বদরুদ্দীন উমরের "জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগ জোট সরকার এখন কোন পথে?" এবং আমার সাম্প্রতিক ভাবনা

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য রশ্মি ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৭:২৪ সকাল

দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় সম্মানিত কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমরের লিখা “জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগ জোট সরকার এখন কোন পথে?” কলামটি পড়লাম। তিনি বর্তমান সহিংসতার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে এবং এই উস্কানীদাতা হিসেবে আওয়ামীলীগের তুমুল সমালোচনা করেছেন। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের যে সহিংস আন্দোলনের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ যে একটা বিশাল ভূমিকা রেখেছে সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আর্ন্তজাতিক ট্রাইব্যুনালের বিরোধীতা করার জন্যও তিনি জামায়াত শিবিরকে তুলোধুনা করেছেন। ইসলামে যে অপরাধ করলে তার শাস্তির বিধান আছে সেটা উল্লেখ করতেও ভুলেননি। কাজেই হযরত মুহাম্মদ স: যে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তার সাথে জামায়াতের আদর্শের কোন মিল নেই।

আমরা জানি ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে পরিবারের সকল কাজকর্মের নিয়ম ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় অর্ন্তভুক্ত। এই ব্যবস্থা সাম্যের কথা বলে। অপরাধী যাতে চোখে ধুলো দিয়ে পার পেয়ে না যায় সেদিকে যেমন কড়া নজর রাখে তেমনি অপরাধীর বিচার করতে গিয়ে যাতে নির্দোষ ব্যাক্তিকে হয়রানী বা দোষী সাব্যস্ত না হয় সেদিকেও সমান নজর রাখে। আর এজন্যই ইসলামী বিচারকার্যে স্বাক্ষীর প্রমান একটা ভাইটাল ফ্যাক্টর। শুধু স্বাক্ষী দিলেই হবেনা সেটা হতে হবে নির্ভরযোগ্য চাক্ষুস। এবং স্বাক্ষী যদি মিথ্যা কথা বলে তার শাস্তিরও বিধান আছে।

আমরা তথাকথিত বিচার ট্রাইব্যুনালে যদি নজর দেই তাহলে দেখব একটি আদর্শ বিচারকার্যের যে নিয়ম আছে তার কোনটাই মানা হয়নি। সম্প্রতি স্কাইপি কেলেংকারীতে ফাঁস হয়ে যায় কিভাবে বিচার কাজ সম্পন্ন হবার আগেই রায় লিখে নেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমানের আগেই যদি কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ফেলি তাহলে সেটা আইনের শাসন কিভাবে হলো? যখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আটক করা হলো তখন কিন্তু জামায়াত শিবির এরকম কঠোর আন্দোলন করেনি। তারা নিজেরাও চেয়েছিল ’৭১ বিষয়টার একটা মীমাংসা হয়ে যাক। যে বিরোধীতাগুলো তখন করা হয়েছিল তার কারন তাদের আশংকা ছিল ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। ট্রাইব্যুনালে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিগন একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন যাতে রায় প্রভাবিত হবার সুযোগ থাকে। এরপর নানা নাটকিয়তা ঘটতে থাকে চীফ প্রসিউকিউটরের পদত্যাগ, বিচারপতির পদত্যাগসহ নানা রকম সন্দেহজনক কাজ। এগুলো কেন ঘটছে তার কোন সন্তোষজনক জবাব সরকার দিতে পারেনি। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে বিচার কাউকে ফাসি দেবার উদ্দেশ্যে করা হয়না। বিচার করা হয় কে প্রকৃত অপরাধী সেটা প্রমান করার জন্য। অভিযুক্ত ব্যাক্তির অপরাধ প্রমান হলে তার আইনানুযায়ী বিচার হবে আর যদি প্রমান না হয় মুক্তি পাবেন। এখানে তার পাবলিক সেন্টিমেন্ট কি সেটা অগ্রহণযোগ্য। একটা মানুষকে আমার ভাল না লাগলেই যে তার আমি ক্ষতি চাইব, তার মৃত্যু কামনা করব এটা হতে পারেনা।

ট্রাইব্যুনালকে আর্ন্তজাতিক বলা হলেও তার বাস্তবে কোন ছিটোফোটাও ছিলনা। বাহিরের থেকে আইনজীবী আনতে বাধা দেয়া হয়েছে। স্বাক্ষীদের গুম করা হলো এবং তা নিয়ে সরকার পক্ষের কোন মাথাব্যাথা ছিলনা। সরকারী স্বাক্ষী হিসেবে এমন কয়জনকে আনা হলো যারা বিভিন্ন অপরাধে জেলখাটা আসামী। এদেরকে টাকার বিনিময়ে সব কিছুই করানো যায়। আবার অন্যদিকে জামায়াত যেসব স্বাক্ষীদের হাজির করতে চেয়েছে তাদেরকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এভাবে কি বিচার কার্য পরিচালনা করা সম্ভব? এতদাসত্ত্বেও জামায়াত শিবির কোন সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেনি। তারা শুধু ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতার দাবি চেয়ে আসছিল এবং তাদের সেই দাবিকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে সরকার তার পেটোয়া বাহিনী এবং তার পোষা কুকুর ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। জামায়াত-শিবির ট্রাইব্যুনালের এরকম বিতর্কিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ ভাবে করে আসছিল। সরকারের চার বছর মেয়াদে কয়দিন জামায়াত শিবিরের এরকম আক্রমনাত্নক রুপ আপনারা দেখেছিলেন? জামায়াতের অভিযুক্ত নেতাদের অপরাধ কোন স্বাক্ষীই স্বচোক্ষে দেখেনি সবাই এর ওর মুখে শুনেছে। শুনা কথার উপর ভিত্তি করে যদি বিচারের রায় দেয়া হয় সেটা আমাদের বিচারবিভাগকেই কলংকিত করবে। স্কাইপি কেলেংকারীর মাধ্যমে যখন গোটা বিচারকার্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং এই প্রশ্নবিদ্ধটাকে আমলে না নিয়ে বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো অবশ্য কর্তব্য। কারন আইনের মাধ্যমে যদি কোন কাজ করা হয় তাহলে তা বৈধতার সার্টিফিকেট পেয়ে যায়। এত বিতর্কিত হবার পরেও যদি এ ট্রাইব্যুনাল তার বিচারকার্য চালিয়ে যেতে থাকে এটার মানে দাড়ায় ভবিষ্যতে যেকোন মামলা বিতর্কিত ব্যাক্তিরা চালাতে পারেন। আইন যদি বেআইন হয় তাও বৈধ হয়ে যাবে। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা অশনী সংকেত। এটাকে যদি আন্দোলন করে বন্ধ না করা যায় তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর একটা কারন হয়ে দাড়াবে। সেজন্য যদি সহিংস আন্দোলনও করতে হয় সেটাও করতে হবে।

সহিংস আন্দোলন কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু পরিস্থিতি যদি একটা বিশেষ রুপ নেয় তখন সেই আন্দোলন ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। বৃটিশদের থেকে আমরা কোন শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্বাধীনতা পাইনি। পাকিস্তানীদের থেকেও কোন শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্বাধীনতা পাইনি। এর জন্য অনেক রক্ত ঝড়াতে হয়েছে অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু এর সুফল পরবর্তীতে আমরা পেয়েছি। জামায়াতের এই অভিযোগ চিরদিন থাকবেনা। হয়ত গায়ের জোরে যেসব কাজ সরকার করতে চাইছে তা সম্পন্ন হবে কিন্তু সে রেখে যাবে একটা কালো আইন যা কিনা সরকার এবং আদালত বৈধতা দিয়ে গেছে। এবং পরবর্তীতে এই ধরনের কর্মকান্ড প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে ব্যবহৃত হবে তখন তা কেবল জামায়াতে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। সেটা হতে পারে আওয়ামীলীগ, বিএনপি আবার আপনি আমিও তার স্বীকার হতে পারি।

বিষয়: রাজনীতি

১০১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File