//===এক প্রবাসী আলমগীর ভাইয়ের জীবন সংগ্রামের কাহিনী===//
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৪৭:২৮ বিকাল
গতকাল রাতে দুবাইতে এক বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। ওনি ট্রলি গাড়ী মেরামত করতে একটি দোকানে এসেছিলেন। ওনার নাম আলমগীর। বাড়ী ফেনী জেলায়। দোকানের মেকানিক বাইরে ছিল বলে আলমগীর ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করি। তিনি আমাকে নিজের জীবন সংগ্রামের কথা শুনাতে গিয়ে বারবার চোখের পানি মুছছিলেন। এবার শুনুন তার কাহিনীঃ
মামু, দেশে থাকতে আমি বাবুর্চীর কাজ করতাম। আমার তিন ভাই সৌদী আরবে থাকে। ওরা সবাই বিবাহিত। বাবা মারা যাবার পর ওরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। ঘর থেকে বের করে দেবার পর আমি মসজিদের বারান্দায় রাত কাটাতাম। এই কষ্টের কথা হাজারী ভাই জানতে পেরে আমাকে পনের হাজার টাকা খরচ করে একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি অবিবাহিত ছিলাম। হাজারী ভাই বলেছিলেন তোর যাকে ভাল লাগে আমাকে বলবি আমি তোকে বিয়ে করাব।
একদিন দুর সম্পর্কের এক বাড়ীতে রান্না করতে গিয়ে একটি মেয়েকে দেখে আমার ভাল লেগেছিল। সেই ভাল লাগার কথা হাজারী ভাইকে বললে ওনি বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে করেছিলাম। বিয়েতে ভাইয়েরা না আসলেও বোনেরা এসেছিল। বিয়ের দিন শাশুরবাড়ী যাবার আগে বাবার কবরে গিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম।
বিয়ের আগে আমি নিজেই ঘরের সব কাজ করতাম। বিয়ের পরে শশুর বাড়ী থেকে মেহমান আসলে তাদেরকেও নিজ হাতে রান্না করে পরিবেশন করেছিলাম। আমার এই কর্ম দেখে বউ বলেছিল, "আমি আপনার পাশেই আছি। ইনশাআল্লাহহ আপনার কোন অভাব থাকবে না। কারো কাছে কোন দিন আপনাকে ছোট হতে হবে না।"
বিয়েতে উপহার পাওয়া সিকো ফাইভ ঘড়ি আমার হাতে দেখে একজন বলেছিল “কিরে আলমগীর তুইতো অশিক্ষিত। তোর হাতে সিকো ফাইভ ঘড়ি কেন? ঘড়ি শিক্ষিত মানুষ ব্যবহার করে।" তার কথায় রাগ করে সেদিন থেকে আর ঘড়ি ব্যবহার করিনি।
বিয়ের পর থেকে আমার আরেক জীবন শুরু হয় । একদিন বউকে না বলে মোশারফ হোসেনের ছেলের বিয়েতে রান্না করতে গিয়ে সাত দিন ঘরের বাইরে ছিলাম। আমার হাতের মজাদার রান্না খেয়ে মোশারফ হোসেন অনেক প্রশংসা করেছিলেন। বাড়ীতে নিয়ে যাবার জন্য আমাকে কিছু খাবারও দিয়েছিলেন।
সাতদিন পর বাড়ীতে এসে এসে দেখি বউ নাই। বউ বাপের বাড়ীতে চলে গেছে। আমিও আর দেরী না করে শশুর বাড়ীতে গিয়ে হাজির হই। বউকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসি। মোশারফ হোসেনের দেয়া খাবারগুলোর অর্ধেক শাশুরবাড়ীতে বাকী অর্ধেক মাকে দিই।
আমার ভাইয়েরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিলেও মাকে আমি কোনদিন অবহেলা করিনি। মা আমাকে বলতেন, আলমগীর, একদিন তোর ভাত মাইনসে খাবে। আমি মাকে বলতাম, মা আমি ভিক্ষা করে খাব তারপরেও তোমার সন্তানদের সামনে আসব না।
আরো বেশী টাকা উপার্জনের আশায় একদিন দুবাইতে চলে আসি। দুবাইতে যখন যে কাজ পাই তাই করি। সারাদিন বাইরে কাজ করি বলে আগের চাইতে আরো বেশী কালো হয়ে গেছি। আমার উপার্জনের সমস্ত টাকা দুই মেয়ের পেছনে খরচ করেছি। নিজে পড়ালেখা করতে পারিনি বলে মেয়েদেরকে পড়ালেখা শিখিয়েছি। তাদেরকে ভাল ঘরে বিয়েও দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে তারা সুখেই আছে।
আলমগীর ভাই আরো অনেক কথায় বলতে চেয়েছিলেন। বাসায় যেতে দেরী হবে বলে আমাকে সালাম দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন। তার কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
(আলগমীর ভাই নিজেকে হাজারীর খালাত ভাই বলে পরিচয় দেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন দলের সন্ত্রাসীরা কেউ সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায়নি। আর কোন বাবা-মা ও চাননা যে তাদের ছেলে সন্ত্রাসী হোক। রাজনৈতিক দলের এক শ্রেনীর দুষ্ট নেতাদের খপ্পরে পড়ে ওরা সন্ত্রাসী হয়। এই সন্ত্রাসীরা এক সময় ধরা পড়লে নেতারা নিজেদেরকে বাঁচাতে মামলা দিয়ে তাদেরকে জেলে ঢুকিয়ে রাখে। অনেক সময় হত্যা ও করে ফেলে। এই সন্ত্রাসীরা খারাপ কাজের পাশাপাশি ভাল কাজও করে থাকে। গরীব ও অসহায়দেরকে তারা সাহায্যও করে থাকে)
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৭ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কেমন আছে আবু জারিফা? অনেক দিন ব্লগে আসতে পারিনি তাই খবরা খবর জানা হয়নি। আমার ব্লগে আসবেন ইন.......লাহ। আর জারিফা কেমন আছে? কেমন আছে উম্মু জারিফা? জানাবেন কোন পোস্টে.....।
এই পোষ্টটির খবর আলমগীর ভাইয়ের কানে চলে গেল। প্রযুক্তি কত ফাষ্ট। অন লাইনে কে জানি তার ছবি দেখেছে। একটু আগে আলমগীর ভাইয়ের সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছে। দুর থেকে আমাকে ঐ মামু বলে ডাক দেয়। হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছবি নাকি অন লাইনে দিয়েছেন। আলমগীর ভাইকে আজ সন্ধ্যায় আবারও আসতে বলে দ্রুত অফিসের দিকে হাটতে থাকি........সন্ধ্যায়া দেখা হলে বাকীটা পরে জানাব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন