতি বিশ্বাসের গ্রাফ আস্তে আস্তে নীচে নেমে যাচ্ছে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মের প্রতি দূর্বল। ইসলামের আহকাম, হুকুম ঠিকমত পালন না করলেও ধর্মকে অবজ্ঞা করার চিন্তা আমাদের মনের জগতে প্রবেশও করতে পারেনা। আলেম সমাজকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখে এসেছি। কোন বিপদ,মুসিবতে পড়লে আলেমদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে আসি। ধর্মীয় প্রভাবের কারনে বাম ধারার রাজনীতিবিদগণ জনগনের মাঝে তেমন কোন সাড়া ফেলতে পারেনা। যেকোন বিচার সালিশে ধর্মপরায়ন ব্যাক্তিদের আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়। সেই ধর্মকে যখন কোন ব্যাক্তি বিশেষ আঘাত করে তখন এদেশের মানুষ কখনোই বিষয়টাকে মেনে নেয়না।

সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগ আন্দোলনে জড়িত কিছু নাস্তিকদের ধর্মবিরোধী লেখা প্রকাশ হয়ে পড়ায় জনসাধারনের মাঝে একটা বিরুপ প্রভাব পড়ে। এমনিতেই এ আন্দোলনের কার্যকলাপ অনেকের চোখে সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়েছে। বিচারের দাবী করে যখন সকল ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষনা করা হলো দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা তা সহজভাবে নেয়নি। যেসব লোক প্রথমে সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিল তারাও এরকম কর্মকান্ডের কারনে একবুক হতাশা নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এরইমধ্যে যখন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কিছু ব্যাক্তিদের ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করা লেখা যখন কিছু সৎ নিষ্ঠাবান সংবাদকর্মী বিবেকের খাতিরে প্রকাশ করে দিলেন তখন সেটা যেন হয়ে উঠল কাটা ঘায়ে নূনের ছিটা। এলাকায় বহু আওয়ামীলীগের নেতারা পর্যন্ত ইসলাম অবমাননাকারীদের অভিসম্পাত করেছেন। কিন্তু মিডিয়া-কর্মীরা দিনের আলোয় প্রকাশিত সত্যকে মিথ্যা প্রমান করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামল। নাস্তিকদের লেখাগুলোকে সরিয়ে ফেলে ঘটনাকে কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে প্রচার করা শুরু করল। এসব ঘটনার নাটের গুরুদের বিভিন্ন টকশোতে হাজির করিয়ে প্রমান করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল যে তারা নির্দোষ।

মিডিয়ার এরকম বেহায়াপনায় মানুষ খুবই ক্ষু্ব্দ। তাদের কথা আজ মানুষ বিশ্বাস করতে চায়না। ইসলামকে অবমাননার প্রতিবাদে যখন সারা দেশের মুসলমানরা রাস্তায় নেমে উঠে পুলিশের আক্রমনের শিকাড় হলো এরপরেও এরা ক্রমাগত এ আন্দোলনকে জামায়াত শিবিরের আন্দোলন বলে প্রচারনা চালাচ্ছে। কিন্তু মানুষ জানে তারা কিসের জন্য আন্দোলন করছে। শাহবাগের সেই ঐতিহাসিক গনজোয়ারে যেমন অনেক মানুষ স্বইচ্ছেয় গিয়েছিল আজও সেই বিবেকের তাড়নায় সেই মানুষগুলো নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য রাস্তায় নেমেছে। কোন বিশেষ দলের নির্দেশে নয়। প্রায় প্রতিটি মসজিদে জুমুয়ার খুতবায় খতিব সাহেব ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আলোচনা করেছেন। খোদ আওয়ামীলীগের এলাকাতেও অনেক মসজিদ থেকে নামাজের পড় মিছিল হয়েছে যেখানে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ স্বত:স্ফূর্ত ভাবে যোগ দিয়েছে। মিডিয়া যতই সত্যকে মিথ্যা বলে প্রচার করুক না কেন মানুষের সেন্টিমেন্ট এবং ব্যাক্তিসত্ত্বাকে কখনোই মিথ্যে প্রমান করতে পারবেনা।

ইসলামী দলগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশে তাদেরকে যেভাবে অত্যাচার করা হলো এবং মিডিয়া যেভাবে এখবর বিকৃতভাবে প্রকাশ করছে এর ফলাফল খুব ভাল হবেনা। মানুষের মন থেকে যখন কোন বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায় তখন সেই বিশ্বাসকে জোড়া লাগানো যায়না।

সংবাদ এবং মিডিয়া কর্মীদের এরকম আচরনের কারনে ভবিষ্যতে মানুষ তাদের কথা আর বিশ্বাস করবেনা। এ মাধ্যমটি হয়ে যাবে সবচেয়ে ঘৃনিত মাধ্যম। ভাল মানুষেরা এ লাইনে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। গোটা দেশ তখন বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে পড়বে। তাদের সৃষ্টি করা চোরাবালিতে তাদেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম হাবুডুবু খাবে।

মিডিয়া-সংবাদকর্মীরা যত তাড়াতাড়ি বিষয়টা বুঝতে পারবেন ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

বিষয়: বিবিধ

৯৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File