অপ্রিয় হলেও সত্য-৬ (অর্থ খরচ করবে স্বামী আর উপভোগ করবে অন্যরা?)
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৯:৩৪ দুপুর
অপ্রিয় হলেও সত্য-৬ (অর্থ খরচ করবে স্বামী আর উপভোগ করবে অন্যরা?)
এক কলিগের বোনের বিয়েতে যাবে বলে আরিফ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসে। আসার আগেই স্ত্রী ইয়াছমিনকে রেডি থাকতে বলেছিল। কিন্তু বাসায় এসে দেখে সে এখনো সাজ-গোজে ব্যস্ত। একমাত্র কন্যা জাহরা রেডি হয়ে টিভিতে কাটুন দেখছে। এখন রাত ৯ টা বাজে। কমিউনিটি সেন্টারে পৌছতে কমপক্ষে এক ঘন্টারও বেশী সময় লাগতে পারে। তাই স্ত্রীকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে আবারো তাগাদা দেয়। রেডি হতে দেরী হতে দেখে এবার আরিফ একটু রেগে গিয়ে বলে “এত সাজ-গোজ কার জন্য?” আরিফ আরো বলে“ সাজ-গোজ ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। বাইরে নিজেকে প্রদর্শণ করার দরকার নেই। কথাটি কি বারবার বলতে হয়? এবার স্ত্রী বলে, হয়েছে আর লেকচার দিতে হবে না। সাজ-গোজ শেষ। যাও, গাড়ী নিয়ে এসো।
চট্টগ্রাম শহরের রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা যে, গাড়ীর ঝাকুনিতে মাথা ব্যথা শুরু হয়। তার উপর জ্যাম তো লেগেই থাকে। কমিউনিটি সেন্টারে পৌছতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। ভেতরে প্রবেশ করে কলিগের সাথে দেখা করে স্ত্রী ও কন্যাকে কনের হল রুমে পাঠিয়ে দিয়ে বরের স্টেইজের সামনে বসে থাকে আরিফ।
বরের সাথে বরের বন্ধু-বান্ধবীরা ছবি তুলছে। সবার হাতে দামী দামী মোবাইল সেট। ফটোগ্রাফারও ব্যস্ত ছবি তুলতে। ভিডিওম্যান তার লাইটম্যানকে নিয়ে ভিডিও ধারন করে চলেছে। এই কর্ম বিয়ের প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। স্টেইজের এক পাশে বড় স্ত্রীনে কনের হল রুমের দৃশ্যও দেখানো হচ্ছে। কনের সাথেও সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। বেশীর ভাগ নারীর হিজাব নেই। এদের সাজ-গোজ দেখে মনে হয় সবাই পার্লারে সেজে এসেছে। এসব দেখে আরিফের মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ এই কাজগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। বড় গুনাহের কাজ। মানুষ জেনে শুনেই বিয়ের অনুষ্টানে গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়।
বিয়ের অনুষ্টান থেকে রাত বারেটায় বাসায় ফিরে আরিফ তার বউকে বলে, আমার কলিগ পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, কোরআন তেলোয়াত করে, ইসলামিক বইও পড়ে। তারপরেও বোনের বিয়েতে গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। আরিফের কথা শুনে স্ত্রী বলে, বিয়েতে সবাই একটু আনন্দফুর্তি করে এতে দোষের কি? তুমি এখনো সেকেলে রয়ে গেছ। একটু আধুনিক হবার চেষ্ঠা কর। আগের দিনের মত কনেরা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবে নাকি? স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে আরিফ শুয়ে পড়ে।
স্ত্রী ও কন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে। আরিফের কিছুতেই ঘুম আসছে না। ড্রয়িং রুমে লাইট জালিয়ে “কুরআন হাদিসের আলোকে পারিবারিক জীবন” বইটি হাত নিয়ে পড়তে থাকে-
স্বামীর উদ্দেশ্যে সাজ-সজ্জা গ্রহণ:
স্বামীর উদ্দেশ্যে সাজ-সজ্জা গ্রহন করা একটি সওয়াবের কাজ। স্বামীর উদ্দেশ্যে সাজ-সজ্জায় থাকার জন্য শরীয়তের নিদের্ শ রয়েছে।
বর্তমান নারীদের অবস্থা হলো, স্বামীর সামনে তারা নোংরা অপরিছন্ন ও ময়লা কাপড়-চোপড় পরে থাকে। আর বাইরে বেড়াতে যাবার সময় আপাদ-মস্তক সুসজ্জিত হয়ে যায়। কেউ স্বামীর উদ্দেশ্যে সাজ-সজ্জা গ্রহণ করলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায় যে, মেয়েটির লাজ-লজ্জা বলতে কিছুই নেই-স্বামীর সামনে সে কেমন রুপ চর্চা করছে।
পরিতাপের বিষয়! যেখানে সাজ-সজ্জা গ্রহন করা উচিত সেখানে তা নিন্দনীয়। আর যেখানে সাজ-সজ্জা গ্রহন করা অনুচিত সেখানে তা প্রশংসনীয়।
প্রতিটি জিনিসের একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে থাকে। আমার প্রশ্ন! ভালো কাপড়-চোপড় পরিধানের উদ্দেশ্যে কি শুধু অন্যদেরকে দেখানো? অদ্ভুত কান্ড! যাকে যেখানোর জন্য এ কাপড়-চোপড় ও সাজ-পোশাক তৈরী হয়েছে, যার টাকায় তৈরী হয়েছে, তার সামনে তা পরিধান না করে অন্যদের সামনে পরিধান করা হয়। বিষয়টি কিছুটা লজ্জাজনক হলেও সংশোধনের প্রয়োজনের বলতে হচ্ছে।
আজকাল স্ত্রীরা স্বামীর সাথে কখনও স্বতঃস্ফুর্তভাবে কথা বলবে না। তার সামনে ভালো কাপড়-চোপড় পরিধান করবে না অথচ অন্যের গৃহে গেলে সুমিষ্ঠভাষী বনে যাবে, সুন্দর থেকে সুন্দরতম এবং উন্নত থেকে উন্নতর সাজে সজ্জিত হবে এ কেমন কথা? অর্থ খরচ করবে স্বামী আর উপভোগ করবে অন্যরা?
এই পর্যন্ত পড়ে আরিফ ঘুমিয়ে পড়ে।
বিষয়: বিবিধ
২০১৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাজসজ্জা অন্যকে দেখানর জন্য হলেও সেটা স্বামির পয়সায় ই হবে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন