নূহ আ: এর কিস্তি, আল্লামা শফীর স্বাধীনতাবিরোধী খেতাব এবং বর্তমান জামায়াতে ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন সূর্য রশ্মি ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৬:৫৩ সন্ধ্যা
হযরত নূহ আ: এবং তাঁর কিস্তির ঘটনা আমরা সবাই কমবেশি জানি। হযরত নূহ আ: যখন আল্লাহর গজবের হাত থেকে তাঁর উম্মতদের রক্ষা করার জন্য আল্লাহর নির্দেশে বিশাল নৌকা তৈরী করলেন কাফের মুশরিকরা সেই নৌকায় মলমূত্র ত্যাগ করে পুরো নৌকাটাকে নোংরা করে দিল। আল্লাহর কুদরতে এক অন্ধ রোগী সেই নৌকায় প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে পা পিছলে মল-মূত্রের মধ্যে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে সে আবিস্কার করল যে সে চোখে দেখতে পাচ্ছে। মূহুর্তের মধ্যে এই ঘটনা সারা এলাকায় রটে যায় এবং যে যেভাবে পেরেছে মল-মূত্র নিজের শরীরে মেখে অবস্থার পরিবর্তন করেছে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যখন ময়লা আর অবশিষ্ট নেই তখন পানি ঢেলে ময়লাগুলো কাচিয়ে তারা ব্যবহার করল। এতে নৌকাও পরিস্কার হয়ে গেল। যারা এই নৌকাকে অপবিত্র করে রেখেছিল তাদের দ্বারাই আল্লাহ নৌকাটিকে পরিস্কার করে নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে-ইসলামী একটি প্রথম সারির ইসলামী রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও একাত্তরের ভূমিকার জন্য এ দলটি জনগনের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও জামায়াত বরাবরের মত তাদের এই ভূমিকার পরিস্কার ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং তাদের আশংকা যে অমূলক ছিলনা সেটারও বহু প্রমান তারা দিয়েছে। কিন্তু ইতিহাসবচন এবং জামায়াত বিরোধী শিবিরের প্রচার প্রচারনা এতই প্রবল যে বেশিরভাগ সাধারন মানুষই জামায়াতের এই ব্যাখ্যার কর্ণপাত করেনি। তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী, আলবদর, রাজাকার খেতাব দিয়ে জনগনের থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তারা যখন মানুষের কাছে দাওয়াত দিতে যেত তখনই তাদের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে বহু মানুষ প্রশ্ন করত, জবাবে জামায়াত তার ব্যাখ্যা দিয়েও যখন কুলিয়ে উঠতে পারতনা তখন বলত ইসলামী আন্দোলন করতে গেলে এই ধরনের অপবাদ আসেই। আমাদের নবী রাসুলদের উপরও বিভিন্নরকম অপবাদ এসেছিল। যত যাই হোক জনগন তাদের এই জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এমনকি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরেরও কেউ কেউ তাদের এই ভূমিকার জন্য অস্বস্থিবোধ করত। অনেকেই মনে মনে ভাবত তাদের জন্য আমাদের কেন ভুগতে হবে। জামায়াত যদি একাত্তরে ঐ বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি না নিত তাহলে আজ তারা ক্ষমতায় থাকত।
বিরোধী শিবিরও মওকা পেয়ে ক্রমাগত জামায়াত বিদ্বেষ ছড়াতেই লাগল যেটাকে আসলে ট্যাকেল দেওয়া জামায়াতের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম রাস্তায় নেমে আসে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বয়:বৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমেদ শফী। ধর্মদ্রোহী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিসহ ইসলামবিরোধী কার্যক্রম বাতিলের দাবিতে প্রায় মাস দুয়েক ধরে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মানুষও তাদের এই আন্দোলনে একাত্নতা পোষন করে। এত বিপুল পরিমানে এই আন্দোলন সাড়া ফেলেছে যে বিরোধী শিবিরের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গিয়েছে। কয়েক দফা আপোসের চেষ্টা ব্যার্থ হবার পর তারা তাদের চিরপরিচিত তুরুপের তাশ মুক্তিযুদ্ধের সেন্টিমেন্টকে আবার সামনে নিয়ে আসলেন। বলা হচ্ছে আল্লাম শফী জামায়াতের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী। তিনি একত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী মুজাহিদ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। হেফাজতে ইসলাম যদি আজকে রাজনৈতিক ময়দানে পা দেয় কোন সন্দেহ নেই জামায়াত দ্বিতীয় সারিতে নেমে যাবে। এবং বর্তমান পরিস্থিতে হেফাজতে ইসলাম ইসলামী সংগঠনের জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন তাদেরকে আবার রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি উপাধী দেওয়া হলো। এমতাবস্থায় জনগনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে তাহলে ইসলামের পক্ষে যারা কথা বলবে তারাই কি রাজাকার আলবদর খেতাব পাবে? ব্যাপারটা আসলে কি দাড়াল? জামায়াত এতদিন ধরে যা বলে আসছিল তাকি তাহলে সত্যি?
এতে করে জামায়াতের রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী ইস্যুটা জনগনের সামনে আস্তে আস্তে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। তারা যে এতদিন বিভিন্ন মানুষের কাছে বলে এসেছে যারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে তাদেরকেই বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হবে যেটা জামায়াতকে এখন দেওয়া হচ্ছে সেটাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিলেন বিরোধী শিবিররা। জামায়াতেকে স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে যে রাজনৈতিক ফায়দাটা এতদিন ধরে লুটা হচ্ছিল হেফাজতে ইসলামকেও একই আখ্যা দিয়ে হুবহু ফায়দা লুটার পায়তারা চলছে। কিন্তু এই চালটা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসা শুরু করেছে। মানুষ আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে মূলত ইসলাম বিরোধীরাই ইসলামী শক্তিকে রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিচ্ছে তাদের কুমন:স্কামনা পূর্ণ করার জন্য।
হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কওমী হক্কানী আলেম এবং তাঁর অনুসারীগণ এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরা বরাবরই রাজনীতির ব্যাপারে খুব একটা মাথা ঘামাননা। একসময় হয়ত তারা তাদের কাজ সমাধা করে যে যার জায়গায় ফিরে যাবেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে জামায়াত থাকবে। তারা মানুষকে তখন বলতে পারবে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী নই। মূলত ইসলাম বিরোধীরা যাতে ইসলামের প্রসার বাংলাদেশে না ঘটুক সেটার জন্য এই অপবাদ দিয়েছে। যার প্রমান ইসলামের বড় একটা আন্দোলনে আল্লাম শফীকেও রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হযরত নূহ আ: এর নৌকায় কাফেররা নিজেরাই নৌকা অপবিত্র করেছিল আবার নিজেরাই তা পরিস্কার করেছিল। বর্তমানেও ঠিক একই জিনিস ঘটে চলছে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাজাকার,স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি উপাধী দিয়ে ইসলামপন্থীদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন তারাই আবার নিজেরা এই উপাধীগুলোকে কলংকিত করে প্রশ্নবিদ্ধ করে জনগনের নিকট অবিশ্বাস্য করে ইসলামপন্থীদের কর্মক্ষেত্রকে সহজ করে তুলছেন।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন